আসামের চা জনগোষ্ঠী

আসামের চা জনগোষ্ঠী বলতে আসামের চা বাগিচাসমূহে কর্মচারী এবং প্রাক্তন কর্মচারী দের বোঝায়। কয়েকটি ভিন্ন ভিন্ন জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত চা জনগোষ্ঠীর লোকরা এবং তাঁদের পরিবারসমূহ পরিবার বিশেষভাবে আসাম-এর এদিক থেকে সেদিকে বিক্ষিপ্ত প্রায় ৮০০ চা বাগিচার মধ্যের আবাসিক এলাকায় বসবাস করেন।[১][২][৩] তাঁদের ব্রিটিশ সরকার আসামের চা উদ্যোগ এবং বাগিচাসমূহে কাজ করতে শ্রমিক হিসাবে আসামে আনে। তাঁরা মূলতঃ ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, ছত্তিশগঢ়, পশ্চিমবঙ্গ, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং বিহার-এর জনজাতীয় এবং আদিবাসীলোক ছিল। ব্রিটিশরা ১৮৬০ সাল থেকে ১৮৯০র সময়কালে কয়েকটি পর্যায়ে শ্রমিক হিসাবে তাঁদের আসামে আনে। আসামের চা জনগোষ্ঠী কয়েকটি অনেকভাষী জাতি-জনজাতীয় লোকের অসমসত্ত্ব মিশ্রণ। চা জনগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের লোকরা সাধারণত উজনি আসাম এবং ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার উত্তর পারের বেশি চা বাগিচা থাকা অঞ্চলে পাওয়া যায়। ডিব্রুগড় জেলা, তিনসুকিয়া জেলা, চরাইদেউ জেলা, যোরহাট জেলা, গোলাঘাট জেলা, নগাঁও জেলা, শোণিতপুর জেলা, ওদালগুড়ি জেলা এবং কোকরাঝার জেলায় চা জনগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের জনবসতি অধিক। এর সাথে বরাক উপত্যকার কাছাড় জেলা, করিমগঞ্জ জেলা এবং হাইলাকান্দি জেলাতেও তাঁদের উল্লেখযোগ্য বসতি আছে। আসামের মোট চা জনগোষ্ঠীর মোট জনসংখ্যা প্রায় ৬৫ লাখ। এর প্রায় ৪০ লাখ মানুষ চা বাগিচার মধ্যের পরিসরে অবস্থিত আবাসিক এলাকার আবাসে বাস করেন। ভিন্ন ভিন্ন জাতি-জনগোষ্ঠীর হওয়ার জন্য তাঁদের ভাষা এবং সংস্কৃতির বৈচিত্রও দেখা যায়। তাঁরা চরা, ওড়িয়া, সাদ্রী, কুরমালি, বাংলা, সাঁওতালি, খুরুখ, খারিয়া, কুই, গণ্ডী এবং মুন্ডারী ভাষা ব্যবহার করে। বর্তমানে অনেকবছর একসাথে বসবাস করার জন্য তাঁদের এক সংমিশ্রিত উমৈহতীয়া ভাষা এবং সংস্কৃতি গড়ে নিয়ে উঠেছে। যদিও এক নির্দিষ্ট সীমায় জন-সমাজ থেকে দূরত্ব বজায় থাকার জন্য স্থান ভেদে তাঁদের উমৈহতীয়া ভাষা এবং সংস্কৃতিরও তারতম্য দেখা যায়। তাঁরা বিশেষভাবে অসমীয়া এবং সাদ্রী ভাষা মিশ্রিত ভাষাকে প্রচলিত মূল ভাষা বা লিঙ্গুয়া ফ্র্যানকা হিসাবে ব্যবহার করেন। এর সাথে তাঁদের অন্যান্য ভাষার শব্দও এই মিশ্রিত ভাষাকে সমৃদ্ধ করেছে।

আসামের বাইরে বসবাস করা চা জনগোষ্ঠীর পূর্বপুরুষের জাতি-জনগোষ্ঠীর কয়েকজন নিজ নিজ অঞ্চলে ভারতীয় সংবিধান-এর তফসিলি উপজাতির মর্যাদা লাভ করেছে। তাঁরা নিজেদের আদিবাসী বলে অভিহিত করে। বর্তমান আসামেও চা জনগোষ্ঠীর লোকরাও নিজেদের আদিবাসী বলা আরম্ভ করেছে।[৪][৫][৬]

জন-বসতি সম্পাদনা

 
ঐতিহ্যগত সাজে একজন চা জনগোষ্ঠীর মেয়ে

জাতি এবং ভাষিক সংখ্যালঘু হিসাবে আসামের চা জনগোষ্ঠীর জনসংখ্যা প্রায় ৬৫ লাখ এবং আসামের মোট জনসংখ্যার ১৮%।[৭] তাঁদের জনঘনত্ব আসামের প্রতিটি জেলার চা বাগিচার হয় সংখ্যার সাথে নির্ভর করেন। তাঁদের জনবসতি সাধারণত উজনি এবং মধ্য আসামে বেশি। ব্রিটিশরা তাঁদের কেবল শ্রমিক হিসাবেই আসামে আনেনি। অনেক উপজাতি যেমন সাঁওতাল, কুরুখ এবং মুন্ডাদের ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার অপরাধে বলপূর্বকভাবে ছোটোনাগপুর অঞ্চল থেকে আসামে আনা হয়েছিল। তাঁদের বেশি ভাগকে ১৮৫০র দশকের সাঁওতাল বিদ্রোহ এবং ১৮৯৯-১৯০০ সালের বীর বিরসা মুন্ডার নেতৃত্বে সংঘটিত বিদ্রোহত যোগদান করার শাস্তি স্বরূপে নিম্ন আসামের অবিভক্ত গোয়ালপাড়া জেলা এবং দরং জেলায় নির্বাসন দেওয়া হয়েছিল।

 
দরং জেলার কলাইগাঁও অঞ্চলের চা বাগিচাত চা শ্রমিক

আসামের উজনি আসামে চা জনগোষ্ঠীর ঘনত্ব বেশি যদিও বরাক উপত্যকা এবং বড়োল্যান্ড ক্ষেত্রীয় পরিষদ-এর অন্তর্গত জেলাসমূহেও তাঁদের উল্লেখযোগ্য বসতি আছে। বড়োল্যান্ডে মোট জনসংখ্যার ১৭% এবং বরাক উপত্যকার ১১% লোক চা জনগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের। চা জনগোষ্ঠীতে অন্তর্ভুক্ত জাতি-জনগোষ্ঠীসমূহ হল: অসুর, আর্যমালা, বাইগা, বণিয়া, বাঞ্জারা, বেদিয়া, ভূমিজ, ভূঁইয়া, ভীল, বিনঝিয়া, বিড়হর, বাছপোর, বিড়িজীয়া, বাউরী, ভক্ত, বেলদার, বারাইক, বাগতি, বন্দ, ভট্ট, বাছর, চামার, চের', চিক বারাইক, ধানোয়ার, ধান্ডারী, ধোবি, দুশ্বাদ, দানদাসী, ডোম, গৌড়, ঘাঁছি, গান্ডা, গরাইট, ঘাটোয়ার, গণ্ডী, গোঁসাই, গানঝু, গাওয়ালা, হরি, হলরা, জুলাহা, কর্মকার, কৈরী, খারিয়া, কালাহান্দি, কারমালি, কারবা, কল, কুমহার, খেরবার, খণ্ড, খদাল, বলো, কন্দপান, কহর, কিছান, কুদুমী মাসাতো, কেবাত, লোধি, লোধা, মাসীল, মালার, মাল পার্বত্য, মির্ধা, মোদী, মুন্ডা, মানকী, মাদগী, মাজবার, নায়ক, পটনায়ক, নুনিয়া, কুরুখ, পার্যা, প্রধান, পাশি, পাইডি, জলকা, পত্রতাঁতী, পান, রাজপুত, রাজবার, রাজবাল, রেইলি, রেড্ডী, রাজবংশী, রৌত, রাউতিয়া, সাঁওতাল, সোনাার, চাভার, চাউরা, তাঁতী, তান্তবাঈ, তুরী, তাছা, টেলেঙা, তেলী ইত্যাদি।[৮]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "The Tea Labourers of North East India: An Anthropo-historical Perspective"books.google.co.in 
  2. "Development of Tea Garden Community and Adivasi Identity Politics in Assam"asthabharati। ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ এপ্রিল ২০২০ 
  3. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ৯ আগস্ট ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ এপ্রিল ২০২০ 
  4. "Battleground Assam : No party can take Adivasis for granted"Economic Times 
  5. "The story of Adivasis in Assam"Boomlive 
  6. "Tea tag blurs ST status:Adivasis"Telegraph India 
  7. "Tribal votes a key factor in Assam polls | Opinion | Nelive"www.nelive.in। ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ এপ্রিল ২০২০ 
  8. "The Tea Labourers of North East India: An Anthropo-historical Perspective"books.google.co.in 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা