আশরাফ আলী বিশ্বনাথী

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের প্রাক্তন সভাপতি

আশরাফ আলী বিশ্বনাথী (১৯২৮ – ২০০৫) ছিলেন একজন বাংলাদেশি দেওবন্দি ইসলামি পণ্ডিত, শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ ও ধর্মীয় লেখক।[][] পূর্ব পাকিস্তান তথা বর্তমান বাংলাদেশে সাংগঠনিকভাবে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের ভিত্তি দাঁড় করানোর জন্য তাকে "বাবায়ে জমিয়ত" বলা হয়।[] তিনি কিছুকাল দলটির সভাপতিও ছিলেন। এছাড়াও তিনি জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদানিয়া, বিশ্বনাথ, মাদানিয়া কওমিয়া মহিলা মাদ্রাসা এবং সাহিত্য সাময়িকী মাসিক আল ফারুকের প্রতিষ্ঠাতা।[]

বাবায়ে জমিয়ত
আশরাফ আলী বিশ্বনাথী
আমীর, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ
কাজের মেয়াদ
১২ নভেম্বর ২০০১ – ২০ মে ২০০৫
পূর্বসূরীআব্দুল করিম কৌড়িয়া
উত্তরসূরীমুহিউদ্দীন খান (ভারপ্রাপ্ত)
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম১৯২৮
বিশ্বনাথ, সিলেট
মৃত্যু২০ মে ২০০৫(2005-05-20) (বয়স ৭৬–৭৭)
জাতীয়তাবাংলাদেশি
রাজনৈতিক দলজমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ
প্রাক্তন শিক্ষার্থীদারুল উলুম হাটহাজারী
ব্যক্তিগত তথ্য
পিতামাতা
  • জওয়াদ উল্লাহ (পিতা)
  • হাবিবুন্নেছা ওরফে জয়তুন বিবি (মাতা)
আখ্যাসুন্নি
ব্যবহারশাস্ত্রহানাফি
আন্দোলনদেওবন্দি
প্রধান আগ্রহরাজনীতি
উল্লেখযোগ্য কাজমাসিক আল ফারুক
ঊর্ধ্বতন পদ
এর শিষ্যআব্দুল করিম কৌড়িয়া

আশরাফ আলী বিশ্বনাথী ১৯২৮ সালে সিলেটের বিশ্বনাথ থানাধীন ঘড়গাঁও গ্রামের এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।[] তার পিতা জওয়াদ উল্লাহ ও মাতা হাবিবুন্নেছা ওরফে জয়তুন বিবি। মাতাপিতার কাছে তার প্রাথমিক শিক্ষার হাতেখড়ি হয়। ঢাকাউত্তর রানাপিং আরাবিয়া হুসাইনিয়া মাদ্রাসায় মেশকাত পর্যন্ত পড়ার পর তিনি দারুল উলুম হাটহাজারী মাদ্রাসায় ভর্তি হন। ১৯৪৯ সালে সেখান থেকে দাওরায়ে হাদিস (মাস্টার্স) সমাপ্ত করেন। তার শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন মুফতি ফয়জুল্লাহ, আহমদুল হক, শাহ আবদুল ওয়াহহাব প্রমুখ। ১৯৫০ সালে দারুস সুন্নাহ গলমুকাপন মাদ্রাসায় শিক্ষকতার মাধ্যমে তার কর্মজীবনের সূচনা হয়। সেখানে ৩ বছর শিক্ষকতা করে জামেয়া তাওয়াক্কুলিয়া রেঙ্গা মাদ্রাসায় যোগ দেন। ১৯৫৮ সালে পারকুল মাদ্রাসায় এক বছর শিক্ষকতা করেন।[] একই বছর তিনি বন্ধ হয়ে যাওয়া বিশ্বনাথ এম.ই. মাদ্রাসা পুনরায় চালু করেন এবং আমৃত্যু সেখানে অধ্যক্ষ ছিলেন, যার বর্তমান নাম জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদানিয়া, বিশ্বনাথ। তিনি মাদ্রাসাটির মহিলা শাখা হিসেবে মাদানিয়া কওমিয়া মহিলা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। তার প্রস্তাবে বিশ্বনাথ নতুন বাজার প্রতিষ্ঠিত হয়।[] ছাত্রজীবন থেকে তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় হন। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে তার আহবানে সিলেট হাওয়াপাড়া মসজিদে ১৯৬৪ সালের ১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত উলামা ও সুধী সমাবেশে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম সিলেটের যাত্রা শুরু হয়। তিনি এর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭৫ সালে তিনি এর কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০০০ সালে তিনি দলটির নির্বাহী সভাপতি ও ২০০১ সালে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, ২০০২ সালে স্থায়ী সভাপতির দায়িত্ব পান।[]

২০০৫ সালের ২০ মে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।[]

প্রকাশনা

সম্পাদনা

তিনি ছাত্রজীবন থেকে লেখালেখির সাথে সংযুক্ত হন। ১৯৯৮ সালে তিনি মাসিক সাহিত্য সাময়িকী আল ফারুক প্রতিষ্ঠা করেন। তার রচিত বইসমূহের মধ্যে রয়েছে:[]

  • ইসলাম বনাম সমাজতন্ত্র ও গণতন্ত্র
  • মাদরাসাতুল বানাতের পাঠ্য তালিকা (১৯৯২)
  • জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি (১৯৮৮)
  • মক্তব প্রথম পাঠ (১৯৮৩)
  • মুসাফিরের নামাজ (১৯৯৬)
  • স্মৃতির দর্পনে পূণ্যভূমি ইরাক (১৯৯৫)
  • এদারার সংক্ষিপ্ত পরিচিতি ইত্যাদি।

আরও দেখুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা

উদ্ধৃতি

সম্পাদনা
  1. এস এম আমিনুল ইসলাম, মাওলানা; ইসলাম, সমর (জানুয়ারি ২০১৪)। বাংলার শত আলেমের জীবনকথাবাংলাবাজার,ঢাকা-১১০০: বইঘর। পৃষ্ঠা ৩৮৪–৩৮৯। আইএসবিএন 9847016800481 
  2. জাহাঙ্গীর, সালাউদ্দিন (২০১৭)। বাংলার বরেণ্য আলেম — ২য় খণ্ড (১ম সংস্করণ)। মধ্য বাড্ডা, আদর্শ নগর, ঢাকা: মাকতাবাতুল আযহার। পৃষ্ঠা ৩৩৮–৩৫১। 
  3. হাতিমী, শাহিদ (২০ মে ২০২০)। "শায়খে বিশ্বনাথী : জাতির এক দরদী অভিভাবকের নাম"শীলন বাংলা। ১৯ জানুয়ারি ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জানুয়ারি ২০২২ 
  4. খালিদ হোসেন, আফম (২০০৫)। আশরাফ আলী বিশ্বনাথীইসলামী বিশ্বকোষ। ঢাকা: ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ। পৃষ্ঠা ৩৬৮। আইএসবিএন 984-06-0955-6 
  5. নিজামপুরী, আশরাফ আলী (২০১৩)। দ্যা হান্ড্রেড (বাংলা মায়ের একশ কৃতিসন্তান) (১ম সংস্করণ)। হাটহাজারী, চট্টগ্রাম: সালমান প্রকাশনী। পৃষ্ঠা ৩৪১–৩৪৫। আইএসবিএন 112009250-7 
  6. সুফিয়ান, মীম (১০ অক্টোবর ২০১৫)। "মিল্লাতের অতন্দ্র প্রহরী আল্লামা আশরাফ আলী বিশ্বনাথী রাহ."কমাশিসা 
  7. পরিচিতি ও কর্মসূচি (পিডিএফ)। পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০: জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ। ২০১৬। পৃষ্ঠা ২৯। ১৯ জানুয়ারি ২০২২ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জানুয়ারি ২০২২ 

গ্রন্থপঞ্জি

সম্পাদনা
  • খালিদ হোসেন, আ ফ ম (২০২২)। নিভে যাওয়া দীপশিখা ১। বাংলাদেশ: আকাবিব স্টাডিজ অ্যান্ড পাবলিশিং হাউস। পৃষ্ঠা ২৩২–২৩৫। আইএসবিএন 9789849591405 
  • হাবিবুর রহমান, মুহাম্মদ (১৯৯৮)। আমরা যাদের উত্তরসূরী (শতাধিক পীর-মাশায়েখ ও উলামায়ে কেরাম এর জীবন ও কর্ম)। ঢাকা, বাংলাদেশ: আল কাউসার প্রকাশনী। পৃষ্ঠা ৪১৫। 
  • মাযহারুল ইসলাম ওসমান কাসেমী, মুফতি (২০১৫)। বিখ্যাত ১০০ ওলামা-মাশায়েখের ছাত্রজীবন (৩য় সংস্করণ)। ইসলামী টাওয়ার, বাংলাবাজার, ঢাকা ১১০০: বাড কম্প্রিন্ট এন্ড পাবলিকেশন্স। পৃষ্ঠা ২৫৩–২৫৭। আইএসবিএন 98483916605 

আরও পড়ুন

সম্পাদনা