আবু সাঈদ মুহাম্মদ ওমর আলী
আবু সাঈদ মুহাম্মদ ওমর আলী (১ অক্টোবর ১৯৪৫ — ১৪ আগস্ট ২০১০) ছিলেন একজন বাংলাদেশি ইসলামি পণ্ডিত, লেখক, অনুবাদক, সম্পাদক, সংগঠক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের বিশ্বকোষ প্রকল্পের পরিচালক ও সম্পাদনা পরিষদের সদস্য সচিব হিসেবে তার সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে ইসলামী বিশ্বকোষ (২৫ খণ্ড), সীরাত বিশ্বকোষ (১৪ খণ্ড) ও আল কুরআন বিশ্বকোষ। তিনি হককথা ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। আবুল হাসান আলী হাসানী নদভীর গ্রন্থ অনুবাদের মাধ্যমে নদভীর সাথে তার পরিচয় হয়। পরবর্তীতে তিনি নদভীর হাতে বায়আত গ্রহণ করেন এবং তার অন্যতম প্রধান শিষ্য হিসেবে বাংলাভাষায় তার ভাষ্যকার হয়ে উঠেন।[১][২]
আবু সাঈদ মুহাম্মদ ওমর আলী | |
---|---|
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | ১ অক্টোবর ১৯৪৫ কাবিলনগর, আলমডাঙ্গা, চুয়াডাঙ্গা |
মৃত্যু | ১৪ আগস্ট ২০১০ | (বয়স ৬৪)
জাতীয়তা |
|
প্রাক্তন শিক্ষার্থী | ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় |
ব্যক্তিগত তথ্য | |
পিতামাতা |
|
আখ্যা | সুন্নি |
ব্যবহারশাস্ত্র | হানাফি |
আন্দোলন | দেওবন্দি |
প্রধান আগ্রহ | |
ঊর্ধ্বতন পদ | |
এর শিষ্য | আবুল হাসান আলী হাসানী নদভী |
সাহিত্যকর্ম |
|
জীবনী
সম্পাদনাতিনি ১৯৪৫ সালের ১ অক্টোবর চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার কাবিলনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মুফাজ্জল হোসেন মণ্ডল ও মাতা নেকজান নেসা। কাবিলনগর মাদ্রাসায় তার প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়ার সূচনা হয়। তিনি ১৯৬৫ সালে কুষ্টিয়া কুওয়াতুল ইসলাম কামিল মাদ্রাসা থেকে ফাযিল এবং ১৯৬৭ সালে পাবনা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে হাদিস বিষয়ে কামিল পাশ করেন। ১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স এবং ১৯৭৫ সালে মাস্টার্স শেষ করেন। তিনি বেগম জেবুন্নেসার সাথে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। তাদের ঔরসে চারকন্যা ও একপুত্র জন্মগ্রহণ করেন।[৩]
শিক্ষাজীবন সমাপ্তির পর তিনি কিছুদিন হরিণাকুণ্ডু উপজেলার বরিশখালি হাইস্কুলে শিক্ষকতা করেন। তারপর কিছুদিন কাবিলনগর মাদ্রাসার অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়ে তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশনে যোগদান করেন। তারপর কিছুদিন টাঙ্গাইলে আব্দুল হামিদ খান ভাসানির প্রতিষ্ঠিত সন্তোষ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। এ সময় ১৯৭৮ সালের দিকে বেশকিছু দিন তিনি ‘হককথা’ পত্রিকার সম্পাদনার সাথে যুক্ত ছিলেন। তারপর রাজধানীতে ফিরে আবার ইসলামিক ফাউন্ডেশনে যোগদান করেন।[৪]
২০১০ সালের ১৪ আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন। পরদিন ১৫ আগস্ট গ্রামের বাড়িতে তার নিজের প্রতিষ্ঠিত মসজিদের পাশে তাকে দাফন করা হয়।[৫]
নদভীর ভাষ্যকার
সম্পাদনাঈমান যখন জাগল গ্রন্থটি অনুবাদের মাধ্যমে তিনি এর লেখক আবুল হাসান আলী হাসানী নদভীর সাথে পরিচিত হন। নদভী ছিলেন বিংশ শতাব্দীর একজন ভারতীয় ইসলামি দার্শনিক। বইটির উন্নত ভাষাশৈলী ও চিন্তার উচ্চতা তাকে প্রভাবিত করে। এই বইটি অনুবাদের পর তিনি নদভীর আরেকটি গ্রন্থ সংগ্রামী সাধকদের ইতিহাস অনুবাদ করেন, যা ইসলামি রেনেসাঁর অগ্রপথিক নামে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত হয়। ১৯৮৪ সালে নদভী বাংলাদেশে আগমন করলে তার হাতে বায়আত গ্রহণ করেন। রমজান মাসে তিনি নদভীর সান্নিধ্যে ইতিকাফ করতেন। এভাবে তিনি নদভীর অন্যতম প্রধান শিষ্যে পরিণত হন এবং বাংলাভাষায় তার ভাষ্যকার হয়ে উঠেন। তিনি মুসলমানদের পতনে বিশ্ব কী হারালো? সহ নদভীর অনেক গ্রন্থ অনুবাদ করেছেন। বলা হয়ে থাকে, তার অনুবাদে রয়েছে নদভীর বক্তব্যের মূল প্রাণ ও ভাবমর্মের যথার্থ প্রকাশ।[৫]
সাহিত্যকর্ম
সম্পাদনাতিনি হককথা ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। তার কিছু মৌলিক গ্রন্থ থাকলেও তিনি অনুবাদক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। মুশাহিদ আহমদের উর্দু গ্রন্থ ‘আল ফাতহুল কারীম ফী সিয়াসাতিন নাবিয়্যিল আমীনে’র অনুবাদের মাধ্যমে তিনি তার সাহিত্য সাধনা শুরু করেন। তার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কাজ হচ্ছে, ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রকাশিত ২৫ খণ্ডের ইসলামী বিশ্বকোষ, ১৪ খণ্ডের সীরাত বিশ্বকোষ ও আল কুরআন বিশ্বকোষ। তার অনূদিত গ্রন্থাবলির মধ্যে রয়েছে:[৫]
- মুসলমানদের পতনে বিশ্ব কী হারালো?
- ঈমান যখন জাগলো
- নবীয়ে রহমত
- সংগ্রামী সাধকদের ইতিহাস
- ইসলামের রাষ্ট্রীয় ও অর্থনৈতিক উত্তরাধিকার
- মহানবী (সা.) এর প্রতিরক্ষা কৌশল
- খালিদ বিন ওয়ালিদ
- মুহাম্মাদ বিন কাসিম
- আমার আম্মা
- সীরাতে রাসুলে আকরাম
- সীরাতে সৈয়দ আহমদ শহীদ
- প্রাচ্যের উপহার
- ইসলাম ধর্ম সমাজ সংস্কৃতি
- হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.) জীবন ও সংগ্রাম ইত্যাদি।
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ আলী, লিয়াকত (২০১১)। মাওলানা আবু সাঈদ মুহাম্মদ ওমর আলী রহ. স্মারকগ্রন্থ। বাংলাদেশ: আল ইরফান পাবলিকেশন্স।
- ↑ খালিদ হোসেন, আ ফ ম (২০২২)। নিভে যাওয়া দীপশিখা ১। বাংলাদেশ: আকাবিব স্টাডিজ অ্যান্ড পাবলিশিং হাউস। পৃষ্ঠা ১৭১–১৭৭। আইএসবিএন 9789849591405।
- ↑ আলম, মোঃ মোরশেদ (২০১৪)। হাদিস শাস্ত্র চর্চায় বাংলাদেশের মুহাদ্দিসগণের অবদান। পিএইচডি অভিসন্দর্ভ (গবেষণাপত্র)। ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পৃষ্ঠা ১৭৫–১৭৬। ৩ জুন ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ জুন ২০২১।
- ↑ এস এম আমিনুল ইসলাম, মাওলানা; ইসলাম, সমর (জানুয়ারি ২০১৪)। বাংলার শত আলেমের জীবনকথা। বাংলাবাজার,ঢাকা-১১০০: বইঘর। পৃষ্ঠা ৪৬৩–৪৭০। আইএসবিএন 9847016800481।
- ↑ ক খ গ হক, ইমদাদুল (১৪ আগস্ট ২০২১)। "তরজুমানে নদভি মাওলানা আবু সাঈদ মুহাম্মদ ওমর আলী রহ."। আওয়ার ইসলাম।