আদি শঙ্করের রচনাবলি

অদ্বৈতবাদী হিন্দু দার্শনিক আদি শঙ্কর বহু গ্রন্থ রচনা করেছিলেন।[১] এই গ্রন্থগুলি প্রস্থানত্রয়ীর (উপনিষদ্‌, ভগবদ্গীতাব্রহ্মসূত্র) অদ্বৈতবাদী ব্যাখ্যার কেন্দ্রীয় ভিত্তি। তাঁর রচনায় অদ্বৈত বেদান্ত দর্শনকে যুক্তিসঙ্গতভাবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

আদি শঙ্কর ও তাঁর শিষ্যগণ, রাজা রবি বর্মা, ১৯০৪

বিবরণ সম্পাদনা

রচনাপদ্ধতি সম্পাদনা

আদি শঙ্কর বেদ ও অন্যান্য হিন্দু শাস্ত্র থেকে গৃহীত উদ্ধৃতির ভিত্তিতে অদ্বৈত বেদান্ত মতবাদকে প্রতিষ্ঠা করেছেন। তাঁর রচনার একটি বৃহত্তর অংশ প্রকৃতিগতভাবে তার্কি। সাংখ্য, বৌদ্ধ, জৈন, বৈশেষিক ও অন্যান্য অবৈদান্তিক হিন্দু দার্শনিক মতবাদগুলির বিরুদ্ধে তিনি তাঁর তার্কিক সিদ্ধান্তগুলি প্রয়োগ করেছেন।

রচয়িতা সম্পাদনা

আদি শঙ্করের দুটি প্রধান গ্রন্থ বিবেকচূড়ামণি[২][৩]মাণ্ডূক্য উপনিষদ্‌ ভাষ্য[৪] তাঁর রচনা কিনা তা নিয়ে কোনো কোনো গবেষক সংশয় প্রকাশ করেছেন। অন্যান্য গবেষকদের মতে[৫] অবশ্য ব্রহ্মসূত্র, মুখ্য উপনিষদ্‌গুলি এবং ভগবদ্গীতার শাঙ্কর ভাষ্য যে আদি শঙ্করের রচনা তা নিয়ে কোনো সংশয় নেই।

শ্রেণিবিভাগ সম্পাদনা

প্রথাগতভাবে আদি শঙ্করের রচনাবলিকে তিনটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়:

ভাষ্যগুলিতে অদ্বৈত বেদান্ত দর্শনের দৃষ্টিকোণ থেকে হিন্দুধর্মের প্রধান ধর্মগ্রন্থগুলির একটি যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। প্রকরণ গ্রন্থগুলিতে অদ্বৈত দর্শনের শিক্ষার্থীরা যাতে এই মতবাদ ঠিকভাবে বুঝতে পারেন, সেই কারণে বিভিন্ন পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে। স্তোত্রগুলি হল বিভিন্ন দেবদেবীর ভক্তিমূলক বন্দনাগীতি। আদি শঙ্করের রচনাবলির আংশিক তালিকা নিচে দেওয়া হল:

ভাষ্য সম্পাদনা

আদি শঙ্কর নিম্নোক্ত গ্রন্থগুলির ভাষ্য রচনা করেছিলেন:

প্রকরণ গ্রন্থ সম্পাদনা

আদি শঙ্কর নিম্নোক্ত প্রকরণ গ্রন্থগুলি রচনা করেছিলেন:

স্তোত্র সম্পাদনা

আদি শঙ্কর শিব, বিষ্ণু, দুর্গা, গণেশসুব্রহ্মণ্যের উপর একাধিক স্তোত্র রচনা করেছিলেন।[১০]

সংস্করণ সম্পাদনা

আদি শঙ্করের রচনাবলির একাধিং সংস্করণ পাওয়া যায়। সেগুলির মধ্যে কয়েকটি নিচে দেওয়া হল:[১১]

রচনাসমগ্র সম্পাদনা

  • আদি শঙ্কর গ্রন্থাবলি (মূল সংস্কৃত), ১ – ১০ খণ্ড। সংশোধিত সংস্করণ, সমতা বুকস, মাদ্রাজ, ১৯৯৮ (শৃঙ্গেরি সারদা পীঠম মঠের পরিলাচনাধীনে প্রথম বাণী বিলাস প্রেস, শ্রীরঙ্গম থেকে প্রকাশিত)
  • শঙ্করাচার্য গ্রন্থমালা, ১ – ৪ খণ্ড, বসুমতী সাহিত্য মন্দির, কলকাতা, ১৯৯৫ (সম্পূর্ণ রচনাবলি, বঙ্গানুবাদ ও টীকা সহ)
  • উপনিষদ্‌-ভাষ্য-সংগ্রহ, মহেশানুসন্ধান সংস্থান, মাউন্ট আবু, ১৯৭৯-৮৬। কঠ, মাণ্ডুক্য, তৈত্তিরীয়, ছান্দোগ্য ও বৃহদারণ্যক উপনিষদের শাঙ্কর ভাষ্য (আনন্দগিরি টীকা ও অন্যান্য উপটীকা সহ)।
  • প্রকরণদ্বাদশী, মহেশানুসন্ধান সংস্থান, মাউন্ট আবু, ১৯৮১ (টীকা সহ বারোটি প্রকরণ গ্রন্থের সংকলন)।
  • আ বুকে অফ ননডুয়াল টেক্সটস, অনুবাদ: ড. এইচ. রামমূর্তি ও নোম, সোসাইটি অফ অ্যাবিডেন্স ট্রুথ, ২০০৮। এটটি বইয়ে মূল সংস্কৃত সহ ইংরেজি কাব্যানুবাদ।

ব্রহ্মসূত্র ভাষ্য সম্পাদনা

  • কাশীনাথ শাস্ত্রী লেলে কর্তৃক মারাঠি অনুবাদ সহ সম্পাদিত, শ্রীকৃষ্ণ মুদ্রণালয়, ওয়াই, ১৯০৮।
  • বিষ্ণু বামন বাপত শাত্রী কর্তৃক ভারতীতীর্থের বৈয়াশিক-ন্যায়মালা ও মারাঠি টীকা সহ অনূদিত, পুণে, ১৯২৩।
  • এস. কে. বেলভালকর কর্তৃক ইংরেজি অনুবাদ, পুণে, ১৯৩৮।
  • ভারতীতীর্থের অধিকরণ-রত্নমালা সহ সম্পাদিত, শ্রীভেঙ্কটেশ্বর মুদ্রণালয়, বোম্বাই, ১৯৪৪।
  • ভি. এম. আপ্টে কর্তৃক ইংরেজি অনুবাদ, পপুলার বুক ডিপো, বোম্বাই, ১৯৬০।
  • জর্জ থিবাউট কর্তৃক ইংরেজি অন্যবাদ, ডোভার, নিউ ইয়র্ক, ১৯৬২।
  • পল ডসেন কর্তৃক জার্মান অনুবাদ, জি. ওমস, হিল্ডেসেম, ১৯৬৬।

ভগবদ্গীতা ভাষ্য সম্পাদনা

  • দিনকর বিষ্ণু গোখেল কর্তৃক সমালোচনামূলক সম্পাদনা, ওরিয়েন্ট বুক এজেন্সি, পুণে, ১৯৩১।
  • কাশীনাথ শাস্ত্রী আগাসে কর্তৃক আনন্দগিরি টীকা সহ সম্পাদিত, আনন্দাশ্রম, পুণে, ১৯৭০।
  • আল্লাদি মহাদেব শাস্ত্রী কর্তৃক সম্পাদিত, সমতা বুকস, মাদ্রাজ, ১৯৭৭।
  • এ. জি. কৃষ্ণ ওয়ারিয়ার কর্তৃক সম্পাদিত, রামকৃষ্ণ মঠ, মাদ্রাজ, ১৯৮৩।
  • ট্রেভর লেগেট, রিয়েলাইজেশন অফ দ্য সুপ্রিম সেলফ: দ্য ভগবদ্গীতা যোগাস (শাঙ্কর ভাষ্যের অনুবাদ), কেগান পল ইন্টারন্যাশানাল, লন্ডন, ১৯৯৫।

উপদেশসহস্রি সম্পাদনা

  • সীতারাম মহাদেব ফাড়কে কর্তৃক সম্পাদিত, রসিকারঞ্জন গ্রন্থ প্রকাশ মণ্ডলী, পুণে, ১৯১১। (মারাঠি অনুবাদ সহ)
  • পল হ্যাকার কর্তৃক জার্মান অনুবাদ ও টীকা, এল. রোহরশিল্ড, বন, ১৯৪৯।

বিবেকচূড়ামণি সম্পাদনা

  • মোহিনী চট্টোপাধ্যায় কর্তৃক ইংরেজি অনুবাদ সহ সম্পাদিত, থিওসফিক্যাল পাবলিশিং হাউস, মাদ্রাজ, ১৯৪৭।
  • দ্য পিনাকল অফ ইন্ডিয়ান থট, আর্নেস্ট উড কর্তৃক সম্পাদিত, থিওসফিক্যাল পাবলিশিং হাউস, হোয়েটন (ইলিনোইস), ১৯৬৭। (ইংরেজি অনুবাদ)
  • স্বামী প্রভবানন্দক্রিস্টোফার ইশারউড কর্তৃক শঙ্কর’স ক্রেস্ট-জুয়েল অফ ডিসক্রিমিনেশন, সঙ্গে আ গারলেন্ড অফ কোয়েশ্চনস অ্যান্ড অ্যানসারস, বেদান্ত প্রেস, ক্যালিফোর্নিয়া, ১৯৭১।
  • শ্রীশঙ্করের বিবেকচূড়ামণি, সঙ্গে শৃঙ্গেরির চন্দ্রশেখর ভারতীর সংস্কৃত টীকার ইংরেজি অনুবাদ। অনুবাদ: পি. শঙ্করনারায়ণ, ভারতীয় বিদ্যা ভবন, ১৯৯৯।

পঞ্চীকরণ সম্পাদনা

  • সুরেশ্বরের বর্তিকা ও অভিনবনারায়ণেন্দ্র সরস্বতীর বর্তিকাভরণ সহ সম্পাদিত, শ্রীবাণীবিলাস প্রেস, শ্রীরঙ্গম, ১৯৭০।
  • গুজরাতি অনুবাদ ও টীকাসহ সম্পাদিত, শ্রীহরিহর পুস্তকালয়, সুরাত, ১৯৭০।

আরও দেখুন সম্পাদনা

পাদটীকা সম্পাদনা

  1. The authorshop of Shankara of this Bhasya is disputed.[৪] Nakamura concludes that Shankara was not the author, for several reasons.[৬] Shankara understood Buddhist thought, while the author of the commentary shows misunderstandings of Buddhist thought.[৬] The commentary uses the terms vijnapti and vjnaptimatra, which is "a uniquely Buddhist usage",[৭] and does not appear in Shankara's commentary on the Brahma-sutras.[৮] The two commentaries also quote different Upanishads.[৯] Nevertheless, Nakamura also concludes: "Although the commentary to the Madukya is not actually by sankara, it may be assumed that there is nothing drastically wrong in using it as a source when discussing early Vedanta philosophy".[৬]
  2. The authenticity of the "Vivekachudamani", a well-known work ascribed to Shankara, is doubtfull,[২][৩] though it is "so closely interwoven into the spiritual heritage of Shankara that any analysis of his perspective which fails to consider [this work] would be incomplete".[২]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Works of Adi Shankara"। ১৮ জুন ২০০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুন ২৬, ২০০৬ 
  2. Shah-Kazemi 2006, পৃ. 4।
  3. Singh 2004, পৃ. 1315।
  4. Nakamura 2004, পৃ. 262-265।
  5. Isayeva 1993, পৃ. 94।
  6. Nakamura 2004, পৃ. 263।
  7. Nakamura 2004, পৃ. 263-264।
  8. Nakamura 2004, পৃ. 264।
  9. Nakamura 2004, পৃ. 265।
  10. "Slokas"। ১৫ জুন ২০০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুন ২৬, ২০০৬ 
  11. Vidyasankar, S। "A Select Bibliography"। ১৫ জুন ২০০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুন ২৬, ২০০৬ 

সূত্র সম্পাদনা

  • Nakamura, Hajime (২০০৪), A History of Early Vedanta Philosophy. Part Two, Delhi: Motilal Banarsidass Publishers Private Limited 
  • Shah-Kazemi, Reza (২০০৬), Paths to Transcendence: According to Shankara, Ibn Arabi & Meister Eckhart, World Wisdom 
  • Singh, N.; Barauh, B. (২০০৪), Encyclopaedic Dictionary of Pali Literature, Volume 1, Global Vision Publishing Ho 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা