অরুণা ইরানি

ভারতীয় অভিনেত্রী

অরুণা ইরানি (জন্ম ১৮ আগস্ট ১৯৪৬) হলেন একজন ভারতীয় অভিনেত্রী। তিনি হিন্দি, কন্নড়, মারাঠিগুজরাটি ভাষায় পাঁচ শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন, তাকে অধিকাংশ ক্ষেত্রে পার্শ্ব চরিত্রাভিনেত্রী হিসেবে দেখা যায়। তিনি পেট প্যায়ার অউর পাপ (১৯৮৪) ও বেটা (১৯৯২) চলচ্চিত্রে অভিনয় করে দুইবার শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার অর্জন করেছেন এবং মোট দশবার এই বিভাগে মনোনয়ন লাভ করেছেন, যা এই বিভাগে সর্বাধিক মনোনয়নের রেকর্ড। ২০১২ সালে ৫৭তম ফিল্মফেয়ার পুরস্কার আয়োজনে তাকে আজীবন সম্মাননা পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়।[]

অরুণা ইরানি
১৮তম লায়ন্স গোল্ড পুরস্কারে ইরানি
জন্ম (1945-08-18) ১৮ আগস্ট ১৯৪৫ (বয়স ৭৯)
পেশাঅভিনেত্রী, চলচ্চিত্র পরিচালক
দাম্পত্য সঙ্গীকুকু কোহলি
আত্মীয়ইন্দ্র কুমার (ভাই)
আদি ইরানি (ভাই)
ফিরোজ ইরানি (ভাই)

প্রারম্ভিক জীবন

সম্পাদনা

অরুণা ইরানি ১৯৪৬ সালের ১৮ই আগস্ট তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বম্বে প্রদেশের বম্বে শহরে (বর্তমান মুম্বই, মহারাষ্ট্র, ভারত) ইরানি পিতা ও হিন্দু মাতার ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ফারিদুন ইরানি নাট্যদল পরিচালনা করতেন এবং তার মাতা সগুনা একজন অভিনেত্রী ছিলেন। তিনি তার আট ভাইবোনের মধ্যে সর্বজ্যেষ্ঠ।[] তার ভাইদের মধ্যে ইন্দ্র কুমার একজন প্রযোজক ও পরিচালক,[] ফিরোজ ইরানি গুজরাতি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন ও আদি ইরানি হিন্দি চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ধারাবাহিকে অভিনয় করেন। তার অপর দুই ভাই বলরাজ বনি কাপুরের প্রযোজনা কোম্পানিতে কাজ করেন ও রতন একদা প্রযোজক-পরিচালক ছিলেন। তার বোন রয়েছে, তারা হলেন চেতনা ও সুরেখা। তিনি ষষ্ঠ শ্রেণির পর পড়াশোনা ত্যাগ করেন, কারণ তার পরিবারের সকল সন্তানদের পড়াশোনা করানোর মত অর্থ ছিল না।[]

কর্মজীবন

সম্পাদনা

ইরানি চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে গঙ্গা যমুনা (১৯৬১) চলচ্চিত্রে শিশুশিল্পী হিসেবে।[] এরপর তিনি আনপড় (১৯৬২) চলচ্চিত্রে মালা সিনহার কৈশোর বয়সের চরিত্রে অভিনয় করেন।

১৯৭১ সালে তিনি নাসির হুসাইন পরিচালিত কারওয়াঁ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে তার প্রথম শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন। এরপর তিনি মেহমুদের বম্বে টু গোয়া (১৯৭২), গরম মসালা (১৯৭২), ও দো ফুল (১৯৭৩) চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। ১৯৭৩ সালে তিনি মারাঠি ভাষার আন্ধলা মার্তো দোলা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।[] এই চলচ্চিত্রের জন্য তিনি ২,৫০০ রুপী পারিশ্রমিক পান।[] একই বছর বেশ কয়েকজন অভিনেত্রী রাজ কাপুরের ববি চলচ্চিত্রের নিমা চরিত্রটি খলচরিত্রে মনে হওয়ায় এতে অভিনয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়ার পর তিনি এই চরিত্রটি গ্রহণ করেন।[] এই ছবিতে তার কাজের জন্য তিনি দ্বিতীয়বার ফিল্মফেয়ার পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন। এরপর তিনি দো জুট (১৯৭৫), খুন পাসিনা (১৯৭৭) ও রকি (১৯৮১) চলচ্চিত্রের জন্য আরও তিনবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কারের মনোনয়ন পাওয়ার পর পেট প্যায়ার অউর পাপ (১৯৮৪) চলচ্চিত্রের জন্য প্রথম শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার অর্জন করেন।

১৯৮০-এর দশকের শেষভাগ থেকে শুরু করে ১৯৯০-এর দশকে তিনি মাতৃস্থানীয় চরিত্রে অভিনয় শুরু করেন। ১৯৯২ সালে ওয়াহিদা রহমান, শর্মিলা ঠাকুর, মালা সিনহাশাবানা আজমি তার ভাই ইন্দ্র কুমারের অভিষেক চলচ্চিত্রে লক্ষ্মী দেবীর চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলে তিনি এই চরিত্রে অভিনয় করেন। এই কাজের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে তার দ্বিতীয় ফিল্মফেয়ার পুরস্কার অর্জন করেন।[] তিনি এই চলচ্চিত্রের কন্নড় ভাষায় পুনর্নির্মিত সংস্করণেও একই চরিত্রে অভিনয় করেন। পরবর্তী কালে তিনি সুহাগ (১৯৯৪), কর্তব্য (১৯৯৫) ও গুলাম-ই-মুস্তাফা (১৯৯৮) চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য আরও তিনটি ফিল্মফেয়ার পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন।

পরবর্তী সময়ে তিনি টেলিভিশনে কাজ করা শুরু করেন এবং বিভিন্ন ধারাবাহিক নাটকে চরিত্রাভিনেত্রী হিসেবে অভিনয় করেন। এছাড়া তিনি কয়েকটি টেলিভিশন ধারাবাহিক পরিচালনা ও প্রযোজনাও করেন, তন্মধ্যে রয়েছে মেহন্দি তেরে নাম কি, দেস মেঁ নিকলা হোগা চান্দ, রাব্বা ইশ্‌ক না হোবে, এবং বৈদেহী[]

২০১২ সালে তিনি ৫৭তম ফিল্মফেয়ার পুরস্কার আয়োজনে আজীবন সম্মাননা পুরস্কারে সম্মানিত হন।[]

পুরস্কার ও মনোনয়ন

সম্পাদনা
ফিল্মফেয়ার পুরস্কার
বছর বিভাগ মনোনীত কর্ম ফলাফল সূত্র
১৯৭২ শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী কারওয়াঁ (১৯৭১) মনোনীত []
১৯৭৪ ববি (১৯৭৩) []
১৯৭৬ দো জুট (১৯৭৫) []
১৯৭৮ খুন পাসিনা (১৯৭৭) [১০]
১৯৮২ রকি (১৯৮১)
১৯৮৫ পেট প্যায়ার অউর পাপ (১৯৮৪) বিজয়ী [১১]
১৯৯৩ বেটা (১৯৯২) [১২]
১৯৯৫ সুহাগ (১৯৯৪) মনোনীত [১৩]
১৯৯৬ কর্তব্য (১৯৯৫) [১৪]
১৯৯৮ গুলাম-ই-মুস্তাফা (১৯৯৭)

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "Filmfare Awards: Aruna Irani wins the Lifetime Achievement Award"দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া (ইংরেজি ভাষায়)। ৩১ জানুয়ারি ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ১৬ মার্চ ২০২০ 
  2. জোশি, মীরা (৩ সেপ্টেম্বর ২০১৩)। "Mehmood & I never married - Aroona Irani"ফিল্মফেয়ার (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১৬ মার্চ ২০২০ 
  3. বিজয়কর, আর.এম. (১৩ জুলাই ২০১৬)। "Director Indra Kumar: I Want to Do a Romantic Film After 'Great Grand Masti'"ইন্ডিয়া ওয়েস্ট (ইংরেজি ভাষায়)। ৮ এপ্রিল ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ মার্চ ২০২০ 
  4. "Andhala Marto Dola Movie: Showtimes, Review, Trailer, Posters, News & Videos"দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ১৬ মার্চ ২০২০ 
  5. "'An actor should consider no role small or big': Aruna Irani" (ইংরেজি ভাষায়)। দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। সংগ্রহের তারিখ ১৬ মার্চ ২০২০ 
  6. "Aruna Irani, Pyarelal to get lifetime achievement award"হিন্দুস্তান টাইমস (ইংরেজি ভাষায়)। ২১ জানুয়ারি ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ১৬ মার্চ ২০২০ 
  7. "The Filmfare Awards Nominations – 1971"দ্য টাইমস গ্রুপ। ২৯ অক্টোবর ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ মার্চ ২০২০ 
  8. "The Filmfare Awards Nominations – 1973"দ্য টাইমস গ্রুপ। ২৯ অক্টোবর ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ মার্চ ২০২০ 
  9. "The Filmfare Awards Nominations – 1975"দ্য টাইমস গ্রুপ। ২৯ অক্টোবর ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ মার্চ ২০২০ 
  10. "The Filmfare Awards Nominations – 1977"দ্য টাইমস গ্রুপ। ২৯ অক্টোবর ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ মার্চ ২০২০ 
  11. "The Filmfare Awards Winners – 1984"দ্য টাইমস গ্রুপ। ২৮ অক্টোবর ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ মার্চ ২০২০ 
  12. "The Filmfare Awards Winners – 1992"দ্য টাইমস গ্রুপ। ২৮ অক্টোবর ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ মার্চ ২০২০ 
  13. "The Filmfare Awards Nominations – 1994"দ্য টাইমস গ্রুপ। ২৮ অক্টোবর ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ মার্চ ২০২০ 
  14. "The Filmfare Awards Nominations – 1995"দ্য টাইমস গ্রুপ। ২৮ অক্টোবর ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ মার্চ ২০২০ 

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা