ফিকহ

শরিয়াহ সম্পর্কিত বিধানাবলীর জ্ঞান
(Fiqh থেকে পুনর্নির্দেশিত)

ফিকহ (আরবি ভাষায়: الفقه) হলো ইসলামি আইনশাস্ত্র,[১] যা অধ্যয়নের মাধ্যমে মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সকল বিষয়ে ইসলামী শরীয়তের বিধান জানা যায়।[২][৩] কুরআন ও হাদীসের মৌলিক বিধানগুলোর প্রায়োগিক রূপ হলো ফিকহ শাস্ত্র। বাংলা ভাষায় এটিকে ফেকাহ, ফেকাহশাস্ত্র এবং ইলমুল ফিকহ-ও বলা হয়। ফিকহে প্রশিক্ষিত একজন ব্যক্তি ফকীহ (বহুবচন ফুকাহা) নামে পরিচিত। ইমাম আবু হানিফা (রহ.) ফিকহ শাস্ত্রের জনক।[৪]

ফিকহ ঐতিহ্যগতভাবে উসুল আল ফিকাহ এবং ফুরু আল-ফিকহ নামক দুই ভাগে বিভক্ত।[৫][৬]

শব্দ বিশ্লেষণসম্পাদনা

ফিকহ একটি আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ হলো উপলব্ধি করা, গভীরভাবে কিছু বুঝতে পারা,উন্মোচন করা, অনুধাবন করা, সূক্ষ্মদর্শিতা ইত্যাদি। ইসলামের পরিভাষায় ফিকহ হলো এমন শাস্ত্র, যার মাধ্যমে ইসলামের উৎসসমূহ তথা কুরআন ও হাদীস থেকে বিস্তারিত প্রমাণসহ ব্যবহারিক জীবনের বিভিন্ন বিধি-বিধান ও ইসলামি সমাধান জানা যায়। ফিকহ শব্দটি এই অর্থেই বেশি প্রসিদ্ধ। তবে বর্তমানে আরবি ভাষায় আইনশাস্ত্রকেই ফিকহ বলা হয়, সেটা ইসলামি আইনশাস্ত্র হোক অথবা অন্য কোন আইনশাস্ত্র হোক।[৭]

আলোচনার ক্ষেত্রসম্পাদনা

ফিকহ মূলত মানবজীবনের পাঁচটি দিক নিয়ে আলোচনা করে। যথা-

১. মুয়ামালাত (লেনদেন)

২. মুয়াশারাত (সামাজিক শিষ্টাচার)

৩. ইবাদত (উপাসনা)

৪. উকুবাত (দণ্ডবিধি)

৫. মাওয়ারিস (সম্পদ বণ্টন)।

কারো মতে, শেষের দুটি;

৪. আখলাক (নীতিবিদ্যা)

৫. সিয়াসাত (রাজনীতি)।

উৎসসমূহসম্পাদনা

ইসলামের সকল বিধানের মৌলিক উৎস চারটি। এই চারটি উৎস ছাড়া কোন বিধান প্রণয়ন সম্ভব নয়। এই চারটি উৎস হলো: কুরআন, হাদিস, ইজমা, কিয়াস। এই চারটি মৌলিক উৎস ছাড়াও অন্যান্য কিছু উৎসও রয়েছে।

কুরআনসম্পাদনা

ইসলামি আইনের মূল ভিত্তি ও উৎস হলো কুরআন। ইসলামি আইনবিজ্ঞানে কুরআনের অবস্থান হলো প্রচলিত আইনবিজ্ঞানে সংবিধানের অবস্থানের মতো। কুরআনে বেশিরভাগ আইনের ক্ষেত্রেই সংক্ষিপ্ত মৌলিক আলোচনা করা হয়েছে। যেমন, কুরআনে নামাজযাকাতের আদেশ করা হয়েছে। কিন্তু এগুলোর সময়, পরিমাণ ও নিয়ম-কানুন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়নি। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে কুরআনে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। যেমন মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি বণ্টন, হদ এবং যে সকল নারীদের সাথে বিবাহ অবৈধ। কুরআনে যেসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়নি সেগুলো জানার জন্য হাদিসের সহায়তা নিতে হয়।

হাদিসসম্পাদনা

হাদিসের শাব্দিক ও পারিভাষিক বিভিন্ন অর্থ আছে। কিন্তু ইসলামি আইনবিজ্ঞানের ভাষায় হাদিস বলে বোঝানো হয় এমন বিষয়কে, কথা, কাজ কিংবা আচরণের মাধ্যমে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে যা সম্পর্কে সম্মতি অথবা নিষেধাজ্ঞা বর্ণিত রয়েছে। ইসলামি আইনে পরিভাষায় কখনো কখনো হাদিসের সমার্থক হিসেবে "সুন্নাহ" শব্দটিও ব্যবহার করা হয়। আইনের উৎস হিসেবে হাদিসের স্থান কুরআনের পরের স্তরে। কারণ, হাদিসের মাধ্যমে কুরআনের বিভিন্ন বিধানের ব্যাখ্যা দেয়া হয়। কিন্তু হাদিস আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে কুরআন থেকে স্বতন্ত্র। কারণ, হাদিসে এমন বহু বিধান উল্লেখ করা হয়েছে, যা সম্পর্কে কুরআনে কোন আলোচনা করা হয়নি। তবে হাদিস থেকে যে কোন বিধান আহরণের জন্য হাদিসটিকে অবশ্যই হাদিস বিশারদগণের কাছে মানোত্তীর্ণ বা সহিহ হতে হবে। নইলে সে হাদীস থেকে বিধান গ্রহণ কিংবা প্রণয়ন করা যাবে না।

ইজমাসম্পাদনা

ইজমা (আরবিতে:إجماع) অর্থ ঐকমত্যে পৌঁছা। ইসলামি আইনের পরিভাষায় ইজমা বলা হয়, কোন বিষয়ে ইসলামি আইনবিদগণের সর্বসম্মত সিদ্ধান্তকে। এই ঐকমত্য মুহাম্মাদ (সঃ) এর মৃত্যু-পরবর্তী যে কোন সময় বা যুগেই হতে পারে। ইসলামি আইনের উৎস হিসেবে ইজমার অবস্থান হাদিসের পরে। ইজমা শরীয়তের মৌলিক উৎস হওয়া কুরআন ও হাদীসের বক্তব্য দ্বারা প্রমাণিত। ইজমা দ্বারা সাব্যস্ত বিধান সমূহের একটি হলো, মৃতব্যক্তি শুধুমাত্র পিতা ও এক সন্তান রেখে মারা গেলে সম্পত্তি বণ্টনের বিধানটি।

কিয়াসসম্পাদনা

দুই বিষয়ের বাহ্যিক বা অর্থগত সামঞ্জস্যবিধানকে কিয়াস বলে। অর্থাৎ এমন নতুন বিষয় যার বিধান কুরআন-হাদিসে নেই কিন্তু তার মতো অন্য আরেকটি বিষয়ের বিধান সেখানে আছে। তখন কুরআন-হাদিসে উল্লেখিত বিষয়ের সাথে সামঞ্জস্য থাকার কারণে অনুল্লেখিত বিষয়ের সমাধান সেখান থেকে আহরণ করাকে কিয়াস বলা হয়।[৮] কিয়াসের অবস্থান ইজমার পরে।

আরও দেখুনসম্পাদনা

তথ্যসূত্রসম্পাদনা

  1. Fiqh Encyclopedia Britannica
  2. এসো ফিকহ শিখি। আবু তাহের মিসবাহ রচিত এবং দারুল কলম থেকে প্রকাশিত। পৃষ্ঠা-১
  3. Vogel, Frank E. (২০০০)। Islamic Law and the Legal System of Saudí: Studies of Saudi Arabia (ইংরেজি ভাষায়)। BRILL। পৃষ্ঠা ৪–৫। আইএসবিএন 978-90-04-11062-5 
  4. Glassé, Cyril (২০০৩)। The New Encyclopedia of Islam (ইংরেজি ভাষায়)। Rowman Altamira। পৃষ্ঠা ১৪১। আইএসবিএন 978-0-7591-0190-6 
  5. "Law - Oxford Islamic Studies Online"www.oxfordislamicstudies.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৭-৩১ 
  6. The Oxford Encyclopedia of Islam and Politics (ইংরেজি ভাষায়) (1 সংস্করণ)। Oxford University Press। ২০১৪-০১-০১। আইএসবিএন 978-0-19-973935-6ডিওআই:10.1093/acref:oiso/9780199739356.001.0001 
  7. ছরোয়ার, মুহাঃ গোলাম (২০১৪)। "বাংলা ভাষায় ফিকহ চর্চা (১৯৪৭-২০০৬): স্বরূপ ও বৈশিষ্ঠ্য বিচার"। ১৯ নভেম্বর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ আগস্ট ২০১৪ 
  8. মুহাম্মাদ ইলয়াস ফয়সাল। নবীজীর নামাজ। ৬৮ পৃষ্ঠা।

আলোকচিত্রে ইবাদত

আরও পড়ুনসম্পাদনা

বহিঃসংযোগসম্পাদনা