ইজতিহাদ (আরবি: اجتهاد ijtihād) একটি ইসলামি পরিভাষা। ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে ওলামাদের গবেষণাকে ইজতিহাদ বলা হয়। ইসলামি আইনে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় ইজতিহাদের প্রয়োগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ইজতিহাদে সক্ষম ব্যক্তিকে মুজতাহিদ বলা হয়। মুজতাহিদ ব্যতীত অন্য ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে তাকলিদ করা বিধান। কুরআন, হাদিস ও অন্যান্য গবেষণালব্ধ জ্ঞান ব্যবহার করে মুজতাহিদ তার মতামত দিয়ে থাকেন। কুরআন ও হাদিসে সরাসরি উল্লেখ নেই এমন বহু আইন ইজতিহাদের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়েছে।

ইজতিহাদের শর্ত সম্পাদনা

শাইখ মুহাম্মদ বিন উছাইমীন (রহ.) বলেন:

ইজতিহাদের কিছু শর্ত আছে। যেমন:

  1. ইজতিহাদ করার জন্য যে দলিলগুলো জানা প্রয়োজন সেগুলো জানা থাকা। যেমন- আহকাম(হুকুম) সংক্রান্ত আয়াতগুলো ও হাদিসগুলো।
  2. হাদিস সহিহ ও দুর্বল হওয়া সংক্রান্ত জ্ঞান জানা থাকা। যেমন- হাদিসের সনদ ও রাবীদের পরিচয় ইত্যাদি।
  3. নাসেখ (রহিতকারী), মানসুখ (রহিত) ও ইজমা (ঐকমত্য) সংঘটিত হওয়া বিষয়গুলো জানা থাকা। যাতে করে, কোনো কিছুকে মানসুখ বলে হুকুম না দেয় কিংবা ইজমা বিরোধী কোনো হুকুম না দেয়।
  4. যে দলিলগুলোর কারণে হুকুম পাল্টে যেতে পারে যেমন- তাখসিস (সীমাবদ্ধকরণ), তাকয়িদ (শর্তযুক্ত করণ) ইত্যাদি দলিলগুলো জানা থাকা। যাতে করে এগুলোর সাথে সাংঘর্ষিক কোনো হুকুম না দেয়।
  5. শব্দের অর্থ নির্ণয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট আরবী ভাষাউসুলুল ফিকহ এর যে জ্ঞানগুলো রয়েছে সেগুলো জানা থাকা। যেমন- আম (সাধারণ), খাস (বিশেষ), মুতলাক্ব (শর্তহীন), মুকায়্যাদ (শর্তযুক্ত), মুজমাল (অ-ব্যাখ্যাত), মুবায়্যান (ব্যাখ্যাত) ইত্যাদি। যাতে করে শব্দের অর্থগত নির্দেশনার দাবী মোতাবেক হুকুম দিতে পারেন।
  6. এমন যোগ্যতা থাকা যে যোগ্যতা দিয়ে তিনি দলিল থেকে হুকুম নির্ণয় করতে পারেন।” [১]

ইজতিহাদ ও তাকলিদ সম্পাদনা

শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভী স্বীয় গ্রন্থ ‘হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ’তে এবং কাজী সানাউল্লাহ পানিপতি তাঁর তাফসীরে মাযহারীতে বলেন, যে সকল ব্যক্তির ইজতিহাদ করার ক্ষমতা রয়েছে, তাদের জন্য কোন ব্যক্তি বা মাজহাবের তাকলিদ করা জায়েজ হবে না।[২] শাহ ওয়ালীউল্লাহ বলেন,

যিনি কোনো একটি বিষয়েও ইজতেহাদ করার মত যোগ্যতা অর্জন করবেন, তার পক্ষে সে বিষয়ে অপরের অন্ধ তাকলীদ করা হারাম। অনুরূপভাবে যার নিকট এ কথা সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো একটি আদেশ বা নিষেধ করেছেন এবং সে আদেশ বা নিষেধের ব্যাপারে বর্ণিত অন্যান্য সকল হাদীস অনুসন্ধান করে এবং এর পক্ষে বা বিপক্ষে যারা রয়েছেন, তাদের কথা-বার্তা অনুসন্ধান করে সে ব্যক্তি যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সে আদেশ বা নিষেধের কোনো মনসূখ বা রহিতকারী দলীল খুঁজে না পায়, অথবা বিষয়টি যদি এমন হয় যে, অধিকাংশ ইসলামী বিশেষজ্ঞগণ রাসূলের আদেশ বা নিষেধ সম্বলিত কোনো হাদীস গ্রহণ করে থাকেন, অথচ দেখা যায় যিনি তা গ্রহণের ক্ষেত্রে বিরোধিতা করছেন, তিনি কেবল কোনো ক্বিয়াস (রায়) অথবা ইজতেহাদ বা অনুরূপ কিছুর দ্বারা এর বিরোধিতা করছেন, এমতাবস্থায় সে যদি (তা অনুধাবন করার পরেও নিজের ইমাম বা মাযহাবের মতামত পালন করার জন্য) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সে হাদীসের বিরোধিতা করে, তখন বুঝতে হবে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীসের বিরোধিতার পিছনে তার অন্তরে গোপন নেফাকী বা প্রকাশ্য আহমকী ব্যতীত আর কোনো কারণ নেই।

সানাউল্লাহ পানিপথী কুরআনে বর্ণিত ‘‘আমরা যেন পরস্পরকে রব হিসেবে গ্রহণ না করি।’’[আল ইমরানঃ ৬৪] এ আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলেছেন :

‘‘এখান থেকে বুঝা যায় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কোনো হাদীস যদি কারো নিকট কোনো প্রকার বিরোধ থেকে মুক্ত অবস্থায় সহীহভাবে প্রমাণিত হয় এবং এর কোনো রহিতকারীও তার নিকট প্রমাণিত না হয়, এমতাবস্থায় উদাহরণস্বরূপ ইমাম আবু হানীফা (রহ.) এর কোনো ফতোয়াও যদি এর বিপরীতে হয়, আর চার ইমামের কোনো ইমাম এ হাদীসের উপর ‘আমল করে থাকেন, তা হলে সে ব্যক্তির পক্ষে উক্ত হাদীসের উপর ‘আমল করা ওয়াজিব হয়ে যাবে। (এমতাবস্থায়) কঠিনভাবে তার মাযহাবকে আঁকড়ে ধরে থাকা যেন তাকে সে হাদীসের উপর ‘আমল করা থেকে বিরত না রাখে। কেননা, এমনটি করলে এতে আল্লাহকে ব্যতীত পরস্পরকে অসংখ্য রব বানানোর শামিল হবে।

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. ইসলামকিউএ ১৪৫০৭১
  2. আলী, মুহাম্মদ মুয্‌যাম্মিল। "আনুগত্য ও অনুসরণের উপাসনা (عبادة الطاعة والاتباع)"www.hadithbd.com। সংগ্রহের তারিখ ২৪ ডিসেম্বর ২০২২ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা