দুররানি সাম্রাজ্য
দুরারানি সাম্রাজ্য (পশতু: د درانیانو واکمني) সাদুজাই রাজ্য নামেও পরিচিত,[৬] ছিল আফগানিস্তানের সর্বশেষ সাম্রাজ্য।[৭] ১৭৪৭ সালে কান্দাহারকে রাজধানী করে আহমদ শাহ দুররানি সাম্রাজ্যটি প্রতিষ্ঠা করেন।[৮][৯] দুররানি সাম্রাজ্য বর্তমান আফগানিস্তান, উত্তর-পশ্চিম ইরান, পূর্ব তুর্কমেনিস্তান, পাকিস্তানের অধিকাংশ অঞ্চল এবং কাশ্মীর অঞ্চলসহ উত্তর-পশ্চিম ভারত পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।[১০][১১] বিভিন্ন উপজাতীয় নেতাদের সাহায্যে আহমদ শাহ দুররানি কুরেশদের কাছ থেকে পশ্চিম থেকে কাশ্মীর, দিল্লীর পূর্ব পর্যন্ত ও আমু দারায়ার কাছ থেকে উত্তর দিক এবং দক্ষিণের আরব সাগর পর্যন্ত সীমানা বৃদ্ধি করেন।[১২] আঠারো শতকের দ্বিতীয় অর্ধাংশ পর্যন্ত অটোম্যান সাম্রাজ্যের পর দুররানি সাম্রাজ্য ছিল বিশ্বে মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম সাম্রাজ্য।[১২]
দুররানি সাম্রাজ্য د درانیانو ټولواکمني | |||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
১৭৪৭ - ১৮৬২ | |||||||||||||||||||
পতাকা | |||||||||||||||||||
দুররানি সাম্রাজ্য | |||||||||||||||||||
রাজধানী | কান্দাহার (১৭৪৭-১৭৭৬) কাবুল (১৭৭৬–১৮২৩, ১৮৩৯-১৮৪২) পেশাওয়ার (১৭৭৬-১৮১৮; শীতকালীন রাজধানী)[১][২] হেরাত (১৮২৩–১৮৬২)[৩] | ||||||||||||||||||
প্রচলিত ভাষা | পশতু(কবিতা, প্রাথমিকভাবে আমলাতন্ত্রে ব্যবহৃত)[ক][৪][৫] ফার্সি (চান্সারি, প্রধান আদালতের ভাষা)[৫] | ||||||||||||||||||
ধর্ম | ইসলাম | ||||||||||||||||||
সরকার | রাজশাসন | ||||||||||||||||||
শাহ | |||||||||||||||||||
• ১৭৪৭-১৭৭২ | আহমদ শাহ দুররানি (প্রথম) | ||||||||||||||||||
• ১৮৩৯-১৮৪২ | সুজা শাহ দুররানি (শেষ) | ||||||||||||||||||
ঐতিহাসিক যুগ | আধুনিককালের গোড়ার দিকে | ||||||||||||||||||
• প্রতিষ্ঠা | ১৭৪৭ | ||||||||||||||||||
• বিলুপ্ত | ১৮৬২ | ||||||||||||||||||
| |||||||||||||||||||
বর্তমানে যার অংশ | আফগানিস্তান ভারত ইরান পাকিস্তান তাজিকিস্তান তুর্কমেনিস্তান উজবেকিস্তান |
স্থানীয় শাসকদের কাছ থেকে গজনী ও কাবুল দখলের মাধ্যমে আফগান সেনাবাহিনীর বিজয় শুরু হয়। ১৭৪৯ সালে মুঘল শাসক বর্তমান পাকিস্তান ও উত্তর-পশ্চিম ভারতের সার্বভৌমত্ব আফগানদের কাছে সমর্পণ করেন। আহমদ শাহ এরপর শাহরুখ আফসার দ্বারা শাসিত হেরতের নিয়ন্ত্রণ নিতে পশ্চিমে যাত্রা করেন। তিনি পরবর্তীতে হিন্দুকুশের উত্তর অংশে তার সেনাবাহিনী পাঠান ও অতিশীঘ্রই বিভিন্ন উপজাতিরা তার সঙ্গে যোগদান করে। আহমদ শাহ চারবার ভারত আক্রমণ করে কাশ্মীর ও পাঞ্জাব রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ নেন। ১৭৫৭ সালের প্রথম দিকে তিনি দিল্লী অধিগ্রহণ করেন কিন্তু মুঘলদের নামমাত্র শাসন করার অনুমতি দেন কারণ তারা বুঝে গিয়েছিল দুররানির নিয়ন্ত্রণে পাঞ্জাব, সিন্ধু ও কাশ্মীরসহ ভারতের অধিকাংশ অঞ্চল।[১৩]
১৭৭২ সালে আহমদ শাহ দুররানি মৃত্যুবরণ করার পর তার ছেলে তিমুর শাহ দুররানি সাম্রাজ্যের শাসক হিসেবে অধিষ্ঠিত হন। তিমুর কান্দাহারের পরীবর্তে কাবুলকে তার সাম্রাজ্যের নতুন রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করেন এবং পেশাওয়ারকে শীতকালীন রাজধানী হিসেবে ব্যবহার শুরু করেন।[১৪] মনে করা হয় দুররানি সাম্রাজ্য থেকেই আধুনিক আফগানিস্তানের জন্ম ও আহমদ শাহ দুররানিকে আধুনিক আফগানিস্তানের জাতির জনক বলা হয়ে থাকে।[২][১৩]
আহমাদ শাহ দুররানির রাজত্ব (১৭৪৭-১৭৭২)
সম্পাদনাআফগান রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপন
সম্পাদনা১৭০৯ সালে কান্দাহার প্রদেশের ঘিলজি উপজাতির প্রধান মীর ওয়াইস হোতাক সাফাভিদ পারস্যদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করেন। ১৭২২ থেকে ১৭২৫ সাল পর্যন্ত তার ছেলে মাহমুদ হোতাক সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য ইরানের বড় অংশ শাসন করেন এবং নিজেকে পারস্যের শাহ হিসেবে ঘোষণা করেন। যাইহোক, হোতাক রাজবংশ ১৭৩৮ সালে পারস্যের নাদের শাহ আফশার নেতৃত্বে আফশারিদদের দ্বারা ক্ষমতাচ্যুত এবং নির্বাসিত হওয়ার পরে সম্পূর্ণ ভাবে শেষ হয়।[১৫]
১৭৪৭ সালটি পারস্য এবং মুঘল উভয় সাম্রাজ্য থেকে স্বাধীন একটি আফগান রাজনৈতিক সত্তার সুনির্দিষ্ট উপস্থিতি চিহ্নিত করে।[১৬] ১৭৪৭ সালের জুলাই মাসে কান্দাহার শহরের কাছে একটি লোয়া জিরগা (গ্র্যান্ড কাউন্সিল) শেষ হয় এবং আহমাদ শাহ দুররানিকে আফগানদের নতুন নেতা হিসেবে নির্বাচিত করা হয়, এভাবে দুররানি রাজবংশ প্রতিষ্ঠিত হয়। অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে ছোট হওয়া সত্ত্বেও আহমাদ শাহের পক্ষে বেশ কয়েকটি অত্যধিক কারণ ছিল। তিনি রাজনৈতিক পটভূমির একটি সম্মানিত পরিবারের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন, বিশেষ করে যেহেতু তার বাবা হেরাত গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন যিনি আফগানদের রক্ষা যুদ্ধে মারা যান।
পদটীকা
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Jamil Hanifi, M.; Hanifi, Shah Mahmoud (2021-04)। "Crypto-Colonial Independence Rituals in Afghanistan"। Afghanistan। 4 (1): 70–78। আইএসএসএন 2399-357X। ডিওআই:10.3366/afg.2021.0068। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ ক খ Ganḍā, Singh (১৯৫৯)। Ahmad Shah Durrani: Father of Modern Afghanistan। Asia Pub. House। পৃষ্ঠা 457। আইএসবিএন 1-4021-7278-8, 9781402172786
|আইএসবিএন=
এর মান পরীক্ষা করুন: invalid character (সাহায্য)। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৮-২৫। - ↑ L. Lee, Jonathan (১৯৯৬)। The Ancient Supremacy: Bukhara, Afghanistan and the Battle for Balkh, 1731-1901 (illustrated সংস্করণ)। BRILL। পৃষ্ঠা 116। আইএসবিএন 9004103996। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ৮, ২০১৩।
[The Sadozai kingdom] continued to exist in Herat until the city finally fell to Dost Muhammad Khan in 1862.
- ↑ ক খ Schimmel 1975, পৃ. 12।
- ↑ ক খ Green, Nile (২০১৯)। "The Rise of New Imperial and National Languages (Ca. 1800-Ca. 1930"। Green, Nile। The Persianate World: The Frontiers of a Eurasian Lingua Franca। University of California Press। পৃষ্ঠা 42। আইএসবিএন 978-0520972100।
- ↑ Lee, Jonathan L. (১৯৯৬-০১-০১)। The "Ancient Supremacy": Bukhara, Afghanistan and the Battle for Balkh, 1731-1901 (ইংরেজি ভাষায়)। BRILL। পৃষ্ঠা ১১৬। আইএসবিএন 978-90-04-10399-3।
- ↑ "Last Afghan empire"। Louis Dupree (professor), Nancy Hatch Dupree and others। Encyclopædia Britannica। ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৮-২৫।
- ↑ "Aḥmad Shah Durrānī"। Encyclopædia Britannica। ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৮-২৫।
- ↑ "Afghanistan (Archived)"। John Ford Shroder। University of Nebraska। ২০১০। ২০০৯-১০-৩১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৩-২১।
- ↑ "আহমেদ শাহ বাবা" (পিডিএফ)। web.archive.org। ২০১৩-০২-০৭। Archived from the original on ২০১৩-০২-০৭। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৪-০৭।
- ↑ Lee, Jonathan L. (১৯৯৬-০১-০১)। The "Ancient Supremacy": Bukhara, Afghanistan and the Battle for Balkh, 1731-1901 (ইংরেজি ভাষায়)। BRILL। পৃষ্ঠা ১৯০। আইএসবিএন 978-90-04-10399-3।
- ↑ ক খ "The Durrani dynasty"। Louis Dupree, Nancy Hatch Dupree and others। Encyclopædia Britannica Online। ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-১০-০১।
- ↑ ক খ "Ahmad Shah and the Durrani Empire"। Library of Congress Country Studies on Afghanistan। ১৯৯৭। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৮-২৫।
- ↑ "Afghanistan"। CIA। The World Factbook। ২০১৭-০৯-২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৮-২৫।
- ↑ Malleson, George Bruce (১৯৯৯-০১-০১)। History of Afghanistan, from the Earliest Period to the Outbreak of the War Of 1878 (ইংরেজি ভাষায়)। Adegi Graphics LLC। পৃষ্ঠা ২২৭। আইএসবিএন 978-1-4021-7278-6।
- ↑ D. Balland (ডিসেম্বর ১৫, ১৯৮৩)। "Afghanistan x. Political History"। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৪-১০।
উৎস
সম্পাদনা- Malleson, George Bruce (1879) History of Afghanistan, from the Earliest Period to the Outbreak of the War of 1878 W.H. Allen & Co., London, OCLC 4219393, limited view at Google Books
- Singh, Ganda (1959) Ahmad Shah Durrani: Father of Modern Afghanistan Asia Publishing House, London, OCLC 4341271
- Fraser-Tytler, William Kerr (1953) Afghanistan: A Study of Political Developments in Central and Southern Asia Oxford University Press, London, OCLC 409453
- Tanner, Stephen (2002) Afghanistan : a military history from Alexander the Great to the fall of the Taliban Da Capo Press, New York, আইএসবিএন ০-৩০৬-৮১১৬৪-২, also available from NetLibrary
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- Afghanistan 1747-1809: Sources in the India Office Records ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৭ সেপ্টেম্বর ২০১১ তারিখে
- Some details and images of Durrani coins
- Biography of Ahmad Shah Abdali (Durrani)
- Ahmad Shah Baba
- History of Abdali tribe ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৫ মার্চ ২০১২ তারিখে
- Afghanistan and the Search for Unity Article on Durrani methods of government, published in Asian Affairs, Volume 38, Issue 2, 2007, pp. 145–157.