হালদা নদী
হালদা নদী বাংলাদেশের পূর্ব-পাহাড়ি অঞ্চলের খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রাম জেলার একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ১০৬ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ১৩৪ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা "পাউবো" কর্তৃক হালদা নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর পূর্ব-পাহাড়ি অঞ্চলের নদী নং ১৬।[১]
হালদা নদী | |
নারায়ণহাটের কাছে হালদা নদী
| |
দেশ | বাংলাদেশ |
---|---|
অঞ্চল | চট্টগ্রাম বিভাগ |
জেলাসমূহ | খাগড়াছড়ি জেলা, চট্টগ্রাম জেলা |
উৎস | বাটনাতলী ইউনিয়নের পাহাড়ি এলাকা |
মোহনা | কর্ণফুলী নদী |
দৈর্ঘ্য | ১০৬ কিলোমিটার (৬৬ মাইল) |
প্রবাহ
সম্পাদনানদীটি পার্বত্য চট্টগ্রামের বাটনাতলী পাহাড় হতে উৎপন্ন হয়ে এটি ফটিকছড়ির মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম জেলায় প্রবেশ করেছে। এটি এর পর দক্ষিণ-পশ্চিমে ও পরে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে ফটিকছড়ির বিবিরহাট, নাজিরহাট, সাত্তারঘাট, ও অন্যান্য অংশ, হাটহাজারী, রাউজান, এবং চট্টগ্রাম শহরের চান্দগাঁও-বাকলিয়ার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এটি কালুরঘাটের নিকটে কর্ণফুলী নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। এর মোট দৈর্ঘ্য ৮১ কিলোমিটার, যার মধ্যে ২৯ কিলোমিটার অংশ সারা বছর বড় নৌকা চলাচলের উপযোগী থাকে। এটি পৃথিবীর একমাত্র জোয়ার-ভাটার নদী যেখানে রুই জাতীয় মাছ ডিম ছাড়ে এবং নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ করা হয়। হালদার সাথে বাংলাদেশ এর অন্যান্য নদী যেমন: পদ্মা নদী, মেঘনা নদী, যমুনা নদীর সংযোগ না থাকাতে রুই জাতীয় মাছের "জীনগত মজুদ" সম্পূর্ণ অবিকৃত রয়েছে। হালদা নদী কেবলমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ঐতহ্য নয়, এটি ইউনেস্কোর শর্ত অনুযায়ী বিশ্ব প্রাকৃতিক ঐতিহ্যের ও যোগ্যতা রাখে।
নামকরণ
সম্পাদনাহালদা নদীর উৎপত্তি স্থল মানিকছড়ি উপজেলার বাটনাতলী ইউনিয়নের পাহাড়ী গ্রাম সালদা। সালদার পাহাড়ী র্ঝণা থেকে নেমে আসা ছড়া সালদা থেকে হালদা নামকরণ হয়।[২] তবে, সালদা নদী নামে বাংলাদেশে আরো একটি নদী আছে যেটি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে উৎপন্ন হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। [৩]
উপনদী
সম্পাদনাহালদা নদীতে পতিত দুপাশের উপনদীগুলো প্রশস্ততার বিচারে সাধারণত নদীর পর্যায়ে পড়ে না। বেশিরভাগই ঝোড়া, ছড়া, খাল কিংবা ঝর্ণা জাতীয়।[৪] তবে মানিকছড়ি, ধুরুং এবং সর্তা যথেষ্ট প্রশস্ত। পূর্বদিক হতে যেসব খাল হালদার সাথে মিলিত হয়েছে তাদের উৎপত্তি পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ে। পশ্চিম দিক হতে আসা খালগুলোর উৎপত্তি স্থল সীতাকুণ্ড পাহাড়। দুই পাহাড়ের মাঝখানে হালদা নদী প্রবাহিত হয়েছে উত্তর দিক হতে দক্ষিণ দিকে। পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড় থেকে উৎপন্ন খালগুলো হচ্ছে মানিকছড়ি, ধুরুং, তেলপারই, সর্তা, কাগতিয়া এবং ডোমখালী খাল। সীতাকুন্ড পাহাড়ী রেঞ্জ হতে উৎপন্ন হওয়া খালগুলোর মাঝে আছে গজারিয়া,ফটিকছড়ি, হারুয়ালছড়ি, বারমাসিয়া, মন্দাকিনী, বোয়ালিয়া এবং পোড়া কপালী খাল।[৫]
মাছের ডিম ছাড়া
সম্পাদনাপ্রতিবছর হালদা নদীতে একটি বিশেষ মূহুর্তে ও বিশেষ পরিবেশে রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাউস ও কার্প জাতীয় মাতৃমাছ প্রচুর পরিমাণে ডিম ছাড়ে। ডিম ছাড়ার বিশেষ সময়কে "তিথি" বলা হয়ে থাকে। মা মাছেরা এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত শুধু অমাবস্যা বা পূর্ণিমা তিথিতে অনুকূল পরিবেশে ডিম ছাড়ে। ডিম ছাড়ার এই বিশেষ সময়কে স্থানীয়রা "জো" বলে। এই জো এর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে অমাবস্যা বা পূর্ণিমা হতে হবে, সেই সাথে প্রচণ্ড বজ্রপাতসহ বৃষ্টিপাত হতে হবে। এই বৃষ্টিপাত শুধু স্থানীয় ভাবে হলে হবে না, তা নদীর উজানেও হতে হবে। ফলে নদীতে পাহাড়ি ঢলের সৃষ্টি হয়। এতে পানি অত্যন্ত ঘোলা ও খরস্রোতা হয়ে ফেনাকারে প্রবাহিত হয়। জো এর সর্বশেষ বৈশিষ্ট্য হল নদীর জোয়ার-ভাটার জন্য অপেক্ষা করা। পূর্ণ জোয়ারের শেষে অথবা পূর্ণ ভাটার শেষে পানি যখন স্থির হয় তখনই কেবল মা মাছ ডিম ছাড়ে। মা মাছেরা ডিম ছাড়ার আগে পরীক্ষামূলক ভাবে অল্প ডিম ছাড়ে। ডিম ছাড়ার অনুকূল পরিবেশ না পেলে মা মাছ ডিম নিজের দেহের মধ্যে নষ্ট করে দেয়। ডিম সংগ্রহ করে জেলেরা বিভিন্ন বাণিজ্যিক হ্যাচারিতে উচ্চমূল্যে বিক্রি করেন।
হালদা নদীতে রুই জাতীয় মাছের ডিম ছাড়ার কারণ
সম্পাদনাহালদা নদী এবং নদীর পানির কিছু বৈশিষ্ট্যের জন্য এখানে মাছ ডিম ছাড়তে আসে যা বাংলাদেশের অন্যান্য নদী থেকে ভিন্নতর। এই বৈশিষ্ট্যগুলো ভৌতিক, রাসায়নিক ও জৈবিক। ভৌতিক কারণ গুলোর মধ্যে রয়েছে নদীর বাঁক, অনেকগুলো নিপাতিত পাহাড়ী ঝর্ণা বা ছড়া প্রতিটি পতিত ছড়ার উজানে এক বা একাধিক বিল, নদীর গভীরতা, কম তাপমাত্রা, তীব্র খরস্রোত এবং অতি ঘোলাত্ব। রাসায়নিক কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে কম কন্ডাক্টিভিটি, সহনশীল দ্রবীভুত অক্সিজেন ইত্যাদি। জৈবিক কারণগুলো হচ্ছে বর্ষার সময় প্রথম বর্ষণের পর বিল থাকার কারণে এবং দুকুলের বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত হয়ে নদীর পানিতে প্রচুর জৈব উপাদানের মিশ্রণের ফলে পর্যাপ্ত খাদ্যের প্রাচুর্য থাকে যা প্রজনন পূর্ব গোনাডের পরিপক্কতায় সাহায্য করে। অনেকগুলো পাহাড়ী ঝর্ণা বিধৌত পানিতে প্রচুর ম্যাক্রো ও মাইক্রো পুষ্টি উপাদান থাকার ফলে নদীতে পর্যাপ্ত খাদ্যাণুর সৃষ্টি হয়, এই সব বৈশিষ্ট্যগুলোর কারণে হালদা নদীতে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে রুই জাতীয় মাছকে বর্ষাকালে ডিম ছাড়তে উদ্বুদ্ধ করে যা বাংলাদেশের অন্যান্য নদী থেকে আলাদা। হালদা নদীর বাঁকগুলোকে "অক্সবো" বাঁক বলে। এদের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল পানির প্রচণ্ড ঘূর্ণন যার ফলে গভীর স্থানের সৃষ্টি হয়। স্থানীয় ভাবে গভীর স্থানগুলোকে "কুম" বা "কুয়া" বলা হয়। উজান হতে আসা বিভিন্ন পুষ্টি ও অন্যান্য পদার্থ কুমের মধ্যে এসে জমা হয়। ফলে পানি অতি ঘোলা হয়। মা মাছেরা কুমের মধ্যে আশ্রয় নেয় এবং ডিম ছাড়ে।[৬]
চিত্রশালা
সম্পাদনা-
হালদা নদী থেকে মাটি উত্তোলন, চট্টগ্রাম
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাক (ফেব্রুয়ারি ২০১৫)। "পূর্ব-পাহাড়ি অঞ্চলের নদী"। বাংলাদেশের নদনদী: বর্তমান গতিপ্রকৃতি (প্রথম সংস্করণ)। ঢাকা: কথাপ্রকাশ। পৃষ্ঠা ২৯২। আইএসবিএন 984-70120-0436-4।
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২১ ডিসেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ ডিসেম্বর ২০১২।
- ↑ http://www.nodimatrik.com/index.php/2012-02-08-10-58-42/506-salada-river[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১৯ জুন ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ ডিসেম্বর ২০১২।
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ৫ ডিসেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ ডিসেম্বর ২০১২।
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১১।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- বাংলাপিডিয়ায় হালদা নদী
- হালদা নদীতে মাছের প্রজনন নিয়ে সমীক্ষা
- হালদায় মাছের ডিম ছাড়ার পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে
- অবশেষে হালদায় ডিম ছেড়েছে মা মাছ[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
বাংলাদেশের নদী বিষয়ক এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |