হার্দিক পাণ্ড্য

ভারতীয় ক্রিকেটার

হার্দিক হিমাংশু পাণ্ড্য (গুজরাটি: હાર્દિક પંડ્યા; জন্ম: ১১ অক্টোবর, ১৯৯৩) হলেন একজন ভারতীয় আন্তর্জাতিক প্রথিতযশা ক্রিকেটার। তিনি ঘরোয়া ক্রিকেটে বরোদা ক্রিকেট দলের হয়ে এবং ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) মুম্বই ইন্ডিয়ানসের হয়ে ক্রিকেট খেলেন। অল-রাউন্ডার হার্দিক ব্যাটিং করেন ডান হাতে এবং ডান হাতেই ফাস্ট মিডিয়াম বোলিং করেন। তিনি ক্রিকেটার ক্রুনাল পাণ্ড্যর ছোট ভাই। তিনি কফি উইথ করণ নামে একটি ভারতীয় টেলিভিশন শো-তে বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য বর্তমানে বিসিসিআই তাকে ও লোকেশ রাহুলকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছিলো। তিনি বিগত সময়ে সার্বিয়ান মডেল ও অভিনেত্রী নাতাশা স্টানকোভিচ এর সাথে বিবাহসূত্রে নিবন্ধ হন।

হার্দিক পাণ্ড্য
হার্দিক পাণ্ড্য, অগস্ট, ২০১৫
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নামহার্দিক হিমাংশু পাণ্ড্য
জন্ম (1993-10-11) ১১ অক্টোবর ১৯৯৩ (বয়স ৩০)
সুরাট, গুজরাত, ভারত
ডাকনামহেয়ারি, কুং ফু পান্ডিয়া, ভারতের নেমার[১]
উচ্চতা১.৮৩ মিটার (৬ ফুট ০ ইঞ্চি)
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি মিডিয়াম-ফাস্ট
ভূমিকাঅল-রাউন্ডার
সম্পর্কক্রুনাল পাণ্ড্য (দাদা)
নাতাশা স্টানকোভিচ (স্ত্রী)
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টি২০আই অভিষেক
(ক্যাপ ৫৮)
২৬ জানুয়ারি ২০১৬ বনাম অস্ট্রেলিয়া
শেষ টি২০আই১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ বনাম শ্রীলঙ্কা
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
২০১২/১৩-বর্তমানবরোদা
২০১৫-২০২১মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স
২০২২-বর্তমানগুজরাত টাইটান্স
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টি২০আই এফসি এলএ টি২০
ম্যাচ সংখ্যা ১৩ ১০ ৪০
রানের সংখ্যা ২৯ ৫৯৪ ২৬১ ৮৮০
ব্যাটিং গড় ১৪.৫০ ২৭.০০ ৩৭.২৮ ৩৩.৮৪
১০০/৫০ ০/০ ০/৪ ০/২ ০/৫
সর্বোচ্চ রান ২৭ ৯০ ৬৯ ৮৬*
বল করেছে ৪২ ৯৯০ ২৭৩ ৬৬০
উইকেট ১৭ ২৯
বোলিং গড় ৩৩.৬৬ ৩১.০৫ ৩৯.৬০ ২৭.৮৯
ইনিংসে ৫ উইকেট -
ম্যাচে ১০ উইকেট - - - -
সেরা বোলিং ২/৩৭ ৫/৬১ ২/৪৭ ৩/৭
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ৩/– ৬/- ৪/- ১৭/-
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো, ২৬ জানুয়ারি ২০১৬

প্রথম জীবন সম্পাদনা

১৯৯৩ সালের ১১ অক্টোবর গুজরাতের সুরাটে জন্মগ্রহণ করেন হার্দিক পাণ্ড্য। তার বাবা হিমাংশু পাণ্ড্য সেই শহরে একটি ছোটো কার ফাইনান্স ব্যবসা চালাতেন। হার্দিকের যখন পাঁচ বছর বয়স তখন তিনি তার দুই ছেলেকে (হার্দিক ও ক্রুনাল) ক্রিকেটে ভালোভাবে প্রশিক্ষিত করে তোলার জন্য সেই ব্যবসা গুটিয়ে চলে আসেন বড়োদরা ষরে। সেখানে তিনি তার ছেলেদের ভর্তি করে দেন কিরণ মোরের ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে।[২] আর্থিকভাবে খুব একটা সচ্ছল না হওয়ায় পাণ্ড্য পরিবার গোরওয়া অঞ্চলে একটি ভাড়া বাড়িতে থাকতেন এবং দুই ভাই একটি ব্যবহৃত গাড়িতে করে ক্রিকেট মাঠে খেলতে যেতেন।[৩] হার্দিক এমকে হাই স্কুলে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন এবং তারপর ক্রিকেটের প্রতি মনোনিবেশ করার জন্য লেখাপড়ায় ইতি টানেন।[৪]

জুনিয়র-স্তরের ক্রিকেটে হার্দিক দ্রুত উন্নতি লাভ করতে থাকেন। কুণাল বলেছিলেন, ক্লাব ক্রিকেটে হার্দিক একা-হাতেই অনেকগুলি ম্যাচ জিতেছিলেন।[২] দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকায় দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে হার্দিক স্বীকার করেছিলেন যে, তার "আচরণগত সমস্যা"র জন্যই তাঁকে রাজ্যের বয়সভিত্তিক দলগুলি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। সেই সঙ্গে তিনি এও বলেন যে, তিনি ছিলেন "শুধু একজন অভিব্যক্তিপূর্ণ বালক" এবং "নিজের আবেগকে লুকাতে পারতেন না"।[৫]

হিমাংশু পাণ্ড্য বলেছিলেন, ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত হার্দিক ছিলেন একজন লেগ স্পিনার। তারপর তিনি বরোদা দলের তদনীন্তন কোচ সনৎ কুমারের পীড়াপীড়িতে ফাস্ট বোলিং শুরু করেন।[৬]

ঘরোয়া ক্রিকেট সম্পাদনা

২০১৩ সাল ইউসুফ পাঠান-এর নেতৃত্বে বরোদা ক্রিকেট দলের হয়ে ক্রিকেট জীবনে অভিষেক করেন। ২০১৩-১৪ মরসুমে বরোদা দলের সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফি জয়ে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন।

২০১৫ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ সম্পাদনা

২০১৫ আইপিএল এ প্রথমবার খেলার সুযোগ হয় হার্দিকের। আইপিএল নিলামে ভিত্তি মূল্য ১০ লক্ষ টাকায় তাকে কেনে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সউমেশ যাদব,সুনীল নারিনআন্দ্রে রাসেল এর মতো বোলিং লাইনআপ সমন্বিত কলকাতা নাইট রাইডার্সএর বিরুদ্ধে মুম্বাইতে ৩১ বলে ৬১ রান করে দলকে জেতাতে বিশেষভাবে সাহায্য করেন। সেই ট্যুর্নামেন্টে শীর্ষ চার দলের মধ্যে স্থান পাওয়ার জন্য মুম্বই ইন্ডিয়ানসের কাছে ম্যাচটি জেতা খুবই জরুরি ছিল। হার্দিকও সেই ট্যুর্নামেন্টে দ্বিতীয় ম্যান অফ দ্য ম্যাচ পুরস্কার পেয়েছিলেন।[৭]

২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফিতে বরোদা ক্রিকেট দলের হয়ে অপরাজিত ৮৬ সালের ইনিংস খেলেন হার্দিক। সেই ইনিংসে তিনি আটটি ছয় মেরেছিলেন। বরোদা ক্রিকেট দলও সেই ম্যাচে বিদর্ভ ক্রিকেট দলের বিরুদ্ধে ছয় উইকেটে জয় লাভ করেছিল।[৮]

২০১৬ অস্ট্রেলিয়া সফর সম্পাদনা

এই সফরে তার আন্তর্জাতিক অভিষেক ঘটে টি২০ ক্রিকেটের মাধ্যমে।

২০১৬ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ সম্পাদনা

২০১৬ আইপিএল এ মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স তাকে দলে রাখে।

২০১৬-১৭ নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দলের ভারত সফর সম্পাদনা

এই সফরে তার একদিবসীয় আন্তর্জাতিক অভিষেক ঘটে । ধর্মশালায় অনুষ্ঠিত প্রথম ম্যাচে মার্টিন গাপটিলএর উইকেট তুলে নেন। নির্বাচিত হন ম্যাচ সেরা।

২০১৮ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ সম্পাদনা

২০১৮ আইপিএল এ মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স তাকে ১১ কোটি রুপি মূল্যে দলে রাখে।

২০২২ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ সম্পাদনা

২০২২ আইপিএলে গুজরাত টাইটান্স তাকে দলে রাখে এবং সেই দলের ক্যাপ্টেন হন।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সম্পাদনা

২০১৫-১৬ মৌসুমে সফরকারী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তার টুয়েন্টি২০ আন্তর্জাতিকে অভিষেক ঘটে।[৯] ২৬ জুলাই, ২০১৬ তারিখে অনুষ্ঠিত ঐ খেলায় তিনি ২ উইকেট তুলে নেন। ক্রিস লিন তার প্রথম শিকারে পরিণত হয়েছিলেন।

২০১৬ সালের আইসিসি বিশ্ব টুয়েন্টি২০ প্রতিযোগিতা উপলক্ষে বিসিসিআই কর্তৃপক্ষ ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ তারিখে ভারত দলের খেলোয়াড়দের তালিকা প্রকাশ করে।[১০] এতে তিনিও অন্যতম সদস্য মনোনীত হন।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Virat as 'Cheeku', Dhoni as 'Mahi' - The fascinating story behind the nicknames of Indian cricketers"। DNA India। সংগ্রহের তারিখ ৩ আগস্ট ২০১৬ 
  2. Mehta, Jigar (২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬)। "From unknown game-changer to national team: The six weeks that changed Hardik Pandya's life"Firstpost। সংগ্রহের তারিখ ২ জুন ২০১৭ 
  3. Tere, Tushar (২৫ মে ২০১৭)। "Pandya brothers finally build their dream home"The Times of India। সংগ্রহের তারিখ ২ জুন ২০১৭ 
  4. Tere, Tushar (১৭ জানুয়ারি ২০১৫)। "'Every individual has different set of talents'"The Times of India। সংগ্রহের তারিখ ২ জুন ২০১৭ 
  5. Sundaresan, Bharat (২৬ মে ২০১৭)। "I always dreamt big. I wanted cars…and the only way I could get that was through my sport, says Hardik Pandya"The Indian Express। সংগ্রহের তারিখ ২ জুন ২০১৭ 
  6. "When Hardik Pandya did a Virat Kohli to surprise his coach"The Times of India। ২০ আগস্ট ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ২০ আগস্ট ২০১৮ 
  7. "List of players sold in IPL 8 auction"। Times of India। সংগ্রহের তারিখ ১৮ এপ্রিল ২০১৫ 
  8. Pandya sixathon secures Baroda victory
  9. "India tour of Australia, 1st T2020I: Australia v India at Adelaide, Jan 26, 2016"ESPN Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জানুয়ারি ২০১৬ 
  10. "Mohammed Shami back for World T20"ESPNcricinfo। সংগ্রহের তারিখ ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ 

আরও দেখুন সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা