হরকুমার ঠাকুর (১৭৯৮ - ১৮৫৮) ছিলেন ঊনিশ শতকের কলকাতার অগাধ সম্পত্তির মালিক, সমাজসেবী, সংস্কৃত পণ্ডিত, লেখক এবং সঙ্গীতজ্ঞ। তিনি কলকাতার পাথুরিয়াঘাটা অঞ্চলের প্রাচীন ও প্রভাবশালী ঠাকুর পরিবারের অন্যতম সদস্য ছিলেন।

হরকুমার ঠাকুর
জন্ম১৭৯৮
পাথুরিয়াঘাটা কলকাতা ব্রিটিশ ভারত
মৃত্যু১৮৫৮
কলকাতা ব্রিটিশ ভারত
পেশা   
ভাষাবাংলা
জাতীয়তাব্রিটিশ ভারতীয়
শিক্ষাসংস্কৃত কলেজ
দাম্পত্যসঙ্গীশিবসুন্দরী দেবী
সন্তানযতীন্দ্রমোহন ঠাকুর
শৌরীন্দ্রমোহন ঠাকুর
শৌতীন্দ্রমোহন ঠাকুর

হরকুমার ছিলেন গোপীমোহন ঠাকুরের ছয় পুত্র ও এক কন্যার পঞ্চম পুত্র। প্রসন্নকুমার ঠাকুর ছিলেন তার অনুজ। পারিবারিক পরিবেশে ব্রাহ্মণ পণ্ডিতদের তত্ত্বাবধানে তিনি সংস্কৃত ও শাস্ত্রাদি-সহ বেদান্ত দর্শন অধ্যয়ন করেন। হিন্দু কলেজে ইংরেজি ভাষায় শিক্ষালাভ করেন। [১] ১৮১৯ খ্রিস্টাব্দে পিতার মৃত্যুর পর পাথুরিয়াঘাটা ঠাকুর পরিবারের প্রধান হন। [২]

হরকুমার ঠাকুর সম্পাদিত সংকলন গ্রন্থ হরতত্ত্বদীধিতি (১৮৮১) ও পুনশ্চরণ বোধিনী (১৮৯৫), শীল-চক্রার্থবোধিনী সেসময় শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিতসমাজে বিশেষভাবে সমাদৃত হয়েছিল। শেষোক্ত গ্রন্থটিতে নানান ধরনের পাথর সম্পর্কিত যা নারায়ণের প্রতীক হিসাবে পূজিত হয়। [৩] এছাড়াও, তিনি বিভিন্ন তান্ত্রিক আচার- বিচার, বিশেষ করে কালীর উপাসনা সংক্রান্ত পদ্ধতিগত বিষয়ে নির্দেশিকা পুস্তক রচনা করেন। [৪] তিনি শব্দকল্পদ্রুম গ্রন্থ সংকলনে রাজা রাজা রাধাকান্ত দেবকে (১৭৮৩-১৮৬৭) নানাভাবে সহায়তা করেন। [১]  

সংস্কৃত পণ্ডিত হরকুমার একজন সুরুচিসম্পন্ন সঙ্গীতজ্ঞ এবং বিশিষ্ট সঙ্গীতকার ছিলেন। [৫]

হরকুমার এবং তার অনুজ প্রসন্নকুমার তাদের পিতা গোপীমোহন ঠাকুরের স্মরণে শ্যামনগর মূলাজোড়ে একটি মন্দির তৈরি করেন। [৬] তিনি শিল্প ও সঙ্গীতের উন্নতির জন্য উদারভাবে অর্থ দান করতেন।

তিনি কলকাতায় এমারেল্ড বাওয়ার নামে (বাংলায় "মরকত কুঞ্জ" নামে পরিচিত) একটি সুন্দর প্রাসাদ নির্মাণ করেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকার এটিকে অধিগ্রহণ করে এবং এখানেই রবীন্দ্রনাথের জন্ম শতবর্ষে প্রতিষ্ঠিত রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল প্রশাসনিক কার্যালয় এই ক্যাম্পাসেই অবস্থিত। [৭][৮][৯]

হরকুমার ঈশানচন্দ্র মুস্তাফির কন্যা শিবসুন্দরী দেবীকে বিবাহ করেন। তাদের তিন পুত্রেরা হলেন- মহারাজা স্যার যতীন্দ্রমোহন ঠাকুর, সঙ্গীতজ্ঞ ও সাহিত্যিক শৌরীন্দ্রমোহন ঠাকুর ও শৌতীন্দ্রমোহন ঠাকুর। ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে হরকুমার ঠাকুর পরলোক গমন করেন।

কলকাতা পৌরসংস্থা হরকুমার ঠাকুরের নামে ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে একটি চত্বর হরকুমার ঠাকুর স্কোয়ার নামাঙ্কিত করে। 22°33'35"N 88°21'40"E

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. সুবোধ সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, নভেম্বর ২০১৩, পৃষ্ঠা ৮৪১, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬
  2. The Golden Book of India: A Genealogical and Biographical Dictionary of the Ruling Princes, Chiefs, Nobles, and Other Personages, Titled Or Decorated, of the Indian Empire by Sir Roper Lethbridge, Publisher : Macmillan & Company, 1893 pp: 527
  3. A handbook of West Bengal - Volume 2। সংঘমিত্রা সাহা,ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অফ দ্রাভিড়িয়ান লিঙ্গুস্টিক। ১৯৯৮। পৃষ্ঠা ৬৬৭। আইএসবিএন 978-81-8569-224-1 
  4. ব্যানার্জি, সুরেশ চন্দ্র (২০০৪)। স্যানক্রিট কালচার অফ বেঙ্গল। শারদা পাবলিশিং। পৃষ্ঠা ১১৬। আইএসবিএন 978-81-8893-406-5 
  5. Musicians of India: Past and Present : Gharanas of Hindustani Music and Genealogies। Amala Dāśaśarmā Naya Prokash। ১৯৯৩। পৃষ্ঠা ২৬০,২৬১–। আইএসবিএন 978-81-8542-118-6 
  6. The Modern History of the Indian Chiefs, Rajas, Zamindars, & C: The native ... By Lokanātha Ghosha। ১৮৮১। পৃষ্ঠা ১৬৮–১৭১। 
  7. "Nuptial nostalgia"The Telegraph, Kolkata। ২৩ মার্চ ২০০৮। ১১ মার্চ ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ মার্চ ২০১৪ 
  8. "Emerald Bower of Rajah of Tagore"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৬-৩০ 
  9. "Hara kumar Tagore, the poet's uncle, built a mansion called the Emerald Bower, and this building and its park-lands, later acquired by the Government of West Bengal, finally became a complex of academic institutions among which this University has the central and larger share."। ১২ মার্চ ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ মার্চ ২০১৪