প্রসন্নকুমার ঠাকুর
প্রসন্নকুমার ঠাকুর (২১ ডিসেম্বর, ১৮০১ - ৩০ অগস্ট, ১৮৬৮) ছিলেন ঊনবিংশ শতাব্দীর এক সমাজ সংস্কারক। তিনি ছিলেন হিন্দু কলেজের (অধুনা প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়) অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা গোপীমোহন ঠাকুরের পুত্র। তিনি ঠাকুর পরিবারের পাথুরিয়াঘাটা শাখার সদস্য ও তৎকালীন হিন্দুসমাজের একজন রক্ষণশীল নেতা ছিলেন।[১]
প্রসন্নকুমার ঠাকুর | |
---|---|
জন্ম | |
মৃত্যু | ৩০ আগস্ট ১৮৬৮ | (বয়স ৬৬)
পেশা | আইনজীবী |
জীবন
সম্পাদনাপ্রসন্নকুমার স্বগৃহে ও শেরবার্ন'স স্কুলে লেখাপড়া শেখেন। ১৮১৭ সালে হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি সেখানেও ভর্তি হন। স্মৃতিশাস্ত্র ও পাশ্চাত্য আইনবিদ্যায় তিনি বিশেষ পাণ্ডিত্য অর্জন করে দেওয়ানি আদালতে আইনব্যবসা শুরু করেন। কিছুকাল পরে তিনি সরকারি আইনজীবী নিযুক্ত হন। ১৮৫০ সালে পারিবারিক সম্পত্তি দেখাশোনার উদ্দেশ্যে তিনি সেই পদ থেকে ইস্তফা দেন। ১৮৫৪ সালে ভাইসরয় কাউন্সিল গঠিত হলে তিনি ক্লার্ক-অ্যাসিস্ট্যান্ট রূপে সেই পরিষদে যোগ দিয়েছিলেন। সমসাময়িক যুগে তিনি ছিলেন একজন গণ্যমান্য ধনী বাঙালি।[১]
কর্মকাণ্ড
সম্পাদনাপ্রসন্নকুমার ঠাকুর ছিলেন ১৮২৩ সালে প্রতিষ্ঠিত রক্ষণশীল সংস্থা "গৌড়ীয় সমাজ"-এর প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক। তা সত্ত্বেও তিনি রামমোহন রায়ের সতীদাহ প্রথা-বিলোপ আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করেছিলেন।[১] ১৮৩০ সালের ব্রাহ্মসভার অছি সনদ অনুযায়ী, প্রসন্নকুমার ছিলেন উক্ত সভার প্রথম যুগের একজন অছি।[২] অপৌত্তলিকতাবাদী রামমোহনের অনুগামী হয়েও গৃহে দুর্গোৎসব করায়, ডিরোজিও তার তীব্র সমালোচনা করেছিলেন।[৩]
আইনজীবী, সমাজপতি ও লেখক বাবু প্রসন্নকুমার ঠাকুর ছিলেন ত্রিমুখী ব্যক্তিত্ব ও তাঁহার সমকালের সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য চরিত্র। তিনিই প্রথম ভারতীয় যিনি বড়োলাটের আইনসভায় নিযুক্ত হইয়াছিলেন। বঙ্গীয় আইনসভায় তিনি দুইবার মনোনীত হইয়াছিলেন। কথিত আছে, আইনব্যবসায়ে তাঁহার বাৎসরিক উপার্জন ছিল গড়ে দুই লক্ষ টাকা। মৃত্যুকালে তিনি সাড়ে ছয় লক্ষ টাকা তিনি উত্তরসূরিগণকে এবং ধর্মীয়, দাতব্য ও শিক্ষাগত উদ্দেশ্যে দান করিয়া গিয়াছিলেন। ইহার মধ্যে তিন লক্ষ টাকা দানে সৃষ্টি হয়েছিল ঠাকুর আইন অধ্যাপক পদটি। এটিই ছিল তাঁর এককালীন বৃহত্তম দান।[৪]
Cotton, H.E.A
প্রসন্নকুমার সেই যুগে একাধিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। দ্বারকানাথ ঠাকুরের সঙ্গে ল্যান্ডহোল্ডার্স সোসাইটি ও ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠায় তিনি সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। ১৮৬৭ সালে তিনি ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতিও হয়েছিলেন।[১]
শিক্ষাবিস্তারেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। তার দানের অর্থে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিখ্যাত "ঠাকুর আইন অধ্যাপক" পদটি সৃষ্টি হয়। জমিদারদের মুখপাত্র হিসাবে তিনি নীতিগতভাবে সিপাহী বিদ্রোহের বিরোধিতা করেন। ব্রিটিশ সরকার ১৮৬৬ সালে তাকে "সিএসআই" উপাধি প্রদান করেছিল। তার লেখা দু'টি বই হল অ্যান অ্যাপিল টু কান্ট্রিমেন ও টেবিল অফ সাকসেশন অ্যাকর্ডিং টু হিন্দু ল অফ বেঙ্গল।[১]
১৭৯৬ সালে রাশিয়ান পণ্ডিত অভিযাত্রী গেরাসিম স্তেপানোভিচ লেবেদেফ প্রথম বাংলা নাটক মঞ্চস্থ করেছিলেন। কিন্তু এর পর এই ধারায় বিশেষ অগ্রগতি হয়নি। ১৮৩২ সালে প্রসন্নকুমার তার নারকেলডাঙার বসতবাড়িতে একটি অস্থায়ী নাট্যমঞ্চ স্থাপন করেন। সেখানে মাত্র কয়েকটি ইংরেজি নাটক মঞ্চস্থ হয়েছিল। তবে এই উদ্যোগ অন্যদের অনুপ্রাণিত করতে সক্ষম হয়েছিল।[৫]
প্রসন্নকুমার সারাজীবন খ্রিস্টান মিশনারিদের কাজকর্মের বিরোধিতা করেছিলেন। তা সত্ত্বেও তার পুত্র জ্ঞানেন্দ্রমোহন ঠাকুর (১৮২৬-১৮৯০) ১৮৫১ সালে খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত হয়েছিলেন। তিনি ছিলেন মেধাবী ছাত্র। পরবর্তীকালে তিনি রেভারেন্ড কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কন্যা কমলমণিকে বিবাহ করেন। জ্ঞানেন্দ্রমোহন ইংল্যান্ডে গিয়ে হিন্দু আইন ও বাংলার অধ্যাপনাও করেছিলেন। তিনিই ছিলেন প্রথম ভারতীয় ব্যারিস্টার। ভারতে ফিরে তিনিও পিতার ন্যায় আইন ব্যবসায়ে আত্মনিয়োগ করেন।[১]
পাদটীকা
সম্পাদনা- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ Sengupta, Subodh Chandra and Bose, Anjali (editors), 1976/1998, Sansad Bangali Charitabhidhan (Biographical dictionary) Vol I, (বাংলা), p313, আইএসবিএন ৮১-৮৫৬২৬-৬৫-০
- ↑ Sastri, Sivanath, History of the Brahmo Samaj, 1911-12/1993, p549, 557, Sadharan Brahmo Samaj, 211 Bidhan Sarani, Kolkata.
- ↑ Sengupta, Nitish, History of the Bengali-speaking People, 2001/2002, p227, UBS Publishers’ Distributors Pvt. Ltd., আইএসবিএন ৮১-৭৪৭৬-৩৫৫-৪
- ↑ Cotton, H.E.A., Calcutta Old and New, 1909/1980, pp344-345, General Printers and Publishers Pvt. Ltd.
- ↑ Raha, Kironmaoy, Calcutta Theatre 1835-1944, in Calcutta, the Living City, Vol I, edited by Sukanta Chaudhuri, pp 58-59, Oxford University Press, আইএসবিএন ০-১৯-৫৬৩৬৯৬-১.