সময় অন্তরজ

সময়ের সাপেক্ষে কোন ফাংশনের অন্তরজ d/dt

সময় অন্তরজ হল সময় নির্ভর ফাংশনের একটি অন্তরক সহগ যাকে সাধারণত ফাংশনটির মান পরিবর্তনের হার হিসেবে বর্ণনা করা হয়।[১] সময় নির্দেশক চলককে সচরাচর আকারে লেখা হয়ে থাকে।

সময় t-এর সাপেক্ষ বেগ v-এর প্রথম অন্তরজ তথা ত্বরণ a (লাল রেখা)।

সংকেত সম্পাদনা

সময় অন্তরজ নির্দেশে বিভিন্ন প্রকার সংকেত ব্যবহার করা হয়। যাই হোক লিবনীজের সংকেতই সচরাচর ব্যবহার করা হয়ে থাকে যা নিম্নরূপ—

 

অক্ষরের উপরে ফোঁটা যুক্ত খুব সাধারণ একটি সাঁট সংকেত এক্ষেত্রে বিশেষকরে পদার্থবিজ্ঞানে ব্যবহার করা হয়। এটাকে নিউটনের সংকেত বলা হয়। যেমন:—

 

এছাড়া উচ্চতর সময় অন্তরজও ব্যবহৃত হয়। সময়ের সাপেক্ষে দ্বিতীয় অন্তরজকে লেখা হয়—

 

যা সাঁটে লিখলে হবে—  

কোন ভেক্টর রাশির সময় অন্তরজের সাধারণিকরণে অন্তরজটির উপাংশগুলোকে ঐ (মূল) ভেক্টরটির উপাংশগুলোর অন্তরজ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়।   ভেক্টরের সময় অন্তরজটি হবে—

 

পদার্থবিজ্ঞানে প্রয়োগ সম্পাদনা

সময় অন্তরজ পদার্থবিজ্ঞানের একটি মৌলিক ধারণা। উদাহরণস্বরূপ, কোন বস্তুর অবস্থান   হলে সময়ের সাপেক্ষে অবস্থানের পরিবর্তন বা   এর সময় অন্তরজ   বস্তুটির বেগ নির্দেশ করে। সময়ের সাপেক্ষে অবস্থানের দ্বিতীয় অন্তরজ বস্তুটির ত্বরণকে নির্দেশ। উপরন্তু আরও উচ্চতর অন্তরজ কখনো কখনো ব্যবহার করা হয়। যেমন:– সময়ের সাপেক্ষে অবস্থানের তৃতীয় অন্তরজ জার্ক নামে পরিচিত।

পদার্থবিজ্ঞানে বিপুল সংখ্যক মৌলিক সমীকরণ ভৌত রাশির প্রথম বা দ্বিতীয় সময় অন্তরজের সাথে সম্পর্কযুক্ত। বিজ্ঞানের অন্যান্য অনেক রাশিই একে অপরের সময় অন্তরজ। যেমন:–

দিক রাশির সময় অন্তরজ পদার্থবিজ্ঞানের প্রায় সর্বত্রই দেখতে পাওয়া যায়, যেমন:– বেগ বা ত্বরণ। এ ধরনের অন্তরজের ক্ষেত্রে মান ও দিক উভয়ই সময়ের উপর নির্ভর করতে পারে।

বৃত্তীয় গতি সম্পাদনা

 
কার্তেসীয় স্থানাঙ্ক (x,y) এবং মেরু স্থানাঙ্ক (r,θ) এর মধ্যে সম্পর্ক

উদাহরণস্বরূপ, বৃত্তাকার পথে চলমান একটি কণা বিবেচনা করা যাক যার অবস্থান   সরণ ভেক্টরটির দ্বারা সূচিত করা হয়েছে।    হচ্ছে যথাক্রমে অবস্থান সম্পর্কিত কোণ ও ব্যাসার্ধিক দূরত্ব এবং   নিম্নরূপভাবে সংজ্ঞায়িত:–

 

এবার ধরা যাক,   =  . তাহলে যেকোন সময়  -তে কণার সরণ (অবস্থান) হবে—

 

এই সমীকরণ থেকে দেখা যায়,   দ্বারা বর্ণিত গতি   ব্যাসার্ধের একটি বৃত্তাকার পথে ঘটছে। কারণ   এর যে মান আমরা পাব তা হবে নিম্নরূপ:—

 

(যেহেতু ত্রিকোণমিতিক অভেদাবলী অনুসারে sin2(t) + cos2(t) = 1 এবং   হচ্ছে ইউক্লিডীয় ডট বা স্কেলার গুণন)।

সরণ ভেক্টরের সময় অন্তরজ হল বেগ যা ভেক্টর রাশি। সুতরাং সরণের   এর উপর্যুক্ত সমীকরণ হতে বেগ পাওয়া যাবে। সাধারণত একটি ভেক্টরের অন্তরজ ঐ (মূল) ভেক্টরটির প্রতিটি উপাংশের অন্তরজ নিয়েই গঠিত হয়। তাই বেগ ভেক্টরটি হবে—

 

কণার অবস্থান ভেক্টরের মান (পথের ব্যাসার্ধ) ধ্রুব থাকলেও বেগ অশূন্য হবে। বেগের দিক হবে সরণের দিকের লম্ব বরাবর যা স্কেলার গুণনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করা যায়:

 

আর ত্বরণ হল বেগের সময় অন্তরজ:

 

এই ত্বরণের দিক হবে অবস্থান ভেক্টরের বিপরীতে এবং বেগের দিকের লম্ব দিকে। ত্বরণের দিক ব্যাসার্ধ বরাবর কেন্দ্রের দিকে হওয়ায় এই ত্বরণকে কেন্দ্রমুখী ত্বরণ বা ব্যাসার্ধমুখী ত্বরণ বলা হয়।

ব্যবকলনীয় জ্যামিতিতে প্রয়োগ সম্পাদনা

ব্যবকলনীয় জ্যামিতিতে রাশিসমূহকে সচরাচর স্থানীয় কোভ্যারিয়েন্ট ভিত্তি   এর সাপেক্ষে প্রকাশ করা হয় যেখানে   মাত্রার সংখ্যার উপর নির্ভরশীল।

একটি ভেক্টরের   উপাংশ কোভ্যারিয়েন্ট টেন্সরের ন্যায় রূপান্তরকে প্রকাশ করে যাকে আইন্সটাইনীয় সমষ্টি রীতি প্রয়োগ করে   রাশিমালার মাধ্যমে দেখানো হয়। গ্রহের কক্ষপথ বা যেকোন বক্রপথ বরাবর এই উপাংশসমূহের সময় অন্তরজ গণনা করলে আমরা পাব:-

 

তাহলে আমরা একটি নতুন অপারেটর ইনভ্যারিয়েন্ট অন্তরজ   কে সংজ্ঞায়িত করতে পারি যা কোভ্যারিয়েন্ট অন্তরজে পুনরাবর্তনে চলমান হবে।:[২]

 

যেখানে   স্থানীয় কোভ্যারিয়েন্ট ভিত্তিতে বেগের উপাংশকে ধারণ করে,   হল   তম স্থানাংক এবং   হল স্থানাংক ব্যবস্থার ক্রিস্টোফেল প্রতীক। উল্লেখ্য যে,   এর উপর সুস্পষ্ট নির্ভরশীলতা সংকেতের মাধ্যমে অবদমন (অপ্রকাশিত) করে রাখা হয়েছে। তাহলে আমরা লিখতে পারি:—

 

এর পাশাপাশি:—

 

কোভ্যারিয়েন্ট অন্তরজ   এর শর্তাধীনে আমরা পাব:—

 

অর্থনীতিতে প্রয়োগ সম্পাদনা

অর্থনীতিতে বিভিন্ন (অর্থনৈতিক) চলকীয় অভিব্যক্তির অনেক তাত্ত্বিক মডেলই চলমান সময়ের ভিত্তিতে গঠন করা হয়েছে তাই এসব মডেলে সময় অন্তরজের ব্যবহার করা হয়।[৩](চ্যাপ্টার ১-৩) একটি অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সঞ্চয় চলক (stock variable) এবং সঞ্চয় চলকের সময় অন্তরজ প্রবাহ চলকের (flow variable) সাথে সম্পর্কযুক্ত। উদাহরণ:

অর্থনৈতিক মডেলগুলোতে কখনো কখনো প্রবাহ চলকের সময় অন্তরজের ব্যবহার দেখা যায়:

  • অর্থনৈতিক আউটপুটের প্রবৃদ্ধি হার হল আউটপুট প্রবাহকে আউটপুট দিয়ে ভাগের সময় অন্তরজ।
  • শ্রম শক্তির প্রবৃদ্ধি হার শ্রম শক্তিকে শ্রম শক্তি দিয়ে ভাগের সময় অন্তরজ।

মুদ্রার এককে পরিমাপ করা হয় না এবং উপরের উদাহরণসমূহের মত নয় এমন আরেকটি সময় অন্তরজও পাওয়া যায়। যেমন:—

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Chiang, Alpha C., Fundamental Methods of Mathematical Economics, McGraw-Hill, third edition, 1984, ch. 14, 15, 18.
  2. Grinfeld, Pavel। "Tensor Calculus 6d: Velocity, Acceleration, Jolt and the New δ/δt-derivative" 
  3. See for example Romer, David (১৯৯৬)। Advanced Macroeconomics। McGraw-Hill। আইএসবিএন 0-07-053667-8