সবুজ তাপস (কাব্যগ্রন্থ)

সবুজ তাপস রচিত ২০১৫ সালের কাব্যগ্রন্থ

সবুজ তাপস বাংলাদেশী কবি সবুজ তাপস রচিত স্ব-শিরোনাম কাব্যগ্রন্থ।[২][১] ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে (মাঘ, ১৪২২ বঙ্গাব্দ) চট্টগ্রামের প্রত্যালীঢ় থেকে প্রকাশিত এটি তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ।[৩][১][৪]

সবুজ তাপস
সবুজ তাপস বইয়ের প্রথম সংস্করণের প্রচ্ছদ
প্রথম সংস্করণের প্রচ্ছদ
লেখকসবুজ তাপস
অঙ্কনশিল্পী
  • তিলোত্তমা তিতলী[১]
  • গোঁসাই পাহ্‌লভী[১]
প্রচ্ছদ শিল্পীনির্ঝর নৈঃশব্দ্য[১]
দেশবাংলাদেশ
ভাষাবাংলা
ধরনকবিতা
প্রকাশকপ্রত্যালীঢ়
প্রকাশনার তারিখ
১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫
মিডিয়া ধরনছাপা (শক্তমলাট)
পৃষ্ঠাসংখ্যা৮৮ (প্রথম সংস্করণ)
আইএসবিএন৯৭৮৯৮৪৩৩৮৮০৩২

এই কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলো দার্শনাশ্রিত। মূলত ২০শ শতাব্দীর শেষার্ধের দিকে পরিচিত আধুনিক লোকায়ত দর্শন দৃষ্টান্তবাদের ইঙ্গিত করে।[২][৫] উত্তর-উপনিবেশিক কবি হাফিজ রশিদ খান উল্লেখ করেছেন: "কবিতা নৈরাজ্যের এই সমসাময়িক দোনোমনো বাস্তবতায় সবুজ তাপস একটি ধ্যান উপস্থাপন করেছেন। তার ধ্যানটির অ্যাকাডেমিক শিরোনাম: দৃষ্টান্তবাদী কবিতা।"[২][৬] অন্যদিকে কবি ও উত্তর আধুনিক তাত্ত্বিক এজাজ ইউসুফী তাপসকে কবিপণ্ডিত হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।[৭] কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলিতে উঠে এসেছে বাঙালির ইতিহাস, ঐতিহ্য, রাজনীতি, ধর্ম, সাধনা, আধুনিক মানুষের দন্ধ, কাম, প্রেম প্রভৃতি আবেগানুভূতী।[১]

নামকরণ সম্পাদনা

নামকরণ প্রসঙ্গে কবি সবুজ তাপসের বক্তব্য হল, এই কাব্যগ্রন্থে অর্ন্তভূক্ত কয়েকটি কবিতায় 'সবুজ তাপস' শব্দযুগলটি থাকায় এই কাব্যগ্রন্থের নাম রাখা হয়েছে সবুজ তাপস[২][৫][৭] কাব্যগ্রন্থটি সবুজ তাপসের আসল নাম সবুজ মিয়া-কে উৎসর্গ করা হয়। যেখানে তিনি উৎসর্গপত্রে লিখেছেন: "সবুজ মিয়া / যার ভেতরের দুনিয়ায় আমি হতে পেরেছি সবুজ টিয়া।"[৮]

সারাংশ সম্পাদনা

কাব্যগ্রন্থে চারটি পর্বে সর্বমোট সত্তরটি কবিতা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে;[১][৩] যেগুলি ২০০১ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে রচিত হয়েছে এবং প্রায় সবগুলো কবিতা গ্রন্থভুক্তির পূর্বে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকা, সাহিত্য পত্রিকা, সাময়িকী ইত্যাদি মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল।[৯]

কাব্যক্রম যথাক্রমে:[৩][১০]

পর্ব কবিতাসংখ্যা টীকা
"খণ্ড-বিখণ্ড ভূখণ্ড" ২১টি [১০]
"বাঁচনভঙ্গি" ২৭টি [১১]
"সালফিউরিক আবেগ" ১১টি [১০]
"পাতার গান" ১১টি [১০]

"খণ্ড-বিখণ্ড ভূখণ্ড" পর্বের বিষয় প্রেম, ভালোবাসা, আবেগ-বেদনা।[৫] এই অংশের প্রথম কবিতা প্রচারবিমুখ[১২] উল্লেখিত একটি কবিতার পঙ্গতি এরকম:

"বাঁচনভঙ্গি" পর্বে রয়েছে টিকে থাকার সংগ্রাম, সমাজে রাষ্ট্রের ভূমিকা, মানবিক প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি। উল্লেখিত একটি পঙ্তি এরকম:

পূর্বে ‘বাঁচনভঙ্গি’ শিরোনামের ১১টি কবিতা দৈনিক পূর্বকোণের ‘সাহিত্য ও সংস্কৃতি’ এবং ১টি দৈনিক সমকালের ‘কালের খেয়ায় প্রকাশিত হয়েছিল। তবে কাব্যগ্রন্থে যথাক্রমে, "বাঁচনভঙ্গি", "বাঁচনভঙ্গি ১" এবং "বাঁচনভঙ্গি ৯" শিরোনামে তিনটি কবিতা অর্ন্তভূক্ত হয়েছে।[১১] কবি ও সাংবাদিক ওমর কায়সার "বাঁচনভঙ্গি ৯"' কবিতা সম্পর্কে বলেন, তাপসের কবিতায় জীবনের নানা অনুষঙ্গ নিয়ে রসিকতা রয়েছে, যার ভেতর দিয়ে জীবনের সিরিয়াস বিষয় উঠে এসেছে।[১৩]

কাব্যগ্রন্থের শেষ পর্ব "পাতার গান", যেখানে একই নামে কবিতা রয়েছে। এই কবিতার ছন্দ প্রতিনিধিত্ব করেছে ভারতীয় উপমহাদেশীয় জীবনাচার, রাজনীতি, ধর্ম।[৫] আরেকটি কবিতার উল্লেখিত একটি পঙ্তি এরকম:

সমালোচনা সম্পাদনা

তাপসের কবিতা সরল এবং গভীরবোধবহ।[১৬] তাপস তার একটি গদ্যে উল্লেখ করেছেন, যে কল্পনার বাস্তব রূপ দেয়া অসম্ভব তাকে দৃষ্টান্তবাদীরা সত্য, মিথ্যা কিছুই বলেন না। একই গদ্যে ফরাসি সাহিত্যতাত্ত্বিক ও কাঠামোবাদী রলঁ বার্তের সমালোচনা করতে মিথ সম্পর্কে তিনি উল্লেখ করেছেন, "মানুষ অতীত দর্শক- এটা দৃষ্টান্তবাদীরাও স্বীকার করেন, কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, একজন কবিকে কবিতার লক্ষ্যে সমাজস্থ ভাষাকাঠামোকে গ্রাজ্য করে যা Always already written কেবল তা অথবা তার নবীকৃত রূপ অথবা তার প্যারডি হাজির করতে হবে এবং অবাস্তব পৌরাণিক বিষয়-আশয়ের সমযদার হতে হবে। কবি অতীত সন্ধানী হোক, নিজেকে এবং অন্যকে গুহাবন্দি করে ফেলার জন্য নয়, অতীতের বাস্তব এবং দরকারি ঘটনা বা চরিত্র বা অভিজ্ঞতার সাথে বর্তমানের সংযোগসেতু দাঁড় করে যুক্তীধর্মী ভবিষ্যত রচনা করার স্বার্থেই।" যদিও তার কাব্যগ্রন্থ যুধিষ্ঠির ধর্মপুত্র, নার্সিসাস, পুলসিরাত, জাহ্ণবী, নন্দন-কানন, শ্যাম, কৃষ্ণধর, অগ্নি প্রভৃতি শব্দের ব্যবহারে সমালোচকের মতে স্ববিরোধী।[২]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. জাহেদ, মাঈন উদ্দিন (১৩ মে ২০১৬)। "কবিতার নতুন পলি: সবুজের তপস্যা"epurbodesh.comচট্টগ্রাম: দৈনিক পূর্বদেশ। পৃষ্ঠা ৪। Archived from the original on ১৩ এপ্রিল ২০২৩। সংগ্রহের তারিখ ১০ ডিসেম্বর ২০১৭ 
  2. লালন, রাজীব (২৭ নভেম্বর ২০১৫)। "সবুজ তাপস: একজন দৃষ্টান্তবাদী কবি"ঢাকা: দৈনিক ভোরের কাগজ। ১ অক্টোবর ২০১৭ তারিখে মূল (ছাপা) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ 
  3. হাসান, মেহেদি। "সবুজ তাপস: এক দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্যভ্রমণ"swapnobangla24.com (অনলাইন)। স্বপ্নবাংলাটুয়েন্টিফোর.কম। ৫ অক্টোবর ২০১৮ তারিখে মূল (ওয়েব) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ 
  4. কামাল, সরওয়ার (২১ সেপ্টেম্বর ২০১৫)। "সবুজ তাপসের কবিতা প্রসঙ্গে"dhakareview.org (অনলাইন)। ঢাকা রিভিউ। ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল (ওয়েব) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ ডিসেম্বর ২০১৭ 
  5. টুপসী, এস বি (২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫)। "সবুজ, তারুণ্যের প্রতীক, তাপস তীক্ষ্ণ তাপস্যাকারী: সবুজ তাপস" (ছাপা)চট্টগ্রাম: দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশ। পৃষ্ঠা ১১। 
  6. তাপস ২০১৫
  7. তাপস ২০১৫, পৃ. ৭।
  8. তাপস ২০১৫, পৃ. ১১।
  9. তাপস ২০১৫, পৃ. ৯।
  10. তাপস ২০১৫, পৃ. ১৩।
  11. মাসুদ, তানভীর (১৪ জানুয়ারি ২০১১)। "সবুজ তাপস'র বাঁচনভঙ্গি': দার্শনিকতাপূর্ণ কবিতানুক্রম"। সাহিত্য ও সংস্কৃতি (ছাপা)। চট্টগ্রাম: দৈনিক পূর্বকোণ। পৃষ্ঠা ৮। ২০২৩-০৪-১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ 
  12. "কবি সবুজ তাপস'র সবুজ তাপস কাব্যগ্রন্থের প্রথম কবিতা"swapnobangla24.com (অনলাইন)। স্বপ্নবাংলাটুয়েন্টিফোর.কম। জুন ২৪, ২০১৬। ৫ অক্টোবর ২০১৮ তারিখে মূল (ওয়েব) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ ডিসেম্বর ২০১৭ 
  13. কায়সার, ওমর। "সবুজ তাপসের কবিতা সম্পর্কে"। মধ্যাহ্ন (এপ্রিল ২০০৯ সংস্করণ)। সবুজ তাপসের কবিতায় রসিকতা রয়েছে। জীবনের নানা অনুষঙ্গ নিয়ে রসিকতা। যেমন, 'জগতের সব প্রাণী সুখী হোক মশা ছাড়া; দাঁড়াও, ট্রূথব্রাস/ করে না সব প্রাণীও-এই কথাও জানিও-' এই রসিকতার ভেতর দিয়ে জীবনের বহু সিরিয়াস বিষয় তিনি তুলেছেনঃ 'লোকটা বাঁশরি বাউল,/ রুমে শুতে দিলাম-/ নিজের দুয়ারে নিজে, নতুন কাজ পেলাম/পেন্ডুলাম।' এভাবে কবিতার মগ্ন হবার প্রমাণ পাই। 
  14. তাপস ২০১৫, পৃ. ৫৯।
  15. তাপস ২০১৫, পৃ. ৮৪।
  16. "শূন্য দশকের কয়েক জন কবির কবিতা বিশ্লেষণ"দৈনিক অধিকার। ২৬ এপ্রিল ২০১৮। ১৩ এপ্রিল ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ এপ্রিল ২০২৩ 
প্রাথমিক সূত্র

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা