পুলসিরাত
ইসলামে পুলসিরাত একটি পারলৌকিক সেতু যা পার না-হয়ে হাশরের ময়দান থেকে বেহেশতে যাওয়া যাবে না। কিয়ামাত হওয়ার পর সকল মানুষকে পুনরুজ্জীবিত করে হাশরের ময়দানে সমবেত করা হবে এবং ইহলৌকিক জীবনের বিচার করা হবে। এই বিচারের পর হাশরের মাঠ থেকে পুলসিরাত পার হয়ে জান্নাতের দিকে যেতে হবে। পুলসিরাত একটি সমসাবদ্ধ শব্দবন্ধ (ব্যাসবাক্য: "যাহা পুল তাহা সেতু")। আরবি ভাষায় সিরাত অর্থ 'পথ'। তবে ইসলামী পরিভাষায় এর অর্থ 'পুল' বা 'সেতু'।[১]
বর্ণনা
সম্পাদনাইসলামী বিশ্বাস অনুসারে, শেষ বিচারের দিনে হাশরের ময়দান চারদিকে জাহান্নাম দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকবে। জাহান্নামের ওপরে একটি সেতু থাকবে। এই সেতুই "পুলসিরাত"। এই সেতু হাশরের ময়দান থেকে জান্নাত পর্যন্ত বিস্তৃত থাকবে। এই সেতুটি হবে ভয়ংকর কেননা এটি হবে চুলের চেয়ে সরু ও তরবারীর চেয়েও ধারালো। অন্ধকারাচ্ছন্ন এই ভয়াবহ পথ প্রতিটি মানুষকে অতিক্রম করতে হবে কেননা জান্নাতে পৌঁছানোর ওটাই হবে একমাত্র পথ।[২]
কুরআন ও হাদীসের বর্ণনা
সম্পাদনাপুলসিরাত সম্পর্কে কুরআন শরীফে বলা হয়েছে: "তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যে তথায় পৌছবে না। এটা আপনার পালনকর্তার অনিবার্য ফায়সালা।" [ সুরা মারঈয়াম ১৯:৭১ ]
হাশরের দিন পুলসিরাত অতিক্রম করা সম্পর্কে মুহাম্মদ (স:) বলেছেন,
"সেদিন কেউ বিদ্যুৎ গতিতে, কেউ বাতাসের গতিতে, কেউবা ঘোড়ার গতিতে, কেউ আরোহীর গতিতে, কেউ দৌড়িয়ে, আবার কেউ হাঁটার গতিতে (পুলসিরাত) অতিক্রম করবে।" (তিরমিজি, দারেমী)
তাৎপর্য
সম্পাদনাইসলামী বিশ্বাস অনুসারে পুলসিরাত মানুষের জান্নাতে যাওয়ার পথে একটি বাধা বা পরীক্ষা। যারা এই পৃথিবীতে কুরআন এবং হাদীসের আইন ও বিধান অনুসারে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে জীবন পরিচালনা করেছে, তারা এই ভয়ংকর সেতু পুলসিরাত অতিক্রম করে জান্নাতে পৌঁছাতে সক্ষম হবে। পুলসিরাতের পথ হবে অত্যন্ত অন্ধকারাচ্ছন্ন। তবে ঈমানদারগণ চারপাশে আলো পাবে কেননা তাদের সৎ আমলসমূহ সেদিন আলো হয়ে তাদের ঘিরে রাখবে। ঈমানদারদের উপরে আল্লাহর রহমত থাকবে। ফলে তারা পুলসিরাত পার হয়ে জান্নাতে পৌঁছাতে পারবে, কিন্তু পাপীদের জন্য পুলসিরাত হবে অত্যন্ত ঘুটঘুটে অন্ধকার। কারণ তাদের কোনো ইমানী আমল নেই, তাই তারা অন্ধকারে আচ্ছন্ন পুলসিরাত পার করতে গিয়ে ধার তরবারির চেয়েও ধার পুলসিরাতে হাত-পা কেটে জাহান্নামে পতিত হবে। তারা পুলসিরাত কখনোই অতিক্রম করতে পারবে না
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ আবদুল কাদির জিলানী: গুনিয়াতুত্ ত্বালিবীন, ২০০৭, মীনা বুক হাউস, ঢাকা। পৃ: ১৫২।
- ↑ ক খ পুলসিরাত -এর বর্ণনা