শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়
শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায় (জন্ম : মার্চ ১৯, ১৯০১ - মৃত্যু : জানুয়ারি ২, ১৯৭৬) একজন ভারতীয় বাঙালি সাহিত্যিক ও চলচ্চিত্র পরিচালক ।
প্রথম জীবন
সম্পাদনাতার বাবার নাম ধরনীধর মুখোপাধ্যায় ও মা হেমবরণী দেবী। তিনি বর্ধমান জেলার অন্ডাল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিন বছর বয়েসে মায়ের মৃত্যুর পর বর্ধমানে (অণ্ডাল গ্রাম) মামাবাড়িতে দাদামশাই রায়সাহেব মৃত্যুঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়ের কাছে বড় হন। দাদামশাই ছিলেন ধনী কয়লা ব্যবসায়ী।[১][২] রানীগঞ্জ শিহারসোল স্কুল জীবনে তার সাথে কাজী নজরুল ইসলামের গভীর বন্ধুত্ব ছিল। সেই সময় শৈলজানন্দ লিখতেন পদ্য আর নজরুল লিখতেন গদ্য। তাদের প্রিটেস্ট পরীক্ষার সময় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হতে তারা দুজনে পালিয়ে যুদ্ধে যোগ দিতে যান। কিন্তু ডাক্তারি পরীক্ষায় শৈলজানন্দ বাতিল হন। নজরুল যু্দ্ধে যোগ দেন। ফিরে এসে কলেজে ভর্তি হয়ে নানা কারণে পড়াশোনা শেষ করতে পারেন নি। নাকড়াকোন্দা স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করে বাগবাজারের কাশিমবাজার পলিটেকনিক কলেজে যোগ দেন টাইপরাইটিং শিখতে। এরপর তিনি কয়লা কুঠিতে চাকরি নেন। বাঁশরী পত্রিকায় তার রচিত 'আত্মঘাতীর ডায়রী' প্রকাশিত হলে দাদামশাই তাকে আশ্রয় থেকে বিদায় দেন।[১]
সাহিত্যপ্রতিভা
সম্পাদনাকুমারডুবি কয়লাখনিতে কাজ করার সময়েই একের পর এক স্মরণীয় গল্প লেখেন। তার লেখাতে কয়লাখনির শ্রমিকদের শোষিত জীবন উঠে আসে। এরপর তিনি কলকাতায় আসেন। এখানে অনেক বিখ্যাত সাহিত্যিক যেমন অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত, প্রেমেন্দ্র মিত্র, মুরলীধর বসু, প্রবোধকুমার সান্যাল, পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায়, দীনেশরঞ্জন দাস প্রমুখের সঙ্গে তার পরিচয় হয় এবং তিনি কালিকলম এবং কল্লোল গোষ্ঠীর লেখক শ্রেণিভুক্ত হন। কল্লোল ও কালিকলম পত্রিকাকে ঘিরে সাহিত্য আন্দোলনের পুরোভাগে ছিলেন তিনি।[১]
খনি শ্রমিকদের নিয়ে সার্থক বাংলা গল্প রচনায় শৈলজানন্দ পথিকৃৎ। উপন্যাস এবং গল্পসহ প্রায় ১৫০টি বই তিনি লিখেছেন। বাংলা বাস্তববাদী পথিকৃৎ হিসেবে তিনি স্মৃতিধন্য হয়ে আছেন। তবে তাঁর বাস্তববাদ পাশ্চাত্য বাস্তববাদের অনুসরণমাত্র নয়। এই বাস্তববাদ বঙ্গদেশের পরিবেশ থেকে উঠে আসা। একে 'বিকল্প বাস্তববাদ' বলাই সঙ্গত।
চলচ্চিত্র ও রেডিও
সম্পাদনানিজের কাহিনী চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় শৈলজানন্দের বিখ্যাত ছবি নন্দিনী, বন্দী, শহর থেকে দূরে, অভিনয় নয়, মানে না মানা (হীরক জয়ন্তী পালিত প্রথম বাংলা ছবি), কথা কও, আমি বড় হব, রং বেরং প্রভৃতি। তার প্রথম ছবি ছিল পাতালপুরী। [১]
আকাশবাণীতে তিনি বহু নাটক প্রযোজনা ও পরিচালনাও করেছিলেন।
পুরস্কার
সম্পাদনাতিনি আনন্দ পুরস্কার, উল্টোরথ পুরস্কার এবং যাদবপুর এবং বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি লিট পান।
শেষ জীবন
সম্পাদনাশেষ জীবনে তিনি পক্ষাঘাতে শয্যাশায়ী হন এবং ২ জানুয়ারি ১৯৭৬ সালে তিনি প্রয়াত হন।
গ্রন্থ তালিকা
সম্পাদনা- বাংলার মেয়ে
- ঝোড়ো হাওয়া (১৩৩০বঙ্গাব্দ)
- ষোলআনা ((১৩৩২বঙ্গাব্দ)
- মানুষের মত মানুষ
- ডাক্তার
- মহাযুদ্ধের ইতিহাস (১৩৩৩বঙ্গাব্দ)
- রূপং দেহি
- পূর্ণচ্ছেদ(১৩৩৬)
- সারারাত
- কয়লাকুঠির দেশ
- নিবেদনমিদং
- চাওয়া পাওয়া
- বন্দী
- ক্রৌঞ্চমিথুন
- অপরূপা
- কথা কও
- নন্দিনী
- রায়চৌধুরি
- আজ শুভদিন
- আমি বড় হব
- রেজিং রিপোর্ট (১৩২৯ বঙ্গাব্দ, ছো
- সাঁওতালি (গল্প)
- দিনমজুর (গল্প)
- মিতেমিতিন (গল্প)
- কনেচন্দন
- এক মন দুই দেহ
- লোকরহস্য (গল্প)
- স্বনির্বাচিত গল্প
- যে কথা বলা হয়নি (চলচ্চিত্র সম্পর্কে স্মৃতিকথা)
- কেউ ভোলে না কেউ ভোলে (নজরুল সম্পর্কিত স্মৃতিকথা)
এই তালিকাটি অসম্পূর্ণ