পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায়
পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায় (ইংরেজি: Pabitra Gangopadhyay) (২৬ সেপ্টেম্বর, ১৮৯৩ — ৭ এপ্রিল, ১৯৭৪) ছিলেন বিংশ শতকের ভারতীয় বাঙালি সাহিত্যিক, যিনি মূলত বাংলা ভাষায় অনুবাদ-সাহিত্যের সমৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন।[১]
পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায় | |
---|---|
জন্ম | |
মৃত্যু | ৭ এপ্রিল ১৯৭৪ | (বয়স ৮০)
পেশা | সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও অনুবাদক |
জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন
সম্পাদনাপবিত্র গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্ম ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দের ২৬ সেপ্টেম্বর (১৩০০ বঙ্গাব্দের ১১ভাদ্র শনিবার)[২] বৃটিশ ভারতের অধুনা বাংলাদেশের ঢাকার বিক্রমপুরের এক দরিদ্র পরিবারে। পিতা ময়মনসিংহের এক স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। বহুসদস্যের পরিবারে আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে বাড়ি ছাড়েন এবং প্রথমদিকে আসামের জোড়হাটে এক মুহুরির কাজ করতে থাকেন। কিন্তু লেখালেখির কাজ ভালবাসতেন। হঠাৎ একবার জোড়হাট থেকে ঢাকায় চলে আসেন এবং বিক্রমপুরের ইতিহাস রচয়িতা ও বিক্রমপুর পত্রিকার সম্পাদক যোগেন্দ্রনাথ গুপ্তর স্নেহচ্ছায়ায় থেকে তার পত্রিকার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হলেন। ঢাকার বিদ্বৎ ও সাহিত্যিক সমাজে পরিচিত হন লেখালেখির মাধ্যমে। কলকাতার পত্র পত্রিকাতেও লিখতে আরম্ভ করেন। লেখালেখির সূত্র ধরেই প্রমথ চৌধুরীর সঙ্গে পরিচয় ঘটে।
কর্মজীবন
সম্পাদনা১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে প্রথম কলকাতায় এসে প্রমথ চৌধুরীর সবুজ পত্র অফিসে চাকরি নেন এবং প্রমথ চৌধুরীর বাসভবন কমলালয়ে আশ্রয় পান। সবুজ পত্রে কাজ করার সুবাদে তাঁর বাংলা সাহিত্যের বিশিষ্ট লেখকদের সাথে পরিচয় ঘটে। দীর্ঘ ৪৫ বৎসর ধরে তিনি কলকাতার সকল প্রগতিমুখী আন্দোলন ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। কল্লোল পত্রিকার সঙ্গে তিনি ছিলেন ঘনিষ্ঠ।[৩] তাকে কল্লোল যুগের অন্যতম অগ্রদূত হিসাবে গণ্য করা হয়। কলকাতার বহু সাহিত্য প্রতিষ্ঠান, পত্রিকার দপ্তর, সাহিত্য মজলিশে তার প্রাণের যোগ ছিল। এমনকি জামশেদপুরের চলন্তিকা সাহিত্য পরিষদের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা ছিল। সারাজীবন তিনি নিজে যেমন লিখেছেন, তেমনই নবীন লেখকদের উৎসাহ জুগিয়েছেন তার চেয়ে প্রচুর।[১] কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল। বহরমপুর জেলে বন্দি অবস্থায় কবি নজরুলের ‘দোলনচাঁপা’ কাব্যগ্রন্থের জন্য লেখা ১৯ টি কবিতার মধ্যে বেশ কয়েকটি কবিতা পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায় ওয়ার্ডারদের সাহায্যে বাইরে আনেন। দোলনচাঁপার প্রুফ দেখা এমনকি ভূমিকা লেখার (দুটি কথা শিরোনামে) কাজ করেন তিনি।[৪] বাঙালি পাঠকদের সঙ্গে মেটারলিংক, ভিক্টর হুগো, ন্যুট হ্যামসন মাক্সিম গোর্কি প্রমুখ বিদেশি সাহিত্যিকদের পরিচয় তিনিই করিয়ে দিয়েছিলেন তাদের সাহিত্য কর্মের সার্থক অনুবাদের মাধ্যমে। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হলো-
- অনূদিত গ্রন্থ-
- মেটারলিংক এর নীলপাখি (১৯২৪)
- ন্যুট হ্যামসনের বুভুক্ষা (১৯২৮)
- ভিক্টর হুগোর লে মিজারেবল (১৯৩৫)
- মাক্সিম গোর্কির একদিন যারা মানুষ ছিল (১৯৩৬)
- আমির খসরুর চাহার দরবেশ
- মৌলিক রচনা-
- চলমান জীবন - দুই খণ্ড (১৯৫৩-৫৪)
মৃত্যু
সম্পাদনাপবিত্র গঙ্গোপাধ্যায় ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দের ৭ এপ্রিল কলকাতায় প্রয়াত হন।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, আগস্ট ২০১৬ পৃষ্ঠা ৩৮৪, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬
- ↑ "কৈফিয়ত"।
- ↑ শিশিরকুমার দাশ (২০১৯)। সংসদ বাংলা সাহিত্যসঙ্গী। সাহিত্য সংসদ, কলকাতা। পৃষ্ঠা ১২২। আইএসবিএন 978-81-7955-007-9।
- ↑ "জেলের সেই দিন আর কবিতার দুপুর"। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৪-০৮।