কল্লোল যুগ বলতে বাঙলা সাহিত্যের একটি ক্রান্তি লগ্নকে বোঝায় যখন বাঙলা কবিতা ও কথাসাহিত্যে আধুনিকতার বীজ অঙ্কুরিত হয়েছিল।

বৈশিষ্ট্য সম্পাদনা

কল্লোল নামীয় একটি সাময়িক পত্রের মাধ্যমে একদল তরুণ কবি-সাহিত্যিকের হাতে পাশ্চাত্য আধুনিকতার পত্তন হয়। অচিরেই অন্যান্য সাময়িক ও সাহিত্য পত্রেও এই আধুনিকতার অগ্নিস্পর্শ লাগে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর কালে ১৯৩০-এর দশক কল্লোল যুগের সমার্থক। কবি বুদ্ধদেব বসু এই নবযুগের অন্যতম কাণ্ডারী। যে সময়ে কল্লোলের আবির্ভাব তখন বাঙলা সাহিত্যের দিগন্ত সর্বকোণে কবি রবীন্দ্রনাথের প্রভাবে প্রোজ্জ্বল। কল্লোল যুগের নাবিকদের মূল লক্ষ্য ছিল রবীন্দ্র বৃত্তের বাইরে সাহিত্যের একটি মৃত্তিকাসংলগ্ন জগৎ সৃষ্টি করা। কল্লোল যুগের একটি প্রধান বৈশিষ্ট ছিল রবীন্দ্র বিরোধিতা।[১][২]

১৯২৩ সালে প্রবর্তিত কল্লোল পত্রিকার কর্ণধার ছিলেন দীনেশরঞ্জন দাশগোকুলচন্দ্র নাগকল্লোল পত্রিকার আবহে দ্রুত অনুপ্রাণিত হয় প্রগতি, উত্তরা, কালিকলম, পূর্বাশা ইত্যাদি পত্রপত্রিকা। অন্যদিকে আধুনিকতার নামে যথেচ্ছাচারিতা ও অশ্লীলতার প্রশ্রয় দেয়া হচ্ছে এই রকম অভিযোগ এনে শনিবারের চিঠি পত্রিকাটি ভিন্ন বলয় গড়ে তোলে মোহিতলাল মজুমদার, সজনীকান্ত দাস, নীরদ চৌধুরী প্রমুখের সক্রিয় ভূমিকায়।

কবিতার ক্ষেত্রে যাদের নাম কল্লোল যুগের শ্রেষ্ঠ নায়ক বিবেচনায় প্রচারিত তারা হলেন কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, বুদ্ধদেব বসু, অমিয় চক্রবর্তী, জীবনানন্দ দাশ, বিষ্ণু দে। এই পাঁচজন বিশিষ্ট কবিকে একসাথে বলা হয় বাংলা সাহিত্যের পঞ্চপাণ্ডব। এ পঞ্চপাণ্ডবই ছিলেন মূলত কল্লোল যুগের কাণ্ডারি। তবে কাজী নজরুল ইসলাম, প্রেমেন্দ্র মিত্র, অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত, সঞ্জয় ভট্টাচর্য, অবনীনাথ রায় প্রমুখ অনেকেরই ভূমিকা কোন অংশে খাটো করে দেখবার উপায় নেই।

অচ্যিন্তকুমার সেন রচিত কল্লোল যুগ এ বিষয়ে একটি প্রামাণ্য গ্রন্থ।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "কল্লোল যুগ – BENGAL BARTA | বেঙ্গল বার্তা" (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০২-২৭ 
  2. Bose, Buddhadeva (১৯৮৮)। Buddhadeba Basura racanāsaṃgraha। Granthālaẏa।