পূর্ব্বাশা
পূর্ব্বাশা বাংলা সাহিত্যে উল্লেখযোগ্য একটি সাময়িক পত্র। কুমিল্লার কয়েকজন উদ্যোগী শিক্ষিত যুবকের সাহিত্য অনুপ্রেরণা থেকেই জন্ম নেয় এই পত্রিকা। পূর্ব্বাশা এই নামটি গ্রহণ করা হয়েছিল ঋগ্বেদ-এর একটি সূক্ত থেকে। পূর্ব্বাশা শব্দের অর্থ পূর্ব দিক। ১৯৩২ থেকে ১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এই পত্রিকা চালু ছিল। ১৯৩২ থেকে ১৯৬৮ পর্যন্ত পূর্ব্বাশা-র সম্পাদনা করতেন সঞ্জয় ভট্টাচার্য। এর সম্পাদক হিসাবে অত্যন্ত পরিচিত ছিলেন সঞ্জয় ভট্টাচার্য।[১] সঞ্জয় ভট্টাচার্য নিজেও ছিলেন সে সময়ের উল্লেখযোগ্য কবি।[২] প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে কথাকার অমলেন্দু চক্রবর্তী ছিলেন তাঁর আত্মীয়। কিছু দিন প্রকাশের বিঘ্ন ছাড়া পুরো সময় কাল জুড়ে এই পত্রিকা বাঙালির মনন-চর্চার রসদ জুগিয়েছে। বংলা সংস্কৃতি জগতের বহু মানুষ এর সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন লেখার সূত্রে। বাংলা আধুনিক সাহিত্যে এই পত্রিকার অবদান তাৎপর্যপূর্ণ।
তার জন্ম কুমিল্লা জেলার শ্যামগ্রাম। তৎকালীন সময়ে এই গ্রাম টি ব্রাহ্মণ বাড়িয়া মহকুমায় অবস্থিত পটভূমি
সম্পাদনাকবি সঞ্জয় ভট্টাচার্য ১৯৩০ এর দশকে তার জন্মস্থান কুমিল্লা থেকে এই পত্রিকা প্রকাশ করতেন।[৩] পরে বুদ্ধদেব বসুর অনুরোধে এর প্রকাশস্থান পরিবর্তন করে কলকাতা থেকে প্রকাশ শুরু করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরসহ বিখ্যাত কবিদের লেখা এই পত্রিকায় প্রকাশ করা হত।
পূর্ব্বাশা পত্রিকা শুধুই পত্রিকা প্রকাশ করে থেমে থাকেনি। প্রকাশানা সংস্থা তৈরি করে নূতন লেখকদের লেখা প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছিল। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ-র নয়নচারা গল্পগ্রন্থটি প্রকাশ করে।[৪] বিভিন্ন লেখকদের বিশ্বের দরবারে যথাযথ পরিচিত করার জন্য তাঁদের রচনা ইংরেজিতে অনুবাদ করে প্রকাশের উদ্যোগ নেয়।
পত্রিকা
সম্পাদনাপ্রথম থেকেই পত্রিকাটি বিশেষ ভাবে পাঠকের কাছে জনপ্রিয়তা অর্জন করে। সমকালীন উল্লেখযোগ্য লেখক এই পত্রিকার লিখতেন। এই পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছে মানিক বন্দ্যপাধ্যায়ের পদ্মানদীর মাঝি, অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত -র কল্লোল যুগ, অমিয়ভূষণ মজুমদারের গড় শ্রীখণ্ড প্রভৃতি।[৫]
পত্রিকার অনেকগুলি বিষেশ সংখ্যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য রবীন্দ্র-স্মৃতি সংখ্যা। রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর অব্যবহিত পরেই ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের আশ্বিন মাসে এই সংখ্যাটি প্রকাশিত হয়। পত্রিকার এই সংখ্যা অসম্ভব জনপ্রিয়তা লাভ করে। এই সংখ্যায় মান ছিল অত্যন্ত উচ্চ। এই সংখ্যার লেখক তালিকা ও প্রবন্ধ শিরোনাম নিম্নরূপ
প্রবন্ধ নাম - লেখক (সূচিপত্র অনুযায়ী)[৬]
১। রবীন্দ্র-স্মৃতি : প্রমথ চৌধুরী
২। রবীন্দ্র-সৃষ্টি : ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়
৩। রবীন্দ্র সঙ্গীতের ভূমিকা: অজয় ভট্টাচার্য্য
৪। নৈর্ব্যক্তিক রবীন্দ্রনাথ: নীলিমা দেবী
৫। প্রেম ও শান্তি : ডক্টর মহেন্দ্র সরকার
৬। রবীন্দ্রনাথের গদ্য কবিতার ছন্দ : প্রবোধ চন্দ্র সেন
৭। বিজ্ঞানী রবীন্দ্রনাথ : ডক্টর প্রভু গুহঠাকুরতা
৮। রবীন্দ্রনাথের রাজনীতি :শচীন সেন
৯। রবীন্দ্রনাথের অপরাধ: লীলাময় রায়
১০। রবীন্দ্রনাথের ছোট গল্প : প্রেমেন্দ্র মিত্র
১১। রবীন্দ্রকাব্যের কবি পুরুষ: মোহিতলাল মজুমদার
১২। শেষ অধ্যায় : ডক্টর নীহার রায়
১৩। রবীন্দ্রনাথ : হুমায়ুন কবির
১৪। রবীন্দ্রনাথ : অচিন্ত্য কুমার সেনগুপ্ত
১৫। রবীন্দ্রনাথ : জীবনানন্দ দাশ
১৬। 'নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ': সঞ্জয় ভট্টাচার্য্য
১৭। অপ্রকাশিত চিঠি (রবীন্দ্রনাথের)
১৮। একটি অপ্রকাশিত কবিতা (রবীন্দ্রনাথের)
যদিও সূচিপত্রের সঙ্গে পত্রিকার মূল প্রবন্ধের শিরোনামের কিছু তফাৎ চোখে পড়ে।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ রায়, জ্যোতিপ্রসাদ। "আপনার হাতে কবিতা দিয়ে খুব আশ্বস্ত বোধ করি"। www.anandabazar.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-২৬।
- ↑ "আনন্দবাজার পত্রিকা - পুস্তক পরিচয"। archives.anandabazar.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-২৬।
- ↑ "কলকাতা পুরশ্রী" (পিডিএফ)। কলকাতা পুরসভা পত্রিকা। ১৮। ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুলাই ২০২১।
- ↑ রায়, জ্যোতিপ্রসাদ। "আপনার হাতে কবিতা দিয়ে খুব আশ্বস্ত বোধ করি"। www.anandabazar.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-২৬।
- ↑ রায়, জ্যোতিপ্রসাদ। "আপনার হাতে কবিতা দিয়ে খুব আশ্বস্ত বোধ করি"। www.anandabazar.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-২৬।
- ↑ 'পূর্ব্বাশা রবীন্দ্র স্মৃতি' সংখ্যা, আশ্বিন ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ, সূচিপত্র