লি জার্মন

নিউজিল্যান্ডীয় ক্রিকেটার

লি কেনেথ জার্মন (ইংরেজি: Lee Germon; জন্ম: ৪ নভেম্বর, ১৯৬৮) ক্রাইস্টচার্চে জন্মগ্রহণকারী সাবেক নিউজিল্যান্ডীয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারনিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। দলে তিনি মূলতঃ উইকেট-রক্ষক ছিলেন। পাশাপাশি দলের অধিনায়কেরও দায়িত্ব পালন করেছেন লি জার্মন। ঘরোয়া ক্রিকেটে ক্যান্টারবারি এবং ওতাগো দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। তন্মধ্যে, আধুনিক যুগে ক্যান্টারবারি ক্রিকেটের অন্যতম সফলতম অধিনায়ক হিসেবে স্মরণীয় হয়ে আছেন।[১] প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অনানুষ্ঠানিকভাবে এক বলে সর্বাধিক ৭০ রানের রেকর্ড গড়েন।

লি জার্মন
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নামলি কেনেথ জার্মন
জন্ম (1968-11-04) ৪ নভেম্বর ১৯৬৮ (বয়স ৫৫)
ক্রাইস্টচার্চ, নিউজিল্যান্ড
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি লেগ ব্রেক
ভূমিকাউইকেট-রক্ষক
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ১৯৩)
১৮ অক্টোবর ১৯৯৫ বনাম ভারত
শেষ টেস্ট১০ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৭ বনাম ইংল্যান্ড
ওডিআই অভিষেক
(ক্যাপ ৯২)
৮ ডিসেম্বর ১৯৯৪ বনাম শ্রীলঙ্কা
শেষ ওডিআই৪ মার্চ ১৯৯৭ বনাম ইংল্যান্ড
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
১৯৮৭-১৯৯৮ক্যান্টারবারি
২০০০-২০০২ওতাগো
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট ওডিআই এফসি এলএ
ম্যাচ সংখ্যা ১২ ৩৭ ১০৩ ১৩৬
রানের সংখ্যা ৩৮২ ৫১৯ ৩,১২৩ ১,৫৮৬
ব্যাটিং গড় ২১.২২ ১৯.৯৬ ২৯.১৮ ১৯.৩৪
১০০/৫০ ০/১ ০/৩ ৪/১০ ০/৭
সর্বোচ্চ রান ৫৫ ৮৯ ১৬০* ৮৯
বল করেছে ১০
উইকেট
বোলিং গড় ১২.০০
ইনিংসে ৫ উইকেট
ম্যাচে ১০ উইকেট - -
সেরা বোলিং ১/১২
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ২৭/২ ২১/৯ ২৫৮/২৬ ১১৯/২৮
উৎস: ক্রিকইনফো, ৭ জানুয়ারি ২০১৬

প্রারম্ভিক জীবন সম্পাদনা

৫ জানুয়ারি, ১৯৮৮ তারিখে ১৯ বছর বয়সে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ক্যান্টারবারির পক্ষে তার অভিষেক ঘটে। ল্যাঙ্কাস্টার পার্কে অনুষ্ঠিত ঐ খেলায় দলের প্রতিপক্ষ ছিল অকল্যান্ড দল। এরপর প্রায় তিন বছর পর দলের অধিনায়ক মনোনীত হন। ৩১ ডিসেম্বর, ১৯৯০ তারিখে রড ল্যাথামের কাছ থেকে তিনি এ দায়িত্ব পান।

তার নেতৃত্বে ক্যান্টারবারি আশাতীত সাফল্য লাভ করে। ১৯৯১-৯২, ১৯৯২-৯৩ ও ১৯৯৩-৯৪ মৌসুমে নিউজিল্যান্ডের একদিনের প্রতিযোগিতা হিসেবে স্বীকৃত ৫০ ওভারের শেল কাপের শিরোপা জয় করে। এরপর ১৯৯৫-৯৬ ও ১৯৯৬-৯৭ মৌসুমেও দলটি শিরোপা জয় করেছিল। এছাড়াও, ১৯৯৩-৯৪, ১৯৯৬-৯৭ ও ১৯৯৭-৯৮ মৌসুমে তার অধিনায়কত্বে নিউজিল্যান্ডের প্রথম-শ্রেণীর প্রতিযোগিতা শেল ট্রফি জয় করে। ১৯৯২ সালে নিউজিল্যান্ড অ্যাকশন ক্রিকেট ট্রফির একমাত্র আসরটিতেও দলটি শিরোপা পায়।

খেলোয়াড়ী জীবন সম্পাদনা

১৯৯০-এর দশকের শুরুতে জার্মনের উইকেট-রক্ষণে দক্ষতা ও অধিনায়কের সক্ষমতা থাকা স্বত্ত্বেও জাতীয় দল নির্বাচকমণ্ডলী কর্তৃক তিনি প্রায়শঃই উপেক্ষিত হয়ে আসছিলেন। ১৯৯৩-৯৪ মৌসুমে ঘরোয়া প্রতিযোগিতায় ক্যান্টারবারিকে নেতৃত্ব দিয়ে শিরোপা লাভের পর জানুয়ারি, ১৯৯৪ সালে সফরকারী পাকিস্তান দলের বিপক্ষে অপরাজিত ১০০* রান তোলার পর অবশেষে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দলে খেলার সুযোগ পান। ইংল্যান্ডে ১৯৯৪ এর শীতকালীন সফরে বাদ পড়লেও ১৯৯৪-৯৫ মৌসুমে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে দলের সদস্য করা হয়। তিনি দলের নিয়মিত উইকেট-রক্ষক ও ব্যাটসম্যান অ্যাডাম প্যারোরের সহকারী হন। এ সফরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তার একদিনের আন্তর্জাতিকে অভিষেক ঘটে। ৮ ডিসেম্বর ব্লুমফন্টেইনের গুডইয়ার পার্কে বৃষ্টিবিঘ্নিত খেলায় তিনি উইকেট-রক্ষক এবং প্যারোরে বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলেন। ঐ সফরে জার্মন খুব কমই খেলায় অংশ নিয়েছিলেন।

নিউজিল্যান্ডীয় কোচ গ্লেন টার্নার সাবেক উইকেট-রক্ষক ব্যারি মিলবার্নইয়ান স্মিথের পরামর্শক্রমে ঐ সময়ের নিউজিল্যান্ডের সেরা উইকেট-রক্ষক হিসেবে তাকে মনোনয়ন দেয়া হয়। সাবেক নিউজিল্যান্ডীয় অধিনায়ক ও দলের তৎকালীন জ্যেষ্ঠ সদস্য মার্টিন ক্রোও অ্যাডাম প্যারোরের তুলনায় তাকে অধিক নির্ভরযোগ্য মনে করতেন।[২]

অর্জনসমূহ সম্পাদনা

সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে বারো টেস্টে অংশগ্রহণ করেছেন লি জার্মন। সবগুলোতেই দলের নেতৃত্বে ছিলেন তিনি।[৩] খুব স্বল্পসংখ্যক উইকেট-রক্ষকদের মধ্যে তিনি অন্যতম হিসেবে দশ টেস্টের অধিক খেলায় বাইয়ের তুলনায় ডিসমিসাল বেশি করেছেন। টেস্ট ক্রিকেটে তিনি ২৯ ডিসমিসাল করেন ও এর বিপরীতে মাত্র ২৪ বাই রান দিয়েছিলেন।[৪]

১৯৯১-৯২ মৌসুমে সর্বাধিক ৩৪ ডিসমিসাল করেন। তন্মধ্যে, ৩১ ক্যাচ ও ৩ স্ট্যাম্পিং ছিল।[৫] ১৯৯২-৯৩ মৌসুমে ক্রাইস্টচার্চে অনুষ্ঠিত খেলায় নর্দার্ন ডিস্ট্রিক্টসের বিপক্ষে এক ইনিংসে সর্বাধিক ৬ ডিসমিসাল করেন। একই খেলায় সর্বাধিক ৯ ডিসমিসাল করেন। সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে ২৩৮ ডিসমিসাল করেন যার ২১৭টি ক্যাচ ও ২১টি স্ট্যাম্পিং ছিল।[১]

১৯৮৮-৮৯ মৌসুমে ওতাগো’র বিপক্ষে শেল কাপের খেলায় ৫ ডিসমিসাল করেন। এ প্রতিযোগিতায় তিনি সর্বমোট ৯৬ ডিসমিসাল করেন যার ৭৮টি ক্যাচ ও ১৮টি স্ট্যাম্পিং ছিল।[৫]

অবসর সম্পাদনা

১৯৯৮ সালে ক্রিকেট থেকে অবসর নেয়ার পর ক্যান্টারবারির সাবেক কোচ ডেনিস আবেরহার্ট ও নিউজিল্যান্ডীয় কোচ গ্লেন টার্নারের চাপে ওতাগো দলের পক্ষে অংশ নিতে বাধ্য হন। ২০০০ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলেন। তবে পূর্বেকার সাফল্যে আর যেতে পারেননি।

ব্যক্তিগত জীবন সম্পাদনা

১৯৯৮ সালে নিউজিল্যান্ড ব্যাংকের পক্ষে সাউথ আইল্যান্ড ডেভেলপম্যান্ট ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০০০ সালে সেন্ট অ্যান্ড্রুজ কলেজে ডেভেলপম্যান্ট অফিসার হিসেবে নিযুক্ত হন। ২০০৪ সালে সিইও হিসেবে মেইনল্যান্ড সকারে ১০-মাসের জন্য দায়িত্ব পালন শেষে নেলসনে তাসমান রাগবি ইউনিয়নে সিইও হন। ২০০৯ সালে নিজ শহর ক্রাইস্টচার্চে ফিরে যান ও ক্যান্টারবারি ক্রিকেটে সিইও হন।[৬]

ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত জার্মন টনি’র সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। এ দম্পতির চার সন্তান রয়েছে।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Appleby, Matthew / Canterbury cricket : 100 greats, Auckland [N.Z.] : Reed, 2002.
  2. Turner, Glenn Turner / Lifting the covers, Dunedin, N.Z. : Longacre Press, 1998
  3. Lynch, Steven। "Lee Germon captained New Zealand in all his 12 Tests. How many others played their entire Test career as captain?"Ask Steven - Cricinfo.com। সংগ্রহের তারিখ ৪ জুন ২০১২ 
  4. Rajesh, S / The unsung heroes behind the stumps : 30 September 2005
  5. Currie, Shayne / Germon closes door on illustrious wicketkeeping career, The Press, Christchurch, New Zealand 27 March 1998
  6. "Lee Germon to be new Canterbury chief executive"from Stuff 1/1/2009

আরও দেখুন সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা

পূর্বসূরী
কেন রাদারফোর্ড
নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দলের অধিনায়ক
১৯৯৫-১৯৯৭
উত্তরসূরী
স্টিফেন ফ্লেমিং