লন্ডন–কলকাতা বাস পরিষেবা

ইংল্যান্ডের রাজধানী লন্ডন থেকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজধানী কলকাতা পর্যন্ত বাস পরিষেবা বিশ্বের দীর্ঘতম বাস পথ হিসাবে বিবেচিত।[১][২][৩] ১৯৫৭ সালে শুরু এই বাস বেলজিয়ামযুগোস্লাভিয়া হয়ে উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ভারতে প্রবেশ করত।[৪] এই বাস পথ হিপি পথ হিসাবেও বিবেচিত। সূত্রের মতে, বাসে করে লন্ডন থেকে কলকাতা আসতে ৫০ দিন সময় লাগত। এই পরিষেবায় একমুখী বাস ভ্রমণ ১০,০০০ মাইল (১৬,০০০ কিলোমিটার) এবং উভয়মুখী বাস ভ্রমণ ২০,৩০০ মাইল (৩২,৭০০ কিলোমিটার) দূরত্ব অতিক্রম করত। ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত এই পরিষেবা সক্রিয় ছিল।[৫] ১৯৭৩ সালে একমুখী বাস ভ্রমণের খরচ £৮৫ এবং উভয়মুখী বাস ভ্রমণের খরচ £১৪৫। খাদ্য, ভ্রমণ ও বাসস্থান এই খরচের অন্তর্ভুক্ত।[৩]

পথ সম্পাদনা

এই বাস পরিষেবা অ্যালবার্ট ট্র্যাভেল দ্বারা পরিচালিত ছিল।[৬] ১৫ এপ্রিল ১৯৫৭-এ লন্ডন থেকে এর প্রাথমিক যাত্রা শুরু হয়েছিল।[৭] ৫০ দিন পর এই বাস কলকাতায় পৌঁছেছিল। ভ্রমণের সময় এটি প্রথমে ইংল্যান্ড থেকে বেলজিয়ামে যেত, এবং সেখান থেকে পশ্চিম জার্মানি, অস্ট্রিয়া, যুগোস্লাভিয়া, বুলগেরিয়া, তুরস্ক, ইরান, আফগানিস্তানপাকিস্তান হয়ে উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ভারতে প্রবেশ করত। ভারতে প্রবেশ করার পর এটি নতুন দিল্লি, আগ্রা, এলাহাবাদ (বর্তমান প্রয়াগরাজ) ও বারাণসী হয়ে কলকাতায় পৌঁছত।[৫]

সুযোগসুবিধা সম্পাদনা

এই বাস পরিষেবায় পড়ার সুবিধা, সমস্ত যাত্রীদের জন্য পৃথক শোয়ার বাঙ্ক, ফ্যানচালিত হিটার ও একটি রান্নাঘর ছিল। বাসের উপরের তলায় সামনের দিকে একটি অবজার্ভেশন লাউঞ্জ ছিল। এই বাস ভ্রমণ কেবল ভ্রমণের জায়গায় অনেকটা পর্যটনের মতো ছিল। এই বাসে বেতার সম্প্রচার এবং পার্টির জন্য সঙ্গীত ব্যবস্থাও ছিল।[১] সেখানে ভারতের পর্যটন কেন্দ্রে সময় কাটানোর অবসর ছিল, যেমন তাজমহলবারাণসী। এছাড়া তেহরান, সালৎসবুর্গ, কাবুল, ইস্তাম্বুলভিয়েনাতে কেনাকাটার সুবিধা ছিল।[৩][৮]

পরবর্তী ইতিহাস সম্পাদনা

কয়েক বছর পর এই বাস এক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিল এবং এটি ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে গিয়েছিল। পরে ব্রিটিশ ভ্রমণকারী অ্যান্ডি স্টুয়ার্ট এই বাস কিনেছিলেন। তিনি একে এক দোতলা মোবাইল হাউসে পরিণত করেছিলেন। এই দোতলা বাসের নাম "অ্যালবার্ট" রাখা হয়েছিল এবং ১৯৬৮ সালের ৮ অক্টোবরে এটি সিডনি থেকে ভারত হয়ে লন্ডনে গিয়েছিল। এই বাসটি ১৩২ দিনে লন্ডনে পৌঁছেছিল। অ্যালবার্ট ট্যুরস ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া ভিত্তিক এক কোম্পানি এবং এটি লন্ডন–কলকাতা–লন্ডন এবং লন্ডন–সিডনি–লন্ডন বাস পরিষেবা প্রদান করত।[৯]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "This Was 'World's Longest Bus Route' From Kolkata To London"Curly Tales (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২০-০৭-০৬। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৭-২৪ 
  2. "A Bus Ride From London to Kolkata in 1950s? Yes, The Viral Photo is Real"News18। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৭-২৪ 
  3. Civic Affairs (ইংরেজি ভাষায়)। 4। P. C. Kapoor at the Citizen Press। ১৯৫৭ – books.google.com-এর মাধ্যমে। 
  4. "London Calcutta Bus Trip 1957 london India Editorial Stock Photo - Stock Image | Shutterstock"Shutterstock Editorial (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৭-২৪ 
  5. "Samayam"malayalam.samayam.com। ২ জুলাই ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জুন ২০২৩ 
  6. "London to Calcutta by Road? Picture of 1950s Albert Travel Bus Service is Going Viral, Know Details About This Fascinating Historic Journey"Unique News Online (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২০-০৭-০২। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০২-১৯ 
  7. Whispers of Yesterday, Rare Historical Photos, Old Photos (ইংরেজি ভাষায়), সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-১১-২৯ 
  8. admin (২০২০-০৭-০৪)। "ലണ്ടൻ – കൽക്കട്ട ബസ് റൂട്ട്"News Kerala online (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২০-০৭-০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৭-২৪ 
  9. Eat, Tech Travel (২০২০-০৭-০৩)। "ലണ്ടനിൽ നിന്നും ഇന്ത്യയിലെ കൽക്കട്ടയിലേക്ക് ഒരു ബസ് സർവ്വീസ്"Technology & Travel Blog from India (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৭-৩১