লতিফুর রহমান (ব্যবসায়ী)

বাংলাদেশী ব্যবসায়ী

লতিফুর রহমান (২৮ আগস্ট ১৯৪৫ - ১ জুলাই ২০২০) বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি। তিনি দৈনিক প্রথম আলোদ্য ডেইলি স্টার পত্রিকা দুইটির প্রতিষ্ঠা এবং বাংলাদেশের বাজারে আন্তর্জাতিক ফাস্টফুড চেইন পিৎজা হাটকেন্টাকি ফ্রাইড চিকেন প্রচলনের জন্য সমধিক পরিচিত। ব্যবসায়ে নৈতিকতা ও সামাজিক দায়বদ্ধতার স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ২০১২ সালে বিজনেস ফর পিস অ্যাওয়ার্ড পান।[][][]

লতিফুর রহমান
জন্ম(১৯৪৫-০৮-২৮)২৮ আগস্ট ১৯৪৫
মৃত্যু১ জুলাই ২০২০(2020-07-01) (বয়স ৭৪)
জাতীয়তাবাংলাদেশি
নাগরিকত্ব বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণব্যবসায়ী
দাম্পত্য সঙ্গীশাহনাজ রহমান
পুরস্কারবিজনেস ফর পিস অ্যাওয়ার্ড

জন্ম ও পারিবারিক জীবন

সম্পাদনা

লতিফুর রহমানে জন্ম ভারতের জলপাইগুড়িতে। দুই বোনের পর তাঁর জন্ম। পরে আরও এক বোন ও এক ভাই। তার স্ত্রীর নাম শাহনাজ রহমান। তাদের এক ছেলে আর দুই মেয়ে।[] ‘তার দাদা খান বাহাদুর ওয়ালিউর রহমানের জন্ম কুমিল্লা চৌদ্দগ্রামের চিওড়া গ্রামে। দাদা পরবর্তীতে চলে যান আসামের জলপাইগুড়িতে। তার দাদা আইন পাস করে জলপাইগুড়ি বারে আইনি পেশা শুরু করেছিলেন। ১৮৮৫ সালে সেখানে কিছু জমি কিনে চা-বাগান শুরু করেন। ব্রিটিশ মালিকানার বাইরে ওয়ালিউর রহমান ছিলেন প্রথম স্থানীয় চা বাগানের মালিক। লতিফুর রহমানের বাবা মুজিবুর রহমানের জন্ম জলপাইগুড়িতে। কলকাতায় লেখাপড়া করে আসামের তেজপুরে ফিরে সেখানেই জমি কিনে চা-বাগান তৈরি করেন। মুজিবুর রহমানও খান বাহাদুর উপাধি পান। দেশভাগের পর সবাই চলে আসেন ঢাকায়। ১৯৫১ বা ৫২ সালের দিকে সিলেটে নতুন করে চা-বাগান করেন। মুজিবুর রহমান পাটের ব্যবসাও শুরু করেন। ভৈরব-আশুগঞ্জ এলাকাজুড়ে পাটের ব্যবসা ছিল। []

শিক্ষাজীবন

সম্পাদনা

লতিফুর রহমান পড়াশোনা শুরু করেন সেন্ট ফ্রান্সিস স্কুলে। পরে ভর্তি হন হলিক্রস স্কুলে। সে সময় হলিক্রসে ছেলেরাও পড়ত। ১৯৫৬ সালে লতিফ শিলংয়ে যান এবং সেন্ট এডমন্ডস স্কুলে ক্লাস থ্রিতে ভর্তি হন। সেখান থেকে কলকাতা সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে যান। []

কর্মজীবন

সম্পাদনা

১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ, হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা—এসব কারণে ঢাকায় ফিরে আসেন লতিফুর রহমান। এসে পাটের ব্যবসায় ঢুকে যান। তার বাবা তখন চাঁদপুরে গড়ে তুলেছেন ডব্লিউ রহমান জুট মিল। ১৯৬৩ সালে কাজ শুরু হলেও উৎপাদন শুরু হলো ১৯৬৬ সালে। সেখানে ট্রেইনি হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি ১৯৬৬ সালে। দেড় বছর কাজ শেখার পর একজন নির্বাহী হিসেবে যোগ দেন। এভাবে কাজ ১৯৭১ সাল পর্যন্ত। লতিফুর রহমান ১৯৭২ সালে যখন সবকিছু নতুন করে শুরু করেছিলেন, তখন তার সঙ্গে কাজ করতেন মাত্র পাঁচজন। ট্রান্সকম গ্রুপে এখন কাজ করছেন ১০ হাজারের বেশি মানুষ। শুরুতে ৫০ লাখ টাকা ব্যাংকঋণ নিয়ে নতুন করে শুরু করেছিলেন তিনি। এখন এই গ্রুপের বার্ষিক লেনদেনের পরিমাণ সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার বেশি।[]

ব্যবসায়ীক কর্মকাণ্ড

সম্পাদনা

লতিফুর রহমান নেস্লে বাংলাদেশ, হোলসিম বাংলাদেশ এবং ন্যাশনাল হাউজিং ফাইন্যান্স ও ইনভেস্টমেন্টের চেয়ারম্যান। তিনি লিন্ডে বাংলাদেশ এবং ব্র্যাকের গভর্নিং বোর্ডের পরিচালক। এছাড়া তিনি আইসিসি বাংলাদেশের সহ-সভাপতি। ট্রান্সকম গ্রুপ যার উৎপত্তি হয়েছিল চা চাষের মাধ্যমে, এখন বাংলাদেশের অন্যতম একটি বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠান, যার রয়েছে ১৬টি কোম্পানি। ১০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান করেছে এ গ্রুপ।[][]

মৃত্যু

সম্পাদনা

রহমান তাঁর বর্তমান গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ১ জুলাই ২০২০ সালে বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন। [১০][১১][১২] তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও দুই মেয়ে এবং অসংখ্যা গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। ডিসেম্বর ২০২৪ এ ট্রান্সকম গ্রুপ-এর সিমিন রহমানের বিরুদ্ধে তার ছোট বোন নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প জালিয়াতির মাধ্যমে মৃত বাবার শেয়ার আত্মসাতের অভিযোগ আনেন।[১৩][১৪][১৫] উক্ত জালিয়াতির বিষয়ে ১৮ মে ২০২৫ ইলিয়াস হোসেন-এর ফিফটিন মিনিটস নামক ইউটিউব তদন্ত প্রতিবেদন অনুষ্ঠানে দেখানো হয়, সিমিন রহমানকে এ বিষয়ে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান ও ডেইলি স্টারের মাহফুজ আনাম অনৈতিকভাবে সহযোগিতা করেন।[১৬][১৭]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "বিজনেস ফর পিস ওয়েবসাইট"। ১৮ এপ্রিল ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ অক্টোবর ২০১২ 
  2. "দৈনিক সমকাল"। ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ অক্টোবর ২০১২ 
  3. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২১ জুলাই ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ আগস্ট ২০১৯ 
  4. "Transcom chief dreams big"দ্য ডেইলি স্টার। জুন ১২, ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ১৩, ২০১৬ 
  5. "লতিফুর রহমান: শূন্য থেকে শীর্ষে"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৭-০১ 
  6. "দৈনিক প্রথম আলো"। ২৫ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ জানুয়ারি ২০১৪ 
  7. "Latifur Rahman"। Bloomberg। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জুলাই ২০১৬ 
  8. Anam, Shaheen (জুলাই ৫, ২০১৬)। "A nightmare recurs"দ্য ডেইলি স্টার। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ১৩, ২০১৬ 
  9. "Latifur Rahman's grandson killed"দ্য ডেইলি স্টার। জুলাই ৩, ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ১৩, ২০১৬ 
  10. "ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমান মারা গেছেন"বিবিসি বাংলা। সংগ্রহের তারিখ ১ জুলাই ২০২০ 
  11. "বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমান আর নেই"এনটিভি বিডি। সংগ্রহের তারিখ ১ জুলাই ২০২০ 
  12. "ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমান আর নেই"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ১ জুলাই ২০২০ 
  13. "ট্রান্সকমের দলিল জালিয়াতি"banglanews24.com। ৬ ডিসেম্বর ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ২২ এপ্রিল ২০২৫ 
  14. Sun, Daily (ডিসেম্বর ২০২৪)। "Forgery in Transcom documents"daily-sun (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২২ এপ্রিল ২০২৫ 
  15. "RJSC papers doctored with fake stamps"The Financial Express (ইংরেজি ভাষায়)। ৬ ডিসেম্বর ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ২২ এপ্রিল ২০২৫ 
  16. জনকণ্ঠ, দৈনিক (২ মে ২০২৫)। "তিন মাসের অনুসন্ধান শেষ করেছে টিম ফিফটিন মিনিটস: ইলিয়াস হোসেন"দৈনিক জনকণ্ঠ || Daily Janakantha (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১৯ মে ২০২৫ 
  17. "এ যেন কেয়ামতের আলামত! #elias_hossain"ইলিয়াস হোসােনের অফিসিয়াল ইউটিউব পাতা। ১৮ মে ২০২৫। সংগ্রহের তারিখ ১৯ মে ২০২৫ 

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা