রুহুল আমিন (বীর প্রতীক)

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা

রুহুল আমিন (জন্ম: ২৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৩) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে। [১]

রুহুল আমিন
জন্ম২৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৩
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত)
 পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর প্রতীক
দাম্পত্য সঙ্গীআনোয়ারা বেগম

জন্ম ও শিক্ষাজীবন সম্পাদনা

রুহুল আমিনের জন্ম ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলার মঙ্গলকান্দি গ্রামে। তার বাবার নাম আবদুল জব্বার এবং মায়ের নাম ফুলবিয়া। তার স্ত্রীর নাম আনোয়ারা বেগম। এ দম্পতির তিন ছেলে তিন মেয়ে। [২]

কর্মজীবন সম্পাদনা

রুহুল আমিন প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের হাবিলদার ছিলেন। ১৯৭১ সালে এই রেজিমেন্টের অবস্থান ছিল যশোর সেনানিবাসে। মার্চ মাসের শুরু থেকে তাদের কিছুসংখ্যক সৈনিক শীতকালীন প্রশিক্ষণে ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তারা ২৯ মার্চ রাতে সেনানিবাসে ফিরে এসে ৩০ মার্চ বিদ্রোহ করেন তারা। পরে সবাই চৌগাছায় একত্র হন এবং মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা সম্পাদনা

১৯৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর সিলেট শহরের উপকণ্ঠে এমসি কলেজের উত্তর দিকে বেশ কয়েকটি টিলায় ওপর এলেন একদল মুক্তিযোদ্ধা। তারা প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈনিক ও গণবাহিনীর সদস্য। ইস্ট বেঙ্গলের একজন সৈনিক রুহুল আমিনও ছিলেন এ দলে। ৫০০ গজ দূরেই পাকিস্তানি সেনাদের অবস্থান। সেদিন মুক্তিযোদ্ধাদের পোশাক, স্টিলের হেলমেট, অস্ত্রশস্ত্র দেখতে হুবহু পাকিস্তানিদের মতো ছিল। ফলে, পাকিস্তানিরা চিন্তাই করতে পারেনি এঁরা মুক্তিবাহিনী। মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানিদের চোখের সামনেই ট্রেঞ্চ খুঁড়ে পজিশন নিতে থাকেন। এ সময় হঠাৎ মুক্তিবাহিনীর ডেলটা কোম্পানির অবস্থানের সামনের রাস্তায় পাকিস্তানি বাহিনীর একটি আর্টিলারি গান ও দুটি জিপের কনভয় আসে। তখন মুক্তিযোদ্ধারা তাদের আক্রমণ করেন। প্রায় ২৫ জন পাকিস্তানি সেনা তাৎক্ষণিক হতাহত হয় সে সময়। এরপর পাকিস্তানিরাও পাল্টা আক্রমণ চালায় এবং মর্টারের সাহায্যে গোলা বর্ষণ করতে থাকে। শুরু হয় তুমুল যুদ্ধ। দুপুরে পাকিস্তানিরা মরিয়া হয়ে তাদের সর্বশক্তি নিয়ে মুক্তিবাহিনীর ওপর প্রচণ্ড আক্রমণ চালায়। এ সময় মুক্তিবাহিনীর মর্টারের গোলা শেষ হয়ে যায়। তখন রুহুল আমিনসহ আরও কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা সাহসী ভূমিকা পালন করেন। তারা জীবনের মায়া ত্যাগ করে হালকা মেশিনগান, রাইফেল দিয়েই দৃঢ়তার সঙ্গে পাকিস্তানিদের মোকাবিলা করেন। তাদের সাহস, মনোবল, বীরত্ব ও রণকৌশলের কাছে পাকিস্তানি বাহিনী শেষ পর্যন্ত হার মানতে বাধ্য হয়। সেদিন এই যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর প্রায় ৮০ জন নিহত ও অসংখ্য আহত হয়। মুক্তিবাহিনীর ২০ জন শহীদ ও ২১-২২ জন আহত হন। রুহুল আমিনও এই যুদ্ধে আহত হন। রুহুল আমিন সিলেট এমসি কলেজ, আটগ্রাম, ৩০-৩১ জুলাই জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলার কামালপুরে যুদ্ধ করেছেন। সিলেট এমসি কলেজের যুদ্ধে সাহসিকতা ও বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য রুহুল আমিন বীর প্রতীক খেতাব পান। [৩]

পুরস্কার ও সম্মাননা সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না"[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ], দৈনিক প্রথম আলো, তারিখ: ০৫-০৫-২০১১
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ৩৫৩। আইএসবিএন 9789843351449 
  3. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (প্রথম খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। এপ্রিল ২০১২। পৃষ্ঠা ২৯২। আইএসবিএন 9789843338884 

পাদটীকা সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা