রুদ্রাক্ষ (পুঁতি)

ভারতীয় ধর্মে প্রার্থনার উপকরণ

রুদ্রাক্ষ (সংস্কৃত: रुद्राक्ष) হল রুদ্রাক্ষ গাছের বীজ বা পুঁতি, যার শুকনো পুঁতিগুলি  হিন্দু শৈব, বৌদ্ধশিখ ধর্মের অনুসারীরা প্রার্থনার পুঁতি হিসেবে ব্যবহার করে।[১] যখন তারা পাকা হয়, রুদ্রাক্ষ পুঁতি অখাদ্য নীল বাইরের ফলের দ্বারা আবৃত থাকে তাই কখনও কখনও তাদের "ব্লুবেরি পুঁতি" বলা হয়।[২]

রুদ্রাক্ষের পুঁতি

রুদ্রাক্ষ হল সংস্কৃত যৌগিক শব্দ যা রুদ্র (रुद्र) ও অক্ষ (अक्ष) নিয়ে গঠিত। রুদ্র হল শিবের বৈদিক নামগুলির মধ্যে একটি।[৩][টীকা ১] সংস্কৃত অভিধানগুলি অক্ষ (अक्ष) কে চোখ হিসাবে অনুবাদ করে,[৪] তদানুসারে, রুদ্রাক্ষকে "রুদ্রের চোখ" হিসেবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে।[৫]

প্রকার ও গঠন সম্পাদনা

 
পঞ্চমুখী রুদ্রাক্ষ

রুদ্রাক্ষ পুঁতিকে অনেকগুলি দিক বা "মুখ" (মুখী) বলে বর্ণনা করা হয় যা পুঁতির সাথে রেখা বা ফাটল দ্বারা পৃথক করা হয়। পুঁতির সাধারণত ১ থেকে ২১ মুখ থাকে, যদিও বেশিরভাগেরই ৪ থেকে ৬ মুখ থাকে।[৬] যাদের এক মুখ তারাই বিরল।[৬] রুদ্রাক্ষ পুঁতিগুলি প্রায়শই বাদামী হয়, যদিও সাদা, লাল, হলুদ বা কালো পুঁতিও পাওয়া যেতে পারে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

অনেক ধরনের পাথর বর্ণনা করা হয়েছে। গৌরী শঙ্কর হল দুটি পুঁতি যা প্রাকৃতিকভাবে সংযুক্ত। সাওয়ার হল গৌরী শঙ্কর যার মধ্যে সংযুক্ত পাথরের একটি মাত্র মুখ রয়েছে। গণেশ হল এমন পাথর যেগুলোর শরীরে কাণ্ডের মতো প্রলেপ থাকে। ত্রিজুতি হল তিনটি পুঁতি যা প্রাকৃতিকভাবে সংযুক্ত। অন্যান্য বিরল প্রকারের মধ্যে রয়েছে বেদ (৪টি সংযুক্ত সাওয়ার) এবং দ্বৈত (২ সংযুক্ত সাওয়ার)।[৭]

ব্যবহার সম্পাদনা

 
একটি ১০৮+১ রুদ্রাক্ষ মালা পঞ্চমুখী পুঁতি দিয়ে নির্মিত[৮]

রুদ্রাক্ষ পাথরগুলিকে মালা এর উপর পুঁতি হিসাবে একত্রিত করা যেতে পারে যা গলায় পরা যেতে পারে। পুঁতিগুলি সাধারণত সিল্কের উপর বা কালো বা লাল সুতির সুতোয় বাঁধা হয়। কম প্রায়ই, জুয়েলাররা তামা, রূপা বা সোনার তার ব্যবহার করে। রুদ্রাক্ষের পুঁতিটি খুব শক্তভাবে বাঁধলে ক্ষতি হতে পারে। দেবীভাগবত পুরাণ রুদ্রাক্ষের মালা তৈরির বর্ণনা দেয়।[৯]:৬৪–৬৫

 
১৪-মুখী রুদ্রাক্ষ পাথর দিয়ে দুল তৈরি করা হয়েছে।

খ্রিস্টানরা যেমন প্রার্থনার পুনরাবৃত্তি গণনা করার জন্য প্রার্থনার পুঁতি এবং জপমালা ব্যবহার করে, হিন্দুরা প্রায়শই উপাসনাধ্যানের জন্য ও মন, শরীর ও আত্মাকে পবিত্র করতে রুদ্রাক্ষের মালা ব্যবহার করে।[১০] ভারতে ১০৮টি রুদ্রাক্ষের পুঁতি পরার দীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে, বিশেষ করে শৈবধর্মের মধ্যে, শিবের সাথে তাদের সম্পর্ক থাকার কারণে, যিনি রুদ্রাক্ষের মালা পরেন। বেশিরভাগ মালায় ১০৮+১টি পুঁতি থাকে কারণ ১০৮টি পবিত্র বলে মনে করা হয় এবং ছোট মন্ত্র পাঠ করার জন্য উপযুক্ত সংখ্যক বার। অতিরিক্ত গুটিকা, যাকে "মেরু", বিন্দু, বা "গুরু পুঁতি" বলা হয়, ১০৮ চক্রের শুরু ও শেষ চিহ্নিত করতে সাহায্য করে এবং 'নীতি' পুঁতি হিসাবে প্রতীকী মান রয়েছে। রুদ্রাক্ষের মালায় সাধারণত ২৭+১, ৫৪+১ বা ১০৮+১ সংমিশ্রণে পুঁতি থাকে। শিবের সাথে যুক্ত ওঁ নমঃ শিবায় মন্ত্রটি প্রায়ই রুদ্রাক্ষের পুঁতি ব্যবহার করে পুনরাবৃত্তির (জপ) জন্য বেছে নেওয়া হয়।[১১]

গ্যালারি সম্পাদনা

আরও দেখুন সম্পাদনা

টীকা সম্পাদনা

  1. Stutley (1985), পৃ. 119:"'Rudra-eyed'. Name of the dark berries of Elaeocarpus ganitrus, used to make Śaiva rosaries (mālā), or necklaces. The berries have five divisions symbolising Śiva's five faces (pañcānana)."

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Singh M Parashar (১৩ নভেম্বর ২০১৯)। Inner and Outer Meanings of Hinduism। Xlibris UK। পৃষ্ঠা 229–। আইএসবিএন 978-1-984592-11-8 
  2. Singh, B; Chopra, A; Ishar, MP; Sharma, A; Raj, T (২০১০)। "Pharmacognostic and antifungal investigations of Elaeocarpus ganitrus (Rudrakasha)"Indian J Pharm Sci72 (2): 261–5। ডিওআই:10.4103/0250-474X.65021পিএমআইডি 20838538পিএমসি 2929793  
  3. Stutley, M. (১৯৮৫)। The Illustrated Dictionary of Hindu Iconography। New Delhi, India: Munshiram Manoharlal Publishers। পৃষ্ঠা 98, 119। আইএসবিএন 978-81-215-1087-5 
  4. "Aksa: English Translation of the Sanskrit word: Aksa-- Sanskrit Dictionary" 
  5. Subramuniyaswami, Sivaya (১৯৯৭)। Dancing with Siva । USA। Search for "Rudraksha" on the page। আইএসবিএন 9780945497974 
  6. Rudraksha - Benefits of Panchmukhi, Ek Mukhi, Gauri Shankar and more, Which Rudraksha Should You Wear? Ek Mukhi, Panchmukhi Rudrakshas & More
  7. Seetha, Kamal Narayan (২০০৫)। Power of rudraksha। India। পৃষ্ঠা 15, 20 and 21। আইএসবিএন 9788179929810 
  8. For the five-division type as signifying Shiva's five faces and terminology pañcānana, see: Stutley, p. 119.
  9. Seetha, Kamal Narayan (২০০৮)। Power of Rudraksha (4th সংস্করণ)। Mumbai, India: Jaico Publishing House। আইএসবিএন 978-81-7992-844-8 
  10. Laatsch, M. (২০১০)। Rudraksha. Die Perlen der shivaitischen Gebetsschnur in altertümlichen und modernen Quellen। Munich: Akademische Verlagsgemeinschaft München। আইএসবিএন 978-3-89975-411-7 
  11. "Dancing with Siva"www.himalayanacademy.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৪-০৭