রায়চুর জেলা

কর্ণাটকের একটি জেলা

রায়চুর জেলা হলো দক্ষিণ ভারতে অবস্থিত কর্ণাটক রাজ্যের উত্তর-পূর্ব দিকে অবস্থিত একটি জেলা৷ এটি কর্ণাটকের চারটি প্রশাসনিক বিভাগের গুলবার্গা বিভাগের অন্তর্গত৷ জেলাটির উত্তর দিকে রয়েছে যাদগিরি জেলা, উত্তর-পশ্চিমে রয়েছে বিজয়পুর জেলা, পশ্চিমে রয়েছে বাগলকোট জেলা, দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে রয়েছে কোপ্পাল জেলা, দক্ষিণে রয়েছে বেল্লারী জেলা৷ এছাড়া দক্ষিণ-পূর্বে রয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের কর্নুল জেলা এবং উত্তর পূর্বে রয়েছে তেলেঙ্গানা রাজ্যের নারায়ণপেট জেলা এবং পূর্বে রয়েছে জোগুলাম্বা গাদোয়াল জেলা৷ [১]

রায়চুর জেলা
ರಾಯಚೂರು ಜಿಲ್ಲೆ
কর্ণাটকের জেলা
রায়চুর জেলার কীর্তি ঘড়ির কাটার অভিমুখে উপরের বামদিক থেকে:এক মিনার মসজিদ, সূর্যমুখীর ক্ষেত, রায়চুর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, সিন্দনুর চান্নাম্মা সার্কেল, মুদ্গল দুর্গ, আম তালাব হ্রদ , মস্কিতে অবস্থিত সম্রাট অশোকের প্রস্তর অনুশাসনের বহির্খণ্ডের চিত্র৷
রায়চুর জেলার কীর্তি
ঘড়ির কাটার অভিমুখে উপরের বামদিক থেকে:এক মিনার মসজিদ, সূর্যমুখীর ক্ষেত, রায়চুর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, সিন্দনুর চান্নাম্মা সার্কেল, মুদ্গল দুর্গ, আম তালাব হ্রদ , মস্কিতে অবস্থিত সম্রাট অশোকের প্রস্তর অনুশাসনের বহির্খণ্ডের চিত্র৷
কর্ণাটক রাজ্যে রায়চুর জেলার অবস্থান
কর্ণাটক রাজ্যে রায়চুর জেলার অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ১৬°১৩′ উত্তর ৭৭°২১′ পূর্ব / ১৬.২১° উত্তর ৭৭.৩৫° পূর্ব / 16.21; 77.35
রাষ্ট্র ভারত
রাজ্যকর্ণাটক
সদররায়চুর
তালুকরায়চুর, সিন্ধনুর, লিঙ্গসুগুর, মানবি, দেবদুর্গ, সিরওয়ার, মস্কি,.
সরকার
 • জেলা সমাহর্তাশ্রী আর. বেঙ্কটেশ কুমার, আইএএস
আয়তন
 • মোট৮,৩৮৬ বর্গকিমি (৩,২৩৮ বর্গমাইল)
উচ্চতা৪০০ মিটার (১,৩০০ ফুট)
জনসংখ্যা (২০৪১)
 • মোট১৯,২৮,৮১২
 • জনঘনত্ব২৩০/বর্গকিমি (৬০০/বর্গমাইল)
ভাষা
 • দাপ্তরিককন্নড়, ইংরেজি
সময় অঞ্চলভারতীয় প্রমাণ সময় (ইউটিসি+৫:৩০)
পিন৫৮৪১০১, ৫৮৪১০২, ৫৮৪১০৩
টেলিফোন কোড০৮৫৩২
যানবাহন নিবন্ধনKA-36 (কেএ-৩৬)
লিঙ্গানুপাত০.৯৮৩ /
লোকসভা কেন্দ্ররায়চুর
বৃষ্টিপাত৬৮০.৬ মিলিমিটার (২৬.৮০ ইঞ্চি)
ওয়েবসাইটraichur.nic.in
Raichur district at a glance

ভূগোল সম্পাদনা

জেলাটির উত্তর সীমা রয়েছে কৃষ্ণা নদী এবং দক্ষিণ সীমা রয়েছে তুঙ্গভদ্রা নদী, এই দুই নদীর মধ্যস্থলে অবস্থিত রায়চুর জেলা। রাইচুর শহরের নাম অনুসারে এই দোয়াবটি রাইচুর দোয়াব নামে পরিচিত।

ইতিহাস সম্পাদনা

এই জেলাটির পাওয়া যায় এরকম প্রামাণ্য সর্বপ্রাচীন ইতিহাস প্রায় তিনশত খ্রিস্টপূর্বাব্দ প্রাচীন। জেলাটিতে তিনটি ছোট ছোট শিলা ফরমান বা অনুশাসন পাওয়া গেছে যার প্রত্যেকটি রাজা অশোককালীন। একটি রয়েছে মস্কিতে, এবং অপর দুটি কোপ্পাল জেলার নিকট। এই সমস্ত অনুশাসন প্রমাণ করে যে রাইচুর জেলা কোন কালে সম্রাট অশোকের মৌর্য সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। খ্রিস্টাব্দ প্রবর্তনের প্রাক্কালে থেকে এই জেলাটি সাতবাহন সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। খ্রিস্টীয় তৃতীয় এবং চতুর্থ শতকে‌ বাকাটকরা রায়পুর অঞ্চলের উপর যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছিল, কিন্তু তারপরে এই অঞ্চল কদম্ব সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়, এবং সেই সময় বাকাটক একটি সামন্তরাজে পরিণত হয়। পরবর্তীকালে চালুক্যরা এই অঞ্চলের ওপর সাম্রাজ্য বিস্তার করে। আইহোল লিপি অনুসারে, দ্বিতীয় পুলকেশীর তৎপরতায় এই অঞ্চল তার পুত্র আদিত্যবর্মণের সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করে একটি প্রদেশে পরিণত করেন৷ প্রাপ্ত শিলালেখ অনুসারে পরবর্তীকালে অষ্টম শতাব্দীর আশেপাশে সমগ্র রায়চুর জেলা রাষ্ট্রকূট সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়৷ মানবি তালুক থেকে প্রাপ্ত শিলালেখ অনুসারে রাষ্ট্রকূট রাজা দ্বিতীয় কৃষ্ণদেবের রাজত্বকালে সামন্তরাজ জগত্তুঙ্গ আদেদোর এরাদুসবীরপ্রান্ত তথা বর্তমান রায়চুরের শাসনভার গ্রহণ করেছিলেন৷

পশ্চিমা চালুক্যদেরও একাধিক শিলালেখ জেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাওয়া গেছে। যা প্রমাণ করে খ্রিস্টীয় দশম এবং দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময় কালে এই জেলাটি পশ্চিমা চালুক্যদের অধীনস্থ ছিল। লিঙ্গসুগুর তালুকের নাওলি গ্রাম থেকে প্রাপ্ত শিলালেখ থেকে পাওয়া যায় যে চালুক্য রাজ পঞ্চম বিক্রমাদিত্যের সময়কালে আদেদোর প্রান্ত তথা রায়চুর অঞ্চলটি তার কনিষ্ঠ ভ্রাতা প্রথম জগদেকমল্লা দ্বারা শাসিত হতো। আবার মস্কি থেকে প্রাপ্ত অপর একটি শিলালেখ এই অঞ্চলটিকে রাজার জয়সিংহের রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত এবং তার রাজ্যের রাজধানী অঞ্চল বলে উল্লেখ করেছেন৷ রায়চুর অঞ্চলের ওপর আধিপত্য বিস্তার নিয়ে উত্তরের চালুক্য ও দক্ষিণের চোল সাম্রাজ্যের মধ্যে একাধিক যুদ্ধের বিবরণ পাওয়া গিয়েছে, যদিও অন্তিমে এই অঞ্চলটি বহু বছরের জন্য চোল সাম্রাজ্যের হাতে হস্তান্তর করা হয়৷ জেলাটির কিছু কিছু অঞ্চল কিছুকাল হৈহয় ও সিন্দ নামে দুটি ছোটো রাজ্যেরও অন্তর্ভুক্ত ছিলো৷ চালুক্য সাম্রাজ্যের পতনের পর রাইচুর কল্যাণীর কালাচুরি রাজবংশ ও আরো পরে তা সেউণ রাজবংশের হস্তোগত হয়৷ খ্রিস্টীয় ত্রয়োদশ শতাব্দীতে কাকতীয় রাজবংশ এখানে শাসন করতেন৷ রায়চুরের কাকতীয় দুর্গে অবস্থিত খোদাই থেকে জানা গিয়েছে যে সেটি ঐ সময়ের থেকেও অধিক পুরাতন এবং দুর্গটি আসলে ১২৯৪ খ্রিস্টাব্দে ওয়ারাঙ্গলের কাকতীয় রাণী রুদ্রাম্মা দেবীর সেনাধ্যক্ষ গোনগন্ন রেড্ডি নির্মাণ করান৷ এই ঘটনায় পত্রপ্রমাণও রয়েছে৷ [২] দিল্লি সালতানাতের সেনাধিকারিক মালিক কাফুর ১৩১২ খ্রিস্টাব্দে রায়চুর দখল করেন৷

দিল্লির সুলতানরা বারংবার কাকতীয় সাম্রাজ্যের ওপর আক্রমণ করলে তারা দুর্বল হয়ে পড়েন ও ১৩২৩ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ রায়চুর জেলা বিজয়নগর সাম্রাজ্যের অন্তর্গত হয়৷ ১৩৬৩ খ্রিস্টাব্দে বাহমানি সালতানাত রায়চুর দখল করেন৷ বাহমানি সাম্রাজ্যে ভাঙন ধরলে রায়চুর আদিলশাহী বিজাপুর সালতানাতের অধীনস্থ হয়৷ ১৫২০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ রায়চুর যুদ্ধের পর রায়চুর বিজয়নগর সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয় কিন্তু ১৫৬৫ খ্রিস্টাব্দে তালিকোটের যুদ্ধের পর রায়চুর আবার দাক্ষিণাত্য সালতানাতের অধীনস্থ হয়৷ ১৬৮৬ খ্রিস্টাব্দে মুঘল সাম্রাজ্যের নবাব ঔরঙ্গজেব জেলাটির ওপর আধিপত্য কায়েম করেন৷ শেষমেশ ১৭২৪ খ্রিস্টাব্দে হায়দ্রাবাদের নিজামের রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়৷ ভারত স্বাধীন হওয়া অবধি এটি অবিকৃত ছিলো কিন্তু ১৮৫৩ থেকে ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে সাতবছর এটি মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সীর অংশ ছিলো৷

১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ১৭ই সেপ্টেম্বর ভারত সরকারের অপারেশন পোলোর পরে হায়দ্রাবাদ ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়৷ ১৯৪৮ থেকে ১৯৫৬ অবধি এটি হায়দ্রাবাদ রাজ্যের অংশ ছিলো, ঐ বছরই ভাষার ভিত্তিতে রাজ্য পুনর্গঠনের সময়ে এটি মহীশূর রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয় ও নাম নবীকরণ করে কর্ণাটক রাখা হয়৷

জনতত্ত্ব সম্পাদনা

ঐতিহাসিক জনসংখ্যা
বছরজন.ব.প্র. ±%
১৯০১৪,৪৬,৩৭৫—    
১৯১১৪,৭৯,২৯৮+০.৭১%
১৯২১৪,৩৩,৩৪১−১%
১৯৩১৪,৫৩,৭৮৮+০.৪৬%
১৯৪১৫,০০,৭১৯+০.৯৯%
১৯৫১৫,৩১,৫৪০+০.৬%
১৯৬১৬,৩৪,০৯৭+১.৭৮%
১৯৭১৮,০৩,৮১২+২.৪%
১৯৮১১০,৩৫,৬০০+২.৫৭%
১৯৯১১৩,৫১,৮০৯+২.৭%
২০০১১৬,৬৯,৭৬২+২.১৩%
২০১১১৯,২৮,৮১২+১.৪৫%
উৎস:[৩]

২০১১ খ্রিস্টাব্দে ভারতের জনগণনা অনুসারে রায়চুর জেলার মোট জনসংখ্যা ১৯,২০,৮১২ জন,[৪] যা লেসোথো রাষ্ট্র[৫] বা আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম ভার্জিনিয়া রাজ্যের [৬] জনসংখ্যার সমতুল্য৷ ফলে ২০১১ খ্রিস্টাব্দে ভারতে মোট ৬৪০ টি জেলার মধ্যে জনসংখ্যার বিচারে এটি ২৪৬ তম স্থানে রয়েছে৷ [৪] জেলাটির জনঘনত্ব ২২৮ জন প্রতি বর্গকিলোমিটার (৫৯০ জন/বর্গমাইল) .[৪] ২০০১ থেকে ২০১১ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে জেলাটির জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১৫.২৭ শতাংশ৷ [৪] জেলাটিতে প্রতি হাজার পুরুষে ৯৯২ জন নারী বাস করেন৷ [৪] জেলাটির মোট সাক্ষরতার হার ৫৯.৫৬ শতাংশ যেখানে পুরুষ সাক্ষরতার হার ৭০.৪৭ শতাংশ ও নারী সাক্ষরতার হার ৪৮.৭৩ শতাংশ৷[৪]

দর্শনীয় স্থান সম্পাদনা

একাধিক ঐতিহাসিক পর্যটনস্থলের মধ্যে ১২৯৪ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত রায়চুর কেল্লা অন্যতম৷ এছাড়া অনেগোন্দিতে রয়েছে বিজয়নগর সাম্রাজ্যের একাধিক নিদর্শন, রঙ্গনাথ মন্দির, পম্পা হ্রদ ও কমল মহল

রায়চুর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে কল্লুরে রয়েছে মহালক্ষ্মী মন্দির৷

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. https://m.mapsofindia.com/maps/karnataka/tehsil-ampcontent/
  2. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১৭ মে ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ আগস্ট ২০২০ 
  3. Decadal Variation In Population Since 1901
  4. "District Census 2011"। Census2011.co.in। ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১১ 
  5. US Directorate of Intelligence। "Country Comparison:Population"। ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ অক্টোবর ২০১১Lesotho 1,924,886 
  6. "2010 Resident Population Data"। U. S. Census Bureau। ২৩ আগস্ট ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১১West Virginia 1,852,994