বাকাটক রাজবংশ দাক্ষিণাত্যের একটি ব্রাহ্মণ রাজবংশ যা তৃতীয় শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে ষষ্ঠ শতকের প্রথম দশক পর্য্যন্ত মালব থেকে তুঙ্গভদ্রা নদী পর্য্যন্ত দক্ষিণ ভারতের একটি বিশাল অংশ জুড়ে রাজত্ব করে।বাকাটক রাজবংশের রাজারা সেন পদবী ধারণ করেছিলেন। গুপ্ত সাম্রাজ্যের সমসাময়িক এই রাজবংশ সাতবাহন সাম্রাজ্যের পতনের পরে ক্ষমতা লাভ করে।

বাকাটক রাজবংশ
২৩০–৫০০
রাজধানীনন্দীবর্ধন
প্রবরপুর
বৎসগুল্ম
সরকাররাজতন্ত্র
মহারাজা 
• ২৫০–২৭০
বিন্ধ্যশক্তি
ঐতিহাসিক যুগআদি মধ্যযুগ
• প্রতিষ্ঠা
২৩০
• বিলুপ্ত
৫০০
পূর্বসূরী
উত্তরসূরী
সাতবাহন সাম্রাজ্য
বিষ্ণুকুন্দিন সাম্রাজ্য
বর্তমানে যার অংশ India

প্রতিষ্ঠা সম্পাদনা

বাকাটক রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা বিন্ধ্যশক্তি সম্বন্ধে বিশেষ কিছু জানা যায় না। অজন্তার ষোল নম্বর গুহার শিলালিপিতে তাকে দ্বিজ বা ব্রাহ্মণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এই লিপি থেকে জানা যায় যে, তার বিশাল অশ্বারোহী বাহিনী ছিল এবং তাকে প্রচণ্ড লড়াই করে ক্ষমতা লাভ করতে হয়েছিল। যদিও পুরাণে তাকে বিদিশার শাসক হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, তবে ঐতিহাসিকরা তা সত্য বলতে মানেননি।[১]:৫৮৭,৫৮৮ বিন্ধ্যশক্তির পরে তার পুত্র প্রথম প্রবর সেন সিংহাসনলাভ করেন এবং দক্ষিণ ও উত্তর ভারত ধিকার করে তিনি সম্রাট উপাধি গ্রহণ করেন। তিনি নর্মদা নদী পেরিয়ে সিসুক নামক এক রাজার শাসনাধীন পুরিক রাজ্য অধিকার করেন। মনে করা হয়, তিনি দক্ষিণ কোশল, কলিঙ্গ ও অন্ধ্রের বিস্তীর্ণ অঞ্চল নিজ অধিকারে আনেন। প্রথম প্রবর সেন ব্রাহ্মণ্য ধর্মানুলম্বী ছিলেন, যিনি অগ্নিষ্টোম, অপ্তোর্যম, উখথ্য, শোদাসিন, অতিরাত্র, বাজপেয়, বৃহস্পতিসব, সদ্যস্ক্র ও চার বার অশ্বমেধ যজ্ঞ সম্পাদন করেন। তার পুত্র গৌতমীপুত্রের সঙ্গে রাজা ভবনাগের কন্যার বিবাহ হয়, কিন্তু প্রথম প্রবরসেনের মৃত্যুর পূর্বেই গৌতমীপুত্রের মৃত্যু হলে, গৌতমীপুত্রের পুত্র প্রথম রুদ্রসেন পরবর্তী সম্রাট হন, যিনি নন্দীবর্ধনকে রাজধানী করে রাজত্ব করেন। প্রথম প্রবর সেনের অপর পুত্র সর্ব সেন বৎসগুল্ম নামক স্থানে রাজধানী স্থাপন করে পৃথক ভাবে রাজ্য শাসন করেন।[১]:৫৮৮

প্রবরপুর নন্দীবর্ধন শাখা সম্পাদনা

প্রথম প্রবর সেনের পৌত্র প্রথম রুদ্র সেন সম্বন্ধে বিশেষ কিছু জানা যায় না। গুপ্ত সম্রাট সমুদ্রগুপ্তের এলাহাবাদ স্তম্ভলিপিতে রুদ্রদেব নামক এক রাজার উল্লেখ রয়েছে। রুদ্রদেব ও প্রথম রুদ্রসেন একই ব্যক্তি কি না সেই নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে সন্দেহ রয়েছে। প্রথম রুদ্রসেনের পরে প্রথম পৃথ্বী সেন ও তার পরে দ্বিতীয় রুদ্র সেন সিংহাসনলাভ করেন। দ্বিতীয় রুদ্র সেন গুপ্ত সম্রাট দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের কন্যা প্রভাবতীগুপ্তকে বিবাহ করেন। দ্বিতীয় রুদ্র সেনের মৃত্যুর পর প্রভাবতী গুপ্ত তার দুই নাবালক পুত্র দিবাকর সেনদামোদর সেনের অভিভাবক ও রাজপ্রতিনিধি হয়ে কুড়ি বছর রাজ্যভার সামলান। এই সময় এই রাজ্য বস্তুতঃ গুপ্ত সাম্রাজ্যের শাসনতন্ত্রের অংশ হয়ে যায়।[২] দামোদরসেন, যিনি দ্বিতীয় প্রবরসেন নামেও পরিচিত ছিলেন, তার রাজধানী নন্দীবর্ধন থেকে প্রবরপুরে সরিয়ে নিয়ে যান।[১]:৫৮৯ দামোদরসেনের পরে নরেন্দ্র সেন শাসনভার লাভ করেন, যার রাজত্বকালে মধ্য ভারতের বেশ কিছু রাজ্য তার অধীনতা স্বীকার করে নিতে বাধ্য হয়। নরেন্দ্রসেনের পর তার পুত্র দ্বিতীয় পৃথ্বী সেন রাজত্ব লাভ করেন। তার মৃত্যুর পর এই রাজবংশের বৎসগুল্ম শাখার হরি সেণ কর্তৃক এই রাজ্য অধিকৃত হয়।

বৎসগুল্ম শাখা সম্পাদনা

প্রথম প্রবরসেনের পুত্র সর্বসেন বৎসগুল্ম নামক স্থানে রাজধানী স্থাপন করেন ও সেখান থেকে রাজ্য শাসন করেন।[১]:৫৮৮ তিনি ধর্মমহারাজা উপাধি গ্রহণ করেন ও হরিবিজয় নামক একটি প্রাকৃত গ্রন্থ রচনা করেন। তার মৃত্যুর পর তার পুত্র বিন্ধ্যসেন রাজত্ব লাভ করেন।[৩] যিনিও ধর্মমহারাজা উপাধি গ্রহণ করেন এবং কুন্তল রাজ্যকে পরাজিত করেন। তার মৃত্যুর পর দ্বিতীয় প্রবরসেন খুব অল্প সময়ের জন্য রাজত্ব করেন। দ্বিতীয় প্রবরসেনের পুত্র তথা পরবর্তী শাসকের নাম জানা যায় না। এই অজ্ঞাত শাসকের পর তার পুত্র দেবসেন রাজত্বলাভ করেন, কিন্তু মূলত তার মন্ত্রী হস্তীভোজ তার হয়ে শাসনকার্য্য পরিচালনা করতেন।[১]:৫৯০,৫৯১

দেবসেনের পরে তার পুত্র হরিষেণ সিংহাসনে আরোহণ কুরেন। তিনি বৌদ্ধ সংস্কৃতি ও শিল্পকলার পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তার শাসনকালে অজন্তা গুহার ষোল, সতেরো ও উনিশ নম্বর গুহার বিহার নির্মিত হয় ও চিত্র ও ভাস্কর্য্য দিয়ে তা সজ্জিত করা হয়, যদিও ওয়াল্টার স্পিঙ্ক নামক এক শিল্প-ঐতিহাসিকের মতে, অজন্তা গুহার নয়, দশ, বারো, তেরো ও পনেরো নম্বর গুহা বাদ দিয়ে সকল গুহা ভাস্কর্য্যই হরিষেণের রাজত্বকালে নির্মিত হয়েছিল।[৪] এর মধ্যে তার মন্ত্রী বরাহদেব অজন্তার ষোড়শ গুহাটি বিহার নির্মাণ করেন।[১]:৫৯০,৫৯১ এই গুহার একটি শিলালিপি থেকে জানা যায় যে, হরিষেণ অবন্তী, কোশল, কলিঙ্গ, অন্ধ্র, লাট, ত্রিকূট এবং কুন্তল রাজ্য অধিকার করেন।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Mahajan V.D. (1960, reprint 2007) Ancient India, New Delhi: S.Chand, আইএসবিএন ৮১-২১৯-০৮৮৭-৬
  2. Kulke, Hermann; Rothermund, Dietmar (২০০৪)। A History of India (Fourth সংস্করণ)। Routledge। পৃষ্ঠা 91–92। ৪ অক্টোবর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ অক্টোবর ২০১৪ 
  3. Singh, Upinder (২০০৮)। A History of Ancient and Early Medieval India: From the Stone Age to the 12th Century। New Delhi: Pearson Education। পৃষ্ঠা 484। আইএসবিএন 978-81-317-1677-9 
  4. Spink, Walter, M. (2009). Ajanta: Defining Features, in Indica, Vol.46, No.1, Mumbai: Heras Institute of Indian History and Culture, pp.3-38