রফিক-উল হক
ব্যারিস্টার রফিক-উল হক (২ নভেম্বর ১৯৩৫ — ২৪ অক্টোবর ২০২০)[১] ছিলেন একজন বাংলাদেশী আইনজীবী এবং বাংলাদেশের প্রাক্তন অ্যাটর্নি জেনারেল । [২][৩] ১৯৬০ সালে তিনি আইন পেশায় আসেন। ১৯৮৯-১৯৯০ সালে তিনি বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
ব্যারিস্টার রফিক-উল হক | |
---|---|
বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল | |
কাজের মেয়াদ ৭ এপ্রিল ১৯৯০ – ১৭ ডিসেম্বর ১৯৯০ | |
উত্তরসূরী | আমিনুল হক |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | কলকাতা, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত | ২ নভেম্বর ১৯৩৫
মৃত্যু | ২৪ অক্টোবর ২০২০ ঢাকা, বাংলাদেশ | (বয়স ৮৪)
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
দাম্পত্য সঙ্গী | ফরিদা হক (বি. ১৯৬০–২০১১) |
সন্তান | ফাহিম-উল হক |
প্রাক্তন শিক্ষার্থী | কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় |
পেশা | আইনজীবী |
প্রারম্ভিক ও শিক্ষা জীবন
সম্পাদনারফিক-উল হক ২ নভেম্বর ১৯৩৩ সালে কলকাতার সুবর্ণপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।[১] তার পিতা মুমিন-উল হক ছিলেন চিকিৎসক ও মা নূরজাহান বেগম। তার বাল্যকাল কাটে কলকাতায়। কলকাতা চেতলা বিদ্যালয়ে তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয়। তিনি ১৯৫৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক, ১৯৫৭ সালে দর্শন বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি এবং ১৯৫৮ সালে এলএলবি অর্জন করেন।[২] তিনি ১৯৬১ সালে যুক্তরাজ্য থেকে ব্যারিস্টার (বার-এট-ল) ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬২ সালে লিংকনস ইন-এ ডাক পান।
কর্মজীবন
সম্পাদনারফিকুল ১৯৬০ সালে কলকাতা উচ্চ আদালতে আইনজীবী হিসেবে বারের সদস্য হন।[১] ১৯৬২ সালে তিনি ঢাকা উচ্চ আদালতে যোগদান করেন এবং ১৯৬৫ সালে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টে অ্যাডভোকেট হিসাবে যোগ দেন। ১৯৭৩ সালে তিনি আপিল বিভাগে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন।
১৯৭৫ সালে তিনি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতের আপিল বিভাগে সিনিয়র আইনজীবী হিসাবে যোগদান করেন।[১] ১৯৮৯-১৯৯০ সালে তিনি বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[২]
তিনি তাঁর কর্মজীবনকালে হাজারো মামলায় অংশ নিয়েছেন এবং তাঁর প্রায় ৫০০টি মামলা আইন-সাহিত্যে প্রকাশিত হয়েছে। কর্পোরেট এবং কোম্পানি আইনে তাঁর বিশেষত পারদর্শিতা ছিল। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে তিনি বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলে বিভিন্ন খসড়া আইন তৈরিতে কাজ করেন, যার মধ্যে একটি আইন ছিল ১৯৭২ জাতীয়করণ আদেশ। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাসনামলে (১৯৭৭-৮১) তিনি এই আদেশ বাতিলের জন্য খসড়া আইন তৈরিতে কাজ করেছিলেন।
তিনি ১৯৭৫-১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ট্রাইব্যুনালে এবং বার কাউন্সিলের নির্বাচন ট্রাইব্যুনালে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৭৭ সালে কোম্পানী আইন সংস্কার কমিটির সদস্য ছিলেন। বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার এবং বেসরকারী বিনিয়োগ সম্পর্কিত বিভিন্ন আইন কার্যকর করার ক্ষেত্রে তিনি প্রধান ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনি বাংলাদেশের শেয়ার বাজার উন্নয়ন কমিটিতে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ১৯৯০ সালে তিনি বার কাউন্সিল অব বাংলাদেশে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি এশিয়ার জন্য আন্তর্জাতিক চেম্বার অফ কমার্স এবং আন্তর্জাতিক সালিসি আদালতের সদস্য ছিলেন।
২০০৬-০৮ সালে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সঙ্কটের সময় তৎকালীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের চেয়ারপার্সন ও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলার অভিযোগ আনা হয়। ওইসময় তিনি তাদের দু’জনের পরামর্শক ছিলেন।[৪]
বিভিন্ন সময়ে তিনি ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
জনসেবামূলক কর্মকাণ্ড
সম্পাদনারফিক-উল হক ১৯৮৬ সালে ক্যান্সার থেকে বেঁচে যান এবং এরপর থেকে দরিদ্রদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার উন্নতিতে অবদান রাখতে শুরু করেন। তিনি ১৯৯৫ সালে সুবর্ণা ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করেন, তিনি ঢাকা শিশু হাসপাতাল প্রতিষ্ঠাকরণে সহায়তা করেন এবং কালিয়াকৈতে নতুন ১০০ শয্যা বিশিষ্ট একটি হাসপাতাল নির্মাণ করেন। তিনি বারডেম জেনারেল হাসপাতালের অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের, আহসানিয়া মিশন ক্যান্সার হাসপাতালের নুরজাহান ওয়ার্ডের এবং আদ-দীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সভাপতি ছিলেন।
ব্যক্তিগত জীবন
সম্পাদনারফিক-উল হক ১৯৬০ সালে ডাক্তার ফরিদা হককে বিয়ে করেন। ২০১১ সালে তাঁর স্ত্রীর মৃত্যু হয়। এই দম্পতির এক ছেলে রয়েছে, নাম ফাহিম-উল হক, যিনি কানাডায় বসবাস করেন ও পেশায় একজন ব্যারিস্টার।
তার স্ত্রীর মৃত্যুর পরে এবং জানুয়ারী ২০১৭ সালে তার বাম পায়ে অস্ত্রোপচারের পরে, তিনি তার ঢাকার বাড়ি ছেড়ে যেতে ক্রমশ অনীহা প্রকাশ করেন। তিনি ২০২০ সালের ২৪ অক্টোবর ৮৪ বছর বয়সে আদ-দ্বীন হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তিনি রক্তাল্পতা এবং মূত্রথলিসহ গুরুতর জটিলতায় ভুগছিলেন
পুরস্কার
সম্পাদনা- খান বাহাদুর আহসান উল্লাহ স্বর্ণপদক (২০১৭)
- মার্কিন সেনেট কর্তৃক কলকাতার মাদার তেরেসা স্বর্ণপদক
- ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতাল কর্তৃক প্রশংসা পুরস্কার
- মুক্তিযোদ্ধা যাদুঘর পৃষ্ঠপোষক পুরস্কার
- স্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যবিধি অবদানের জন্য এমসিসিআই কর্তৃক এবং ঢাকা দক্ষিণ লায়ন্স ক্লাবের রোটারি ক্লাব কর্তৃক পুরস্কার
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ গ ঘ "Barrister Rafique-ul Huq : Member"। iccbangladesh.org.bd। জুন ৮, ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ৯, ২০১৭।
- ↑ ক খ গ "Guest Profile"। tritiyomatra.com। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ৯, ২০১৭।
- ↑ "ব্যারিস্টার রফিক আর নেই"। কালের কণ্ঠ। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-২৪।
- ↑ "Counsel remains hopeful about Hasina-Khaleda meeting"। The Daily Star। অক্টোবর ১৭, ২০০৮। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ৯, ২০১৭।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- "Barrister Rafiq-ul Haque, Eminent Lawyer of Bangladesh tells his life story"। Mahfuz Mishu। ডিসেম্বর ১৫, ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ৯, ২০১৭।