মোহাম্মদ ইব্রাহিম (চিকিৎসক)

চিকিৎসক

ডাক্তার মোহাম্মদ ইব্রাহিম (১ জানুয়ারি ১৯১১ - ৬ সেপ্টেম্বর ১৯৮৯) হলেন বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির প্রতিষ্ঠাতা এবং একজন জাতীয় অধ্যাপক। তার মূল নাম 'শেখ আবু মোহাম্মদ ইব্রাহিম'। তিনি ১৯৬৫ সালে ডায়াবেটিক হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন যা বর্তমানে বারডেম হাসপাতাল নামে পরিচিত। [৩] বাংলাদেশে ডায়াবেটিকস রোগ সম্পর্কে সচেতনতা ও এর প্রতিকারে তার অবদান অনস্বীকার্য।

জাতীয় অধ্যাপক

ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিম
মোহাম্মদ ইব্রাহিম.jpg
জন্ম
শেখ আবু মোহাম্মদ ইব্রাহিম

১ জানুয়ারি, ১৯১১
মৃত্যু৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৮৯
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত)
 পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
মাতৃশিক্ষায়তনকলকাতা ইসলামিয়া কলেজ
কলকাতা মেডিকেল কলেজ
পরিচিতির কারণচিকিৎসক ও জাতীয় অধ্যাপক
সন্তানইমিরেটাস অধ্যাপক ডা. হাজেরা মাহতাব

[১]

অধ্যাপক ডা. কিশোয়ারা আজাদ [২]

জন্ম ও শিক্ষাজীবনসম্পাদনা

মোহাম্মদ ইব্রাহিমের স্কুল জীবনের নাম ছিল শেখ আবু মোহাম্মদ ইব্রাহিম। তিনি পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার ভরতপুর ইউনিয়নের খাঁড়েরা গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। [৪] তার পিতা শেখ মৌলভী মুহম্মদ কিসমতুল্লাহ এবং মায়ের নাম আজিম-উন-নিসা বিবি। দুই ভাই, দুই বোনের মধ্যে ডা. ইব্রাহিম ছিলেন সবার বড়। তার গ্রামের মধ্য বাংলা স্কুলে লেখাপড়া শুরু করার পর তিনি ‘সালার এডওয়ার্ড ইংলিশ হাইস্কুলে’ ভর্তি হন এবং সেখান থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে পাশ করেন। কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন। তিনি (১৯৩৩-১৯৩৪) কলকাতা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন এবং ১৯৩৮ সনে ডাক্তারী পরীক্ষায় পাশ করেন। [৫]

কর্মজীবনসম্পাদনা

ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিম ১৯৩৮ সনে কলকাতা মেডিকেল কলেজ থেকে ডাক্তারী পাশ করার পর তার চিকিৎসা ও কর্মজীবন শুরু করেন। কর্মজীবনের প্রথম দিকেই কলকাতা মেডিকেল কলেজে প্রফেসর অব মেডিসিনের ওয়ার্ডে হাউস ফিজিশিয়ান হিসাবে কাজ করার সুযোগ পান। পরবর্তীতে ১৯৩৮-১৯৪৫ সাল পর্যন্ত একই প্রতিষ্ঠানে তিনি ইমার্জেন্সী মেডিকেল অফিসার ও প্র্যাকটিক্যাল ফার্মেসী বিভাগের সিনিয়র ডেমনসট্রেটর হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৪৫-১৯৪৭ সাল পর্যন্ত তিনি কলকাতা মেডিকেল কলেজে রেসিডেন্ট ফিজিশিয়ান হিসাবে কাজ করেন। দেশ বিভাগের পর অধ্যাপক মোহাম্মদ ইব্রাহিম তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসেন এবং চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন পদে যোগদান করেন। একই সাথে তিনি জেনারেল হাসপাতালের সুপারিনটেনডেন্ট এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিনের শিক্ষকের দায়িত্বও পালন করেন। ১৯৪৮ সালে অধ্যাপক মোহাম্মদ ইব্রাহিম যুক্তরাজ্য থেকে এম,আর, সি,পি, ডিগ্রী অর্জন করেন। তার পরের বছর আমেরিকান কলেজ অব চেস্ট ফিজিশিয়ানস থেকে এফ.সি.সি.পি ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৫০ সালে দেশে ফিরে অধ্যাপক মোহাম্মদ ইব্রাহিম ঢাকা মেডিকেল কলেজের এডিশনাল ফিজিশিয়ান হিসাবে যোগদান করেন। তারপর পর্যায়ক্রমে তিনি ক্লিনিক্যাল মেডিসিন ও মেডিসিনের প্রফেসর নিযুক্ত হন। ঢাকা মেডিকেল কলেজে থাকাকালীন সময়ে ১৯৫৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি কতিপয় বিশিষ্ট চিকিৎসক ও সমাজসেবীদের সহযোগিতায় ঢাকার সেগুনবাগিচায় পাকিস্তান ডায়াবেটিক সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৫৮ সালে তিনি আমেরিকান কলেজ অব চেষ্ট ফিজিশিয়ানস, পাকিস্তান চ্যাপ্টারের গভর্নরের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬২ সালে পাকিস্তান কলেজ অব ফিজিশিয়ানস এন্ড সার্জনস থেকে এফ.সি.পি.এস ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৬২ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত তিনি স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসেনের প্রফেসর ও অধ্যক্ষ হিসেবে কাজ করেন। ডা. ইব্রাহিম মন্ত্রীর পদমর্যাদায় স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের রাষ্ট্রপতির উপদেষ্টা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার এশিয়া অঞ্চলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিক ম্যানেজমেন্ট বোর্ডের সদস্য পদে দায়িত্ব পালন করেন। [৬]

পুরস্কার ও সম্মাননাসম্পাদনা

১৯৬৩ সালে চিকিৎসা শাস্ত্রে বিশেষ অবদানের জন্য পাকিস্তান সরকার তাকে সিতারা-ই-খিদমত উপাধীতে ভূষিত করেন। চিকিৎসাবিদ্যায় অসাধারণ অবদানের জন্য ১৯৭৮ সালে দেশের “সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার”[৭][৮][৯] হিসাবে পরিচিত “স্বাধীনতা পুরস্কার” প্রদান করা হয় তাকে।[১০] ১৯৮৪ সালে তিনি জাতীয় অধ্যাপক হন এবং দেশে তিনিই প্রথম চিকিৎসাবিদ যিনি এই মর্যাদা পান। ১৯৮৫ সালে বাংলা একাডেমীর ফেলো নির্বাচিত হন এবং একই বৎসর চিকিৎসা ও সমাজসেবায় বিশেষ অবদানের জন্য মাহবুব আলী খান পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৮৬ সালে জর্দানে অবস্থিত ইসলামিক একাডেমী অব সায়েন্সেস প্রতিষ্ঠায় উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য তাকে প্রতিষ্ঠাতা ফেলো নির্বাচিত করা হয়। অধ্যাপক মোহাম্মদ ইব্রাহিম ১৯৮৬ সালে চিকিৎসাবিজ্ঞান ও সমাজসেবায় বিশেষ অবদানের জন্য কুমিল্লা ফাউন্ডেশনের স্বর্ণপদক লাভ করেন। ১৯৮৭ সালে খান বাহাদুর আহসানুল্লাহ স্মারক স্বর্ণপদক, ১৯৮৯ সালে ইসলামীক ফাউন্ডেশনের স্বর্ণপদক এবং ১৯৯১ সালে চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য মৌলানা আকরাম খাঁন স্মারক স্বর্ণপদক লাভ করেন।

তথ্যসূত্রসম্পাদনা

  1. https://bonikbarta.net/home/news_description/251734
  2. https://www.ntvbd.com/health/84509/জীবনে-সৎ-হওয়া-গুরুত্বপূর্ণ--অধ্যাপক-এ-কে-আজাদ?amp[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  3. দৈনিক নয়া দিগন্ত[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  4. ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিম।। এ.কে.এম. আমিনুল ইসলাম। জীবনী গ্রন্থমালা : বাংলা একাডেমি ১৯৯৮, পৃষ্ঠা ১২
  5. দৈনিক কাজিরবাজার[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  6. ঢাকা নিউজ ২৪ ডট কম[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  7. সানজিদা খান (জানুয়ারি ২০০৩)। "জাতীয় পুরস্কার: স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার"। সিরাজুল ইসলাম[[বাংলাপিডিয়া]]ঢাকা: এশিয়াটিক সোসাইটি বাংলাদেশআইএসবিএন 984-32-0576-6। সংগ্রহের তারিখ ০৯ অক্টোবর ২০১৭স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার।  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য); ইউআরএল–উইকিসংযোগ দ্বন্দ্ব (সাহায্য)
  8. "স্বাধীনতা পদকের অর্থমূল্য বাড়ছে"কালেরকন্ঠ অনলাইন। ২ মার্চ ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২৫ অক্টোবর ২০১৭ 
  9. "এবার স্বাধীনতা পদক পেলেন ১৬ ব্যক্তি ও সংস্থা"এনটিভি অনলাইন। ২৪ মার্চ ২০১৬। ১ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ অক্টোবর ২০১৭ 
  10. "স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের তালিকা"মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ১ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ০৯ অক্টোবর ২০১৭  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)

বহিঃসংযোগসম্পাদনা