মুহাম্মদ (নাম)

প্রদত্ত পুরুষ নাম (Muhammad)

মুহাম্মদ ( আরবি: محمد ) হল একটি আরবি প্রদত্ত পুরুষ নাম যার আক্ষরিক অর্থ হল 'প্রশংসনীয়'। এছাড়াও নামটি বানানভেদে মুহাম্মাদ, মোহাম্মদ বা মোহাম্মাদ লেখা হয়। নামটি আরবি ক্রিয়ামূল (الحمد—আলহামদ) থেকে এসেছে। এর অর্থ 'প্রশংসা করা'। মুহাম্মাদকে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় নাম বলে বিশ্বাস করা হয়। ২০১৪ সালে এটি দিয়ে ১৫০ মিলিয়ন পুরুষ ও ছেলের নামকরণ হয়েছে বলে অনুমান করা হয়। [১]

২০১৭ সাল থেকে চীনের জিনজিয়াং অঞ্চলে নবজাতক শিশুদের জন্য নামটি নিষিদ্ধ করা হয়।[২] পাশাপাশি পাকিস্তানেও আহমদী সম্প্রদায়ের জন্যে নামটি নিষিদ্ধ করা হয়। [৩]

অভিধানবিদ্যা সম্পাদনা

মুহাম্মাদ নামটি আরবি প্রদত্ত নাম এবং محمد এর প্রমিত প্রতিবর্ণীকরণ। এর অর্থ প্রশংসিত বা প্রশংসনীয়। আরব দেশগুলোতে এর প্রকৃত উচ্চারণ করা হয় 'মুহাম্মাদ'। তবে কথোপকথনে কখনো ভিন্ন উচ্চারণও হয়।[৪] বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ইংরেজি বানানে বৈচিত্রপূর্ণ নামগুলির মধ্যে এই নামটিও রয়েছে।[৫] একই মূল থেকে অন্যান্য আরবি নামের মধ্যে রয়েছে মাহমুদ, আহমেদ, হামেদ, তাহমিদ এবং হামিদ।

পরিসংখ্যান সম্পাদনা

দ্য কলম্বিয়া এনসাইক্লোপিডিয়া (২০০০) এর ষষ্ঠ সংস্করণ অনুসারে মুহাম্মদ নামটি বৈচিত্রসহ বিশ্বের সবচেয়ে প্রচলিত নাম।[৬] ২০১৪ সালে ইন্ডিপেনডেন্ট রিপোর্ট করে যে, বিশ্বের ১৫০ মিলিয়নেরও বেশি পুরুষ এবং ছেলে মুহাম্মদ নামটি গ্রহণ করে, যা এটিকে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় নাম করে তুলে। [৭] কখনো কখনো বলা হয় যে, মুহম্মাদ ব্রিটেনের সবচেয়ে জনপ্রিয় ছেলের নাম।[৮] ইংল্যান্ডওয়েলসের ১০০টি জনপ্রিয় ছেলেদের নামের পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে মুহাম্মদ ও মোহাম্মদের (৬২৩৩৬.) সম্মিলিত গণনা অলিভার ও অলি (৬০৪৯) এর চেয়ে বেশি, কিন্তু হ্যারি ও হেনরি (৭৬৮৪) এর সম্মিলিত গণনার চেয়ে কম। [৯] [১০]

সেন সাঁ দ্যনি (২০০২,২০০৮) [১১] এবং ফ্রান্সের মার্সেই (২০০৭, ২০০৯) ডিপার্টমেন্টে মোহাম্মদ এবং মোহাম্মদ ছিল সবচেয়ে জনপ্রিয় শিশুর নাম। [১২]একইভাবে ২০০৮ সাল থেকে এটি বেলজিয়ামের সবচেয়ে মুসলিম জনবহুল শহর ব্রাসেলস এবং আন্টভের্পে সবচেয়ে জনপ্রিয় শিশুর নাম।[১৩] ২০০৬ সালের মে মাসে রিপোর্ট করা হয়েছিল যে, পরিসংখ্যান নির্দেশ করে যে প্রায় ৮,৯২৮ জন ডেনিশ মুসলমান মুহাম্মদ নামটি গ্রহণ করে এবং শুধুমাত্র ২০০৪ সালে মোহাম্মদ নামে ১৬৬ জন নবজাতক শিশু নিবন্ধিত হয়েছিল।[১৪] ২০০৯ সালে মুহাম্মাদ নামটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৪৩০তম স্থানে ছিল।[১৫] সোশ্যাল সিকিউরিটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অনুসারে ২০০৬ সালে [১৬] মোহাম্মদ ৫৮৯তম, মোহাম্মদ ৬৩৩তম এবং মুহাম্মদ ৬৩৯তম জনপ্রিয় প্রথম নাম।[১৭][১৮]

২০১৭ সালের এপ্রিলে চীনা সরকার পিতামাতাদের সন্তানের জন্য প্রদত্ত নাম হিসাবে মুহাম্মদ নাম নির্বাচন করতে নিষেধ করে। তালিকায় দুই ডজনেরও বেশি নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং এ নিষেধে কারণ হলো, চীনের পশ্চিমাঞ্চলীয় জিনজিয়াং অঞ্চলের ১০ মিলিয়ন উইঘুরদের লক্ষ্য করা। [১৯] যদি মুহাম্মদের সমস্ত রূপ গণনা করা হয় তাহলে ফিনল্যান্ডে মুহাম্মদ নামে ১৫,৭২৩ জন লোক রয়েছে, যা ফিনিশ পুরুষ জনসংখ্যার ০.৭%। এদের মাঝে সর্বাধিক সাধারণ নাম হলো মোহাম্মদ।[২০][২১] এটা লক্ষণীয় যে মুহাম্মদ নামের আনুমানিক ৬০% লোক পাকিস্তান, মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকায় বাস করে।

বৈধতা ও বিধিনিষেধ সম্পাদনা

চীন সম্পাদনা

২০১৭ সালে এক আইনে চীনে শিশুদের নাম মোহাম্মদ নামকরণ করা অবৈধ করা হয়।[২২][২৩][২৩] চীনের ভাষ্যমতে, আইনটি আনুষ্ঠানিকভাবে দেশের উইঘুর সংখ্যালঘুদের মধ্যে "ধর্মীয় চরমপন্থা" প্রতিরোধ করার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। তবে এটিকে উইঘুর সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে নিপীড়নের একটি সম্ভাব্য কাজ বলে মনে হয়। [২৪] [২৫]

পাকিস্তান সম্পাদনা

পাকিস্তান সরকার সে দেশের আহমাদি সম্প্রদায়ের সদস্যদের সন্তানদের নাম মুহাম্মদ রাখতে নিষেধ করে।[২৬][২৭] আল জাজিরা ২০২১ সালে রিপোর্ট করে যে, আহমেদিদের বিরুদ্ধে ব্লাসফেমির অভিযোগ দায়ের করা হয়, যারা বিবাহের আমন্ত্রণে একটি অনির্দিষ্ট পরিমাণে "মোহাম্মদ" লিখেছিল। [২৮]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Dugan, Emily (১৫ আগস্ট ২০১৪)। "Most popular baby names: The top 20 boys and girls names in England and Wales"Independent। সংগ্রহের তারিখ ১২ মে ২০২০ 
  2. Hernández, Javier C. (২০১৭-০৪-২৫)। "China Bans 'Muhammad' and 'Jihad' as Baby Names in Heavily Muslim Region"The New York Times (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসএসএন 0362-4331। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০২-১২ 
  3. "Amid bullets and 'blasphemy', Pakistan's Ahmadis struggle on"www.aljazeera.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৬-১২ 
  4. "Muhammad- Dictionary"
  5. Humanism, Culture, and Language in the Near East: Asma Afsaruddin, A. H. Mathias Zahniser - 1997 p 389
  6. "Muhammad, prophet of Islam. The Columbia Encyclopedia, Sixth Edition. 2001-07"। ১০ ফেব্রুয়ারি ২০০৯। ১০ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ নভেম্বর ২০১৮ 
  7. "Baby names: The top 20 boys and girls names in England and Wales"The Independent (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৪-০৮-১৫। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৬-১২ 
  8. Arnett, George (১ ডিসেম্বর ২০১৪)। "Is Muhammad the most popular boy's name in Britain?"the Guardian। সংগ্রহের তারিখ ২ নভেম্বর ২০১৮ 
  9. "Baby names for boys in England and Wales - Office for National Statistics" 
  10. "Baby names for boys in England and Wales - Office for National Statistics"www.ons.gov.uk। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৯-০২ 
  11. "Insee − Institut national de la statistique et des études économiques" (পিডিএফ)Insee। সংগ্রহের তারিখ ২ নভেম্বর ২০১৮ 
  12. "Les parents marseillais ont craqué pour Inès et Mohamed"। ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৮। ৩ অক্টোবর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ নভেম্বর ২০১৮ 
  13. Verkruyssen, Freddy (২৪ নভেম্বর ২০০৯)। "Emma en Noah zijn de populairste voornamen van 2008" (পিডিএফ) (ওলন্দাজ ভাষায়)। ২০১০-১০-১১ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-১০-১১ 
  14. "JTW News - "Muhammad" Most Popular Among Danish Muslims"। ৯ জানুয়ারি ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ নভেম্বর ২০১৮ 
  15. http://www.ssa.gov/cgi-bin/babyname.cgi ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ তারিখে; searched for Mohamed
  16. "Popular Baby Names"www.ssa.gov। সংগ্রহের তারিখ ২ নভেম্বর ২০১৮ 
  17. Unless otherwise noted, figures are from http://www.name-stats.com/search.php?subject=Muhammad&submit=Search ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৫ মার্চ ২০১৬ তারিখে. They don't include different forms of spelling except for 2009 and 2010 for the UK.
  18. "Muhammad - Name Meaning, What does Muhammad mean?"www.thinkbabynames.com। ২ জুন ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ নভেম্বর ২০১৮ 
  19. Hernández, Javier C. (২০১৭-০৪-২৫)। "China bans certain baby names in heavily Muslim region"The Boston Globe। New York Times News Service। ২০১৮-০৮-০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-২৬ 
  20. "Digi- ja väestötietovirasto" 
  21. "Digi- ja väestötietovirasto"verkkopalvelu.vrk.fi। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৯-০২ 
  22. Shepherd, Christian; Blanchard, Ben (৩০ মার্চ ২০১৭)। "China sets rules on beards, veils to combat extremism in Xinjiang"Reuters। ২০১৯-১২-২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ ডিসেম্বর ২০১৯ 
  23. Hernandez, Javier C. (২৫ এপ্রিল ২০১৭)। "China bans 'Muhammad,' 'Jihad' as baby names in Muslim region"The Seattle TimesThe New York Times 
  24. "China Issues Ban on Many Muslim Names in Xinjiang"VOA (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৬-১২ 
  25. "China bans list of Islamic names in restive Xinjiang region"AP NEWS (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৭-০৪-২৭। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৬-১২ 
  26. https://assets.publishing.service.gov.uk/government/uploads/system/uploads/attachment_data/file/1015790/PAK_CPIN_Ahmadis.pdf [অনাবৃত ইউআরএল পিডিএফ]
  27. https://2009-2017.state.gov/documents/organization/171759.pdf [অনাবৃত ইউআরএল পিডিএফ]
  28. "Amid bullets and 'blasphemy', Pakistan's Ahmadis struggle on"www.aljazeera.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৬-১২