মুসলিম নিধন বলতে বিভিন্ন সময়ে অমুসলিমদের হাতে ইসলাম ধর্মানুসারীদের নিহত হওয়ার ঘটনাসমূহকে অভিহিত করা হয়।

মধ্যযুগ সম্পাদনা

প্রাক ইসলাম সম্পাদনা

প্রাক ইসলামিক যুগে নব্য মুসলমানগণ প্রায়শই মক্কার মুর্তিপূজারীদের হাতে নিপীড়িত হতো। ইসলাম ধর্ম গ্রহণের কারণে কয়েকজনকে হত্যা করা হয়। সপ্তম ইসলাম গ্রহণকারী সুমাইয়া বিনতে কাব্বাবকে প্রথমে আমর ইবনে হিশাম মারাত্মকভাবে নির্যাতন করে[১][২] এবং শেষ পর্যন্ত সুমাইয়া মৃত্যুমুখে পতিত হন।

ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন ইথিওপিয়ার বিলাল ইবনে রাবাহ ছিলেন একজন দাস। ইসলাম গ্রহণ করার কারণে মধ্যদুপুরে মরুভুমির তপ্ত বালির উপর তাকে চিৎ করে শুইয়ে বুকের উপর পাথর চাপা দেওয়া হতো।[৩][৪]

ক্রুসেড সম্পাদনা

ইতালি সম্পাদনা

মোঙ্গল অভিভান সম্পাদনা

ইবারিয়ান পেনিনসুলা সম্পাদনা

শিখ এবং শিখ রাজত্ব সম্পাদনা

আধুনিক যুগ সম্পাদনা

এশিয়া মাইনর সম্পাদনা

বলকান সম্পাদনা

বুলগেরিয়া সম্পাদনা

কম্বোডিয়া সম্পাদনা

চীন সম্পাদনা

১৯৩৬ সালের জনসংখ্যার পরিসংখ্যাণ অনুযায়ী চীনের কুয়োমিংতাং প্রজাতন্ত্রে মুসলিমদের সংখ্যা ছিলো ৪ কোটি ৮১ লাখ। মাওসেতুংয়ের নীতির পর এই সংখ্যা কমে দাড়ায় ১ কোটি। দৃশ্যত এখানকার ৩ কোটি ৮০ লাখ মুসলিম কোথায় উধাও হয়ে যায় সে ব্যাপারে সরকারি ব্যাখ্যা কখনই দেওয়া হয়নি।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান সম্পাদনা

ভারত সম্পাদনা

হিন্দু দগরা নীতি সম্পাদনা

১৮৩৭ সালে মহারাজা রঞ্জিত সিংয়ের অনুগত রাজা গুলাব সিং পশতুন গোত্রের বড় অংশ ইউসুফজাই গোত্রের বিদ্রোহ দমনের জন্য অভিযান শুরু করেন। তিনি তার পায়ের কাছে এনে ফেলা প্রতিটি ইউসুফজাই পুরুষের মাথার জন্য এক রূপি পুরস্কার ঘোষণা করেন। কাতুহাতে সদরদপ্তর স্থাপন করে তিনি মুসলমান পশতুন গোত্র নিধন শুধু করেন। অল্প কিছু মহিলাকে ছেড়ে দিলেও অধিকাংশ মুসলিম রমনীকে রাজা গুলাব সিংয়ের হারেমে নিয়ে যাওয়া হয়। বাকিদেরকে দাসী হিসেবে লাহোর এবং জম্মুতে বিক্রি করে দেওয়া হয়। এই অভিযানে ১০ হাজার পশতুন বিদ্রোহীকে হত্যা করা হয় এবং হাজার খানিক মহিলাকে দাসী হিসেবে বিক্রি করা হয়।[৫] কাশ্মির চুক্তির মাধ্যে জম্মু কাশ্মির দখল করে নেয়। তবে শিখ গোত্রসমুহের মধ্যে এই দগরা নীতি চলতে থাকে। তবে ১৮৬৩ সালে রাজ্যে ঘৃণ্যতম মুসলিম গণহত্যা সংঘটিত হয়। দগরা শাসক মহারাজা রনবীর সিং সেনাপতি হুশিয়ারা সিংকে ৩০০০ সৈন্য সহ ইয়াসিন এবং হুঞ্জা অঞ্চলের মুসলমান বিদ্রোহীদের শাস্তি দিতে প্রেরণ করেন। দগরারা সকল পুরুষকে বন্দী করেন। অনেক দগরা সৈন্য মান্দুরি পাহাড়ের পেছন অংশে প্রবেশ করে যেখানে নারী এবং শিশুরা লুকিয়ে ছিলো। এই সব নারীদের মধ্যে যারা আহত ছিলো তাদেরকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়। ২০০০ ইয়াসিন গ্রামবাসীকে হত্যা করা হয়। প্রায় ৫০০০ ইয়াসিনিকে শ্রীনগরে নিয়ে আসা হয় শ্রমিক হিসেবে এবং জীবন্ত সকল নারীকে দোগরা সৈন্যদের হারেমে নিয়ে যাওয়া হয়।[৬]

মধ্যপ্রাচ্য সম্পাদনা

লেবানন সম্পাদনা

১৯৮২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৬ টা থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর সকাল ৮ টার মধ্যে লেবানিয় খ্রিস্টান মিলিশিয়া গ্রুপ লেবাননের বৈরুতে অবস্থিত সাবরা এলাকায় এবং পার্শ্ববর্তী শাতিলা শরণার্থী ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে ৭৬২ জন এবং ৩৫০০ জন বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করে।[৭] এদের অধিকাংশই ছিলো ফিলিস্তিনি এবং লেবানিয় শিয়া মতাবলম্বী।

সিরিয়া সম্পাদনা

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে অটোমান শাসিত সিরিয়ায় বেসামরিক হতাহত লোকের সংখ্যা ছিলো ৫০০,০০০ এর অধিক। আক্কার সহ বৃহত্তর সিরিয়ায় এই বেসামরিক হতাহতের বিশদ বর্ণনা পাওয়া যাবে লিন্ডা স্ক্যাটকোয়াস্কির শ্চিলচারের লেখা নিবন্ধে।[৮]

মায়ানমার সম্পাদনা

মায়ানমার বৌদ্ধ অধ্যুষিত দেশ। মায়ানমারের মুসলিম জনগোষ্ঠীর প্রধান অংশ রোহিংগা এবং বাংলাদেশ, ভারত, চীন (ইয়ুন্নান প্রদেশ) এবং আরব ও পারস্য থেকে আগত মুসলিম অধিবাসী। দাপ্তরিক ও ব্যবসায়িক কাজে ব্রিটিশরা ভারতীয় মুসলমানদের (বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান) বার্মায় নিয়ে আসে। মায়ানমার স্বাধীনতা লাভের পর অনেক মুসলমান তাদের পূর্ববর্তী পদে বহাল থাকে এবং অনেকে ব্যবসা এবং রাজনীতিকে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে।

রাজা বায়িন্নাউং (১৫৫০-১৫৮৯) এর আমলে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা বৃদ্ধি পায় এবং বৌদ্ধরা মুসলিমদের হত্যা করে। ১৫৫৯ সালে ব্যাগো দখলের পর বৌদ্ধ রাজা হালাল মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ করে। ধর্মের নামে প্রাণীহত্যাকে বর্বোরচিত ঘোষণা করে তিনি ইদ উল আযহা পালন নিষিদ্ধ করেন। তার প্রজাদেরকে তিনি জোরপূর্বক বৌদ্ধ ধর্মের বাণী শুনতে বাধ্য করতেন এবং জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করতেন। ১৮ শতকে রাজা আলাউঙ্গাপায়া মুসলমানদের জন্য হালাল খাবার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন।

১৯৬২ সালে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মাধ্যমে সেনাপতি নে উইন ক্ষমতায় গেলে মায়ানমারে মুসলমানদের অবস্থা করুণ হয়ে পড়ে। মুসলমানদেরকে সেনাবাহিনী থেকে বিতাড়িত করা হয়[৯] এবং সামাজিকভাবে বিভিন্ন সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়। রোহিঙ্গারা পার্শ্ববর্তী দেশসমূহে পালিয়ে যেতে শুরু করে। ১৯৭৮ সালে আরাকানে কিং ড্রাগন অপারেশনের[১০] সময় ২০০,০০০ এবং ১৯৯১ সালে ২৫০,০০০[১১] রোহিংগা মুসলিম বাংলাদেশে শরনার্থী হিসেবে স্বদেশ ছেড়ে পালিয়ে আসে।

বসনিয়া সম্পাদনা

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বসনিয়ায় ১ লাখ ২০ হাজার মুসলমানকে হত্যা করা হয়। ১৯৪৪-৪৫ সালে যে গণহত্যা সংঘটিত হয়, সেটা ছিল বসনিয়ার ২৫০ বছরের ইতিহাসে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের সবচেয়ে পরিকল্পিত ঘটনা। বহু নারীর মুখের চামড়া উঠিয়ে নেয়া হয়েছিলো। মুসলমান নারীরা যে পর্দা করতো তাকে ব্যাঙ্গ করে এ কাজটি করা হয়েছিলো। নারী ও শিশুদের দ্রিনা নদীতে হত্যা করে মুসলমানদের বোঝানোর চেষ্টা করে যে তোমাদের পালাবার পথ নেই। বিহা এলাকার ক্লুচ নাকম স্থানে ৫ হাজার লোকের এক গণ কবর আবিস্কৃত হয়েছে। যুদ্ধ শুরুর প্রথম বছরেই ১,৩০,০০০ মুসলমানকে শহীদ করা হয়। ১৭০০০ শিশুসহ নিহত মুসলমানের সংখ্যা তিনলাখে পৌঁছেছে। সেব্রেনিৎসা ছিটমহলটি পতনের পর ৪০০০ মুসলমান সৈনিককে দিয়ে তারা কবর খুড়িয়ে পরে সবাইকে গুলি করে হত্যা করে মাটি চাপা দেয়। কমিউনিস্ট শাসনআমলে ৬০০০ মুসলমানকে হত্যা করা হয়। ধর্মীয় আদালত এবং স্কুলসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়। ইসলামী পত্রিকাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়। হাজার হাজার মুসলমানকে দেশান্তরিত করা হয়। কৃষি সম্প্রসারণের নামে মুসলমানদের ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেয়া হয় যাতে ঐক্যবদ্ধতা গড়ে উঠতে না পারে। ২৭ শে জুন ১৯৯৫ সালে এক সাক্ষাৎকারে বসনিয়ার প্রধানমন্ত্রী তার দেশে প্রায় ১২০০০ মুসলমান নারী সার্বদের হাতে ধর্ষিত হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। বসনিয়া হার্সেগোভিনা কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী সংখ্যাটা ছিল ৫০ হাজারের মত।[১২] মুসলমান বাচ্চা মেয়েদের পর্যন্ত যুদ্ধ ফ্রন্টে সার্বদের নিকট পৌছে দেয়া হত। শুধু ধর্ষনের জন্য ১৭টি ক্যাম্পের খোঁজ পাওয়া যায়। ৫০,০০০ হাজার নারী গর্ভবতী হয়। জাতিসংঘের ৮১৯ নম্বর প্রস্তাবে অনুযায়ী সেব্রেনিৎসা শহরটি নিরাপদ অঞ্চল বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু সার্বরা শহরটি দখল করে সেখানকার হাজার হাজার বেসামরিক মুসলমানকে হত্যা করে ও হাজার হাজার নারীকে ধর্ষণ করে। নিহতের সংখ্যা ৮ হাজার ছাড়িয়ে যায়। তাদের বেশিরভাগই ছিল বৃদ্ধ ও যুবক। রাতকো মিলাদিচের নেতৃত্বাধীন সার্ব বাহিনী এই গণহত্যা চালায়। ২০০৪ সালে যুদ্ধ-অপরাধ আদালতের রিপোর্টে বলা হয়, ২৫ থেকে ত্রিশ হাজার বসনীয় মুসলিম নারী ও শিশুকে জোর করে অন্য অঞ্চলে নিয়ে যাওয়া হয় এবং স্থানান্তরের সময় তাদের এক বিপুল অংশ ধর্ষণ ও গণহত্যার শিকার হয়। নারীদের ধর্ষণের পর তাদের হত্যা করতো। তারা বহুবার গর্ভবতী নারীর পেট ছুরি দিয়ে কেটে শিশু সন্তান বের করে ওই শিশুকে গলা কেটে হত্যা করেছে মায়ের চোখের সামনে এবং কখনওবা আরও অনেকের চোখের সামনেই। আরও মর্মান্তিক ব্যাপার হল এ ধরনের হত্যাকাণ্ড ও নৃশংস পাশবিকতার বহু ঘটনা ঘটানো হয়েছে হল্যান্ডের শান্তিরক্ষীদের চোখের সামনেই। এমনকি মাত্র ৫ ছয় মিটার দূরে যখন সার্ব সেনারা এইসব পাশবিকতা চালাতো তখনও হল্যান্ডের শান্তিরক্ষীরা কেবল বোবা দর্শকের মতই নীরব থাকতো ও হেঁটে বেড়াতো। জার্মানির একজন সাংবাদিক এ বিষয়ে যে প্রতিবেদন তৈরি করেছেন তাকে সত্য বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন একজন মার্কিন কমান্ডার। হল্যান্ডের সেনারা পিছু হটার কারণেই সার্বরা সেব্রেনিৎসায় প্রায় ৮ হাজার মুসলমানকে হত্যা করতে সক্ষম হয়। ১৯১২-১৩ সালে প্রথম মহাযুদ্ধের সময় এ অঞ্চলে ১৩০০০ মুসলমানকে জোরপূর্বক খ্রিস্টান হতে বাধ্য করা হয় পরে অবশ্য তারা আবার ইসলামে ফিরে আসে। ১৯১৪ সালে বসনিয়ার এক গ্রামে জঘণ্যতম হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হলে এক রাত্রেই ৬০০ শিশু ও মহিলা হত্যা করা হয়।

১৯৮৯ থেকে সম্পাদনা


তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Buhl, F.; Welch, A. T. (১৯৯৩)। "Muḥammad"। Encyclopaedia of Islam7 (2nd সংস্করণ)। Brill Academic Publishers। পৃষ্ঠা 360–376। আইএসবিএন 90-04-09419-9 
  2. An Introduction to the Quran (1895), p. 185
  3. Janneh, Sabarr. Learning from the Life of Prophet Muhammad (SAW): Peace and Blessing of God Be upon Him. Milton Keynes: AuthorHouse, 2010. Print. আইএসবিএন ১৪৬৭৮৯৯৬৬৬ Pgs. 235-238
  4. Sodiq, Yushau. Insider's Guide to Islam. Bloomington, Indiana: Trafford, 2011. Print. আইএসবিএন ১৪৬৬৯২৪১৬০ Pg. 23
  5. Donnan, Hastings (১৯৯৭)। Marriage Among Muslims: Preference and Choice in Northern Pakistan। Brill। পৃষ্ঠা 41। 
  6. Gilgit Agency 1877-1935Second Reprint 
  7. Malone, Linda A. (১৯৮৫)। "The Kahan Report, Ariel Sharon and the SabraShatilla Massacres in Lebanon: Responsibility Under International Law for Massacres of Civilian Populations"Utah Law Review: 373–433। সংগ্রহের তারিখ ১ জানুয়ারি ২০১৩ 
  8. Schilcher, Linda Schatkowski(1992), "The famine of 1915-1918 in greater Syria", in Spagnolo, John ed., Problems of the Modern Middle East in Historical Perspective Reading, pp.234-254.
  9. Harry Priestley/Rangoon (জানুয়ারি ২০০৬)। "The Outsiders"irrawaddy.org। The Irrawaddy। ২৭ নভেম্বর ২০০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ মে ২০১৫ 
  10. "Burma's Muslim Rohingyas – The New Boat People. Marwaan Macan-Markar. IPS."। Ipsnews.net। ২০০৯-০৩-১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-১১-২০ 
  11. Peter Ford। "Why deadly race riots could rattle Myanmar's fledgling reforms"। Csmonitor.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-১১-২০ 
  12. "বসনিয়ার যুদ্ধে জাতিগত নিধন প্রক্রিয়ায় মুসলিম নারীদের ব্যাপকভাবে গণধর্ষণ করা হয়েছিল"বিবিসি বাংলা। ১৭ জুন ২০১৭।