মতুয়া মহাসঙ্ঘ

সনাতন ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়বিশেষ

মতুয়া মহাসঙ্ঘ (ইংরেজিতে এমএমএস হিসেবে সংক্ষেপিত) হলো ১৮৬০ এর দশকে সংঘটিত একটি ধর্মীয় সংস্কারমূলক আন্দোলন, যা বর্তমান বাংলাদেশ অঞ্চলে সংঘটিত হয়। বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যেও আন্দোলনের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অনুসারী বসবাস করেন। মতুয়ারা হলো সনাতন হিন্দুধর্মের একটি সম্প্রদায়, যারা মূলত নমঃশূদ্র জাতভুক্ত। এরা ভারতের অন্যতম তফসিলি জাতি[১] হরিচাঁদ ঠাকুরের অনুসারীরা এই সংস্কার আন্দোলনের সূচনা করেন। হরিচাঁদ ঠাকুর তার প্রথম জীবনে আত্মদর্শন লাভ করেন এবং বারোটি নির্দেশনার এই দর্শন প্রচার করেন। হরিচাঁদ তার অনুসারীদের জন্য শিক্ষাকে অবশ্য কর্তব্য বলে প্রচার করেন, যা তাদের সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এই পন্থা সামাজিক বৈষম্য নিরসনেও কার্যকরী ছিল।

Matua Mahasangha
Thakurnagar Matua Mahasangha and Thakur Bari Temple 05.jpg
Thakurbari Temple of Matua Mahasangha
মোট জনসংখ্যা
আনু. 50 millions
প্রতিষ্ঠাতা
Harichand Thakur
ধর্ম
Matua, Hinduism
ভাষা
Sacred
BengaliSanskrit
Holy Book
Harililamrito_Adi-Rigvedi
Priest
Gosain/Guru_Santo/ Ma_Santo
Majority
Bengali
সম্পর্কিত জাতিগত গোষ্ঠী
Avarna Namaswej

মতুয়া সম্প্রদায় স্বয়ং দীক্ষা-য় বিশ্বাসী। কাজেই, দর্শন বা ঠাকুর হরিচাঁদের দর্শনে যাদের আস্থা আছে, তারাই মতুয়া মহাসঙ্ঘের অন্তর্ভুক্ত।

১৯৪৭ সালে দেশভাগের অব্যবহিত পর পূর্ববঙ্গের মতুয়া সম্প্রদায়ের অনেক লোক ভারতের পশ্চিমবঙ্গে চলে যায়।[২]

ইতিহাসসম্পাদনা

হরিচাঁদ ঠাকুর নমঃশূদ্র কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ইতিহাসবিদ শেখর বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, “হরিচাঁদ ঠাকুর আত্মদর্শন লাভ করেন এবং তার অনুসারীদের মতে, তিনি স্বয়ং ঈশ্বরের অবতার, যিনি নিপীড়িতদের পরিত্রাণের জন্য পৃথিবীতে এসেছেন।”[৩] ঠাকুর হরিচাঁদ বৈষ্ণবদের মধ্যে মতুয়া সম্প্রদায় প্রতিষ্ঠা করেন।[৩]

হরিচাঁদ ঠাকুরের অনুসারীদের সংস্কারমূলক আন্দোলনের অংশ হিসেবে মতুয়া মহাসঙ্ঘ গঠিত হয়।

সংগঠনসম্পাদনা

প্রাথমিক পর্যায়ে হরিচাঁদ ঠাকুরের অনুসারীরা তৎকালীন বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির ফরিদপুর জেলার ওড়াকান্দিতে (বর্তমানে বাংলাদেশে) একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৪৭ সালের পর অনুসারীরা ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের ঠাকুরনগরে দ্বিতীয় আরেকটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রথম দিকে মন্দির প্রতিষ্ঠা করা খুবই দুরূহ ছিল। প্রাথমিকভাবে হরিচাঁদ ঠাকুরের বংশধরেরা মন্দিরটির রক্ষণাবেক্ষণ করতেন। তবে ২০১১ সাল থেকে অনুসারীদের নিযুক্ত ট্রাস্টি মন্দিরটির দেখভাল করেন।

বাংলাদেশ এবং ভারতের বেশ কিছু অঞ্চলে মতুয়া ধর্মের অনুসারীদের পাওয়া যায়। কিছু স্থানে তারা তাদের প্রার্থনার জন্য মন্দিরও স্থাপন করেছেন। প্রথম দিকে মতুয়া মহাসঙ্ঘ সরল আচার অনুষ্ঠান পালন করতেন। পরবর্তীতে তারা বৈষ্ণববাদে দীক্ষিত হয়।

আরও দেখুনসম্পাদনা

তথ্যসূত্রসম্পাদনা

  1. "Matua community — Why are they important for Trinamool and BJP?" 
  2. "CAA will be implemented after Covid vaccination ends" 
  3. Bandyopadhyay, Sekhar (১৯৯৫)। "The Matua Sect and the Namahśūdras"। Ray, Rajat KantaMind Body and Society: Life and Mentality in Colonial Bengal। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 163। আইএসবিএন 019-563757-7 

আরও পড়ুনসম্পাদনা

  • মতুয়া ধর্ম দর্শন (বাংলা ভাষায়), পরমানন্দ হালদার, ঠাকুরনগর, ১৩৯৩ বঙ্গাব্দ। পৃষ্ঠা ৪৭।
  • শেখর বন্দ্যোপাধ্যায়: পপুলার রিলিজিয়ন অ্যান্ড সোশ্যাল মবিলিটি : দ্য মতুয়া সেক্ট অ্যান্ড দ্য নামাশুদ্রাস ইন আর.কে. রায় (এড) মাইন্ড বডি অ্যান্ড সোসাইটি, লাইফ অ্যান্ড মেন্টালিটি ইন কলোনিয়াল বেঙ্গল (কলকাতা) ১৯৯৫
  • হিতেশ রঞ্জন স্যানাল: সোশ্যাল মবিলিটি ইন বেঙ্গল, কলকাতা, ১৯৮৫
  • অদল-বদল (মাসিক বাংলা পত্রিকা) জুন–জুলাই, ১৯৯৫, ৪ ও ৫ নং
  • নামাশুদ্রাস মুভমেন্ট ইন বেঙ্গল (১৮৭২–১৯৪৭), আর.কে.বিশ্বাস, আইএসবিএন ৮১-৮৮০০৬-১৯-X, ২০১০, প্রগ্রেসিভ বুক ফোরাম, কলকাতা