ভোলাহাট রেশম বীজাগার

ভোলাহাট রেশম বীজাগার বাংলাদেশের বৃহত্তম রেশম বীজাগার। এটি বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভোলাহাট উপজেলায় অবস্থিত।

ইতিহাস সম্পাদনা

প্রাচীন পাল রাজাদের শাসনামলে ভোলাহাট উপজেলায় রেশম শিল্পের সূত্রপাত হয়। পাকিস্তান সৃষ্টির পর উত্তরবঙ্গে বিশেষ করে ভোলাহাট, নাচোলগোমাস্তাপুরের রেশম শিল্প উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ১৯৬১ সালে "ভোলাহাট রেশম বীজাগার" স্থাপন করা হয়। পরবর্তীতে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর দেশটিতে রেশমের সূতিকাগার হিসেবে পরিচিত ভোলাহাটে ক্রমাগত রেশম চাষ বৃদ্ধি ও রেশম চাষীদের দোরগোড়ায় সেবা পৌছায় দেয়ার জন্য ১৯৮৫ সালে জেলা রেশম সম্প্রসারণ কার্যক্রম শুরু হয়। ভোলাহাট রেশম বীজাগারে এর উপজেলা রেশম সম্প্রসারণ কার্যালয় স্থাপন করা হয়।

অবস্থান সম্পাদনা

বীজাগারটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভোলাহাট উপজেলায় গোপিনাথপুর ও ভোলাহাট মৌজায় অবস্থিত।[১]

আয়তন সম্পাদনা

ভোলাহাট রেশম বীজাগার আয়তন এবং ধারণক্ষমতার দিক দিয়ে বাংলাদেশের বৃহত্তম রেশম বীজাগার। এর মোট আয়তন ৩৬.৭৯ একর (১১১ বিঘা ১০ কাঠা)। এর মধ্যে আবাদী জমির পরিমাণ ২০.৪৬ একর (৬২ বিঘা) (বুশ, হাইবুশ, লোকাট, হাইকাট ও গাছ জমি) এবং অন্যান্য কাজে ব্যবহৃত জমির পরিমাণ ১৬.৩৩ একর (৪৯ বিঘা ১০ কাঠা)। এর মধ্যে রয়েছে কার্যালয়, বাসভবন, কারিগরি ভবন, রাস্তা, নালানর্দমা, পুকুর, ফুল ও ফলের বাগান এবং বাঁশঝাড়।[২]

ভোলাহাটে রেশম শিল্পের বিকাশ সম্পাদনা

ভোলাহাট অঞ্চলে রেশম শিল্পের ইতিহাস বহু পুরনো। ভোলাহাট অঞ্চলের রেশম চাষীরা বাংলাদেশের রেশমের শতকরা ৭৫ ভাগ উৎপাদন ও সরবরাহ করে থাকে। ঐতিহাসিক গৌড়ের প্রাচীন ইতিহাস পর্যালোচনা করলে জানা যায় যে, পাল রাজাদের শাসনামলের পর সেন রাজাদের শাসনামলে আইহো, ভোলাহাট, মুচিয়া, নরহাট্রা ব্যতীত বরেন্দ্র অঞ্চলের বাকী এলাকাগুলি থেকে রেশম চাষ উঠে যায়।[৩] মুসলিম আমলে গৌড়ের রাজ পরিবার ও রাজন্য বর্গের পোষাক ও শৌখিন বস্ত্র হিসাবে রেশমের চাহিদা দেখা দেয়ায় গৌড় নগরীর আশেপাশে ব্যাপকভাবে রেশম চাষ শুরু হয়। এ সময় রেশমের ব্যাপক চাহিদা ও উৎপাদন যেমন বৃদ্ধি পেয়েছিল, তেমনি রেশম চাষীরাও রেশম হতে প্রচুর আয় করতো। এর ফলে ঐতিহাসিক গৌড় উপকন্ঠে পিয়াসবাড়ী, ভোলাহাট, কালিয়াচক, সুজাপুরসহ বিভিন্ন স্থানে প্রচুর রেশম ও রেশমজাত বস্ত্র উৎপাদিত হত, যা এখনও এ সমস্ত স্থানে অব্যাহত রয়েছে।[৪]

ঐতিহাসিকদের মতে মোঘল শাসনামলে "বেংগল সিল্ক" ("বাংলার রেশম") নামে অবিভক্ত বাংলার এ শিল্প ছিল আর্থ-সামাজিক অবস্থানের একটি মাপকাঠি। ব্রিটিশ আমলে বাংলাকে "স্টোরহাউজ অভ সিল্ক" (Store house of silk "রেশমের গুদাম") বলে আখ্যায়িত করা হতো।[৫] ঐতিহাসিক কাজী মিছের (বগুড়া) তার রাজশাহীর ইতিহাস গ্রন্থে ভোলাহাটকে "মহানন্দা নদীর তীরে অবস্থিত রেশমের প্রাচীন বন্দর" হিসাবে আখ্যায়িত করেন। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনামলে ভোলাহাট রেশম বীজাগার গৌড় অঞ্চলের রেশম শিল্পের প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠে। মেসার্স লুইপেইন এন্ড কোম্পানী এখানে রেশম কারখানা স্থাপন করে। উল্লেখ্য যে রাজশাহী ইতিহাস গ্রন্থে যতগুলি রেশম কোম্পানির উৎপাদন তালিকা উল্লিখিত আছে, তার মধ্যে ভোলাহাটস্থ মেসার্স লুইপেইন এন্ড কোম্পানী-র উৎপাদন সবচেয়ে বেশি। ভোলাহাটে কোম্পানিটির ১৯০৪ থেকে ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালে বাৎসরিক রেশম উৎপাদন ও মূল্য তালিকা নিচে দেওয়া হল।

সাল ওজন মুল্য
১৯০৪-১৯০৫ ১১১৫ পাউন্ড ৯১,৬৯৪ টাকা
১৯০৫-১৯০৬ ২৪,০৮০ পাউন্ড ১,৯৭,৪৯৭ টাকা
১৯০৬-১৯০৭ ২০,০১৮ পাউন্ড ১,৮৫,৭৪৪২ টাকা[৬]

কার্যাবলী সম্পাদনা

রেশম চাষ সম্প্রসারণ ও লাভজনক করার লক্ষ্যে এ প্রতিষ্ঠানটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। এছাড়াও রেশম বীজগুটি উৎপাদন, রোগমুক্ত ডিম উৎপাদন, উন্নত জাতের তুঁত কাটিংস উৎপাদন এবং উন্নত জাতের তুঁত চারা উৎপাদনেও এই প্রতিষ্ঠানটি কাজ করে চলেছে।

কর্মকাণ্ডের বিবরণ সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজমের পরিদর্শন > ভোলাহাটে রেশম জোন প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ"। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জানুয়ারি ২০১৭ 
  2. "ভোলাহাট উপজেলার পুরোটাই এখন রেশমের খাদি ও মটকা পল্লী"Daily Janakantha। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জানুয়ারি ২০১৭ 
  3. বাসক, কমল। ভ্রমণ ও দর্শনে। মালদহ। পৃষ্ঠা ৫, ৬। 
  4. "রেশম শিল্পে ফিরছে সুদিন"মানবজমিন। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জানুয়ারি ২০১৭ 
  5. অার্থিক উন্নয়নে রেশম শিল্প। রেশম বোর্ড। পৃষ্ঠা ২। 
  6. "রেশম"বাংলাদেশ রেশম বোর্ড মুখপত্র ১৯৮৩ ফেব্রুয়ারি সংখ্যা, পৃঃ-৮৮