ভবানীপুর শক্তিপীঠ
ভবানীপুর বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের বগুড়া জেলার শেরপুরে করতোয়াতটে অবস্থিত সতী মাতা তারার একান্ন শক্তিপীঠের অন্যতম।[১][২] হিন্দু ভক্তদের জন্য এটি একটি পবিত্র তীর্থস্থান।[৩]
ভবানীপুর শক্তিপীঠ মন্দির | |
---|---|
ধর্ম | |
অন্তর্ভুক্তি | হিন্দুধর্ম |
অবস্থান | |
অবস্থান | শেরপুর, বগুড়া |
দেশ | বাংলাদেশ |
ওয়েবসাইট | |
www |
ইতিহাস
সম্পাদনাসত্য যুগে দক্ষ যজ্ঞের পর সতী মাতা দেহ ত্যাগ করলে মহাদেব সতীর মৃতদেহ কাঁধে নিয়ে বিশ্বব্যাপী প্রলয় নৃত্য শুরু করলে বিষ্ণু দেব সুদর্শন চক্র দ্বারা সতীর মৃতদেহ ছেদন করেন। এতে সতী মাতার দেহখন্ডসমূহ ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন স্থানে পতিত হয় এবং এ সকল স্থানসমূহ শক্তিপীঠ হিসেবে পরিচিতি পায়।[৪] বিভিন্ন সূত্র মতে, করতোয়াতটের এ ভবানীপুরে সতী মাতা তারার বাম পায়ের অলঙ্কার বা বাম পাঁজর বা ডান চোখ বা বিছানা পড়েছিল বলে জানা যায়।[৫] ভবানীপুর বাংলাদেশ তথা ভারতীয় উপমহাদেশের বিখ্যাত শক্তিপীঠসমূহের মধ্যে অন্যতম। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশ-বিদেশের ভক্তরা সারা বছর এখানে তীর্থে আসেন।
কথিত আছে যে এখানে একদা একজন শাঁখাওয়ালা (শাঁখা নির্মাতা) ভবানীপুর মন্দিরের ধারের গভীর জঙ্গলের পাশের একটি পুকুরের ধার অতিক্রম করছিলেন। এমন সময় সিঁথিতে সিঁদুর দেয়া একটি ছোট মেয়ে তার কাছে গিয়ে বলেছিল যে সে নাটোর রাজবাড়ির রাজকন্যা। সে শাঁখাওয়ালার কাছ থেকে এক জোড়া শাঁখা কিনল এবং বলল যে শাঁখাওয়ালা যেন নাটোরের মহারাণীকে বলেন যে প্রাসাদের একটি নির্দিষ্ট জায়গায় রাখা ঝুড়ি থেকে তার শাঁখার দাম দিয়ে দেন। শাঁখাওয়ালা মেয়েটির বিনীত কথায় মুগ্ধ হয়ে তাকে শাঁখা দিয়ে দিলেন। শাঁখাওয়ালার মুখ থেকে ছোট মেয়েটির কথা শুনে মহারাণী লোকজন ও সেই শাঁখাওয়ালাকে নিয়ে মেয়েটির বলা জায়গায় গেলেন। শাঁখাওয়ালার প্রার্থনা শুনে মা ভবানী সেই শাঁখা-পুকুর থেকে তার দুই হাতের শাঁখা তুলে দেখালেন। মহারানী ও সেখানে উপস্থিত লোকজন এতে বিস্মিত হলেন এবং মা ভবানীর (মা তারার) মহিমা এই উপমহাদেশে ছড়িয়ে পড়ল।
পরবর্তীতে নাটোর রাজপরিবার থেকে এই পুকুরের সংস্কার করা হয় এবং বর্তমানে এই কিংবদন্তির শাঁখা-পুকুরে তীর্থযাত্রীরা স্নান করেন।
শক্তি দেবী ও ভৈরব
সম্পাদনাএই শক্তিপীঠের শক্তি দেবী অপর্ণা[৩] এবং ভৈরব বামেশ (বামন) নামে পরিচিত। তন্ত্রচুড়ামণিতে আছে --
করতোয়াতটে কর্ণে বামে বামনভৈরবঃ।
অপর্ণা দেবতা যত্র ব্রহ্মরূপাকরুদ্রবঃ।।
মন্দির পরিচিতি
সম্পাদনাচার একর (১২ বিঘা) জমির ওপর প্রাচীর বেষ্টিত মন্দির চত্বর। মূলমন্দির, বেলবরণ তলা, শিব মন্দির ৪টি, পাতাল ভৈরব শিব মন্দির, গোপাল মন্দির, বাসুদেব মন্দির ও নাট মন্দির/আটচালা। উত্তরাংশে সেবা অঙ্গন, পবিত্র শাঁখা পুকুর, স্নানঘাট দুটি, বেষ্টনী প্রাচীরের বাইরে চারটি শিব মন্দির ও একটি পঞ্চমুন্ড আসন।
পূজা/পার্বণ
সম্পাদনাপ্রভাতী ও বাল্যভোগ, দুপুরে পূজা ও অন্নভোগ, সন্ধ্যায় আরতি ও ভোগের ব্যবস্থা আছে। প্রতি দিন মন্দিরে আগত ভক্তরা মিষ্টান্ন ও অন্ন ভোগ দিতে পারেন ও পরে প্রসাদ গ্রহণ করতে পারেন। মাঘী পূর্ণিমা (মাঘ-ফাল্গুন), রাম নবমী (চৈত্র-বৈশাখ), শারদীয় দূর্গাপূজা, দীপান্বিতা শ্যামাপূজা এবং নবান্ন (অগ্রহায়ণ মাসে তিথি অনুযায়ী)।
মন্দির তত্ত্বাবধান
সম্পাদনা১৯৯১ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ভবানীপুর মন্দির সংস্কার, উন্নয়ন ও পরিচালনা কমিটির দ্বারা মা ভবানীর সম্পত্তিসমূহ তত্ত্বাবধানসহ মন্দিরের সমস্ত কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়ে আসছিল। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পূর্বে পাকিস্তান আমলে প্রণয়নকৃত শত্রু সম্পত্তি আইন বা দেবোত্তর বা অর্পিত সম্পত্তি আইন নামক কালো আইনের অপপ্রয়োগের কারণে নাটোরের রানী হতে প্রাপ্ত মা ভবানীর অনেক সম্পত্তি সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে বেহাত হয়েছে বা বেহাত হওয়ার উপক্রম হয়েছে যেগুলো পুনরুদ্ধার হওয়া প্রয়োজন। এছাড়া কমিটির প্রাক্তন প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সাংবাদিক দীপঙ্কর চক্রবর্তী মা ভবানীর বেদখলকৃত প্রায় ৫০০ একর দেবোত্তর সম্পত্তি উদ্ধারের ব্যাপারে সোচ্চার হওয়ার জন্য গত ০২/১০/২০০৪ [৬] তারিখে বিএনপি-জামাত জোট সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন আততায়ীদের হাতে নিহত হওয়ার পর দীর্ঘ প্রায় ১৪ বছর গত হলেও প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেফতার করে শাস্তি দেয়ার পরিবর্তে তামাসা করা হয়েছে ।[৭] ২০০৭ সালের ১৩ই ফেব্রুয়ারি তৎকালীন যৌথ বাহিনী (বিশেষ আইন শৃঙ্খলা বাহিনী) ভক্তদের জন্য নির্মাণাধীন অতিথিশালা ভেঙ্গে ফেলে।[৮][৯][১০]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ মাসাহিকো তাগাওয়া (২০১২)। "শাক্তপীঠ"। ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। আইএসবিএন 9843205901। ওএল 30677644M। ওসিএলসি 883871743।
- ↑ "51 Shakti Peethas – A Compilation" (পিডিএফ)। VedaRahasya.Net (ইংরেজি ভাষায়)। ৯ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মে ২০১২।
- ↑ ক খ "vedarahasya" (পিডিএফ)। ৯ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মে ২০১২।
- ↑ http://www.sacred-texts.com/tantra/maha/maha00.htm
- ↑ "ভবানীপুর শক্তিপীঠ - মন্দির দর্শন"। mandirdarshanbd.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১১-২৪।
- ↑ প্রতিবেদক, নিজস্ব। "দীপঙ্করকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন জাহাঙ্গীর: পুলিশ"। দৈনিক প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১১-২৪।
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ৩১ আগস্ট ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ মার্চ ২০১৯।
- ↑ এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশনের প্রতিবেদন
- ↑ hindujagruti.org এর প্রতিবেদন
- ↑ Human Rights Congress for Bangladesh Minorities এর প্রতিবেদন