ব্রুস পেয়ারডু

ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটার

ব্রুস হ্যামিল্টন পেয়ারডু (ইংরেজি: Bruce Pairaudeau; জন্ম: ১৪ মার্চ, ১৯৩১) ব্রিটিশ গায়ানার জর্জটাউনে জন্মগ্রহণকারী প্রথিতযশা ও সাবেক ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৫৩ থেকে ১৯৫৭ সময়কালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

ব্রুস পেয়ারডু
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নাম
ব্রুস হ্যামিল্টন পেয়ারডু
জন্ম (1931-04-14) ১৪ এপ্রিল ১৯৩১ (বয়স ৯৩)
জর্জটাউন, ব্রিটিশ গায়ানা
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনলেগ ব্রেক গুগলি
ভূমিকাব্যাটসম্যান
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ৭৬)
২১ জানুয়ারি ১৯৫৩ বনাম ভারত
শেষ টেস্ট২৫ জুলাই ১৯৫৭ বনাম ইংল্যান্ড
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ১৩ ৮৯
রানের সংখ্যা ৪৫৪ ৪,৯৩০
ব্যাটিং গড় ২১.৬১ ৩২.০১
১০০/৫০ ১/৩ ১১/২৫
সর্বোচ্চ রান ১১৫ ১৬৩
বল করেছে ৭৬
উইকেট
বোলিং গড় - -
ইনিংসে ৫ উইকেট
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং -/- -/-
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ৬/০ ৬৪/০
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ১৯ জুন ২০১৯

ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটে গায়ানা দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। এছাড়াও, দলের প্রয়োজনে লেগ ব্রেক গুগলি বোলিং করতেন ব্রুস পেয়ারডু

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট

সম্পাদনা

১৯৪৬-৪৭ মৌসুম থেকে ১৯৬৬-৬৭ মৌসুম পর্যন্ত ব্রুস পেয়ারডু’র প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান ছিল। ডানহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে প্রায়শঃই ব্যাটিং উদ্বোধনে মাঠে নামতেন। তবে, শুরুরদিকের প্রতিশ্রুতিশীলতাকে পরবর্তীতে আর ধরে রাখতে পারেননি তিনি। ষোড়শ জন্মদিনের পূর্বেই ১৫ বছর বয়সে ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ গায়ানার পক্ষে প্রথমবারের মতো খেলতে নামেন। নিজস্ব তৃতীয় প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ষোল বছর পাঁচ মাস বয়সে সেঞ্চুরি করেন। ঐ সময়ে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খুব কমই আয়োজন করা হতো ও খেলার সুযোগ পাওয়া যেতো খুব কম।

ফলশ্রুতিতে, ১৯৫০ সালে ইংল্যান্ড গমন করেন। সেখানে বার্নলি দলের পক্ষে ল্যাঙ্কাশায়ার লীগে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৫২ সালের শেষদিকে দেশে প্রত্যাবর্তন করেন ও ব্রিটিশ গায়ানায় যোগ দেন। দুইটি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় বেশ ভালো ফলাফলের স্বীকৃতিস্বরূপ জানুয়ারি, ১৯৫৩ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের খসড়া তালিকায় যুক্ত হন।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট

সম্পাদনা

সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে তেরোটি টেস্টে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছিলেন ব্রুস পেয়ারডু। ২১ জানুয়ারি, ১৯৫৩ তারিখে পোর্ট অব স্পেনে সফরকারী ভারতের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। ২৫ জুলাই, ১৯৫৭ তারিখে লিডসে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টে অংশ নেন তিনি।

১৯৫২-৫৩ মৌসুমে ভারত দল ওয়েস্ট ইন্ডিজ গমন করে। ত্রিনিদাদে সফরকারী দলের বিপক্ষে অভিষেক টেস্টেই ১১৫ রানের দূর্দান্ত সেঞ্চুরি করেন তিনি। কিন্তু, পরবর্তী ২০ ইনিংসে মাত্র ছয়বার দুই অঙ্কের কোটায় স্পর্শ করতে পেরেছিলেন। এক-তৃতীয়াংশ ইনিংসেই বোল্ড হয়েছেন। ১৯৫৭ সালে হেডিংলিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টে অংশ নেন।

ছয় নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে ১১৫ রানের ইনিংস খেলেন। এ পর্যায়ে পঞ্চম উইকেট জুটিতে এভারটন উইকসের সাথে ২১৯ রান তুলেন। সিরিজের বাদ-বাকী চার টেস্টে ব্যাটিংয়ের অবস্থান পরিবর্তন করে তাকে ব্যাটিং উদ্বোধনে নামানো হয়। তবে, কেবলমাত্র একবারই পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস খেলতে সমর্থ হয়েছিলেন ব্রুস পেয়ারডু। ঐ সিরিজে ৩২-এর অধিক গড়ে ২৫৭ রান তুলেছিলেন।

পরবর্তী শীতকালে ইংল্যান্ড দলের মুখোমুখি হন তিনি। সিরিজে তিনি কেবল দুই টেস্টে অংশ নেন। দ্বিতীয় খেলায় ৭১ রান তুলেন ও চতুর্থ টেস্টে তেমন সুবিধে করতে পারেননি। ১৯৫৪-৫৫ মৌসুমে সফরকারী অস্ট্রেলিয়া দল ওয়েস্ট ইন্ডিজ গমন করে। তবে, তাকে দলে রাখা হয়নি।

১৯৫৫-৫৬ মৌসুমে নিউজিল্যান্ড গমনের জন্যে তাকে দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ক্লাইড ওয়ালকটফ্রাঙ্ক ওরেলের অনুপস্থিতিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে প্রতিষ্ঠিত ব্যাটসম্যানের অভাব পরিলক্ষিত হয়। দলটি তখন রান খরায় ভুগতে থাকে। চার টেস্টের ছয় ইনিংসে অংশ নিয়ে পেয়ারডু মাত্র ১০১ রান তুলেছিলেন। তন্মধ্যে, অকল্যান্ডে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড দল সিরিজের চতুর্থ টেস্টে প্রথমবারের মতো টেস্ট ক্রিকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জয় পায়।

ইংল্যান্ড গমন, ১৯৫৭

সম্পাদনা

১৯৫৭ সালে দলের সাথে ইংল্যান্ড গমন করেন। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপক্ষে ১২৭ ও হ্যাম্পশায়ারের বিপক্ষে খেলোয়াড়ী জীবনের সেরা ১৬৩ রানের ইনিংস খেলেন। কিন্তু, ঐ সফরে বাদ-বাকী ৩১ ইনিংসে অংশ নিয়ে পাঁচশত রানেরও কম রান সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন।

সিরিজের প্রথম ও চতুর্থ টেস্ট খেলার সুযোগ পান। কিন্তু চার ইনিংসের কোনটিতেই দুই অঙ্কের কোটা স্পর্শ করতে পারেননি। তবে, এজবাস্টনের উদ্বোধনী টেস্টের প্রথম ইনিংসে মাঝারীসারিতে ব্যাটিংয়ে নেমে সাড়ে আট ঘণ্টার অধিক সময় ব্যয় করেন। ফ্রেড ট্রুম্যানের বলে মাত্র এক রান তুলে বোল্ড হন। সোয়া তিন ঘণ্টা ক্লাইড ওয়ালকট ও আরও পাঁচ ঘণ্টাকাল আঘাতপ্রাপ্ত ফ্রাঙ্ক ওরেলের রানার হিসেবে মাঠে অবস্থান করেছিলেন।[] এ সিরিজের মাধ্যমেই তার টেস্ট খেলোয়াড়ী জীবনের ইতি ঘটে। এ সময় তার বয়স ছিল মাত্র ২৬ বছর।

নিউজিল্যান্ডে অভিবাসন

সম্পাদনা

১৯৫৬ সালে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। তখন ব্রিটিশ গায়ানার স্বাধীনতার প্রশ্নে অস্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করছিল।[] নিউজিল্যান্ডে তিনি অভিবাসিত হন ও খেলতে শুরু করেন। ১৯৫৮-৫৯ মৌসুমে নর্দার্ন ডিস্ট্রিক্টসের পক্ষে খেলেন। ধারাবাহিকভাবে খেললেও তার খেলা তেমন দর্শনীয় ছিল না। নিউজিল্যান্ডে আট মৌসুমে একটিমাত্র সেঞ্চুরির সন্ধান পান। সাত মৌসুমে দলের নিয়মিত খেলোয়াড় ছিলেন। ১৯৬২-৬৩ মৌসুমে নর্দার্ন ডিস্ট্রিক্টসের অধিনায়ক মনোনীত হন ও প্লাঙ্কেট শীল্ড প্রতিযোগিতায় দলকে প্রথম শিরোপা এনে দেন।

১৯৫৮-৫৯ মৌসুমে প্লাঙ্কেট শীল্ড প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। পাঁচ খেলায় অংশ নিয়ে ৪১২ রান তুলেন।[] ১৯৬১-৬২ মৌসুমে পাঁচ খেলায় ৩৮০ রান তুলে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হন।[] ১৯৬৬-৬৭ মৌসুমে সর্বশেষ প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়েছিলেন ব্রুস পেয়ারডু।

তার কাকা জন ডেয়ার ব্রিটিশ গায়ানার পক্ষে ১৯২৪-২৫ মৌসুম থেকে ১৯৩৮-৩৯ মৌসুম পর্যন্ত প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Preston, Norman (1958), England v West Indies 1957, Wisden Almanack. Retrieved 21 June 2012.
  2. Richard Boock, "Beaten, but what a swell party it was" Retrieved 27 May 2013.
  3. "Batting and Fielding in Plunket Shield 1958-59"CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ 
  4. "Batting and Fielding in Plunket Shield 1961-62"CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ 

আরও দেখুন

সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা