ব্যবহারকারী:কাপ্তান/মেজর আব্দুল ওয়াহেদ চৌধুর‍ী

আব্দুল ওয়াহেদ চৌধুরী
জন্ম(১৯১৪-০২-০১)১ ফেব্রুয়ারি ১৯১৪
পূর্ব বাংলা, ব্রিটিশ ভারত
মৃত্যু১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৫(1965-02-16) (বয়স ৫০)
পূর্ব বাংলা, পাকিস্তান
সমাধি
ঢাকা, বাংলাদেশ
আনুগত্যব্রিটিশ ভারত ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত)
পাকিস্তানপাকিস্তান (১৯৪৭ সাল পরবর্তী)
সেবা/শাখা পাকিস্তান সেনাবাহিনী ব্রিগেড সদরদপ্তর
কার্যকাল ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনী ১৯৪০-১৯৪৭ইং
 পাকিস্তান সেনাবাহিনী ১৯৪৭–১৯৪৮ইং
পদমর্যাদামেজর
নেতৃত্বসমূহ১ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট
৩/৮ পাঞ্জাব রেজিমেন্ট
১ম পাঞ্জাব রেজিমেন্ট
৪র্থ মাদ্রাজ রেজিমেন্ট
পাকিস্তান পুলিশ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার
যুদ্ধ/সংগ্রামদ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ
ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ ১৯৪৭

মেজর আব্দুল ওয়াহেদ চৌধুরী[১][২]যিনি মেজর এ ডব্লিউ চৌধুরী[৩]নামে অধিক পরিচিত তিনি ছিলেন তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনী পরে পাকিস্তা্ন সেনাবাহিনীর জ্যেষ্ঠ বাঙ্গালী সেনাকর্মকর্তা যিনি ১ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ট্রেনিং রেজিমেন্ট প্রতিষ্ঠায় ভুমিকা রাখেন।

জন্ম সম্পাদনা

আব্দুল ওয়াহেদ চৌধুরী (১৯১৪ -১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দ) ১৯১৪ সলের ১লা ফেব্রুয়ারী প্রাক্তন ব্রিটিশ ভারতের হবিগঞ্জ জেলার দরিয়াপুর গ্রামের প্রখ্যাত মুসলীম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন । তাঁর পিতা ছিলেন আবদুর রব চৌধুরী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তার মাতা ছিলেন উম্মে আরেফা খাতুন চৌধুরী।

শিক্ষা সম্পাদনা

আব্দুল ওয়াহেদ চৌধুরী সেন্ট গ্রেগরি হাই স্কুল ঢাকা থেকে প্রথম বিভাগের সাথে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন এবং ঢাকা কলেজ থেকে প্রথম বিভাগের সাথে আই,এ,পাস করেন এবং পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৩৭ সালে প্রথম শ্রেণি সহ স্নাতক এবং আইন ও অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর করেন। তিনি খেলাধুলায় তুখোড় ছিলেন খেলাধুলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ব্লুওঁ ছিলেন।

সেনাবাহিনীর জীবন সম্পাদনা

মেজর আব্দুল ওয়াহেদ চৌধু্রী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধাায়ন শেষ করে ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দেন৷। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর হলে তিনি দেরাদুন মিলিটারী একাডেমী থেকে অফিসার হিসেবে প্রশিক্ষন নেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুতে তিনি ১৫.৫.১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে চতুর্থ মাদ্রাজ রেজিমেন্টে জরুরী যুদ্ধ কমিশনড অফিসার হিসাবে ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে লেফটেনেন্ট পদে কমিশন প্রাপ্ত হন। ইতিমধ্যে জেনারেল স্যার এডওয়ার্ড কুইনিনের অধিনে ব্রিটিশ দশম আর্মি গঠিত হলে তিনি সহ তাঁর রেজিমেন্টের মধ্যপ্রচ্যে ইরাকের বসরায় অবস্তিত ১০ম ব্রীটিশ আর্মি এরিয়া হেডকোয়াটারে গমন করেন । তিনি বসরা থেকে ফিরে বার্মা ফ্রন্টের সেলোনে সাব এরিয়ায় (বত্তমান স্রীলংকায় ) যোগদান করেছিলেন। পরবর্তীতে মুলতান ঝোহাব ব্রিগেড হেডকোয়াটার উত্তর পশ্চীম ফন্টিয়ার প্রদেশ মুলতান সেনাসদরে বদলি করা হয় ব্রিগড স্টাফ কেপ্টেন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন । দেশবিভাগের পর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর রূপান্তর ও সংহতকরণের জন্য তাকে সুপ্রিম আর্মি এইচ,কিউ পাকিস্তান সেল দিল্লিতে পরে পাকিস্তান স্বাধীনতালাভের পর পাকিস্তান সেনাসদর রাওালপিণ্ডীতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা ডকট্রেনে পোস্ট করা হয় । উল্লেখ্য যে পরবরতীতে তিনিপ্রতিষ্ঠাকালীন১মইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট প্রশিক্ষণএরঅফিসার কমান্ডিং হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ।লেফটেন্যান্ট কর্নেল ভি,জে,ই,পেটারসনকে প্রথম কম্যান্ডিং অফিসার এবং মেজর আব্দুল ওয়াহেদ চৌধু্রী ১ম ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও প্রশিক্ষণ রেজিমেন্টের অফিসার কমান্ডিং হিসেবে দায়িত্ব লাভ করেন। মেজর আব্দুল ওয়াহেদ চৌধুরী পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদরদপ্তর রাওালপিণ্ডী থেকে ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টেের প্রশিক্ষণ রেজিমেন্ট গঠন করার দায়িত্ব নিয়ে রাওালপিণ্ডী থেকে ঢাকা আগমন করেন। বহু প্রতিবন্ধকতা স্ত্তেও ১ম ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ( সিনিয়র টাইগারস ) ভিত্তি রচনা করেন।

বেঙ্গল রেজিমেন্ট প্রতিষ্ঠা সম্পাদনা

১৫ই আগস্ট ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান ও ভারতীয় সেনাবাহিনীর রূপান্তরকালীন সেনাপ্রধান ছিলেন ফিল্ড মার্শাল ক্লাউদে অচিনলেক। কর্নেল এম ,এ ,জি ,ওসমানী[৪] পূর্বনির্ধারিত প্রস্তাবে পূর্ববাংলায় পাকিস্তান ন্যাশনাল গার্ড (পি,এন,জি) গঠনকে স্তগিত করে তার পরিবর্তে পূর্ববাংলায় একটি পূর্ণাঙ্গ রেজিমেন্ট গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথা সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল ক্লাউদে অচিনলেক কে বোঝাতে সক্ষম হন । প্রস্তাবটি ফিল্ড মার্শাল ক্লাউদে অচিনলেক ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট প্রতিষ্ঠার জন্য মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ[৫] তথা পাকিস্তান সরকারের বরাবর অনুমোদনের জন্য ব্যাবস্থা গ্রহন করেন ফলশ্রুতিতে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ তথা পাকিস্তান সরকার ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট প্রতিষ্ঠায় একরকম বাধ্য হয়ে অনুমোদন করেন । পরবর্তীতে ১৫ আগস্ট ১৯৪৭সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রথম সেনাপ্রধান নিযুক্ত হন জেনারাল ফ্রাংক ওয়াল্টার মেসারভী। লেফটেনেন্ট কর্নেল ভি,জে,ই, পেটারসন প্রথম কমান্ডিং অফিসার সী.ও. এবং প্রথম অফিসার কমান্ডিং[৬] ছিলেন ২য় বিশ্বযুদ্ধ ফেরত ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনী পরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জ্যেষ্ঠ বাঙালি সেনাকর্মকর্তা মেজর আব্দুল ওয়াহেদ চৌধুরী[৭]। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর রূপান্তরকালীন সেনাসদর সুপ্রিম কমান্ডারস হেডকোয়ার্টার ইনফেেট্রী ডারেকটরিয়েট পাকিস্তান সেল দিল্লী ও পাকিস্তানের স্বাধীনতার পর পাকিস্তান সেনাসদর রাওালপিণ্ডীতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সেনাপ্রশিক্ষণ ও শিক্ষা ডকট্রেনে কর্মরত মেজর আব্দুল ওয়াহেদ চৌধুরী পূর্ব বাংলায় যুদ্ধফেরত বাঙালি মুসলমান সেনা ও সেনাকর্মকর্তাদের নিয়ে একটি রেজিমেন্ট গঠনের বিষয়টি সেনাসদরে তুলে ধররেন এবং এর জন্য কাজ করেন । সঙ্গগত কারনে মেজর আব্দুল ওয়াহেদ চৌধুরী (স্ংযুক্ত সেনাকর্মকর্তা ৩/৮ পাঞ্জাব রেজিমেন্ট ) অফিসার কমান্ডিং হিসেবে ১ম ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট প্রশিক্ষন রেজিমেন্টকে গঠন ও প্রশিক্ষণের দায়িত্ব লাভ করেন। বিরুপ পরিস্তিতী অপর্যাপ্ত সরঞ্জাম ও তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রম ও ত্যাগে ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সিনিয়র টাইগার কে গঠন ও প্রশিক্ষন প্রদান করে পূর্ব বাংলায় সেনাবাহিনীর ভীত্তি গড়ে দেন । বলাই বাহুল্য পাঞ্জাবী ও পাঠান প্রধান সেনাবাহিনীতে বাঙ্গালী মুসলমান সেনারা অবিচার ও নিপীড়নের শিকার হচ্ছিল। ঢাকা কুরমিটোলা সেনানিবাসে সেনা অধিনায়কদের সম্মেলনে ব্রিগেডিয়ার আইয়ুব খানের বাঙ্গালী বিদ্বেষী উদ্ধত আচরণের সমুচিৎ জবাব দিতে মেজর আব্দুল ওয়াহেদ চৌধুরী দ্বিধা করেননি। তৎকালীন জিওসি পূর্ব পাকিস্তান ব্রিগেডিয়ার আইয়ুব খান ও ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ব্রীটিশ সীও পেটারসন ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রতি বিমাতা শুলভ আচরণের প্রতিবাদ করায় তিনি শাসক গোষ্ঠীর রোষানলে পড়েন ফলশ্রুতিতে ১৯৪৮ সালে অন্য্যভাবে তাঁর সেনাজীবনের অবসান ঘটান হয় । উল্লেখ্য যে ১৯৪৭ সালের পাক ভারত যুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পুরো বাহিনী দেশের পশ্চিম অঙশে নিয়োজিত ছিল ফলে পূর্ব পাকিস্তান সম্পুরন অরক্ষিত হয়ে পরে । দেশের পূর্ব অঙশ রক্ষায় ৩/৮ম পাঞ্জাব ও ১ম ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের দুটি ব্যাটালিয়ন নিয়ে একটি দুর্বল ব্রিগেড ছড়া আর কিছু ছিল না পূর্ব বাঙ্গলা সম্পুরন অরক্ষিত রাখে সরকার এতে পূর্ব বাঙ্গলা প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের ঔপনিবেশিক নীতি নগ্নভাবে প্রকাশ হয়ে পরে যা পরবর্তীতে প্রকট আকার ধারন করে ।

সেনা পরবর্তী জীবন সম্পাদনা

মেজর আব্দুল ওয়াহেদ চৌধুরী পরবর্তীতে ১৯৫০ সালে পূর্ব পাকিস্তান পুলিশ সার্ভিসে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে যোগ দেন ঢাকার তেজগা, কুমিল্লা, রাজশাহী ও চট্টগ্রামে দায়িত্ব পালন করেন।

প্রয়াণ সম্পাদনা

১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডস্থ নিজ আবাসে মৃত্যু বরণ করেন। তাকে ঢাকার নীলক্ষেত বিবির মসজিদ প্রাঙ্গনে সমাহিত করা হয় ।

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "The myth of martial race: Seared into a schoolboy's memory!"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২১-০৪-১৯। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৪-২১ 
  2. "বাংলাদেশ সেনাবাহিনী: ১৭ কোটি মানুষের গর্ব"nagorikbarta.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-২০ 
  3. "ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও ভাষা আন্দোলন"Daily Nayadiganta। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-১১ 
  4. "জেনারেল ওসমানী"Sylheter Sokal (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২১-০২-১৬। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৪-২০ 
  5. Kokab, Rizwan Ullah, Hussain, Mahboob (ডিসে ৩১, ২০১৭)। "Emergence of Separatist Movement in East Pakistan: Impact of Jinnah's Leadership"Journal of Political Studies 
  6. "The East Bengal Regiment is an Infantry Regiment of the Bangladesh Army | Bangladesh | Military"Scribd (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-১৯ 
  7. ""সমরে দেহি মোরা প্রাণ" বাংলাদেশ সেনাবাহিনী"updatebarta24.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-২০ 

বিষয়শ্রেণী:১৯১৪-এ জন্ম বিষয়শ্রেণী:১৯৬৫-এ মৃত্যু বিষয়শ্রেণী:হবিগঞ্জ জেলার ব্যক্তি বিষয়শ্রেণী:বাঙালি মুসলমান বিষয়শ্রেণী:সিলেট বিভাগের ব্যক্তি বিষয়শ্রেণী:ঢাকা কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী