বেলডাঙ্গা ( ইংরেজি: Beldanga) ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুর্শিদাবাদ জেলার একটি শহর ও পৌরসভা এলাকা।

বেলডাঙা
বেলডাঙ্গা
স্থানাঙ্ক: ২৩°৫৬′ উত্তর ৮৮°১৫′ পূর্ব / ২৩.৯৩° উত্তর ৮৮.২৫° পূর্ব / 23.93; 88.25
জনসংখ্যা (২০০১)
 • মোট২৫,৩৬১
বেলডাঙ্গা রেল স্টেশন সংলগ্ন ইউসুফ সাহেবের বাড়ি।
দারুল উলুম মাদ্রাসা, ৩৪ নং জাতীয় সড়ক, বেলডাঙ্গা।(সারুলিয়া মাদ্রাসা)

ভৌগোলিক উপাত্তসম্পাদনা

শহরটির অবস্থানের অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ হল ২৩°৫৬′ উত্তর ৮৮°১৫′ পূর্ব / ২৩.৯৩° উত্তর ৮৮.২৫° পূর্ব / 23.93; 88.25[১] সমুদ্র সমতল হতে এর গড় উচ্চতা হল ২০ মিটার (৬৫ ফুট)।

যোগাযোগসম্পাদনা

বেলডাঙা শহরটি সড়কপথে জেলা সদর বহরমপুরের সাথে ও রাজ্য রাজধানী কলকাতার সাথে যুক্ত। ৩৪ নং জাতীয় সড়ক শহরের মাঝ বরাবর চলে গেছে। শিয়ালদহ - লালগোলা রেলপথে বেলডাঙ্গা একটি গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন। একাধিক লালগোলা প্যাসেঞ্জার ট্রেন এই স্টেশনের ওপর দিয়ে যায়। হাজারদুয়ারী এক্সপ্রেস ও ধন্যধান্য এক্সপ্রেস ইত্যাদি দ্রুতগামী ট্রেনেও বেলডাঙা আসা যায়।

ইতিহাসসম্পাদনা

মুর্শিদাবাদ জেলার দক্ষিণ প্রান্তে ৩৪ নং জাতীয় সড়কের সংলগ্ন ব্যবসাকেন্দ্রিক শহর বেলডাঙ্গা। ১৮ শতকের মধ্যভাগে এক দশক ধরে যে বর্গী আক্রমণ চলে, তার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য রাঢ় অঞ্চলের বহু উচ্চবর্গের অবস্থাসম্পন্ন পরিবার ভাগীরথী নদীর পাড় হয়ে ৪ কিমি দূরে ভাগিরথীর পরিত্যক্ত কোনো বিলের উচ্চ ডাঙ্গা ভূমিতে এই জনপল্লীটি গড়ে তোলে। মোগল আমলে ভাগিরথী নদী বরাবর বাঁধ গড়ে উঠলে এই জলাটি বিচ্ছিন্ন হয়ে বিলে পরিণত হয়। অতীতে এই ডাঙ্গা ভূমিটি একটি বালির চড়া ছিল। কালক্রমে এই বালির ডাঙ্গা চড়া ভূমি হয়ে যায় - “বালিডাঙ্গা” > “বেলেডাঙ্গা” > “বেলডাঙ্গা”। জনশ্রুতি আছে যে, এই বেলডাঙ্গা একসময় নাটোরের জমিদারভুক্ত ছিল। পরবর্তী ১৭৬০ সাল পর্যন্ত অনিদিষ্টকাল জগৎ শেঠদের খাসতালুক ছিল (১১৬১ বর্গ মাইল) এবং তারও পরে কাশিমবাজার রাজাদের জমিদার ভুক্ত ছিল - স্বাধীনতার উত্তরকালে জমিদার প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার আগে পর্যন্ত।

অর্থনীতিসম্পাদনা

১৯ শতকের প্রথম দিকে থেকে এখানে রেশমকুঠী ও ব্যবসার ধীরে ধীরে প্রসার ঘটতে থাকে। ১৯০৫ সালে রানাঘাট-লালগোলা রেলপথ প্রসারিত হওয়ায় বেলডাঙ্গার শ্রীবৃদ্ধি ঘটে। কয়েক ঘর ধনী ব্যবসায়ী জমিদার পরিবারের উদ্ভব ঘটে। ক্রমে স্টেশন সংলগ্ন একটি চমড়ার ট্যানারি কারখানা গড়ে ওঠে। ১৯৩৩ সালে সেটাই চিনির মিলে পরিণত হয়। চিনির মিলের সুবাদে বেলডাঙ্গার মর্যাদা ও সমৃদ্ধি যথেষ্ট বেড়ে যায়। স্বাধীনতার সময় দেশ বিভাগের ফাঁসে পড়ে চিনির মিলটি বন্ধ হয়ে যায়। ১৮৯৭ সালে গড়ে ওঠা গরু, ছাগল, চামড়ার বিখ্যাত হাট বেলডাঙ্গাকে ব্যবসাকেন্দ্রে পরিণত করেছে। একসময় এই হাটেই সারা জেলার ৪/৫ হাজার গরু মোষের গাড়ির আমের আমদানি ঘটত প্রতিদিন। বর্তমানে কাপড় ও পোশাকের বিখ্যাত হাট বসে বেলডাঙা বড়ুয়া বাজারে, এই হাটের গামছা সারা বাংলা বিখ্যাত। সেই অতীতকাল থেকে এখনও মুর্শিদাবাদের অন্যতম বাণিজ্যকেন্দ্র হিসাবে বেলডাঙ্গা বিদ্যমান। কাঁচা লঙ্কা চাষে বেলডাঙার নাম সারা বাংলা জুড়ে প্রশংসনীয়।

জনসংখ্যার উপাত্তসম্পাদনা

ভারতের ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুসারে বেলডাঙা শহরের জনসংখ্যা হল ২৫,৩৬১ জন;[২] যার মধ্যে পুরুষ ৫২% এবং নারী ৪৮%।

এখানে সাক্ষরতার হার ৬৭%; পুরুষদের মধ্যে সাক্ষরতার হার ৭২% এবং নারীদের মধ্যে এই হার ৬২%। সারা ভারতের সাক্ষরতার হার ৫৯.৫%; তার চাইতে বেলডাঙায় সাক্ষরতার হার বেশি।

এই শহরের জনসংখ্যার ১৩% হল ৬ বছর বা তার কম বয়সী।

ঐতিহ্য ও দর্শনীয় স্থানসম্পাদনা

উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিসম্পাদনা

  • বাবর আলী, পৃথিবীর সর্বকনিষ্ঠ প্রধান শিক্ষক
  • হাসানুজ্জামান শেখ, বর্তমান বিধায়ক
  • সফিজ্জামান সেখ, প্রাক্তন বিধায়ক
  • মোহাম্মদ রেফাতুল্লা, প্রাক্তন বিধায়ক
  • মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম চৌধুরী, প্রাক্তন বিধায়ক
  • মোহাম্মদ খুদা বক্স, প্রাক্তন বিধায়ক
  • আব্দুল লতিফ, প্রাক্তন বিধায়ক।
  • ইউসুফ সাহেব (ব্রিটিশ আমলের একজন কন্ট্রাক্টর)



পত্র-পত্রিকাসম্পাদনা

  • বেলডাঙ্গা পোস্ট: Beldanga Post
  • কথাবার্তা : সম্পাদক - দীননাথ মণ্ডল
  • সোঁদামাটি : সম্পাদক - দীননাথ মণ্ডল
  • পল্লব সন্দেশ : সম্পাদক - বলরাম হালদার
  • অহল্যা : সম্পাদক - সন্তোষ রঞ্জন দাস
  • বেলডাঙ্গা সমাচার : সম্পাদক - জগন্নাথ মজুমদার

তথ্যসূত্রসম্পাদনা

  1. "Beldanga"Falling Rain Genomics, Inc (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ সেপ্টেম্বর ২৫, ২০০৬ 
  2. "ভারতের ২০০১ সালের আদমশুমারি" (ইংরেজি ভাষায়)। Archived from the original on ১৬ জুন ২০০৪। সংগ্রহের তারিখ সেপ্টেম্বর ২৫, ২০০৬