হাসানুল হক ইনু

বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ, সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী

হাসানুল হক ইনু (জন্ম: ১২ নভেম্বর ১৯৪৬) একজন বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী।[১] তিনি জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)- এর সভাপতি। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম নেতা। তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এছাড়া তিনি ৬০ এর দশকের একজন নামকরা ফুটবল খেলোয়াড় ছিলেন। তার বাড়ি কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার গোলাপনগর।

হাসানুল হক ইনু
২০১৫ সালে হাসানুল হক ইনু
কুষ্টিয়া-২ আসনের
বাংলাদেশ সংসদ সদস্য
দায়িত্বাধীন
অধিকৃত কার্যালয়
২০০৮
পূর্বসূরীশহীদুল ইসলাম
তথ্যমন্ত্রী
কাজের মেয়াদ
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১২ – ৭ জানুয়ারি ২০১৯
প্রধানমন্ত্রীশেখ হাসিনা
পূর্বসূরীআবুল কালাম আজাফ
উত্তরসূরীহাছান মাহমুদ
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম (1946-11-12) ১২ নভেম্বর ১৯৪৬ (বয়স ৭৭)
নওগাঁ, বাংলাদেশ
জাতীয়তাবাংলাদেশী
রাজনৈতিক দলজাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)
দাম্পত্য সঙ্গীআফরোজা হক রীনা
প্রাক্তন শিক্ষার্থীপূর্ব পাকিস্তান প্রকৌশল ও কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয় (পূপাপ্রকাবি)

জন্ম ও প্রাথমিক জীবন সম্পাদনা

হাসানুল হক ইনু ১২ নভেম্বর ১৯৪৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা এইচ এম কামরুল হক ছিলেন তৎকালীন কর্ণফুলী পেপার মিলের সাধারণ ব্যবস্থাপক। তার মাতার নাম বেগম হাসনাহেনা হক। জাতীয় নারী জোটের আহবায়ক এবং জাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি আফরোজা হক রীনা এমপি তার সহধর্মিণী। তাদের এক ছেলে প্রকৌশলী শমিত আশফাকুল হক।

ইনু রাঙামাটির চন্দ্রঘোনার কর্ণফুলী পেপার মিলস হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পাস করেন। তিনি ঢাকার নটরডেম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। এর পর ১৯৭০ সালে পূর্ব পাকিস্তান প্রকৌশল ও কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয় (পূপাপ্রকাবি) থেকে বিএসসি ইন কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি অর্জন করেন।

রাজনৈতিক ও কর্মজীবন সম্পাদনা

হাসানুল হক ইনুর রসায়ক প্রকৌশলী হিসেবে তার পেশাগত জীবন কেটেছিল মাত্র ৬ মাস।

তিনি ১৯৬৯ সালে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের পূর্ব পাকিস্তান প্রকৌশল ও কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক, ১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৭০ সালে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক স্মরণে গঠিত পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের সার্জেন্ট জহুর বাহিনীর মার্চপাস্টে নেতৃত্ব, ৭ জুন ১৯৭০ সালের পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের জয়বাংলা বাহিনীর মার্চপাস্টে নেতৃত্বসহ ২৩ মার্চ ১৯৭১ সালে পল্টনে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলনের নেতৃত্ব দেন।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে তিনি ভারতের তান্দুয়াতে স্থাপিত বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স (বিএলএফ), পরবর্তী নাম মুজিব বাহিনী গেরিলা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ক্যম্প প্রধান ও প্রশিক্ষক হিসেবে ১০,০০০ মুক্তিযোদ্ধাকে গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষনের দায়িত্ব পালন করেন।

তিনি ১৯৭২ সালে জাতীয় কৃষক লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন, ৩১ অক্টোবর ১৯৭২ সালে গঠিত জাসদের প্রতিষ্ঠাতা সহ সভাপতি ও ৭ নভেম্বর ১৯৭৫ সালের অভ্যুত্থানে গণবাহিনীর উপপ্রধান ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) আবু তাহেরের সহকারী হিসেবে ভূমিকা পালন করেন। তিনি ১৯৮৩ সালে সামরিক সরকার এরশাদ বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ১৯৮৬ সালে তিনি জাসদের সাধারণ সম্পাদক ও ৩১ অক্টোবর ২০০২ জাসদের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৪ দল ও মহাজোট গঠনেও তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।

ইনু ২০০৮ সালের নবম, ২০১৪ সালের দশম ও ২০১৯ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৪ দলের প্রার্থী হিসেবে নৌকা মার্কা নিয়ে কুষ্টিয়া-২ আসন ( ভেড়ামারা-মিরপুর) থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।[২][৩][৪] তিনি ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১২ সাল থেকে ৭ জানুয়ারি ২০১৯ সাল পর্যন্ত তথ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বর্তমানে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও তিনি জাতিসংঘের অঙ্গসংস্থা ইন্টারনেট প্রশাসন ফোরামের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্টারনেট প্রশাসন ফোরামের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। পূর্বে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

খেলোয়াড় জীবন সম্পাদনা

৬০-এর দশকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের গোলরক্ষক হিসেবে বেশ সুনাম অর্জন করেন। তিনি ১৯৬৫-৭০ পর্যন্ত ঢাকা প্রথম বিভাগ ফুটবল লীগে সেন্ট্রাল প্রিন্টিং এন্ড স্টেশনারি ক্লাব, ইস্ট এন্ড ক্লাব, ওয়ারি ক্লাব এবং সর্বশেষ ঢাকা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে খেলেন। তিনি ১৯৬৫ সালে পূর্ব পাকিস্তান ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় হাইজাম্পে ২য় স্থান অধিকার করেন। ১৯৬৬ সালে পাকিস্তান ক্রীড়া দলের সদস্য হিসেবে পাক-জার্মান ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন এবং হাইজাম্পে ৩য় স্থান অধিকার করেন। তিনি ১৯৬৯ সালে পূর্ব পাকিস্তান চ্যাম্পিয়ন সম্মিলিত পূর্ব পাকিস্তান বিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল দলের সদস্য হিসেবে লাহোরে সর্ব পাকিস্তান জাতীয় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৬৯-৭০ সালে পূর্ব পাকিস্তান যুব ফুটবল দলের সদস্য হিসেবে খেলেন। পরবর্তীতে রাজনীতিতে অংশগ্রহণের জন্য তিনি খেলোয়াড় জীবন পরিত্যাগ করেন।

গ্রেফতার সম্পাদনা

খন্দকার মোশতাক আহমেদের সামরিক শাসনকালে ২৩ নভেম্বর ১৯৭৫ তারিখে গ্রেপ্তার হন এবং কারাবাস করেন। ১৭ জুলাই ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে গোপন সামরিক আদালতে অবসরপ্রাপ্ত লেফটেনেন্ট কর্নেল আবু তাহেরের ফাঁসির মামলায় হাসানুল হক ইনুকে বারো বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। তিনি ১৩ জুন ১৯৮০ সালে কারাগার থেকে মুক্তিলাভ করেন। হাসানুল হক ইনু অবসরপ্রাপ্ত লেফটেনেন্ট জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সামরিক শাসন আমলে (১৯৮২-১৯৯০) দুইবার গ্রেফতার হন এবং কারাবরণ করেন।

প্রকাশনা সম্পাদনা

হাসানুল হক ইনুর অনেক বই প্রকাশিত হয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম হলো: তিন দাগে ঘেরা বাংলাদেশ; বাংলাদেশের রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর উপস্থিতি; গণতান্ত্রিক সংগ্রামের নয়া কৌশল; ঘুরে দাঁড়ানোর রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক চিন্তা; গণমাধ্যম, গনতন্ত্র ও সাংবাদিকতা। এছাড়াও বিভিন্ন স্বনামধন্য পত্রিকায় তার দুই শতাধিকের উপরে রাজনৈতিক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।

সমালোচনা সম্পাদনা

১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডে তিনি জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম। তিনি এটি অস্বীকার করেন।[৫]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "হাসানুল হক ইনুর জন্মদিন আজ"দৈনিক ইত্তেফাক। সংগ্রহের তারিখ ১৯ এপ্রিল ২০২৩ 
  2. "৯ম জাতীয় সংসদে নির্বাচিত মাননীয় সংসদ-সদস্যদের নামের তালিকা"জাতীয় সংসদবাংলাদেশ সরকার। ২০১৬-১১-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-২০ 
  3. "১০ম জাতীয় সংসদে নির্বাচিত মাননীয় সংসদ-সদস্যদের নামের তালিকা"জাতীয় সংসদবাংলাদেশ সরকার। ২০১৯-০৯-১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৫-১২ 
  4. পলিটিক্যাল ডেস্ক (৩১ ডিসেম্বর ২০১৮)। "একাদশ সংসদের সদস্য হলেন যারা"বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুন ২০২০ 
  5. আহমেদ, শামছুদ্দীন (২৭ আগস্ট ২০২১)। "বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড নিয়ে 'কাদা ছুড়াছুড়ি'তে শেখ সেলিম-ইনু"ইত্তেফাক