আন্তর্জাতিক বিশুদ্ধ ও ফলিত রসায়ন সংস্থার সঙ্গানুযায়ী, বিরল মৃত্তিকা মৌল' বা বিরল মৃত্তিকা ধাতু হলো পর্যায় সারণির ১৭ টি মৌলের একটি সেট, আরো বিশদভাবে, ১৫ টি ল্যান্থানাইড মৌল এবং সেই সাথে স্ক্যানডিয়ামইট্রিয়াম[২] স্ক্যানডিয়াম ও ইট্রিয়ামকে বিরল মৃত্তিকা মৌল হিসেবে বিবেচনা করা হয় কেননা এরা সেইরকম আকরিক কল্কে থাকতে চাওয়ার প্রবণতা দেখায় যেভাবে ল্যান্থানাইডগুলি থাকে এবং এরা ল্যান্থানাইডের মতই রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে, যদিও এদের বৈদ্যুতিক ও চৌম্বকীয় বৈশিষ্ট্য ভিন্ন।[৩] কদাচিৎ, একটি প্রসর সঙ্গানুযায়ী, অ্যাক্টিনাইডকেও এদের অন্তর্ভুক্ত করা যায় কেননা এরা কিছু খনিজ, রাসায়নিক ও ভৌত (বিশেষ ভাবে, ইলেক্ট্রন শক্তিস্তর বিন্যাস) বৈশিষ্ট্য বিনিময় করে।[৪]

বিরল মৃত্তিকা আকরিক (আকারের তুলনার জন্য একটি ১৯ মিলিমিটার ব্যাসের ইউএস ১ সেন্ট মুদ্রা রাখা হয়েছে)
এই বিরল মৃত্তিকা অক্সাইডগুলি নিষ্কাশন অববাহিকার ক্ষয় সনাক্তকরণে ব্যবহৃত হয়।[১] উপরের মধ্যবর্তী স্থান থেকে ঘড়ির কাঁটার দিকেঃ প্রাসিওডিমিয়াম, সিরিয়াম, সামেরিয়াম, ল্যান্থানাম, নিওডিমিয়াম, গ্যাডালিনিয়াম

এদের এমন নাম সত্ত্বেও- এক্ষেত্রে তেজস্ক্রিয় প্রমিথিয়াম ব্যাতিক্রমি-ভূত্বকে এরা আপেক্ষিক ভাবে অঢেল, সিরিয়াম সহ, যা ৬৮ প্রতি-অংশ অঙ্কানুপাতে ২৫ তম সবচেয়ে প্রতুল উপাদান, তামার চেয়েও প্রতুল। যাইহোক, এদের ভূরাসায়নিক বৈশিষ্টের কারণে বিরল মৃত্তিকা উপাদানগুলি সাধারণত বিক্ষিপ্ত এবং সাধারণত বিরল মৃত্তিকা খনিজে ঘনীকৃত থাকেনা; তাই এদের অর্থনৈতিকভাবে কাজে লাগানোর উপযুক্ত আকরিক কল্কের সংখ্যা কম।[৫] প্রথম আবিষ্কৃত বিরল মৃত্তিকা আকরিক (১৭৮৭ সালে) ছিলো সিরিয়াম, ইট্রিয়াম, লোহা, সিলিকন ও অন্যান্য উপাদানে গঠিত খনিজ গ্যাডোলিনাইট। এই খনিজটি সুইডেনের ইটারবি নামক গ্রামের একটি খনি থেকে নিষ্কাসিত করা হয়; এই একটি অঞ্চল থেকে উদ্ভূত নামে চারটি বিরল মৃত্তিকা মৌলের, আরবিয়াম, টারবিয়াম, ইট্রিয়ামইটারবিয়ামের নামকরণ করা হয়েছে।

তালিকা সম্পাদনা

বিরল মৃত্তিকা মৌল গুলিঃ

Z প্রতীক নাম ব্যুৎপত্তি কিছু ব্যবহার প্রতুলতা[৬][৭]
(ppm[ক])
২১ Sc স্ক্যানডিয়াম লাতিন শব্দ Scandia থেকে উদ্ভূত, যার অর্থ স্ক্যান্ডিনেভিয়া অ্যারোস্পেস যন্ত্রাংশের জন্য হালকা অ্যালুমিনিয়াম-স্ক্যান্ডিয়াম সংকরে, ধাতব-হ্যালাইড বাতিপারদ-বাষ্প বাতিতে,[৮] তেল পরিশোধনাগারে তেজস্ক্রিয়তা সনাক্তকারী হিসেবে 0২২
৩৯ Y ইট্রিয়াম সুইডেনের ইটারবি নামক গ্রামের নামানুসারে, যেখানে প্রথম বিরল মৃত্তিকা খনিজ আবিষ্কৃত হয়। ইট্রিয়াম অ্যালুমিনিয়াম গারনেট (ওয়াইএজি) লেসারে, ইট্রিয়াম ভ্যানাডেটে (YVO4), YBCO-তে যা একটি উচ্চ-তাপমাত্রিক অতিপরিবাহী, ইট্রিয়া-স্থিতিকৃত জিরকনিয়া (ওয়াইএসজেড), ইট্রিয়াম আয়রন গারনেট (ওয়াইআইজি) অণুতরঙ্গ ছাঁকনি,[৮][৯] স্পার্কিং প্লাগে, গ্যাস মেন্টালে, ইস্পাতে, ক্যান্সার চিকিৎসায় 0৩৩
৫৭ La ল্যান্থানাম গ্রিক শব্দ "lanthanein" থেকে, অর্থ লুক্কায়িত হওয়া. উচ্চ প্রতিসরণাঙ্কের এবং ক্ষার রোধী কাঁচে, চকমকি পাথরে, হাইড্রোজেন স্টোরেজে, ব্যাটারি-তড়িৎদ্বারে, ক্যামেরা লেন্সে, তেল শোধনাগারের এফসিসিতে অনুঘটক হিসেবে 0৩৯
৫৮ Ce সিরিয়াম বামন গ্রহ সেরেসের নামে, যার নামকরণ করা হয় কেরেসের নামে রাসায়নিক জারক হিসেবে, মসৃনকারী গুঁড়া, কাচ ও সিরামিকের হলুদ রং, স্ব-পরিষ্কারক চুলার অনুঘটক হিসেবে, তেল শোধনাগারের এফসিসিতে অনুঘটক হিসেবে, ফেরোসেরিয়াম, টারবাইন ব্লেডের জন্য অন্তর্নিহিত বলিষ্ট পানিবিকোর্ষী আবরণে 0৬৬.৫
59 Pr প্রাসিওডিমিয়াম গ্রিক শব্দ "prasios", অর্থাৎ পলাণ্ডু-সবুজ, এবং "didymos", অর্থাৎ জমজ থেকে। বিরল মৃত্তিকা চুম্বকে, লেজারে, ধনু বাতিতে, কাঁচএনামেলের রঞ্জক হিসেবে, ওয়েল্ডিং গগলে ব্যবহৃত ডাইডামিয়াম কাঁচে ,[৮] ফেরোসেরিয়াম চকমকিতে 00৯.২
৬০ Nd নিওডিমিয়াম গ্রিক শব্দ "neos", অর্থাৎ নতুন, এবং "didymos", অর্থাৎ জমজ হতে। বিরল মৃত্তিকা চুম্বকে, লেজারে, কাচ ও সিরামিকের বেগুনি রঙে, ডাইডামিয়াম কাঁচে, সিরামিক ধারকে, বৈদ্যুতিক মোটরগাড়ির তড়িৎ মোটরে 0৪১.৫
৬১ Pm প্রমিথিয়াম তিতান প্রমিথিউসের নামে, যে মানুষের মাঝে আগুন আনে। নিউক্লিয়ার ব্যাটারিতে, দীপ্তিমান চিত্রে 0×১০−১৫ [১০][খ]
৬২ Sm সামেরিয়াম খনির নামে দাপ্তরিকভাবে, ভ্যাসিলি সামারস্কাই-বাইখোভেটস. বিরল মৃত্তিকা চুম্বকে, লেজারে, নিউট্রন ক্যাপচারে, ম্যাসারে, পারমাণবিক চুল্লীর নিয়ন্ত্রণ ছিপে 00৭.০৫
৬৩ Eu ইউরোপিয়াম ইউরোপ মহাদেশের নামে। লাল ও নীল ফস্ফরে, লেজারে, পারদ-বাষ্প বাতিতে, ফ্লুরোসেন্ট বাতিতে, এনএমআর শিথিলকারী 00
৬৪ Gd গ্যাডালিনিয়াম গ্যাডোলিনের নামে। উচ্চ প্রতিসরণাঙ্কের কাচ বা গারনেটে, লেজারে, এক্স-রে টিউবে, কম্পিউটার মেমরিতে, নিউট্রন ক্যাপচারে, এমআরআই কন্ট্রাস্ট দ্রব্যে, এনএমআর শিথিলকরণ দ্রব্যে, ম্যাগনেটোস্ট্রিক্টিভ সংকর যেমন গালফেনলে, ইস্পাতে 00৬.২
৬৫ Tb টারবিয়াম সুইডেনের ইটারবি গ্রামের নামে। নিওডিমিয়াম চুম্বকে, সবুজ ফস্ফরে, লেজারে, ফ্লুরোসেন্ট বাতিতে, ম্যাগনেটোস্ট্রিক্টিভ সংকর যেমন টারফেনল-ডিতে, নৌ সোনার ব্যাবস্থায়, জ্বালানি কোষের স্থিতিকারী হিসাবে। 00১.২
৬৬ Dy ডিসপ্রোজিয়াম গ্রিক "dysprositos" থেকে, যার অর্থ পেতে কঠিন. নিওডিমিয়াম চুম্বকে, লেজারে, ম্যাগনেটোস্ট্রিক্টিভ সংকর যেমন টারফেনল-ডিতে, হার্ড ডিস্ক ড্রাইভে 00৫.২
৬৭ Ho হোলমিয়াম স্টকহোমের নামে (ল্যাটিন "Holmia"), এর আবিষ্কারক দের একজনের নিজের শহর। লেসারে, স্পেক্ট্রোফোটোমিটারে, চুম্বকে 00১.৩
৬৮ Er আরবিয়াম সুইডেনের ইটারবি গ্রামের নামে। অবলহিত লেজারে, ভ্যানাডিয়াম ইস্পাতে, ফাইবার-অপটিক প্রযুক্তিতে 00৩.৫
৬৯ Tm থুলিয়াম উত্তরের পৌরানিক ভূমি ঠুলির নামে। বহনযোগ্য এক্স-রশ্মি যন্ত্রে, ধাতব-হ্যালাইড বাতিতে, লেজারে 00০.৫২
৭০ Yb ইটারবিয়াম সুইডেনের ইটারবি গ্রামের নামে। অবলোহিত লেজার-এ, রাসায়নিক হ্রাসকারক হিসেবে, প্রলুব্ধকারী ফ্লেয়ারে, মরিচা বিহীন ইস্পাতে, স্ট্রেন গেজে, পারমাণবিক ঔষধে, ভূমিকম্প পর্যবক্ষনে 00৩.২
৭১ Lu লুটিশিয়াম লুটেশিয়ার নামে, একটি শহর যা পরবর্তীতে প্যারিস হয়। পসিট্রন নিঃসরণ টমোগ্রাফি – PET স্ক্যান নির্দেশক, উচ্চ প্রতিসরণাঙ্কের কাঁচ, লুটেসিয়াম ট্যান্টালেটে, শোধনাগারে অনুঘটক হিসেবে, বাতিতে 00০.৮
  1. Parts per million in earth's crust, e.g. Pb=13 ppm
  2. No stable isotopes occurring in nature.

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "News and events"। US Department of Agriculture। ২০১২-০৪-২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৩-১৩ 
  2. N. G. Connelly and T. Damhus, সম্পাদক (২০০৫)। Nomenclature of Inorganic Chemistry: IUPAC Recommendations 2005 (পিডিএফ)। With R. M. Hartshorn and A. T. Hutton। Cambridge: RSC Publishing। আইএসবিএন 978-0-85404-438-2। ২০০৮-০৫-২৭ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৩-১৩ 
  3. Professor of Chemistry at University College London, []আন্দ্রে সেলা|Andrea Sella]], ইউটিউবে Andrea Sella: "Insight: Rare-earth metals", Interview on TRT World / Oct 2016, minutes 4:40 - ff.
  4. T Gray (২০০৭)। "Lanthanum and Cerium"। The Elements। Black Dog & Leventhal। পৃষ্ঠা 118–122। 
  5. Haxel G.; Hedrick J.; Orris J. (২০০২)। "Rare Earth Elements—Critical Resources for High Technology" (পিডিএফ)। Edited by Peter H. Stauffer and James W. Hendley II; Graphic design by Gordon B. Haxel, Sara Boore, and Susan Mayfield। United States Geological Survey। USGS Fact Sheet: 087‐02। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৩-১৩However, in contrast to ordinary base and precious metals, REE have very little tendency to become concentrated in exploitable ore deposits. Consequently, most of the world's supply of REE comes from only a handful of sources. 
  6. Keith R. Long; Bradley S. Van Gosen; Nora K. Foley; Daniel Cordier। "The Geology of Rare Earth Elements"Geology.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৬-১৯ 
  7. Lide (1997).
  8. C. R. Hammond। "Section 4; The Elements"। David R. Lide। CRC Handbook of Chemistry and Physics। (Internet Version 2009) (89th সংস্করণ)। Boca Raton, FL: CRC Press/Taylor and Francis। 
  9. "Rare-earth metals"Think GlobalGreen। ২০১৬-১১-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ 
  10. Fritz Ullmann, সম্পাদক (২০০৩)। Ullmann's Encyclopedia of Industrial Chemistry31। Contributor: Matthias Bohnet (6th সংস্করণ)। Wiley-VCH। পৃষ্ঠা 24। আইএসবিএন 978-3-527-30385-4 

বহি সংযোগ সম্পাদনা

বহিঃস্থ মিডিয়া
অডিও
  "Rare Earths: The Hidden Cost to Their Magic", Distillations Podcast and transcript, Episode 242, June 25, 2019, সায়েন্স হিস্ট্রি ইন্সটিটিউট
ভিডিও
  “10 ways rare earth elements make life better”, animation, Science History Institute
  Rare Earth Elements: The Intersection of Science and Society, presentation and discussion led by ইরা ফ্লেটো, সায়েন্স হিস্ট্রি ইন্সটিটিউট, September 24, 2019