বিশ্বজুড়ে বর্তমানে নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস হিসেবে যেসব প্রযুক্তির কথা সম্প্রতি বেশি শোনা যাচ্ছে তার মাঝে উল্লেখযোগ্য একটি হলো ফুয়েল সেল বা জ্বালানি কোষ[১] ফুয়েল সেল হচ্ছে এমন একটি তড়িৎ রাসায়নিক কোষ যেখানে হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেনের বিক্রিয়ায় সরাসরি ডিসি কারেন্ট হয় এবং বাই প্রোডাক্ট হিসেবে পানি এবং তাপ উৎপন্ন হয়। অন্যান্য সাধারণ তড়িৎ রাসায়নিক কোষের মতো ফুয়েল সেলেও অ্যানোড এবং ক্যাথোডের মাঝে ইলেক্ট্রোলাইট থাকে। এর গঠন অনেকটা স্যান্ডউইচের মতো। অ্যানোডে হাইড্রোজেন ভেঙ্গে তৈরি হয় প্রোটন (H+) এবং ইলেকট্রন (e-)। ইলেকট্রনটি পরিবাহী দ্বারা ক্যাথোডে গিয়ে সেখানে আসা অক্সিজেন এর সাথে মিশে অক্সিজেন অ্যানায়ন তৈরি করে এবং প্রোটনটি ইলেক্ট্রোলাইটের মধ্য দিয়ে ক্যাথোডে গিয়ে সেই অক্সিজেন অ্যানায়ন এর সাথে মিশে তৈরি করে পানি। ফলশ্রুতিতে এই ইলেকট্রনের চলাফেরায় তৈরি হয় বিদ্যুৎ।

মিথানল ফুয়েল সেল। ছবির কেন্দ্রে ঘণাকৃতির কয়েক স্তরে বিন্যস্ত ফুয়েল সেলের স্তুপটি দেখা যাচ্ছে।

প্রকারভেদ সম্পাদনা

ফুয়েল সেল বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে।[১] তাদের মধ্যে উল্লেখ্য হলঃ

  1. প্রোটোন বিনিময়কারী ফুয়েল সেল
  2. প্রত্যক্ষ ব্যবহৃত মিথানল ফুয়েল সেল অথবা মিথানল ফুয়েল সেল,
  3. সলিড অক্সাইড ফুয়েল সেল
  4. বিগলিত কার্বনেট ফুয়েল সেল
  5. এলকালাইন বা ক্ষারধর্মী ফুয়েল সেল

রাসায়নিক বিক্রিয়া সম্পাদনা

ফুয়েল সেলে সংগঠিত রাসায়নিক বিক্রিয়া হচ্ছেঃ

 
ফুয়েল সেল
  • অ্যানোডঃ 2H2=4H+ + 4e-
  • ক্যাথোডঃ O2+4H++4e-=2H2O
  • নীট বিক্রিয়াঃ 2H2+O2=2H2O

একটি সাধারণ ফুয়েল সেলে উৎপাদিত বিভব শক্তির পরিমাণ ০.৭ ভোল্ট।

ইতিহাস সম্পাদনা

১৮৩৯ সালে শৌখিন ব্রিটিশ পদার্থবিদ উইলিয়াম গ্রোভ সবর্প্রথম ফুয়েল সেল তৈরি করেন।[২] এই আবিষ্কারের প্রায় ১২০ বছর নাসা ১৯৬০ সালে মহাকাশযানে ফুয়েল সেলের ব্যবহার শুরু করে। ফুয়েল সেলে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় যে পানি উৎপন্ন হয় তা নভোচারীদের পানির তৃষ্ণা মেটায়।

ব্যবহার সম্পাদনা

প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতা এবং অত্যন্ত ব্যয়বহুল হওয়ায় ফুয়েল সেল এতোটা জনপ্রিয় হয়নি। তবে ক্রমবধর্মান জ্বালানী সমস্যার কারণে বিজ্ঞানী ও গবেষকদের দৃষ্টি আবারও ফুয়েল সেলের দিকেই পড়েছে। ফুয়েল সেলে ওজন কিছুটা কম এবং পরিবেশ বান্ধব হওয়ায় আটোমোবাইল শিল্পে ফুয়েল সেলের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। এছাড়া ফুয়েল সেলের স্থায়ীত্বও অনেক বেশি। ইতিমধ্যে ফোর্ড, ভলভো, টয়োটা,বি এম ডব্লিউ সহ বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি অটোমোবাইল কোম্পানি ফুয়েল সেল চালিত গাড়ির প্রটোটাইপ (মূল নমুনা বা মডেল) তৈরি করেছে।ফুয়েল সেল চালিত গাড়ীগুলোকে হাইড্রোজেন ফুয়েল সেল কার বলা হয়। তবে হাইড্রোজেন উৎপাদন, মজুদ এবং সরবরাহ করা বেশ কঠিন। বহুদিন আগে আবিষ্কৃত হলেও ফুয়েল সেল জনপ্রিয় না হবার পেছনে এটাও একটি বড় কারণ। বর্তমানে সাধারণত প্রাকৃতিক গ্যাস, প্রোপেন,মিথানল ইত্যাদি থেকে রিফর্মিংয়ের মাধ্যমে হাইড্রোজেন উৎপাদন করা হয়। রিফর্মিংয়ের মাধ্যমে হাইড্রোকার্বন কে হাইড্রোজেন গ্যাসে রূপান্তরিত করা হয়। তবে এ ব্যাপারে এখনো গবেষণা চলছে…ভালো কোন প্রযুক্তির সন্ধানে। অটোমোবাইল ছাড়াও বিভিন্ন বহনযোগ্য ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি যেমনঃ ল্যাপটপ, ক্যামেরা, মোবাইল ফোন ইত্যাদিতে ফুয়েল সেল ব্যবহার করা হয় । এছাড়াও অনেক গবেষক ফুয়েল সেল চালিত বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্র তৈরির কথা ভাবছেন। প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতাগুলো কাটিয়ে উঠতে পারলে ফুয়েল সেলই হয়তো হয়ে উঠবে ভবিষ্যত প্রজন্মের শক্তির প্রধান উৎস।

সুবিধা সম্পাদনা

  • পরিবেশ বান্ধব
  • স্থায়ীত্ব অনেক বেশি
  • কর্মদক্ষতা বেশি
  • নিরাপদ
  • ওজন কম

উৎস সম্পাদনা

  1. "ফুয়েল সেল ভবিষ্যতের জ্বালানি"jjdin.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৮-০৬  line feed character in |শিরোনাম= at position 11 (সাহায্য)
  2. sujan। "আগামী দিনের নবায়নযোগ্য জ্বালানী শক্তির উৎসঃ ফুয়েল সেল"বিজ্ঞানী ডট অর্গ। ২০১৬-০৫-০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৮-০৬