অণুতরঙ্গ

তড়িত-চুম্বকীয় বিকিরণ

অণুতরঙ্গ বা মাইক্রোওয়েভ (ইংরেজি: Microwave) দ্বারা সে সকল তাড়িতচৌম্বক বিকিরণ নির্দেশ করা হয় যাদের তরঙ্গদৈর্ঘ্য ন্যূনতম ১ মিলিমিটার হতে সর্বোচ্চ ১ মিটার পর্যন্ত।[১] এদের কম্পাঙ্ক ৩০০ মেগাহার্জ (তরঙ্গদৈর্ঘ্য ১ মিটার) হতে ৩০০ গিগাহার্জ (তরঙ্গদৈর্ঘ্য ১ মিলিমিটার) এর মধ্যে সীমাবদ্ধ। মাইক্রোওয়েভ শব্দে 'মাইক্রো-' উপসর্গটি মাইক্রোমিটার পাল্লার দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট তরঙ্গ বোঝায় না এবং অণুতরঙ্গ শব্দে 'অণু-' উপসর্গটি আণবিক আকৃতির তরঙ্গ প্রকাশ করে না, বরং উভয়ক্ষেত্রেই সাধারণ অর্থে 'ক্ষুদ্র তরঙ্গ' প্রকাশ করে, কারণ 'মাইক্রোওয়েভ' দ্বারা সংজ্ঞায়িত তরঙ্গগুলোর দৈর্ঘ্য সাধারণ বেতার সম্প্রচারে ব্যবহৃত তরঙ্গের দৈর্ঘাপেক্ষা ক্ষুদ্রতর।

টেলিযোগাযোগের জন্য টাওয়ারে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের মাইক্রোওয়েভ ডিশ অ্যান্টেনা

উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন মাইক্রোওয়েভের উৎস হিসেবে বিশেষ নির্বাত-নল (ভ্যাক্যুয়াম টিউব) ব্যবহৃত হয়। নিয়ন্ত্রক তড়িৎ বা চৌম্বক ক্ষেত্রের দ্বারা প্রভাবিত ইলেক্ট্রন কে শূন্যস্থানে প্রবাহ ঘটিয়ে মাইক্রোওয়েভ সৃষ্টি করা হয়। তাতে আরও থাকে ম্যাগণেট্রন (মাইক্রোওয়েভ ওভেনে ব্যবহৃত), ক্লাইস্ট্রন, চল-তরঙ্গ নল (traveling-wave tube বা TWT) এবং জাইরোট্রন

অল্প ক্ষমতাসম্পন্ন মাইক্রোওয়েভের উৎস হিসেবে ফিল্ড ইফেক্ট ট্রানজিস্টর (কম কম্পাঙ্কের ক্ষেত্রে), টানেল ডায়োড, গান ডায়োড (Gunn diode), ইমপ্যাট ডায়োড (IMPATT diode) ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়।

সকল উষ্ণ বস্তু হতে কিছু মাইক্রোওয়েভ কৃষ্ণবস্তু বিকিরণ (black-body radiation) নির্গত হয়, যার পরিমাণ বস্তুর তাপমাত্রার উপর নির্ভরশীল। এজন্য আবহবিদ্যায় দূরপাল্লার মাইক্রোওয়েভ পরিমাপক যন্ত্র ব্যবহার করে কোন বস্তু বা পৃষ্ঠের তাপমাত্রা মাপা হয়। নক্ষত্র হতে বিকিরিত দূর্বল মাইক্রোওয়েভ তরঙ্গ বিশ্লেষণ করে তাদের গঠন সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়। মহাজাগতিক অণুতরঙ্গ পটভূমি বিকিরণ (cosmic microwave background radiation, সংক্ষেপে CMBR) বিশ্লেষণ করে মহাবিশ্বের উৎপত্তি সংক্রান্ত মহা বিস্ফোরণ তত্ত্বের অনেক তথ্য পাওয়া যায়।

প্রকারভেদ সম্পাদনা

অণুতরঙ্গ কম্পাঙ্ককে (Microwave frequency) ৩টি শ্রেণীতে ভাগ করা যায় ৷ যথা :-

  1. অতি উচ্চ কম্পাঙ্ক (Ultra High Frequency, সংক্ষেপে UHF)
  2. অধি উচ্চ কম্পাঙ্ক (Super High Frequency, সংক্ষেপে SHF)
  3. অত্যন্ত উচ্চ কম্পাঙ্ক (Extremly High Frequency, সংক্ষেপে EHF)

অণুতরঙ্গকে দুই ভাগে ভাগ করা যায় ৷ যথা:

  1. পার্থিব অণুতরঙ্গ (টেরেস্ট্রিয়াল মাইক্রোওয়েভ)
  2. উপগ্রহ অণুতরঙ্গ (স্যাটেলাইট মাইক্রোওয়েভ)

ব্যবহার সম্পাদনা

  1. সেলুলার যোগাযোগ
  2. ডিশ টিভির সঙ্কেত বহনে
  3. ওয়াই ম্যাক্স (WiMax) যোগাযোগ ব্যবস্থায়
  4. বৈশ্বিক অবস্থান ব্যবস্থায় (জিপিএস GPS)
  5. আবহাওয়া পর্যবেক্ষণে [২]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Pozar, David M. (1993). Microwave Engineering Addison–Wesley Publishing Company. আইএসবিএন ০-২০১-৫০৪১৮-৯.
  2. তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি by মো.আব্দুল মান্নান মন্ডল ও অণুপম হালদার