বাংলাদেশে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

বাংলাদেশে আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সুচনা হয় ব্রিটিশ শাসনামলে, যখন দেশে আধুনিক বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র ও বৃৃহৎ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্টিত হতে শুরু করে। ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এই সম্ভবনার দ্বার খুলে দেয়।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশের সর্বপ্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষায়িত আন্তর্জাতিক-মানের বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা ইন্সটিটিউট।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সরকার দারিদ্র্য, নিরক্ষরতা, যুদ্ধোত্তর পুনর্বাসন ইত্যাদি বিষয়ের প্রতি মনোযোগ দেয়, ফলে দেশে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতি বাধাগ্রস্থ হয়ে পরে। যাইহোক, দীর্ঘকাল যাবত স্থবিরতার পর সাম্প্রতিককালে আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির জন্য দেশে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যপক প্রসার লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এর বেশিরভাগটাই ঘটছে তথ্যপ্রযুক্তি ও জৈবপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে। বাংলাদেশে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পর্কিত জাতীয় নীতিসমূহ বাংলাদেশ সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের অধীনে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কাউন্সিল কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত ও পরিকল্পিত হয়।

দেশে ব্রিটিশদের আগমনের পর আধুনিক বিজ্ঞানের সুচনা হয়। এই সময়ে দেশের প্রযুক্তিগত ও শিক্ষামূলক সংস্কারের জন্য এই অঞ্চলের অনেক বিশিষ্ট বিজ্ঞানী এগিয়ে আসেন। বর্তমান বাংলাদেশের মুন্সীগঞ্জ জেলায় জন্মগ্রহণকারী স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু ছিলেন এমনই এক বিশিষ্ট বিজ্ঞানী, যিনি আলোক তরঙ্গ সৃষ্টির পথিকৃৎ হিসাবে খ্যাত এবং উদ্ভিদবিজ্ঞানেও তার অবদান অনস্বীকার্য। তিনিই ভারতবর্ষে পরীক্ষামূলক বিজ্ঞানের সুচনা করেন। ১৯৯৭ সালে আইইইই তাকে বেতারবিজ্ঞানের জনক হিসাবে ঘোষণা করে। তিনিই ভারত উপমহাদেশ থেকে আগত প্রথম ব্যক্তি যিনি মার্কিন পেটেন্ট গ্রহণ করেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] অপরদিকে, ১৯২৪-২৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করার সময় বাঙালি বিজ্ঞানী অধ্যাপক সত্যেন্দ্রনাথ বসু তার কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞান-সম্পর্কিত গবেষণার জন্য খ্যাতি লাভ করেন। আইনস্টাইন এবং তিনি বোস-আইনস্টাইন পরিসংখ্যানবোস-আইনস্টাইন ঘনীভবন নামক তত্ত্ব দিয়ে বিখ‍্যাত হয়ে আছেন।

১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পর বাংলাদেশ বা তৎকালীন পূর্ব বাংলা (পরবর্তীতে পূর্ব পাকিস্তান নামকরণ করা হয়) মুসলিম সংখ্যা-গরিষ্ঠ পাকিস্তান রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হয়। ফলে পূর্ব বাংলার বংশোদ্ভূত বেশ কয়েকজন প্রতিভাবান বাঙালি বিজ্ঞানী ভারতে চলে আসেন। পাকিস্তান বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ এর আঞ্চলিক শাখা ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫৫ সালে। তৎকালীন সময়ে এটি পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম এবং একমাত্র বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ছিল। পরবর্তীকালে এটি বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ নামে পুনর্নামকরণ করা হয়। কিন্তু পূর্ব বাংলার জনগণের প্রতি পাকিস্তান সরকারের বৈষম্য ও সামরিকীকরণের ফলে সেসময় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ইতিবাচক বিকাশ ধীরগতি লাভ করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সময় ছয়টি সংস্থার অধীনে বিশটি বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ছিল।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

একাত্তরে স্বাধীনতা অর্জনের পর বাংলাদেশে আরো কয়েকটি বিজ্ঞান গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় এই গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো আদলে গড়ে ওঠে। ১৯৮৩ সালে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পর্কিত একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়, যার সভাপতি ছিলেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

বিজ্ঞান শিক্ষার ব্যপারে গুরুত্ব দেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকার ১৯৮৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস করে। এর বদৌলতেই বাংলাদেশের প্রথম বিশেষায়িত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (এসইউএসটি) প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এসইউএসটি এর পর এর ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে আরো বেশকিছু সরকারি-বেসরকারি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা