বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তি

বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সূচনা হয়েছিল ১৯৬০ সালে পারমাণবিক গবেষণার মধ্য দিয়ে। পরবর্তী কয়েক দশকে, বৃহৎ বাংলাদেশী সংস্থাসমূহে কম্পিউটারের ব্যবহার বৃদ্ধি পায়, যেখানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আইবিএম মেইনফ্রেম কম্পিউটার ব্যবহৃত হত। এই খাতটি ১৯৯০ এর দশকে যথেষ্ট মনোযোগ পেতে শুরু করে। বর্তমানে এই খাতটি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলেও যথেষ্ট পরিমাণ অগ্রগতির সম্ভাবনা দেখাচ্ছে। [১][২]

ইতিহাস সম্পাদনা

বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) প্রথম কম্পিউটার ছিল একটি ১৬২০ সিরিজের আইবিএম মেইনফ্রেম কম্পিউটার, এ কম্পিউটারটি ১৯৬৪ সালে পাকিস্তান আণবিক শক্তি কমিশনের (পরবর্তীতে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন) ঢাকা অফিসে স্থাপন করা হয়েছিল। পরের বছরগুলিতে বিশেষত ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে কম্পিউটারের ব্যবহার ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। প্রধানত বিভিন্ন শিক্ষামূলক, গবেষণা এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আরও উন্নত তথ্য প্রযুক্তি সরঞ্জাম স্থাপন করা শুরু হয়। ১৯৭৯ সালে, একটি কম্পিউটার সেন্টার স্থাপন করা হয়, যা পরবর্তীতে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) এর অধীনে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগে নামকরণ করা হয়। কেন্দ্রটি শুরু থেকেই বাংলাদেশে তথ্য প্রযুক্তি শিক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। ব্যক্তিগত কম্পিউটার প্রবর্তনের মধ্য দিয়ে, ১৯৮০'র দশকের শেষ দিকে কম্পিউটারের ব্যবহার বাড়তে থাকে।[৩] ১৯৮৫ সালে, বেশ কয়েকটি সফল স্বতন্ত্র উদ্যোগে কম্পিউটারে প্রথম বাংলা লিপি উদ্ভাবিত হয়, এতে আরও তীব্রভাবে কম্পিউটার ব্যবহারের পথ প্রশস্ত হয়। [৪][৫] ১৯৯৫সালে ইন্টারনেটের ব্যবহার এবং স্থানীয়ভাবে তৈরি সফটওয়্যার রফতানি শুরু হয়।

১৯৮৩ সালে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট খাতে প্রয়োজনীয় নীতিমালা তৈরির জন্য একটি জাতীয় কম্পিউটার কমিটি গঠন করে। এই খাতটির কার্যকরী ব্যবহার, সম্প্রসারণ ও প্রচারের জন্য কর্মসূচি পরিচালনার জন্যও কমিটিটি দায়বদ্ধ ছিল। ১৯৮৮ সালে উল্লিখিত কমিটিটি জাতীয় কম্পিউটার বোর্ড দ্বারা প্রতিস্থাপন করা হয়। ১৯৯০ সালে মন্ত্রণালয় কম্পিউটার ও আইটি সম্পর্কিত কাজসমূহ পর্যবেক্ষণের জন্য বোর্ডটির সংস্কার সাধন করে এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল নামে পুনর্গঠন করে। [৬]

তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প সম্পাদনা

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প তুলনামূলকভাবে একটি নতুন খাত। জাতীয় অর্থনীতিতে সুস্পষ্ট অবদান না রাখলেও, একে একটি গুরুত্বপূর্ণ বর্ধনশীল শিল্প হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। ১৯৯৭ সালে সফটওয়্যার এবং তথ্যপ্রযুক্তি পরিষেবা শিল্পের জাতীয় বাণিজ্য সংস্থা হিসাবে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতিষ্ঠালগ্নে কেবল ১৭ টি সদস্য সংস্থা নিয়ে কাজ শুরু করলেও ২০০৯ সালে সংস্থাটির সদস্যপদ ৩২৬টি সদস্য সংস্থায় উন্নীত হয়। এশিয়ান দেশগুলোর মধ্যে ২০০৭ হতে ২০০৮ সাল পর্যন্ত পরিচালনা করা এক গবেষণায় জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সি বাংলাদেশকে সফটওয়্যার শিল্প ও তথ্যপ্রযুক্তি পরিষেবা প্রতিযোগিতায় প্রথম এবং দক্ষতায় ভারত ও চীনের পর তৃতীয় দেশ হিসেবে বাংলাদেশের নাম উল্লেখ করে। ২০০৮ সালে বিশ্ব ব্যাংকের এক গবেষণায় বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি এবং সফটওয়্যার রফতানিতে তিন অঙ্কের প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির পূর্বাভাস দেয়।[৭] ২০১০-২০১১ সালে গার্টনার বাংলাদেশকে অফশোর পরিষেবার জন্য শীর্ষ ৩০ দেশের একটি হিসাবে তালিকাভুক্ত করে। [৮] ইন্টারনেটের ব্যবহার ২০১২ সালে ২১.২৭ শতাংশ ছিল, যা তিন বছর আগে ৩.২ শতাংশ থেকে বেড়েছে। [৯] তবে এখনও বাংলাদেশিরা তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের পক্ষে তেমন যোগ্য নন। তাই বাংলাদেশ সরকার এতে অনেক বেশি অগ্রাধিকার দিচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার টেলিভিশনের মাধ্যমে, প্রাথমিক স্তরের শিশুদের কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শেখানোর জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

২০০৯ সাল থেকে গত নয় বছরে দেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) খাত গড়ে ৫৭.২১ শতাংশ রফতানি প্রবৃদ্ধি বজায় রেখেছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে, বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাত আন্তর্জাতিক বাজার থেকে রফতানি আয় বাবদ ০.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে ১.৪৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করেছে। ফলে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রায় এক শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। [১০] তথ্যপ্রযুক্তি খাত এ পর্যন্ত প্রায় তিন লক্ষ কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করেছে।

ইন্টারনেটের ব্যবহার বাড়ার সাথে সাথে সরকার আশা করে যে ২০২১ সালের মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি খাতটি জিডিপিতে ৭.২৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি যুক্ত করবে। [৯]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Bss, Dhaka (২১ ফেব্রুয়ারি ২০১০)। "Bangladesh to emerge as software exporter in global market"The Daily Star। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুলাই ২০১৩ 
  2. "'Bangladesh next hub in IT sector after China, India': Ed Franklin"। Banglanews24.com। ২০ জুলাই ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুলাই ২০১৩ 
  3. মাসুদ হাসান চৌধুরী এবং মোঃ মাহবুব মোর্শেদ (২০১২)। "কম্পিউটার"ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন 9843205901ওএল 30677644Mওসিএলসি 883871743 
  4. Ahamed, Syeed। "An amazing journey from Shahid Lipi to Avro"The Daily Star। Dhaka। ৩ মে ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুলাই ২০১৩ 
  5. আবদুস শাকিল (২০১২)। "বাংলা সফটওয়্যার"ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন 9843205901ওএল 30677644Mওসিএলসি 883871743 
  6. মাহবুবুল আলম (২০১২)। "বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল"ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন 9843205901ওএল 30677644Mওসিএলসি 883871743 
  7. Karim, Habibullah N (৬ জানুয়ারি ২০১০)। "Bangladesh IT industry going global"The Daily Star। ২৯ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুলাই ২০১৩ 
  8. "Gartner Identifies Top 30 Countries for Offshore Services in 2010–2011"Gartner। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুলাই ২০১৩ 
  9. "Information technology to contribute 7.28 percent to GDP by 2021"Bangladesh Sangbad Sangstha। ২০১৩-১০-২৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুলাই ২০১৩ 
  10. Latifee, & Hossain, Enamul Hafiz, Md. Sajib (১৪ মার্চ ২০১৮)। "ICT industry thriving, needs reform"The Financial Express। সংগ্রহের তারিখ ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮