বর্মী রন্ধনশৈলী
বর্মী রন্ধনশৈলী হচ্ছে মিয়ানমারের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচলিত খাদ্য রন্ধন ও পরিবেশনের শৈলী। স্থানীয় সংখ্যালঘু নৃগোষ্ঠীর অবদানে মিয়ানমারের রন্ধনশৈলী সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছে। মিয়ানমারে বামাররা সবচেয়ে প্রভাবশালী গোষ্ঠী, কিন্তু চীন গোষ্ঠীসহ অন্যান্য গোষ্ঠীগুলি্র স্বতন্ত্র খাবার ও রন্ধনশৈলী আছে।
মাছের সস এবং নগাপী (সীফুড) জাতীয় মাছজাত দ্রব্যের ব্যাপক ব্যবহার হয় বামার রন্ধনপ্রণালীতে। মায়ানমারের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে, বার্মিজ রন্ধনপ্রণালী চীনা রান্না, ভারতীয় রান্না এবং থাই রান্নার দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে।
মহিঙ্গা হচ্ছে মিয়ানমারের ঐতিহ্যবাহী প্রাতঃরাশ এবং জাতীয় খাবার। সিৎয়ে, কিউকপিউ, মও্লামিয়াইং (সাবেক মৌলমান), মার্গুই (মৈয়িক) এবং দোয়েই এর মত উপকূলীয় শহরগুলির একটি সাধারণ খাদ্য উপাদান হচ্ছে সমুদ্রজাত খাবার। অন্যদিকে মাংস এবং হাঁস-মুরগী ম্যান্ডেলার মত ভূমিবদ্ধ শহরগুলিতে সাধারণ খাদ্য। মিষ্টি পানির মাছ এবং চিংড়ি রান্নায় প্রোটিনের প্রাথমিক এবং বিভিন্ন উপায়ে ব্যবহার করা হয়: তাজা, নোনা, শুটকি, বেটে, টক মিশিয়ে ইত্যাদি।
বর্মী রন্ধনশৈলীর বিভিন্ন ধরনের সালাদ (এ থোক) রয়েছে, যার প্রধান উপকরণ চাল, গম এবং চাল নুডলস, কাচের নুডলস এবং সেমাই, আলু, আদা, টমেটো, কাফির লেবু, লম্বা শিম, লাহপেট এবং নগাপি (মাছের পেস্ট)। এই সালাদ সবসময় বার্মিজ শহরগুলোতে দ্রুত খাবার (ফাস্টফুড) হিসাবে জনপ্রিয় হয়েছে।
একটি জনপ্রিয় বর্মী ছড়া হচ্ছে, "ফলের মধ্যে আম সবচেয়ে ভাল; মাংসের মধ্যে শুকরের মাংস ভাল এবং পাতার মধ্যে ল্যাহপেট সবচেয়ে ভাল"।
খাদ্যাভ্যাস
সম্পাদনাআদবকায়দা
সম্পাদনাঐতিহ্যগতভাবে বর্মীরা বাঁশের মাদুরে বসে নিচু টেবিল থেকে খাদ্যগ্রহণ করে।[১][১] একসাথে খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। একটি সাধারণ খাবারে থাকে প্রধান খাবার হিসেবে ফুটানো ভাত এবং হীন নামক খাবার যাতে থাকে স্বাদুপানির মাছের তরকারি। মাছের বদলে মাংসের তরকারিও থাকে। হিন গিয়ো নামক পাতলা ঝোল থাকে।
সম্মান থেকে অন্যেরা আসার পূর্বে সব থেকে বয়স্কদের আগে খাবার পরিবেশন করা হয়। এমনকি মুরুব্বীরা অনুপস্থিত থাকলেও এটা করা হয়। পিতামাতার সম্মানে তাদের পাত্র থেকে প্রথমে কিছু ভাত সরিয়ে রাখার প্রথা উ চা নামে পরিচিত[২]।
বর্মীদের খাবারের ধরন অনেকটা বাঙালীর মতো। তারা ডান হাতে খাবার খায়। প্রথমে ভাতের সংগে অন্যান্য তরকারি মিশিয়ে আঙুল দিয়ে ছোট দলা তৈরী করে মুখে দেয়। নুডলস জাতীয় খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে তারা অবশ্য চপস্টিকস এবং কাটাচামচ ব্যবহার করে। বাড়িতে ছুটি-কাঁটার ব্যবহার একদমই নেই তবে রেস্তোরাতে এগুলোর প্রচলন আছে। খাবারের সংগে সাধারণত পানীয় পরিবেশন করা হয় না তবে পাতলা ঝোল জাতীয় খাবার থাকে। খাবারের বাইরে বর্মীদের প্রিয় পানীয় সবুজ চা।
লাহপেটা
সম্পাদনালাহপেট (লেফাত, লাফেট, লেফেট, লেপপেট, বা লেটপেট'ও উচ্চারণ করা হয়) হচ্ছে একধরনের বর্মী চায়ের আচার। মায়ানমারে পৃথিবীর অল্প কয়েকটি দেশের মতো চা পানের পাশাপাশি খাওয়াও হয়। আচারি চা এই অঞ্চলের অনন্য এবং শুধুমাত্র জাতীয় খাদ্য হিসাবে গণ্য করা হয় না পাশাপাশি বার্মিজ সমাজে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ "Myanmar Traditional Foods"। Myanmar.com। ১৩ অক্টোবর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ অক্টোবর ২০১২।
- ↑ Saw Myat Yin (২০১১)। Culture Shock! Myanmar: A Survival Guide to Customs and Etiquette। Marshall Cavendish Corporation। আইএসবিএন 9780761458722।