ইরাকি রন্ধনশৈলী বা মেসোপটেমীয় রন্ধনশৈলীর ইতিহাস দশহাজার বছরের পুরাতন। সুমেরীয়, আক্কাডীয়, ব্যবলনীয়, আসারীয় এবং প্রাচীন পারস্যের[১] হাত ধরে এই রন্ধনশৈলী গড়ে উঠেছে। ইরাকের প্রাচীন ধ্বংসাবশেষে প্রাপ্ত শিলালিপি থেকে জানা যায় উৎসবের সময়ে মন্দিরে খাবার প্রস্তুত করার প্রণালী। একে পৃথিবীর প্রথম রান্নারবই বলা হয়। প্রাচীন ইরাক বা মেসোপটেমিয়া ছিলো সমৃদ্ধ সভ্যতার নিবাস। রন্ধনশিল্পসহ জ্ঞানের সকল শাখায় তারা সমৃদ্ধি অর্জন করেছিলো। ইসলামের স্বর্ণযুগে বাগদাদ আব্বাসীয় খিলাফাতের রাজধানী হওয়ায় ইরাকি রান্না এর সর্বোচ্চ শিখরে উঠতে সক্ষম হয়। বর্তমানের ইরাকি রন্ধনশিল্পে এর দৃঢ় প্রভাব রয়েছে গেছে। পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী ইরান, তুর্কী, সিরিয়া অঞ্চলের রন্ধন ঐতিহ্যের প্রভাব আছে।

ইরাকি খাবার

খাবারের শুরুতে থাকে মেজ্জা নামক হজমীকারক সালাদ। ইরাকিদের উল্লেখযোগ্য কিছু খাবার হচ্ছে কেবাব (মাংস রসুন, লেবু এবং মসলায় মাখিয়ে আগুনে ঝলসানো হয়), গাউস, বামিয়েহ (ভেড়া, ঢেঁড়স এবং টমেটোর স্ট্যু), কুজি (চাল,আলমন্ড, রেসিন এবং মসলা দিয়ে রান্না করা ভেড়ার মাংস), ফালাফেল, কুব্বাহ, মাক্লুবা ইত্যাদি। দোলমা ও মাহশির মত রান্না করা সব্জির খাবারও জনপ্রিয়।[২]

ইরাকে প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার মত প্রাকৃতিক বিভাজন[৩] কাজ করে যেখানে আশারিয়া উত্তরের উচূভূমিতে এবং ব্যবলনিয়া দক্ষিণের সমভূমিতে। আলজাজিরা বা প্রাচীন আশারিয়ায় গম এবং শীতল আবহাওয়ার ফলস যেমন আপেল ও পাথর ফল জন্মে। আল-ইরাক বা প্রাচীন ব্যবলনিয়ায় ধান, বার্লি, লেবুজাতীয় ফল এবং খেঁজুর জন্মে। এই অঞ্চলের ফলে ইরাক পৃথিবীর সর্বোচ্চ খেঁজুর উৎপাদনকারী দেশে পরিণত হয়েছে।

ইতিহাস সম্পাদনা

প্রত্নতত্ত্ববিদেরা ইরাকের উত্তরপূর্বাঞ্চলে অবস্থিত জার্মোতে খননের সময়ে নিদর্শন পান যে ৬৭৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের পূর্বে কাঠবাদাম (পিসতাচিয়ো নাটস) এখানকার সাধারণ খাবার ছিলো। ইরাকে প্রাপ্ত প্রাচীন লিপি সমূহের মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে সুমেরিয় আক্কাডীয় দ্বিভাষী অভিধান যেখানে ১৯০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের ২৪ টি শিলালিপির উপরে লেখা হয়েছে। এতে দুই প্রাচীন ইরাকি ভাষার ৮০০ প্রকারের খাদ্য ও পানীয়ের নাম লেখা আছে। ২০ প্রকারের পনির, ১০০ প্রকারের স্যুপ এবং ৩০০ প্রকারের রুটির উল্লেখ আছে যাদের প্রত্যেকের উপাদান, আকার-আকৃতি ভিন্ন।

আজকের দিনের বাগদাদ থেকে ৫০ মাইল দক্ষিণে ব্যবিলনে ১৭০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের পাওয়া মাটির লিপির তিনটির একটিতে ২৪ টি মাংস ও সব্জির ঝোল রান্নার পদ্ধতির উল্লেখ আছে। স্ট্যু বা ঝোল রন্ধনশৈলীর মূলধারায় এখনো টিকে আছে। মধ্যযুগীয় ইরাকি রন্ধনপ্রণালী এবং আধুনিক ইরাকি রন্ধনশৈলীতে এর সত্যতা ফুটে ওঠে।

উপাদান সম্পাদনা

ইরাকিদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকার কিছু সাধারণ উপাদান হচ্ছেঃ

  • শাকসব্জি- বেগুন, টমেটো, শালগম, শিম, শ্যালট, ঢেঁড়স, পেঁয়াজ, ডাল, আলু, বাঁধাকপি, লেটুস, রসুন, মরিচ।
  • শস্য - চাল, বুলঘুর গম এবং বার্লি।
  • ডাল- মসুর, ছোলা।
  • ফল - জলপাই, খেজুর, এপ্রিকট, তাল, ডুমুর, আঙুর, তরমুজ, বেদানা, আপেল, চেরি, লেবুজাতীয় ফল যেমন কমলা লেবু, লেবু।
  • পনির - বালাদি, ফেতা এবং হাল্লৌমি।

মেজ্জা সম্পাদনা

 
শুকনো ফল

মেজ্জা হচ্ছে হালকা খাবার যা প্রায়শই পানীয়ের সাথে পরিবেশন করা হয়। পানীয়টি ঝাঁঝ স্বাদের হয় যেমন আরক, অঊজু, রাকি অথবা বিভিন্ন মদ যা স্পেনের তাপাসের মত।

  • বাইজেন্টাইন মাকলি - যা ঠান্ডা অবস্থায় পরিবেশন করা হয়। ঝলসানো বা ভাঁজা কাটা রুটির সাথে পরিবেশন করা হয়। গোলমরিচ অথবা রসুন লেবুন ভিনেগার দিয়ে বৈচিত্র্য আনা হয়।
  • ফাট্টুস- এক ধরনের সালাদ যা বাগানের বিভিন্ন সবজি দিয়ে তৈরী করা হয় এবং ভাজা রুটির সঙ্গে পরিবেশন করা হয়।
  • তাব্বুলেহ - একধরনের সালাদা যা মেজ্জের অংশ হিসেবে প্রায়শই ব্যবহৃত হয়।
  • তুরশি - সব্জির আচার যা বলকান ও মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশের রন্ধনশৈলীর অংশ। এটা সনাতন হজমীকারক।
  • আরবীয় সালাদ

স্যুপ ও স্ট্যু সম্পাদনা

ভাত জাতীয় খাবারের উপর বিভিন্ন প্রকারের ঝোল পরিবেশন করা ইরাকি রন্ধনশৈলীর প্রধান অংশ।

  • ফাসৌলিয়া - শুকনো সাদা শিম, জলপাই তেল এবং সব্জি দিয়ে তৈরী স্যুপ।
  • হারিসসা
  • মসুর ডালের স্যুপ
  • মারগাট বামিয়া বা শুধুই বামিয়া যা ঢেড়স এবং ভেঁড়া বা গোমাংসের টুকরো দিয়ে তৈরি করা
  • ফেসেঞ্জেন - হয়। সনাতনভাবে এটা হাঁস বা মুরগী দিয়ে তৈরী করা হয়।
  • কেবাব - মাংস ঝলসে কেবাব তৈরী করা হয় যা বাংলাদেশে দেশে কাবাব নামে পরিচিত। তবে কাবারের বিভিন্ন প্রকারভেদ আছে। কাবাব তৈরীর সব থেকে পরিচিত উপাদান হচ্ছে গরু, ছাগল বা ভেড়ার মাংস। তবে অনেক স্থানে হাঁস-মুরগী ও মাছের কেবাব প্রস্তুত করা হয়।
  • কিমা - প্রথাগতভাবে দক্ষিণ ইরানে বাৎসরিক আশুরা পালনের সময়ে কিমা প্রস্তুত করা হয়। কিমা হচ্ছে প্রাচীন আক্কাডিয় ভাষার শব্দ যার অর্থ কুচিকুচি করে কাটা।
  • মাকলুবা
  • মাসগুফ -
  • মারগাট বেতিনিজান
  • বেদানার স্যুপ
  • শরবত রুম্মান
  • কুজি
  • তাশরিব
  • তাহদিগ
  • তেপসি বেতিনিজান।

মাংসের গোল্লা সম্পাদনা

  • দোলমা - দোলমাতে মাংসের ব্যবহার হতেও পারে নাও পারে। সব্জির ব্যবহার প্রধান। আঙুর পাতা দোলমা অধিক প্রচলিত।
  • ফালাফেল - এর উৎস মিশলে। মধ্যপ্রাচ্যে ফাস্টফুড হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
  • কুব্বা
  • কোফতা
  • ম্যান্টি
  • সমুসা

চালের খাবার সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. http://www.thingsasian.com/stories-photos/3592 Foods of Iraq: Enshrined With A Long History. Habeeb Salloum.
  2. Albala, Ken (২০১১)। Food Cultures of the World EncyclopediaABC-CLIO। পৃষ্ঠা 251–252। আইএসবিএন 978-0-313-37627-6 
  3. Davidson, Alan; Jaine, Tom (২০০৬)। The Oxford Companion to FoodOxford University Press। পৃষ্ঠা 405আইএসবিএন 978-0-19-280681-9