গণেশ (সংস্কৃত: गणेश;শুনুন) পৌরাণিক হিন্দুধর্মের জনপ্রিয়তম ও সর্বাধিক পূজিত দেবতাদের অন্যতম। ভারতের সর্বত্র গণেশ-মূর্তি দেখা যায়। হিন্দুদের সকল সম্প্রদায়ের মধ্যেই তাঁর পূজা প্রচলিত।জৈন, বৌদ্ধধর্ম এমনকি ভারতের বাইরেও গণেশ আরাধনার ব্যাপক প্রচলন আছে। পুরাণে সর্বত্র গণেশ হর-পার্বতীর পুত্র। তাঁর রূপ বিভিন্ন শাস্ত্রগ্রন্থে বিভিন্ন প্রকার; তবে সর্বত্রই তিনি গজমুণ্ড মনুষ্যাকার দেবতা। তাঁর বাহন মূষিক বা ইঁদুর; অথবা কোনও কোনও স্থলে সিংহ। শিল্পকলা ও বিজ্ঞানের পৃষ্ঠপোষক, এবং মহাবল, মেধা ও বুদ্ধির দেবতা। পূজা ও অন্যান্য অনুষ্ঠানের সময় গণেশের পূজা সর্বাগ্রে করা কর্তব্য বলে বিবেচিত হয়। লেখার সময় তাঁকে অক্ষরের পৃষ্ঠপোষকরূপে আবাহন করার রীতি আছে। একাধিক পৌরাণিক সূত্র থেকে তাঁর জন্ম, কীর্তিকলাপ ও মূর্তিতত্ত্বের ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। গণেশের অন্যান্য নামগুলি হল গণপতি, বিনায়ক, মহাগণপতি, বিরিগণপতি, শক্তিগণপতি, বিদ্যাগণপতি, হরিদ্রাগণপতি, উচ্ছিষ্টগণপতি, লক্ষ্মীবিনায়ক, হেরম্ব, বক্রতুণ্ড, একদন্ত, মহোদর, গজানন, লম্বোদর, বিকটবিঘ্নরাজ। দুইবার জন্ম বলে তিনি দ্বৈমাতুর নামেও অভিহিত।

পৃথক দেবতা রূপে গণেশের উদ্ভব খ্রিষ্টীয় চতুর্থ ও পঞ্চম শতাব্দীতে গুপ্তযুগে। যদিও একাধিক বৈদিক ও প্রাক-বৈদিক উৎস থেকেও গণেশের উল্লেখ পাওয়া যায়। তাঁর জনপ্রিয়তা দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং নবম শতাব্দীতে পাঁচ প্রধান স্মার্ত দেবতার অন্যতম রূপে গণ্য হন গণেশ। এই সময়কে গণেশকে সর্বোচ্চ দেবতা স্বীকার করে গাণপত্য (সংস্কৃত: गाणपत्य; সম্প্রদায়ের উদ্ভব ঘটে। গণেশ সংক্রান্ত প্রধান ধর্মগ্রন্থগুলি হল গণেশ পুরাণ, মুদগল পুরাণ, ও গণপতি অথর্বশীর্ষ

পুরাণ ও কাব্যে গণেশের উপস্থিতি লক্ষ্যনীয়। তিনি অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভারতীয় মহাকাব্য মহাভারত-এর লিপিকার রূপে কল্পিত হন। ভারতের সর্বত্রই তাঁর পূজা প্রচলিত। তবে মহারাষ্ট্র ও তৎসন্নিহিত অঞ্চলে গণেশ পূজা জাতীয় উৎসব রূপে উদযাপিত হয়। পশ্চিমবঙ্গবাংলাদেশে বাংলা নববর্ষের দিন গণেশ পূজা প্রচলিত। এছাড়াও দুর্গোৎসবে সপরিবার দেবী দুর্গার সঙ্গে গণেশও পূজিত হন। গণেশের গায়ত্রী মন্ত্রটি হল – মহৎকায়া বিদ্মহে বক্রতুণ্ডায় ধীমহি তন্নো দন্তী প্রচোদয়াৎ

আরও দেখুন...