পোর্ট লুইস (ইংরেজি: Port Louis, ফরাসি: Port-Louis, [pɔʁ lwi] (শুনুন); টেমপ্লেট:Lang-mfe or Porlwi, টেমপ্লেট:IPA-mfe) হচ্ছে মরিশাসের রাজধানী শহর। এটি ব্ল্যাক রিভার জেলার একটি ক্ষুদ্র পশ্চিম অংশে পোর্ট লুইস জেলায় অবস্থিত। পোর্ট লুইস দেশের অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কেন্দ্র, এবং সবচেয়ে জনবহুল শহর। এটি পোর্ট লুইসের পৌরসভা সিটি কাউন্সিল কর্তৃক পরিচালিত হয়। পরিসংখ্যান মরিশাসের ২০১২ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, এর জনসংখ্যা ১৪৯,১৯৪ জন।[২]

পোর্ট লুইস
Port Louis (ইংরেজি)
Port-Louis (ফরাসি)
Porlwi (Morisyen)
শহর
পোর্ট লুইস ওয়াটারফ্রন্ট
চ্যাম্প ডি মার্স
পোর্ট লুইসের বায়বীয় দৃশ্য
পোর্ট লুইস হারবার
পোর্ট লুইসের পতাকা
পতাকা
পোর্ট লুইসের অফিসিয়াল সীলমোহর
সীলমোহর
নীতিবাক্য: "Concordia et Progressio"
(লাতিনের অর্থ দাড়ায় "ঐকতান এবং অগ্রগতি")
পোর্ট লুইস মরিশাস-এ অবস্থিত
পোর্ট লুইস
পোর্ট লুইস
পোর্ট লুইস ভারত মহাসাগর-এ অবস্থিত
পোর্ট লুইস
পোর্ট লুইস
মরিশাসভারত মহাসাগর অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ২০°৯′৫২″ দক্ষিণ ৫৭°৩০′১৫″ পূর্ব / ২০.১৬৪৪৪° দক্ষিণ ৫৭.৫০৪১৭° পূর্ব / -20.16444; 57.50417
দেশ মরিশাস
জেলাপোর্ট লুইস জেলা
প্রতিষ্ঠিত১৬৩৮
টাউন২৫ আগস্ট ১৯৬৬
শহর১২ ডিসেম্বর ২০১১
সরকার[১]
 • ধরনপৌরসভা
 • লর্ড মেয়রড্যানিয়েল এরিক ক্লাইভ লরেন্ট
 • ডেপুটি লর্ড মেয়রক্রিস লোইক ডিক
আয়তন
 • মোট৪৬.৭ বর্গকিমি (১৮.০ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (২০১৫)[২]
 • মোট১,৪৯,১৯৪
 • ক্রমমরিশাসে ১ম
 • জনঘনত্ব৩,২০০/বর্গকিমি (৮,৩০০/বর্গমাইল)
সময় অঞ্চলএমইউটি (ইউটিসি+৪)
ওয়েবসাইটপৌর কাউন্সিল

ইতিহাস সম্পাদনা

 
Jardin de la Compagnie (Company Gardens in English). Originally the vegetable patch of the French East India Company

পোর্ট লুইস ১৬৩৮ সালে একটি বন্দর হিসাবে ইতিমধ্যে ব্যবহার করা হয়েছিল। ১৭৩৬ সালে, ফরাসি সরকারের অধীনে, এটি মরিশাসের প্রশাসনিক কেন্দ্র এবং কেপ অফ গুড হোপের আশেপাশে এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যবর্তী চলাচলে ফরাসি জাহাজগুলির জন্য একটি প্রধান সাময়িক বিশ্রামের স্থান হয়ে ওঠে।[৩] বন্দরটি রাজা পঞ্চদশ লুইসের সম্মানে নামকরণ করা হয়। ফরাসি ঔপনিবেশিকতার এই যুগে, মরিশাস আইল ডি ফ্রান্স নামে পরিচিত ছিল। সেই সময়ে ফরাসি গভর্নর, বার্ট্রান্ড-ফ্রানকোয়েস মাহে দে লা বোর্দোনাইস, শহরটির উন্নয়নে অবদান রাখেন। যেহেতু পোর্ট লুইস মোকা মাউন্টেন রেঞ্জ দ্বারা ঘূর্ণিঝড়ের সময় শক্তিশালী বায়ু থেকে অপেক্ষাকৃত ভাল সুরক্ষিত ছিল, সেই কারণে পোর্ট লুইস দ্বীপটির প্রধান বন্দর এবং দুর্গ উভয়কেই ঘিরে রাখার জন্য নির্বাচিত হয়েছিল। নেপোলিয়ন যুদ্ধের (১৮০০-১৫) সময় দ্বীপটির ব্রিটিশ দখলকালে বন্দরের মূল্য অব্যাহত ছিল এবং এটি ব্রিটেনকে ভারত মহাসাগর নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করেছিল। তবে, ১৮৬৯ সালে সুয়েজ খাল চালুর পরে বন্দরে জাহাজের আগমনের পরিমান ব্যাপকভাবে পতিত হয়েছিল। সুয়েজ খাল সাত বছর সময়ের জন্য বন্ধ থাকার সময় বন্দরের কার্যকলাপ বৃদ্ধি পায় (১৯৬৭ সালে শুরু হয়)। ১৯৭০ এর দশকের শেষ দিকে বন্দরের আধুনিকীকরণের ফলে এটি মরিশাস থেকে আমদানি ও রপ্তানির জন্য কেন্দ্রীয় বিন্দু হিসাবে ভূমিকা বজায় রাখতে সহায়তা করেছে। যদিও পোর্ট লুই মরিশাসের ব্যবসা এবং প্রশাসনিক রাজধানী হিসাবে চলতে থাকে, তবুও ১৯৯০ এর দশকের শেষের দিকে পর্যটন শিল্পের সম্প্রসারণে কুদান ওয়াটারফ্রন্ট এলাকায় নির্মিত অনেক দোকান, হোটেল এবং রেস্টুরেন্ট সহ পোর্ট লুইসে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন ঘটেছে।

জলবায়ু সম্পাদনা

পোর্ট লুইসে কোপেন জলবায়ু শ্রেণিবিভাগের অধীনে একটি গরম আধা-শুষ্ক জলবায়ু (বিএস) বিরাজমান। ডিসেম্বর থেকে এপ্রিলে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়, যেখানে এই সময়কালের প্রতি মাসে গড়ে ৬০ মিমি (২.৪ ইঞ্চি) বা তার বেশি বৃষ্টিপাত হয়। অবশিষ্ট মাসগুলোতে শুষ্ক জলবায়ু বিরাজ করে। শহরটিতে এছাড়াও গড় তাপমাত্রার একটি উল্লেখযোগ্য পরিসীমা দেখা যায়। পোর্ট লুইসের সবচেয়ে শীতল তাপমাত্রা বছরের মাঝামাঝিততে দেখা যায় যেখানে গড় উচ্চ তাপমাত্রা প্রায় ২৪ °সে (৭৫ °ফা)। আর্দ্র মৌসুমের সর্বোচ্চ পর্যায়ে, শহরটিতে এটির সর্বোচ্চ তাপমাত্রা দেখা যায় যেখানে গড় উচ্চ তাপমাত্রা প্রায় ৩০ °সে (৮৬ °ফা)।

পোর্ট লুইস-এর আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য
মাস জানু ফেব্রু মার্চ এপ্রিল মে জুন জুলাই আগস্ট সেপ্টে অক্টো নভে ডিসে বছর
সর্বোচ্চ রেকর্ড °সে (°ফা) ৩৫
(৯৫)
৩৩
(৯১)
৩২
(৯০)
৩১
(৮৮)
২৯
(৮৪)
২৮
(৮২)
২৭
(৮১)
২৭
(৮১)
২৮
(৮২)
৩১
(৮৮)
৩৩
(৯১)
৩৫
(৯৫)
৩৫
(৯৫)
সর্বোচ্চ গড় °সে (°ফা) ৩১.৫
(৮৮.৭)
৩১.৪
(৮৮.৫)
৩১.৫
(৮৮.৭)
৩০.৭
(৮৭.৩)
২৯.৩
(৮৪.৭)
২৭.৬
(৮১.৭)
২৬.৭
(৮০.১)
২৬.৮
(৮০.২)
২৭.৭
(৮১.৯)
২৮.৮
(৮৩.৮)
৩০.২
(৮৬.৪)
৩১.১
(৮৮.০)
২৯.৪
(৮৫.০)
সর্বনিম্ন গড় °সে (°ফা) ২৪.১
(৭৫.৪)
২৪.০
(৭৫.২)
২৩.৮
(৭৪.৮)
২৩.০
(৭৩.৪)
২১.৫
(৭০.৭)
১৯.৯
(৬৭.৮)
১৯.৩
(৬৬.৭)
১৯.১
(৬৬.৪)
১৯.৪
(৬৬.৯)
২০.৪
(৬৮.৭)
২১.৮
(৭১.২)
২৩.২
(৭৩.৮)
২১.৬
(৭০.৯)
সর্বনিম্ন রেকর্ড °সে (°ফা) ১৭
(৬৩)
১৮
(৬৪)
১৭
(৬৩)
১৪
(৫৭)
১৩
(৫৫)
১১
(৫২)
১১
(৫২)
১০
(৫০)
১১
(৫২)
১৩
(৫৫)
১৪
(৫৭)
১৭
(৬৩)
১০
(৫০)
অধঃক্ষেপণের গড় মিমি (ইঞ্চি) ১৩১
(৫.২)
১৬০
(৬.৩)
৮৩
(৩.৩)
৮৭
(৩.৪)
৪৮
(১.৯)
২৪
(০.৯)
১৮
(০.৭)
১৯
(০.৭)
১৭
(০.৭)
১৫
(০.৬)
২৪
(০.৯)
৮৫
(৩.৩)
৭১১
(২৭.৯)
অধঃক্ষেপণ দিনগুলির গড় (≥ ১.০ mm) ১০ ৬৮
মাসিক সূর্যালোক ঘণ্টার গড় ২৪৮ ২২৬ ২১৭ ২৪০ ২৪৮ ২১০ ২১৭ ২১৭ ২৪০ ২৭৯ ২৭০ ২৭৯ ২,৮৯১
উৎস ১: বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা।[৪]
উৎস ২: BBC Weather[৫]

অর্থনীতি সম্পাদনা

শহরটির অর্থনীতির বেশিরভাগই তার আর্থিক কেন্দ্র, বন্দর সুবিধা, পর্যটন ও উৎপাদন খাত দ্বারা প্রভাবিত। যার মধ্যে রয়েছে টেক্সটাইল, রাসায়নিক, প্লাস্টিক এবং ফার্মাসিউটিক্যালস । পোর্ট লুইস ভারত মহাসাগর অঞ্চলের বৃহত্তম বন্দর সুবিধা এবং আফ্রিকার প্রধান আর্থিক কেন্দ্রগুলির মধ্যে একটি।[৬]

বন্দর সম্পাদনা

 
Aerial view of the city, including the port, at night

পোর্ট লুইস দেশের প্রধান পোতাশ্রয়ের জায়গা, যা মরিশাসের সমুদ্র জাহাজের প্রবেশ এবং প্রস্থান করার একমাত্র সরকারী বন্দর। অন্য কোন দ্বীপ দেশে পোতাশ্রয় ভ্রমণ করার আগে বন্দরে জাহাজ সাফ করা আবশ্যক।

১৯৯৮ সালে আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত মরিশাস বন্দর কর্তৃপক্ষ (এমপিএ), পোর্ট লুইস বন্দরের রক্ষনাবেক্ষনের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত।[৭] মরিশাস পোর্ট কর্তৃপক্ষ বন্দর অবকাঠামো সরবরাহ করে, বন্দর এবং পণ্যসম্ভার-হ্যান্ডলিং সেবার জন্য ব্যক্তিগত প্রদানকারীর সঙ্গে চুক্তিতে প্রবেশ করে, বন্দরের ব্যবহার এবং বিকাশকে প্রচার করে এবং লাইসেন্স, বন্দর এবং সামুদ্রিক সেবা নিয়ন্ত্রণ করে।[৮] টার্মিনাল ১-এ রয়েছে মোট ১১৮০ মিটারের অবতরনস্থল, পণ্যসম্ভার, যাত্রী, এবং মাছ ধরার নৌকার জন্য রয়েছে ছয়টি নোঙ্গর ফেলার স্থান। টার্মিনাল ২-এ রয়েছে ৯৮৬ মিটারের অবতরনস্থল, ছয়টি নোঙ্গর ফেলার স্থান সহ এতে চিনি, মাছ, চর্বি, এবং কস্টিক সোডা পরিচালনা ও সংরক্ষণের বিশেষ সুবিধা রয়েছে। বিশেষত, বুল্ক সুগার টার্মিনাল (মরিশাস চিনি টার্মিনাল কর্পোরেশন দ্বারা পরিচালিত) ড্রাফ্টের ১১ মিটার পর্যন্ত জাহাজ পরিচালনা করতে পারে, প্রতি ঘণ্টায় ১৪৫০ টন হারে চিনি লোড করতে পারে এবং ১৭৫,০০০ টন মালামাল সংরক্ষণ করতে পারে। টার্মিনাল ২-এ উপস্থিত রয়েছে ১২৪ মিটার ক্রুজ জাহাজ জেটি, যা ১০.৮ মিটার গভীরতা বিশিষ্ট। টার্মিনাল -৩ এ রয়েছে ২২ মিটার গভীরতার ২৮০ মিটার দীর্ঘ অবতরনস্থল, এবং কন্টেইনার জাহাজ পরিচালনা করার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও বর্তমানে রেফার কনটেইনারের জন্য বাঁধার সুবিধা সহ বাল্ক ইথানল সংরক্ষণের সুবিধা রয়েছে। অবতরনস্থলে ডকেঙর জন্য খুব বড় জাহাজ বাইরের নোঙ্গর বাঁধার স্থানে নোঙ্গর করতে পারে, যা এখনও বন্দরের সরকারী সীমানার মধ্যে।

২০১০ সালে বার্ষিক ২,২০০টি জাহাজের বন্দরে আগমন ঘটেছে। ২০১৯-এ, কার্গো কন্টেইনার ধারনের ক্ষমতা ১ মিলিয়ন টিইইউ ছিল (কুড়ি-ফুট সমতুল্য একক)। [৯] সামগ্রিকভাবে, বন্দরটি দেশের জিডিপিতে ২% অবদান রাখে।[১০]

ক্রুজ জাহাজ টার্মিনালটি ২০১০ সালে খোলা হয়েছিল এবং ক্রিশ্চিয়ান ডেকোটারের (মরিশাসের পর্যটন উপদেষ্টা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান) নামে নামকরণ করা হয়েছিল, মরিশাসের অর্থনীতিতে পর্যটন বৃদ্ধির ভূমিকার তাৎপর্য বিবেচনা করে । ৩০০ মিটার লম্বা পর্যন্ত ক্রুজ জাহাজ এখানে অবস্থান করতে পারে, যার মধ্যে যাত্রী ও যানবাহনগুলির জন্য দুটি প্রবেশ সেতু রয়েছে। বিশ্বের বৃহত্তম ক্রুজ জাহাজ পরিচালনা করতে সক্ষম হওয়ায় ভারত মহাসাগরের প্রথম ফ্যাসিলিটি ছিল এটি। ২০১২ সালে, সমুদ্রের যাত্রী আগমনের মধ্যে ছিল ১১,৫১০ পর্যটক এবং ৬,৪৫০ প্রমোদ ভ্রমণকারী যারা ২৩টি ক্রুজ জাহাজে এসে পৌঁছেছিল।[১১]

কুদান ওয়াটারফ্রন্টে নোঙ্গর ফেলার সুবিধা পাওয়া যায়। বৈদ্যুতিক এবং জল সংযোগ, গোসলখানা এবং টয়লেট, লন্ড্রি, এবং গাড়ির পার্কিং সহ ২০টি নৌযানের নোঙ্গর ফেলার সুবিধা উপলব্ধ রয়েছে। এছাড়াও উপলব্ধ রয়েছে জাহাজ-ঘাটা এবং জাহাজের কাঠামো এবং মেরামত মেরামত সুবিধা। নোঙ্গর করার স্থানের গভীরতা ২ থেকে ৪ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত, জোয়ারের উপর নির্ভর করে এবং ৩০-মিটার পর্যন্ত দীর্ঘ জাহাজগুলি অবস্থান করতে পারে।

এছাড়াও বন্দরে অবস্থিত টার্মিনাল ১-এর জেটিতে জাতীয় কোস্ট গার্ড সুবিধা রয়েছে।

আর্থিক শিল্প সম্পাদনা

 
The skyline of Port Louis, dominated by the Bank of Mauritius Tower

পোর্ট লুইস মরিশাসের আর্থিক কেন্দ্র, যা দৃঢ় গণতন্ত্র, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, এবং বহুভাষী জনসংখ্যার কারণে ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য নিজেকে নিরাপদ এবং বিশ্বস্ত অবস্থান হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। পোর্ট লুইসে অবস্থিত মরিশাস স্টক এক্সচেঞ্জ। এছাড়াও পোর্ট লুইসে দশটি বাণিজ্যিক ব্যাংক রয়েছে যা দেশীয় ও অফশোর ক্লায়েন্ট, বীমা সংস্থা, পেনশন তহবিল, মিউচুয়াল ফান্ড, লিজিং কোম্পানি এবং বিদেশি মুদ্রা বিক্রেতা উভয়কেই সেবা সরবরাহ করে। পোর্ট লুইস ভিত্তিক প্রাচীন ব্যাংক হচ্ছে মরিশাস কমার্শিয়াল ব্যাংক, যা ১৮৩৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। মরিশাস ব্যাংক দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মাটি থেকে ১২৪ মি (৪০৭ ফু) উচ্চতার মরিশাস ব্যাংক টাওয়ার দেশটির সর্বোচ্চ উচু ভবন।

পরিবহন সম্পাদনা

দুটি প্রধান বাস স্টেশন দ্বারা সেন্ট লুইসে যাত্রী পরিবহন করা হয়। ভিক্টোরিয়া স্টেশন থেকে পূর্ব ও দক্ষিণ এলাকা এবং প্লাইনেস উইলহেমস জেলায় যাত্রী পরিবহন করা হয়। ইমিগ্রেশন স্কয়ার, আরও পরিচাত গারে দু নর্ড নামে, উত্তর জেলা ও পাম্পপ্লুসেস এবং রিভিরে ডু রেম্পাট জেলা থেকে আসা বাসের জন্য একটি টার্মিনাস। কিছু সংখ্যাক আন্ত:শহর বাস শহরের পাশ্ববর্তী এলাকা যেমন: প্লাইন ভের্তে, ভালে দেস প্রেত্রেস এবং চেসিস থেকেও যাত্রী পরিবহন করে। পোর্ট লুইসের বেশিরভাগই রাস্তাই আয়তক্ষেত্রাকার ভাবে তৈরি, এবং অনেকগুলো এক-মুখী রাস্তা। যদিও বেশিরভাগ রাস্তাগুলি ভাল আকারেই রয়েছে, তবে অনেকগুলি রাস্তা একটি ঐতিহাসিক ঔপনিবেশিক শহর হিসাবে প্রত্যাশিত ভাবে মোটামুটি সংকীর্ণ। পোর্ট লুইসে ব্যবসায় ও সরকারী অফিসগুলিতে কর্মচারীদের দৈনিক প্রবাহের কারণে দিনের-বেলা ট্র্যাফিক বেশ প্রবল হতে পারে এবং পার্কিং স্পেসগুলি খুঁজে পাওয়া একটু কষ্টকর হতে পারে।[১২] ক্রমবর্ধমান ট্র্যাফিক সংঘাত মোকাবেলায় সরকার একটি হালকা রেল পরিবহন ব্যবস্থার প্রস্তাব করেছে। অন্যান্য পরামর্শগুলির মধ্যে রয়েছে বর্তমানে পোর্ট লুইসে অবস্থিত ২৪ টি সরকারি মন্ত্রণালয়কে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে স্থানান্তরিত করা, বা নমনীয় কাজের সময়সূচী প্রবর্তন অন্তর্ভুক্ত করা।[১২] শহরের কেন্দ্র থেকে কর্মীদের সরাতে একটি প্রচেষ্টা ইতিমধ্যে পোর্ট লুইসের দক্ষিণে ইবেনে অফিস টাওয়ার নির্মাণের কাজ শুরু করেছে। পোর্ট লুইসের পূর্ব দিকের পাশে একটি রিং রাস্তাও এই ভীড় কমাতে পারবে বলে আশা করা হয়। সেই প্রকল্পের প্রথম পর্যায় ২০১৩ সালে সম্পন্ন হয়েছিল,[১৩] কিন্তু ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সালে ত্রুটিপূর্ণ ডিজাইনের কারণে দৃশ্যত একটি বড় ফাটলের উপস্থিতি বন্ধ হওয়ার প্রয়োজন ছিল।[১৪] ভীড় হ্রাস করার আরেকটি প্রকল্প হল লেস সলিন্স থেকে রচে-বোইস পর্যন্ত একটি সেতু (সাধারণত "স্বপ্নের ব্রিজ" হিসাবে উল্লেখ করা হয়) নির্মাণ, যা পোর্ট লুইস বন্দরের বিস্তার ঘটাবে।[১৫]

হালকা রেল পরিবহন ব্যবস্থা সম্পাদনা

২০১২ সালে সরকার কুরেপাইপ এবং পোর্ট লুইসের মধ্যে প্রায় ২৫-কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা প্রায় তিন দশক ধরে বিবেচিত হয়েছিল।[১৬] সিঙ্গাপুর কোঅপারেশন এন্টারপ্রাইজ (এসসিই) -এর সাথে বেসরকারি অংশীদার সিঙ্গাপুর ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট কর্পোরেশন এবং দক্ষিণ আফ্রিকান/অস্ট্রেলিয়ান প্রকৌশল সংস্থা আউরেকন লিমিটেডের সাথে সরকারের সরকার-টু-সরকার চুক্তির মাধ্যমে এই প্রকল্পটি শুরু হয়েছিল। লক্ষ্য ছিল ব্যবস্থাটির প্রাথমিক পরিকল্পনার বিকাশ করা, এবং তারপর ৩৩ বছরের ছাড় এর সময়ের সাথে নকশা-নির্মান-পরিচালনা-অর্থায়ন পরিকল্পনার আগ্রহের অভিব্যক্তির অনুরোধ করা। ২০১৪ সালের মে মাসের হিসাবে একটি ছাড় দেওয়া হয়নি। বর্তমান পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে পোর্ট লুইসের ভিক্টোরিয়া স্টেশন একটি উত্তর টার্মিনাস স্থাপন করা। এটি মার্চ ১৯৫৬ সাল থেকে প্রথমবারের মতো পোর্ট লুইসে যাত্রী রেল পরিষেবার পুনরুদ্ধার করবে।

২০১৭ সালের শেষের দিকে হালকা রেল পরিবহন ব্যবস্থার নির্মাণ শুরু হয়, মরিশাস সরকার লারসেন অ্যান্ড টোবরো নামক মুম্বাই ভিত্তিক একটি নকশা ও নির্মাণ সংস্থাকে চুক্তিটি প্রদান করে।[১৭] ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে মরিশাস মেট্রো এক্সপ্রেস পোর্ট লুইসকে রোজ হিলের সাথে যুক্ত করবে বলে আশা করা হচ্ছে এবং ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে লাইনটি কুরেপাইপ পর্যন্ত প্রসারিত হবে।

শিক্ষা সম্পাদনা

 
পোর্ট লুইসে অবস্থিত রাজীব গান্ধী বিজ্ঞান কেন্দ্র

পোর্ট লুইসের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলির মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্র পরিচালিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। বেশিরভাগ বেসরকারি স্কুলগুলি সরকার থেকে তাদের খরচ পেয়ে থাকে, একটি নিয়মের উপর ভিত্তি করে যেখানে সরকার অনুমোদিত অনুদানের উপর ভিত্তি করে কর্মীদের বেতন এবং পরিচালনা খরচ দেয়। অন্যান্য খরচ যেমন: বই এবং পোশাক শিক্ষার্থী এবং তাদের পরিবারের বহন করতে হয়। সরকার উন্নত সুবিধার জন্য অগ্রাধিকার সুদের হারে ঋণ সহ বেসরকারি স্কুলকে ঋণ প্রদান করে। রাষ্ট্রীয় অনুমোদিত স্কুলগুলি মেডকো (মরিশাস শিক্ষাগত উন্নয়ন সংস্থা) দ্বারা পরিচালিত, যার মধ্যে মরিশাস সরকার এবং রাজ্য বিনিয়োগ কর্পোরেশনের মধ্যে অংশীদারত্ব রয়েছে।

পোর্ট লুইসে রয়েছে কতগুলো মাধ্যমিক বিদ্যালয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে আলফা কলেজ, বুজোহারি কলেজ, লাবুরডোনাজ কলেজ, পোর্ট লুইস একাডেমী, লরেতো কলেজ, মাদাদ উল ইসলাম গার্লস কলেজ, মুসলিম গার্লস কলেজ, সিটি কলেজ, ফুল ডে স্কুল, ইন্সটিটিউট অব ইসলামিক এন্ড সেকুলার স্টাডিজ, লন্ডন কলেজ, ওসেপ দ্য ওপেন কলেজ, পোর্ট লুইস হাই স্কল, মেডকো ট্রিনিটি সেকেন্ডারি স্কুল, পোর্ট লুইস নর্থ এসএসএস, স্যার আব্দুল রাজাক মোহাম্মদ এসএসএস, গোলাম মোহাম্মদ দাউজী আতাচিয়া স্টেট কলেজ, মেডকো ক্যাসিস সেকেন্ডারি স্কুল, রেনগানাদেন সিনেভাসেন এসএসএস, পোর্ট লুইস এসএসএস এবং রয়্যাল কলেজ পোর্ট লুইস। তাছাড়াও ছেলেদের জন্য ইমাকুলে কনসেপশন এসএসভি নামে একটি ভোকেশনাল স্কুল পরিচালনা করা হয়।

মরিশাস প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হল এখানের প্রধান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যেটির প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে প্রযুক্তিগত শিক্ষা প্রদান। ফ্রান্সে ইউনিভার্সিটি ডি লিলেতে শিক্ষার্থীদের মেডিকেল শিক্ষার জন্য "ইকোলে ডি মেডিসিনে লুইস পাস্তুর" কাজ করে। বেশ কয়েকটি টেকনিক্যাল স্কুল শহরের মধ্যে অবস্থান করছে, যার মধ্যে রয়েছে জুর রায়া স্কুল যেটি তথ্য প্রযুক্তিতে বিশেষায়িত, অ্যাপভু বিজনেস স্কুল, অ্যাপোলো ব্রামওয়েল নার্সিং স্কুল, বিএসপি স্কুল অফ একাউন্টেন্সি অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট এবং লন্ডন কলেজ অফ একাউন্টেন্সি।

স্থাপত্য সম্পাদনা

 
সরকার বাড়ি, ১৭৩৮ সালে প্রতিষ্ঠিত
 
কুদান ওয়াটারফ্রন্ট

শহরটি অনেকগুলি ভবন এবং স্মৃতিসৌধে পূর্ণ যা এটির সমৃদ্ধ এবং বিভিন্ন ঔপনিবেশিক ইতিহাসকে প্রতিনিধিত্ব করে। শহরের কেন্দ্রস্থলের কাছাকাছি, সরকারি ঘর সহ বেশ কয়েকটি ফরাসি ঔপনিবেশিক ভবন রয়েছে যা ১৮ শতকে নির্মিত । অন্যান্য বিশিষ্ট ঐতিহ্যগত উপাদানগুলির মধ্যে রয়েছে জুম্মাহ মসজিদ, ম্যাজেস্টিক ইংলিশ সেন্ট জেমস ক্যাথেড্রাল, ভারতীয় তামিল মন্দির, মার্জিত পাঁচ-স্তরবিশিষ্ট ঔপনিবেশিক পোর্ট লুইস থিয়েটার (থিয়েটার ডি পোর্ট-লুইস), চ্যাম্প ডি মার্স রেসকোর্স এবং কাছাকাছি চীনা প্যাগোডা। এছাড়াও অতীতের কিছু সাধারণ ঘরগুলি রয়েছে, যেগুলোর বেশিরভাগে শাটার জানালা সহ কাঠের কাঠামো এবং বড় বারান্দা রয়েছে। যাইহোক, বেশিরভাগ বাড়ি এবং বাণিজ্যিক কাঠামো এখন কংক্রিটের সাথে আরও টেকসই সামগ্রী থেকে তৈরি করা হয় এবং শহরটিতে এখন অনেক গ্লাস/কংক্রিটের সুউচ্চ দালান-কোঠা রয়েছে

চায়না টাউন সম্পাদনা

প্যাগোডা পোর্ট লুইসের চায়নাটাউনের একটি কেন্দ্রীয় বৈশিষ্ট্য, যা আফ্রিকার বেশ কিছু চায়নাটাউনের মধ্যে একটি। এটির প্রবেশ পথ কেন্দ্রীয় বাজারের পূর্বের "বন্ধুত্ব" গেট দ্বারা চিহ্নিত করা রয়েছে। এই সাইটটিতে চীনা সম্প্রদায়ের বাড়ি এবং দোকানের ঐতিহ্যগত অবস্থান ছিল, যা হাক্কা চীনা এর বংশধরদের দ্বারা প্রভাবিত ছিল, যিনি প্রথম ১৮২৬ সালে মরিশাসে এসেছিলেন। চায়নাটাউন এখন আরও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের আবাসস্থল, কিন্তু তার মূল চেহারা সংরক্ষণ করে রেখেছে এবং অনেক ছোট দোকান এবং রেস্টুরেন্ট রয়েছে এখানে। এটির পুরানো ভবন এবং চীনা প্যাগোডা শহরের ব্যবসার কেন্দ্রের আধুনিক ভবনগুলির মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। চাইনিজ চেম্বার অব কর্মাস (১৯০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত) এপ্রিল বা মে মাসে একটি জনপ্রিয় খাদ্য এবং সাংস্কৃতিক উৎসবের আয়োজন করে। চেম্বারটি 'কিট লোক' নামে পরিচিত সম্প্রদায়ের জন্য একটি অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া পার্লার চালায়।

সংষ্কৃতি সম্পাদনা

পোর্ট লুইস শতাব্দী ধরে চিত্রশিল্পী, কবি, ভাস্কর এবং লেখকদের আকৃষ্ট করা একটি সক্রিয় সাংস্কৃতিক শহর। মারি-থেরেসে হামবার্ট তার বিখ্যাত উপন্যাস লা মন্টেগনে দেস সিগনাক্স লিখেছেন পোট-লুইসকে মনে করে। ম্যালকম ডি চাজ্যাল ছিলেন একজন মরিশিয়ান দর্শনীয় লেখক এবং চিত্রশিল্পী, যাকে প্রায়ই এই রাজধানী শহরে দেখা যেত, বেশিরভাগ সময় চ্যাম্প ডি মার্স বাজারে। রবার্ট এডুয়ার্ড-হার্ট, যাকে এই অত্যন্ত সক্রিয় শহরে অনুপ্রেরণার একটি উৎস হিসাবে পাওয়া যায়। পোর্ট-লুইসে জন্মগ্রহণ করেন কবি এবং সংকেতবিজ্ঞানী খাল তোরবুল্লি, যিনি সংভৃতি এবং শীতলতার প্রধানতম কবি, সম্প্রতি জারদিন দে লা কম্পাগণিতে ট্র্যাভেলার্স লেনের ডিজাইন করেছিলেন, উদ্বোধন করেন মরিশাসের প্রধানমন্ত্রী নাবীন রামগুলাম এবং ম্যালকম ডি চ্যাজেলের ধারণা নিয়ে পারকর্স কালচারেল, যা বিখ্যাত পোর্ট লুই থিয়েটারের মুখোমুখি অবস্থিত। এই থিয়েটারটি এখনও ব্যবহার করা হয় এবং বেশিরভাগই শাস্ত্রীয় সংগীত, জ্যাজ এবং স্থানীয় নাটকের উপস্থাপনা করা হয়, এটির একটি স্বতন্ত্র ইতিহাস রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ইউরোপ থেকে আগত দল কর্তৃক ১৯ শতকে দ্বীপটিতে প্রথম ওপেরা সঙ্গীত উপস্থাপনা।

পোর্ট লুইসে আরও আধুনিক বিনোদন সুবিধার মধ্যে রয়েছে সিনেমা, যার মধ্যে বেশিরভাগ চলচ্চিত্র ফরাসি এবং ইংরেজিতে উপস্থাপিত হয়। সম্প্রতি পোর্ট লুইস শহরের নিকটবর্তী পাইল্লে তে আধুনিক স্বামী বিবেকানন্দ আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এটি মরিশাসের এমন প্রথম সুবিধা এবং এটি সম্মেলন, কনসার্ট, বাণিজ্য শো এবং প্রদর্শনীগুলিতে ব্যবহৃত হয়।

জাদুঘর সম্পাদনা

 
ব্লু পেনি জাদুঘর

ব্লু পেনি জাদুঘর কুদান ওয়াটারফ্রন্টে অবস্থিত, এবং এটি দ্বীপটির ইতিহাস ও শিল্পকে তুলে করে। এর সংগ্রহের মধ্যে রয়েছে পুরাকালের সামুদ্রিক মানচিত্র, চিত্রকলার, ভাস্কর্য, খোদাই এবং স্ট্যাম্প, আরও রয়েছে বিখ্যাত কমলা-লাল এক পেনি, গাঢ় নীল দুই পয়সার স্ট্যাম্প। পোর্ট লুইসের প্রাকৃতিক ইতিহাস জাদুঘরটিতে মরিশাসের চিত্তাকর্ষক প্রাণীর প্রদর্শনী, পাখি এবং স্থলজ প্রাণীদের জন্য একটি গ্যালারি রয়েছে, দ্বিতীয়টিতে সামুদ্রিক প্রজাতির উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করা হয়েছে এবং তৃতীয়টিতে ডোডো প্রদর্শিত করা রয়েছে, এটি বিখ্যাত মরিশাসীয় পাখি যা ডাচদের দখলের সময়কালে বিলুপ্ত হয়ে যায়। মরিশাসের ডাকঘর জাদুঘরটি ১৮ শতকের একটি পুরানো পাথরের ভবনে অবস্থিত, এবং মরিশাস এবং সারা বিশ্ব থেকে স্ট্যাম্প এবং পোস্টাল প্রদর্শন করা রয়েছে এটিতে। ১৮ শতাব্দীর চুনকাম করা ফরাসি ঔপনিবেশিক ভবনে অবস্থিত ছোট্ট মরিশাস ফটোগ্রাফি জাদুঘরটি একটি ব্যক্তিগত জাদুঘর যা মরিশাসের ফটোগ্রাফি এবং সিনেম্যাটোগ্রাফির প্রথম দিনগুলি সম্পর্কে নিদর্শন এবং নথি প্রদর্শন করে। চায়নাটাউনে অবস্থিত চায়না ঐতিহ্য জাদুঘর, চীনা সম্প্রদায়ের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিনিধিত্বকারী ঐতিহাসিক উপাদানসমূহ প্রদর্শন করে। বর্তমানে সংস্কারের জন্য বন্ধ (২০১৪) রয়েছে অভিভাসী ঘাট, দ্বীপের চিনি এস্টেটে কাজ করার জন্য ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক নির্মিত ভারত, পূর্ব আফ্রিকা, মাদাগাস্কার, চীন ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়া থেকে শ্রমিকদের আমদানির জন্য অভিবাসন ডিপোর অবশেষ যা নির্মিত হয়েছিল। যদিও একটি ঐতিহ্যগত অর্থে একটি জাদুঘর নয়, মরিশাসের জাতীয় গ্রন্থাগারে শহর ও দেশের জনগনকে গ্রন্থাগারের ঐতিহ্যবাহী সেবা প্রদানের পাশাপাশি মরিশাসের ইতিহাস সম্পর্কিত একটি সমৃদ্ধ ও ব্যাপক সংগ্রহ রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে পাণ্ডুলিপি, বই, সংবাদপত্র, সাময়িকী, সঙ্গীত স্কোর, ফটোগ্রাফ, মানচিত্র, অঙ্কন এবং অন্যান্য গ্রাফিক আর্ট ফর্ম এবং অডিওভিজুয়াল উপকরণ।

উপাসনালয় সম্পাদনা

উপাসনালয়ের স্থানগুলির মধ্যে রয়েছে প্রধানত হিন্দু মন্দির।[১৮] খ্রিস্টান গীর্জা এবং মন্দিরগুলিও রয়েছে (ক্যাথলিক: পোর্ট-লুইস রোমান ক্যাথলিক ডায়োসেস, প্রোটেস্ট্যান্ট: ভারত মহাসাগর প্রদেশের চার্চ, ইভানজেলিকাল খ্রিস্টান: ঈশ্বরের সমাবেশ) এবং মুসলিম মসজিদ।

সরকার সম্পাদনা

পোর্ট লুইস স্থানীয় প্রশাসনের একটি পৌর কাউন্সিল দ্বারা তত্ত্বাবধান করা হয়। পোর্ট লুইস শহরের সিটি কাউন্সিলটি প্রথমে ১৮৩০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং বর্তমানে স্থানীয় সরকার আইন ২০১১ এর অধীনে সংগঠিত হিসাবে মরিশাসের নগর এলাকার জন্য দায়ীত্বপ্রাপ্ত পাঁচ পৌর কাউন্সিলগুলির মধ্যে একটি। কাউন্সিল প্রশাসনের জন্য ২৪ জন কাউন্সিলর গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। কাউন্সিলরা তাররপর লর্ড মেয়র ও ডেপুটি লর্ড মেয়র নির্বাচিত করে। কাউন্সিলের কাজ প্রশাসন, অর্থ, ভূমি ব্যবহার এবং পরিকল্পনা, জন পরিকাঠামো, জনস্বাস্থ্য, কল্যাণ, পার্ক এবং উদ্যান, এবং নগর গ্রন্থাগারের মাধ্যমে সঞ্চালিত হয়। স্থানীয় সরকার দ্বারা নিষ্কৃত সেবাগুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে প্রাক স্কুল, কিন্ডারগার্টেন, এবং বৃত্তিমূলক স্কুল, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, আবাসন প্রবিধান, কিছু রাস্তার সেবা, সংগ্রহ, কবরস্থান, কিছু পরিবেশগত এবং ভোক্তা সুরক্ষা পরিষেবা, এবং অর্থনৈতিক প্রচার কার্যক্রম। অন্যান্য সেবাগুলি কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা শহরে প্রদান করা হয়। এর মধ্যে মরিশাস পুলিশ ফোর্স এর মাধ্যমে পুলিশ পরিষেবাসমূহ অন্তর্ভুক্ত, যা পোর্ট লুইস এলাকার (মেট্রোপলিটান বিভাগগুলি উত্তর ও দক্ষিণ) জন্য দায়ীত্বপ্রাপ্ত দুটি বিভাগকে রক্ষনাবেক্ষন করে। পোতাশ্রয় পুলিশ এবং বাল্ক সুগার টার্মিনাল পুলিশ নিয়ে গঠিত একটি নির্দিষ্ট বন্দর পুলিশ রয়েছে। তাদের ভূমিকার মধ্যে রয়েছে বন্দর এলাকায় পণ্যসম্ভার এবং সুবিধাদির সুরক্ষা প্রদান এবং বন্দর প্রবিধান সম্পর্কিত আইন প্রয়োগ, শুল্ক, জাহাজ পৃথকীকরণ, অভিবাসন ও মাদক পাচার সম্পর্কিত আইন প্রয়োগ করা।

পোর্ট লুইস বিভিন্ন শহরতলিতে বিভক্ত কিন্তু সীমাবদ্ধ নয়:[১৯][২০]

পোর্ট-লুইস নির্বাচনীভাবে ৮ টি ওয়ার্ডে প্রতি ওয়ার্ডে ৩ জন কাউন্সিলর নিয়ে বিভক্ত।[২১]

ক্রীড়া সম্পাদনা

 
The Champ de Mars Racecourse in Port Louis

মরিশাসের বাকি অংশের মতো পোর্ট লুইসের অধিবাসীদের মধ্যেও খেলাধুলা জনপ্রিয়। মরিশাস স্পোর্টস কাউন্সিলের অধীনে ৩৫ টিরও বেশি ক্রীড়া সংস্থা সংগঠিত হয়েছে।[২২] জনপ্রিয় ক্রীড়ার মধ্যে রয়েছে ফুটবল, ভলিবল, মার্শাল আর্ট (কারাতে, টেকউন্ডো, ওশু), টেবিল টেনিস, ব্যাডমিন্টন এবং পেটানক। মরিশাস ন্যাশনাল অলিম্পিক কমিটি পোর্ট লুইসে অবস্থিত। পোর্ট লুইসে পাবলিক স্পোর্টস সুবিধার মধ্যে রয়েছে ফুটবলের জন্য ব্যবহৃত সেন্ট ফ্রাঙ্কোস জাভিয়ার স্টেডিয়াম। তবে পোর্ট লুইসে যথাযথ জনসাধারণের সুবিধার অপ্রতুলতা রয়েছে, যার বেশিরভাগই আশেপাশের কম ঘনবসতিপূর্ণ শহরতলী ও জেলাগুলিতে নির্মিত।

ফুটবল ক্লাবগুলি মরিশাস ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন দ্বারা দেশব্যাপী সংগঠিত, যেটির বর্তমানে প্রিমিয়ার লিগে দশটি দল রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে পোর্ট লুইস দল, যার নাম এসোসিয়েশন স্পোর্টিভ পোর্ট-লুই ২০০০ (এস পোর্ট-লুইস ২০০০), এটি ২০০৩, ২০০৪, ২০০৫, এবং ২০১১ সালে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছে।

পোর্ট লুইসসে আরেকটি জনপ্রিয় ক্রীড়া হচ্ছে থ্রবেড হর্স রেস যা চ্যাম্প দে মার্স রেসকোর্স এ অনুষ্ঠিত হয়, এটি বিশ্বের দ্বিতীয় প্রাচীনতম ঘোড়া রেস ট্র্যাক। ঘোড়া রেসে জুয়া ও বাজি উভয়ই করা যেতে পারে, এগুলোর গ্যালারির ভিতরে একাধিক স্থানে পাওয়া যায়।

পোর্ট লুইসে সাধারণভাবে জুয়া একটি জনপ্রিয় "খেলাধুলা"। রেসকোর্স ছাড়াও, পোর্ট লুইস জুড়ে চারটি ক্যাসিনোতে জুয়ার আসর বসে, যেগুলো টেবিল গেমস প্লাস গেমিং, স্লট এবং ভিডিও পোকার মেশিনও সরবরাহ করে। পোর্ট লুইস লেবারডোনাইস ওয়াটারফ্রন্ট হোটেলের কুদান ওয়াটারফ্রন্ট ক্যাসিনো মরিশাসের সবচেয়ে বড় ক্যাসিনো। অন্যান্য ক্যাসিনোর মধ্যে রয়েছে লে গ্রান্ড ক্যাসিনো ডু ডোমাইন, এল'অ্যামিকেল ক্যাসিনো, এবং সেনেটর ক্লাব।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Municipal & District Councils in Mauritius"। Government of Mauritius। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জুলাই ২০১২ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. Ministry of Finance & Economic Development (২০১৬)। "Annual Digest of Statistics 2015" (পিডিএফ)। August। Government of Mauritius: 22। সংগ্রহের তারিখ ২৩ ডিসেম্বর ২০১৬ 
  3. Britannica, Port Louis, britannica.com, USA, accessed on July 7, 2019
  4. World Weather Information Service-Port Louis ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৪ জুলাই ২০১৮ তারিখে, World Meteorological Organization. Retrieved 29 September 2012.
  5. "Average Conditions Port Louis, Mauritius"। BBC Weather। সংগ্রহের তারিখ ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১২ 
  6. "Port of Port Louis"। World Port Source। ২০ মে ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জুলাই ২০১২ 
  7. "Mauritius Ports Authority - Harvesting Resources under the Blue Economy"Mauport.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৮-২৬ 
  8. [১][অকার্যকর সংযোগ]
  9. "An ocean of economic opportunity"। The Business Report। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জানুয়ারি ২০১৯ 
  10. A. B. Ramsaha. 2011. Port Louis Harbor. Presentation at African Ports and Maritime Conference, Namibia.
  11. International Travel And Tourism, 2012 annual report. Downloaded from statsmauritius.govmu.org
  12. [২][অকার্যকর সংযোগ]
  13. "Republic of Mauritius –Prime Minister Inaugurates Port Louis Ring Road (Phase 1)"Govmu.org। ২০১৭-০৮-২৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৮-২৬ 
  14. "Archived copy"। ২১ মে ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ মে ২০১৪ 
  15. "Dream bridge to ease access to harbour"Lexpress.mu। ৩ সেপ্টেম্বর ২০০৭। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৮-২৬ 
  16. "Light Rail Transit back on track"। Le Defimedia। ২৯ মার্চ ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ অক্টোবর ২০১২ 
  17. "Republic of Mauritius-Metro Express project to the tune of Rs 18.8 billion to kick-start in September 2017"www.govmu.org (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৮-০৮-১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৮-২৬ 
  18. J. Gordon Melton, Martin Baumann, ‘‘Religions of the World: A Comprehensive Encyclopedia of Beliefs and Practices’’, ABC-CLIO, USA, 2010, p. 1837
  19. Ministry of Local Government and Outer Islands। "Local Government Act 2011" (পিডিএফ)। Government of Mauritius: 768–770। সংগ্রহের তারিখ ১৫ ডিসেম্বর ২০১২ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  20. "Municipales et villageoises : les 6 principaux changements" (ফরাসি ভাষায়)। Le Defimedia। ২৩ নভেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ ডিসেম্বর ২০১২ 
  21. "Electoral Commissioner's Office - Port Louis"Electoral.govmu.org। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৮-২৬ 
  22. "Mauritius Sports Council : Home"Mauritiussportscouncil.com। ১৭ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ আগস্ট ২০১৭ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা

  উইকিমিডিয়া কমন্সে পোর্ট লুইস সম্পর্কিত মিডিয়া দেখুন।