পীরগঞ্জ উপজেলা, ঠাকুরগাঁও
পীরগঞ্জ উপজেলা বাংলাদেশের ঠাকুরগাঁও জেলার একটি প্রশাসনিক এলাকা। পীরগঞ্জ প্রশাসনিকভাবে থানা হিসেবে গঠিত হয় ১৮৭০ সালে এবং ১৯৮৩ সালের ৭ নভেম্বর এটি উপজেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।[২]
পীরগঞ্জ | |
---|---|
উপজেলা | |
মানচিত্রে পীরগঞ্জ উপজেলা, ঠাকুরগাঁও | |
স্থানাঙ্ক: ২৫°৫১′১৫″ উত্তর ৮৮°২১′৪৮″ পূর্ব / ২৫.৮৫৪১৭° উত্তর ৮৮.৩৬৩৩৩° পূর্ব | |
দেশ | বাংলাদেশ |
বিভাগ | রংপুর বিভাগ |
জেলা | ঠাকুরগাঁও জেলা |
আয়তন | |
• মোট | ৩৫৩.৩ বর্গকিমি (১৩৬.৪ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১)[১] | |
• মোট | ২,৪৩,৫৩৫ |
• জনঘনত্ব | ৬৯০/বর্গকিমি (১,৮০০/বর্গমাইল) |
সাক্ষরতার হার | |
• মোট | ৪৭.৮% |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
পোস্ট কোড | ৫১১০ |
প্রশাসনিক বিভাগের কোড | ৫৫ ৯৪ ৮২ |
ওয়েবসাইট | দাপ্তরিক ওয়েবসাইট |
অবস্থান ও আয়তন
সম্পাদনাঠাকুরগাঁও জেলা হতে ২০ কি:মি: দক্ষিণ দিকে অবস্থিত। পীরগঞ্জ আয়তন ও জনসংখ্যার দিক থেকে ঠাকুরগাঁও জেলার দ্বিতীয় বৃহত্তম উপজেলা। ইহা ২৫৹৫৯' উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮৹১৫' ও ৮৮৹২২' পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। এ উপজেলার উত্তরে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা, দক্ষিণে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, পূর্বে দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ ও বোচাগঞ্জ উপজেলা, পশ্চিমে রাণীশংকৈল উপজেলা।
নামকরণ
সম্পাদনাপীরগঞ্জ উপজেলার নামকরণ নিয়ে সুপ্রতিষ্ঠিত কোন ইতিহাস পাওয়া যায় না। তবে অধিকাংশের মতে এই জনপদে সুলতানি আমলে ইসলাম ধর্ম প্রচার এবং ইসলামী ধ্যান-ধারণার গোড়াপত্তন হয়েছিল পীর মাশায়েখ সমাজের সাধক পুরুষ হযরত পীর সিরাজউদ্দিন আউলিয়ার হাত ধরে। সমসাময়িক অনেক পীর আউলিয়া পীরগঞ্জে ধর্ম প্রচারের জন্য আসেন। তাদের মধ্যে অন্যতম দুর্লভপুর গ্রামের পীর বাহারানা সৈয়দ, সাটিয়া গ্রামের পীর শাহজাহী, ভেলাতৈড় ভদ্রপাড়া গ্রামের পীর দরবগাজী এবং পীরগঞ্জ সংলগ্ন গোগর গ্রামের বনপীর। পীর-মাশায়েখ ও আউলিয়াগণের পদচারণায় মুখরিত এই জনপদ সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালী হতে শুরু করে। পীর আউলিয়াগণের এই অঞ্চল পরিচিতি পেতে থাকে পীরগঞ্জ নামে। তবে নামকরণের এই ভিত্তির বিষয়ে জনশ্রুতি ছাড়া সঠিক ইতিহাস এর সন্ধান পাওয়া যায়না।
মুক্তিযুদ্ধ
সম্পাদনা১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ পীরগঞ্জে পাকিস্তানি পতাকা পোড়ানো হয় এবং পাইলট হাইস্কুল প্রাঙ্গণস্থ শহীদ মিনারের সামনে বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকা উত্তোলন করা হয়। ১৭ এপ্রিল পাক হানাদার বাহিনী পীরগঞ্জে প্রবেশ করে।
প্রশাসনিক এলাকা
সম্পাদনা১৮৫৯ সালে পীরগঞ্জে একটি থানা স্থাপিত হওয়ার পর এটি প্রশাসনিক ইউনিট হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে । অতঃপর সাবেক প্রেসিডেন্ট এইচ এম এরশাদের আমলে ৭/১১/১৯৮৩ তারিখে পীরগঞ্জ থানা উপজেলায় উন্নীত হয়। এছাড়াও, পীরগঞ্জের চতুর্পাশ্বের ৭ টি মৌজা যথাঃ রঘুনাথপুর, মিত্রবাটি, জগথা, পালিগাঁও, ভাকুরা, ভেলাতৈর ও গুয়াগাঁও নিয়ে গঠিত হয় পীরগঞ্জ পৌরসভা ১৯৮৯ সালে। এ পৌরসভায় ও ১০ টি ইউনিয়ন যথা - ভোমরাদহ, কোষারাণীগঞ্জ , খনগাঁও , সৈয়দপুর, পীরগঞ্জ, হাজীপুর, দৌলতপুর, সেনগাাঁও, জাবরহাট, বৈরচুনা নিয়ে গঠিত হয় পীরগঞ্জ উপজেলা ।
বর্তমান পীরগঞ্জ উপজেলার গ্রামের সংখ্যা ১৬৮। আয়তন ৩৫৩.৩ বর্গ কিলোমিটার।
জনসংখ্যার উপাত্ত
সম্পাদনা২০১১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী এখানকার লোক সংখ্যা ২,৪৩,৫৩৫ জন; যার মধ্যে পুরুষ ১,২২,৫৫৩ জন এবং মহিলা ১,২০,৯৮২জন। এখানে মোট ভোটার: ১,৫৮,৮৯৪ জন। উপজাতিয় অধিবাসী ৩,৬১৪ জন।
শিক্ষা
সম্পাদনাশিক্ষার হার
সম্পাদনাজনশুমারি ও গৃহগণনা-২০২২ অনুসারে পীরগঞ্জ উপজেলার শিক্ষার হার ৭৪.৭৭% ।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা
সম্পাদনা- প্রাথমিক বিদ্যালয়- ১৭৫;
- উচ্চ বিদ্যালয়-
- সরকারি গার্লস ১টি
- বেসরকারি ৮৩টি
- মাদ্রাসা-
- সিনিয়র মাদ্রাসা ৪টি
- দাখিল মাদ্রাসা ২২টি
- এবতেদায়ী মাদ্রাসা ১০টি
- কলেজ-
- সরকারি ১টি
- বেসরকারি ১১টি
- কারিগরি ৮টি
স্বাস্থ্য
সম্পাদনা- উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র: ১ টি
- উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র: ১ টি
- ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র: ৭ টি
- কমিউনিটি ক্লিনিক: ২২ টি
- প্রাইভেট ক্লিনিক: ৩ টি
অর্থনীতি
সম্পাদনাশিল্প
সম্পাদনাপ্রধান শিল্প কারখানা অটো রাইসমিল। এছাড়াও উপজেলায় ২৮১টি চাল ও আটাকল, ২৪টি স'মিল রয়েছে।
কৃষি
সম্পাদনাপীরগঞ্জ উপজেলার ভুমি বেলে, বেলে দোআঁশ ও এটেল দোআঁশ প্রকৃতির। এটেল দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ নিচু জমিতে ইরি বোরো আমন এবং বেলে ও বেলে দোআঁশ-উঁচু জমিতে গম, ভুটা এবং শীত-গ্রীষ্মের শাক-সবজি, তৈলবীজ জাতীয় ফসল উৎপাদন হয় প্রচুর। পীরগঞ্জ উপজেলা সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে ৫২ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত হওয়ায় এবং বার্ষিক ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার মিঃমিঃ অর্থাৎ সুষম বৃষ্টিপাত হওয়ায় এ উপজেলায় বন্যা হয় না বললেই চলে। ভূমি, মৃত্তিকা, বৃষ্টিপাত, জলবায়ুর গতি-প্রকৃতির ভিত্তিতে দেশের কৃষি পরিবেশিক অঞ্চলকে যে ৩০টি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে তার মধ্যে পুরাতন হিমালয় পাদভূমি অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে পীরগঞ্জ উপজেলাসহ সমগ্র ঠাকুরগাঁও জেলা।
ভাষা
সম্পাদনাবাংলাদেশের অন্যান্য এলাকার মত পীরগঞ্জ উপজেলাতেও আঞ্চলিক ভাষার ঐতিহ্য রয়েছে। পীরগঞ্জের আঞ্চলিক ভাষায় রয়েছে সাধু ভাষার ক্রিয়াপদের একত্র উচ্চারণ কৌশল, উর্দু, হিন্দি, অসমিয়, উড়িয়া, নেপালী শব্দের সরাসরি বা কিছুটা বিকৃত উচ্চারণ। ফলে পীরগঞ্জের আঞ্চলিক ভাষা দেশের অন্যান্য আঞ্চলিক ভাষা থেকে ভিন্নতা পেয়েছে।
উপজেলার পাড়িয়া, মল্লিকপুর, করনাই, বড়বাড়ি, দস্তমপুর, বৈরচুনা, চক-বাসুদেবপুরসহ আরও বেশকিছু জায়গায় আদিবাসি সাঁওতালরা বসবাস করে। তারা সাঁওতালি ভাষায় কথা বলে। এছাড়াও এখানে কিছু সংখ্যক ওঁড়াও, মুন্ডা ও মুসোহর আদিবাসী রয়েছে। তারা তাদের নিজ নিজ ভাষায় কথা বলে।
সাহিত্য ও সংস্কৃতি
সম্পাদনাসমকাল সংস্কৃতিক গোষ্ঠী, গীতবীথি সংগীত নিকেতন, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, অন্তরঙ্গ শিল্পী গোষ্ঠী, নৃত্যের তালে তালে একাডেমী, মহসীনের নৃত্য গোষ্ঠী, আদিবাসী শিল্পী পরিষদ উল্লেখযোগ্য।
নদীসমূহ
সম্পাদনাপীরগঞ্জ উপজেলায় ৩ টি নদী রয়েছে; সেগুলো হচ্ছে টাঙ্গন নদী, কাহালাই নদী ও লাচ্ছি নদী।[৩][৪]
উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব
সম্পাদনা- অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা - শহীদ বুদ্ধিজীবী।
দর্শনীয় স্থান ও স্থাপনা
সম্পাদনা- রাজভিটা - হাটপাড়া, জাবরহাট ইউনিয়ন;
- ভিমটিয়া শিবমন্দির - ভিমটিয়া;
- পীরডাঙ্গী কবরস্থান;
- ফানসিটি শিশুপার্ক - পীরগঞ্জ পৌরসভা;
- শালবন - থুমনিয়া, সাগুনী ও জগন্নাথপুর;
- সাগুনী রাবার ড্যাম।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন ২০১৪)। "এক নজরে পীরগঞ্জ উপজেলা"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ১৫ এপ্রিল ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ মার্চ ২০১৫।
- ↑ "পীরগঞ্জের ইতিহাস ঐতিহ্য : দৈনিক ইত্তেফাক"। archive.ittefaq.com.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০২-০২।
- ↑ ড. অশোক বিশ্বাস, বাংলাদেশের নদীকোষ, গতিধারা, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ২০১১, পৃষ্ঠা ৩৩৫, আইএসবিএন ৯৭৮-৯৮৪-৮৯৪৫-১৭-৯।
- ↑ মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাক, বাংলাদেশের নদনদী: বর্তমান গতিপ্রকৃতি, কথাপ্রকাশ, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, পৃষ্ঠা ৬১৭, ISBN 984-70120-0436-4.
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনাএই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |