পরমবীর চক্র

ভারতের সর্বোচ্চ সামরিক পদক

পরমবীর চক্র ভারতের সর্বোচ্চ সামরিক পদকযুদ্ধক্ষেত্রে শক্রুর সম্মুখীন হয়ে অতুলনীয় সাহস ও আত্মত্যাগ প্রদর্শনের স্বীকৃতস্বরূপ এই পদক দেওয়া হয়। এই পদক মরণোত্তর দেওয়ার রীতি আছে এবং ২১ জন পদকপ্রাপকের মধ্যে ১৪ জনকে মরণোত্তর পদক প্রদান করা হয়েছে।

পরমবীর চক্র



পরমবীর চক্র ও তার ফিতে
দেশ  ভারত
পুরস্কারদাতা দেশ ভারত সরকার
ধরন পদক
যোগ্যতা শুধুমাত্র সামরিক বাহিনী ভারতের সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী, সংরক্ষিত বাহিনী, আঞ্চলিক বাহিনী ও আইনানুগ ভাবে প্রতিষথিত যে কোন সামরিক বাহিনীর যে কোন পদের পুরুষ ও স্ত্রী[]
পুরস্কৃত হওয়ার কারণ "... যুদ্ধক্ষেত্রে ভূমিতে বা সমুদ্রে বা আকাশে শত্রুর সম্মুখীন হয়ে সর্বোচ্চ ও সুষ্পষ্ট সাহস বা দুঃসাহসী বীরত্ব এবং আত্মাহুতির জন্য"[]
মর্যাদা বর্তমান সময়ে প্রদত্ত
পরিসংখ্যান
প্রতিষ্ঠিত ২৬শে জানুয়ারী, ১৯৫০
প্রথম পুরস্কৃত ৩রা নভেম্বর, ১৯৪৭
শেষ পুরস্কৃত ৬ই জুলাই, ১৯৯৯
সর্বমোট পুরস্কৃত ২১
মরনোত্তর
পুরস্কারসমূহ
১৪
পদকপ্রাপ্ত ২১
পূর্ববর্তী
পরবর্তী (উর্ধতন) ভারতরত্ন (অসামরিক)[]
সমমান অশোক চক্র []
পরবর্তী (অধীনস্থ) মহাবীর চক্র

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মেডেল অফ অনার এবং যুক্তরাজ্যের ভিক্টোরিয়া ক্রসের সমতুল্য পরমবীর চক্র[] ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি ভারতের রাষ্ট্রপতি চালু করেন। তবে পদকের কার্যকাল ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট থেকে শুরু বলে ধরা হয়। স্বাধীন ভারতে এটি ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সামরিক সম্মান ভিক্টোরিয়া ক্রসের পরিবর্তে চালু হয়। ভারতের সামরিক বাহিনীর যে কোনো শাখার সদস্যকে এই পুরস্কার দেওয়া যায়। এই পদকের স্থান ভারতের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান ভারতরত্নের ঠিক পরেই। শান্তির সময় সাহস ও আত্মত্যাগ প্রদর্শনের জন্য প্রদত্ত অশোক চক্র পুরস্কার পরমবীর চক্রের সমতুল্য।

এই পদকপ্রাপ্তরা তাদের নামের পরে ইংরেজি P.V.C. (যা Param Vir Chakra-এর সংক্ষেপ) উপাধি ব্যবহার করতে পারেন। লেফটেন্যান্ট পদের চেয়ে নিম্ন পদমর্যাদার পদকপ্রাপকের জন্য নগদ অর্থও প্রদান করা হয়ে থাকে। পদকপ্রাপকের মৃত্যু হলে তার বিধবা পত্নীর মৃত্যু বা পুনর্বিবাহ পর্য্যন্ত পেনসন দেওয়া হয়। পদক চালু হওয়ার পর থেকেই এই পেনসনের স্বল্পতা নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের আগস্ট মাসে এই পেনসনের পরিমাণ ছিল ১০,০০০।[] বর্তমানে এই পেনসনের পরিমাণ ₹ ২০,০০০। এছাড়াও বেশ কিছু রাজ্য আলাদা করে পেনসন চালু করেছে, যা অনেক সময় কেন্দ্রীয় সরকারের পেনসের তুলনায় অনেকটাই বেশি।

ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু অ্যাডজুটেন্ট জেনারেল মেজর জেনারেল হীরা লাল অটলকে ভিক্টোরিয়া ক্রসের পরিবর্ত হিসেবে একটি পদক চালু করার দায়িত্ব দিলে হীরা লাল অটলের অনুরোধে ভারতীয় সেনাবাহিনীর শিখ রেজিমেন্টের অফিসার বিক্রম খানোলকার এর পত্নী সাবিত্রী খানোলকার[] এই পদকটির নকশা তৈরী করেন। কাকতালীয়ভাবে সাবিত্রী খানোলকারের জামাতা লেফট্যানেন্ট জেনারেল সু্রিন্দরনাথ শর্মার জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর মাসে কাশ্মীর যুদ্ধে শ্রীনগর বিমানবন্দর থেকে পাকিস্তানি বাহিনীকে তাড়ানোর সময় নিহত মেজর সোমনাথ শর্মাকে প্রথম এই পদক মরণোত্তর প্রদান করা হয়।

ব্রোঞ্জের তৈরী ১.৩৭৫ ইঞ্চি (৩.৪৯ সেমি) ব্যাসের এই বৃত্তাকার পদকটির মাঝখানে রাষ্ট্রীয় প্রতীক অশোক চক্র এবং তার চারদিকে চারটি বজ্র খোদিত থাকে। ঋষি দধীচির নিজের জীবন বিসর্জন দিয়ে অসুর নিধনের উদ্দেশ্যে বজ্র তৈরীর জন্য দেবতাদের নিজের অস্থিদানের পৌরাণিক কাহিনী থেকে পদকের নকশার চিন্তা করা হয়েছিল।[] এই পদকটি একটি অনুভূমিক দন্ড থেকে ঝোলানো থাকে। পদকের পেছনের দিকে পদ্মফুল এবং হিন্দী ও ইংরেজি ভাষায় পরমবীর চক্রে লেখাটি খোদিত।[] ৩২ মিলিমিটার (১.৩ ইঞ্চি) দৈর্ঘ্যের একটি গোলাপী রঙের ফিতে দিয়ে এই পদকটি আটকানো থাকে।

পদক প্রাপ্ত রেজিমেন্ট

সম্পাদনা

২১জন পদকপ্রাপ্তদের মধ্যে ২০ জন ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং একজন ভারতীয় বিমানবাহিনীর সদস্য। দ্য গ্রেনেডিয়ার্স সর্বোচ্চ তিন বার এই পদক লাভ করে। গোর্খা রাইফেলসের তিনটি রেজিমেন্ট- ১ গোর্খা রাইফেলস, ৮ গোর্খা রাইফেলস১১ গোর্খা রাইফেলস প্রত্যেকে একবার করে মোট তিনবার এই পদক লাভ করে।

পুরস্কার প্রাপকের তালিকা

সম্পাদনা
নং র‍্যাঙ্ক নাম রেজিমেন্ট বাহিনী তারিখ স্থান মন্তব্য
IC-521 মেজর সোমনাথ শর্মা ৪র্থ ব্যাটালিয়ন, কুমায়ুন রেজিমেন্ট ভারতীয় সেনাবাহিনী ৩রা নভেম্বর, ১৯৪৭ বাদগাম, জম্মু ও কাশ্মীর মরণোত্তর
27373 নায়েক যদুনাথ সিং ১ম ব্যাটালিয়ন, রাজপুত রেজিমেন্ট ভারতীয় সেনাবাহিনী ফেব্রুয়ারি, ১৯৪৮ নৌশেরা, জম্মু ও কাশ্মীর মরণোত্তর
SS-14246 সেকেন্ড লেফটেনেন্ট রাম রাঘোবা রাণে বম্বে স্যাপার্স, কর্পস অব ইঞ্জিনীয়ার্স ভারতীয় সেনাবাহিনী ৮ই এপ্রিল, ১৯৪৮ নৌশেরা, জম্মু ও কাশ্মীর
2831592 কোম্পানি হাবিলদার মেজর পীরু সিং শেখাওয়াত ৬ষ্ঠ ব্যাটালিয়ন, রাজপুতানা রাইফেলস ভারতীয় সেনাবাহিনী ১৭ই ও ১৮ই জুলাই, ১৯৪৮ তিথওয়াল, জম্মু ও কাশ্মীর মরণোত্তর
22356 ল্যান্স নায়েক করম সিং ১ম ব্যাটালিয়ন, শিখ রেজিমেন্ট ভারতীয় সেনাবাহিনী ৩রা অক্টোবর, ১৯৪৮ তিথওয়াল, জম্মু ও কাশ্মীর
IC-8947 ক্যাপ্টেন গুরবচন সিং সালারিয়া ৩য় ব্যাটালিয়ন, ১ গোর্খা রাইফেলস ভারতীয় সেনাবাহিনী ৫ই ডিসেম্বর, ১৯৬১ এলিজাবেথভিলা, কাটাঙ্গা, কঙ্গো মরণোত্তর
IC-7990 মেজর ধন সিং থাপা ১ম ব্যাটালিয়ন, ৮ গোর্খা রাইফেলস ভারতীয় সেনাবাহিনী ২০শে অক্টোবর, ১৯৬২ লাদাখ, জম্মু ও কাশ্মীর
JC-4547 সুবেদার জোগিন্দর সিং ১ম ব্যাটালিয়ন, শিখ রেজিমেন্ট ভারতীয় সেনাবাহিনী ২৩শে অক্টোবর, ১৯৬২ তোংপেন গিরিবর্ত্ম, নর্থ ইস্ট ফ্রন্টিয়ার এজেন্সি মরণোত্তর
IC-7990 মেজর শয়তান সিং ১৩শ ব্যাটালিয়ন, কুমায়ুন রেজিমেন্ট ভারতীয় সেনাবাহিনী ১৮ই নভেম্বর, ১৯৬২ রেজাং গিরিবর্ত্ম, জম্মু ও কাশ্মীর মরণোত্তর
2639885 কোম্পানি কোয়ার্টার মাস্টার হাবিলদার আব্দুল হামিদ ৪র্থ ব্যাটালিয়ন, দ্য গ্রেনেডিয়ার্স ভারতীয় সেনাবাহিনী ১০ই সেপ্টেম্বর, ১৯৬৫ খেম করন, পাকিস্তান মরণোত্তর
IC-5565 লেফট্যানেন্ট কর্ণেল আর্দেশির বুরজোরজি তারাপোরে ১৭ পুনা হর্স ভারতীয় সেনাবাহিনী ১৫ই অক্টোবর, ১৯৬৫ ফিলোরা, সিয়ালকোট সেক্টর, পাকিস্তান মরণোত্তর
4239746 ল্যান্স নায়েক অ্যালবার্ট এক্কা ১৪শ ব্যাটালিয়ন, ব্রিগেড অব দ্য গার্ডস ভারতীয় সেনাবাহিনী ৩রা ডিসেম্বর, ১৯৭১ গঙ্গাসাগর, আগরতলা সেক্টর মরণোত্তর
10877 F(P) ফ্লাইং অফিসার নির্মলজিৎ সিং শেখোঁ ১৮ নং স্কোয়াড্রন ভারতীয় বিমানবাহিনী ১৪ই ডিসেম্বর, ১৯৭১ শ্রীনগর, জম্মু ও কাশ্মীর মরণোত্তর
IC-25067 লেফটেনেন্ট অরুণ ক্ষেত্রপাল ১৭ পুনা হর্স ভারতীয় সেনাবাহিনী ১৬ই ডিসেম্বর, ১৯৭১ বড়াপিন্ড-জরপাল, শকরগড় সেক্টর মরণোত্তর
IC-14608 মেজর হোশিয়ার সিং ৩য় ব্যাটালিয়ন, দ্য গ্রেনেডিয়ার্স ভারতীয় সেনাবাহিনী ১৭ই ডিসেম্বর, ১৯৭১ বসন্তার নদী, শকরগড় সেক্টর
JC-155825 নায়েব সুবেদার বানা সিং ৮ম ব্যাটালিয়ন, জম্মু কাশ্মীর লাইট ইনফ্যান্ট্রি ভারতীয় সেনাবাহিনী ২৩শে জুলাই, ১৯৮৭ সিয়াচেন হিমবাহ, জম্মু ও কাশ্মীর
IC-32907 মেজর রামাস্বামী পরমেশ্বরন ৮ম ব্যাটালিয়ন, মেহর রেজিমেন্ট ভারতীয় সেনাবাহিনী ২৫শে নভেম্বর, ১৯৮৭ শ্রীলঙ্কা মরণোত্তর
IC-56959 ক্যাপ্টেন মনোজ কুমার পান্ডে ১ম ব্যাটালিয়ন, ১১ গোর্খা রাইফেলস ভারতীয় সেনাবাহিনী ৩রা জুলাই, ১৯৯৯ খালুবের টপ, বাটালিক সেক্টর, কার্গিল, জম্মু ও কাশ্মীর মরণোত্তর
2690572 সুবেদার মেজর যোগেন্দ্র সিং যাদব ১৮শ ব্যাটালিয়ন, দ্য গ্রেনেডিয়ার্স ভারতীয় সেনাবাহিনী ৪ঠা জুলাই, ১৯৯৯ টাইগার হিল, কার্গিল, জম্মু ও কাশ্মীর
13760533 সুবেদার সঞ্জয় কুমার ১৩শ ব্যাটালিয়ন, জম্মু কাশ্মীর রাইফেলস ভারতীয় সেনাবাহিনী ৫ই জুলাই, ১৯৯৯ এরিয়া ফ্ল্যাট টপ, কার্গিল, জম্মু ও কাশ্মীর
IC-57556 ক্যাপ্টেন বিক্রম বাত্রা ১৩শ ব্যাটালিয়ন, জম্মু কাশ্মীর রাইফেলস ভারতীয় সেনাবাহিনী ৬ই জুলাই, ১৯৯৯ পয়েন্ট ৫১৪০, পয়েন্ট ৪৮৭৫, কার্গিল, জম্মু ও কাশ্মীর মরণোত্তর

জনপ্রিয় মাধ্যমে

সম্পাদনা

১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দে চলচ্চিত্র পরিচালক চেতন আনন্দের পরিচালনায় এই পদক প্রপকদের জীবন নিয়ে তৈরি পরমবীর চক্র নামক একটি টেলিভিশন ধারাবাহিক সম্প্রচারিত হয়।[]

এলওসি কার্গিল নামক বলিউড চলচ্চিত্রে কার্গিল যুদ্ধের জন্য পরমবীর চক্র পদক প্রাপ্ত সকলের ঘটনা চিত্রায়িত করা হয়। এই চলচ্চিত্রে অজয় দেবগণ ক্যাপ্টেন মনোজ কুমার পান্ডের চরিত্রে, মনোজ বাজপেয়ী সুবেদার মেজর যোগেন্দ্র সিং যাদবের চরিত্রে, সুনীল শেঠি সুবেদার সঞ্জয় কুমারের চরিত্রে এবং অভিষেক বচ্চন ক্যাপ্টেন বিক্রম বাত্রার চরিত্রে অভিনয় করেন।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "Param Vir Chakra"Gallantry AwardsIndian Army। সংগ্রহের তারিখ ২৮ আগস্ট ২০১৪ 
  2. "Precedence Of Medals"। Indian Army। সংগ্রহের তারিখ ১৭ মে ২০১৪ 
  3. "Param Vir Chakra (PVC)"। India: National Portal of India। ২০১৪-০৮-১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৮-১৩ 
  4. Satyindra Singh (২০ জুন ১৯৯৯)। "Honouring the Bravest of the Brave"The Tribune, Chandigarh। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৮-১৩ 
  5. "General Service Medal 1947"। ২৩ জুলাই ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ এপ্রিল ২০১৪ 
  6. Sumit Walia (জানু ২৩, ২০০৯)। "The first Param Vir Chakra"। Sify.com। মে ১৬, ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৮-১৩ 
  7. Madhu Jain (আগস্ট ১৫, ১৯৯০)। "Mandi House hardsells Kashmir in its serial 'Gul Gulshan Gulfam'"। India Today। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৮-১৩ 

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা