দেলফিন সেরিগ

ফরাসি অভিনেত্রী এবং চলচ্চিত্র পরিচালিকা

দেলফিন ক্ল্যের বেলতিয়ান সেরিগ (ফরাসি: Delphine Claire Beltiane Seyrig; ফরাসি উচ্চারণ: ​[sɛʁiɡ]; ১০ই এপ্রিল, ১৯৩২ - ১৫ই অক্টোবর, ১৯৯০)[১] ছিলেন লেবাননে জন্মগ্রহণকারী ফরাসি অভিনেত্রী, পরিচালক ও নারীবাদী। তিনি তার মঞ্চ ও চলচ্চিত্র উভয় কাজের জন্য পরিচিতি লাভ করেন। ফরাসি, ইংরেজি ও জার্মান ভাষায় দক্ষ হওয়ার কারণে তিনি কয়েকটি হলিউডের চলচ্চিত্রসহ এই তিন ভাষার চলচ্চিত্রে বিভিন্ন ধরনের চরিত্রে কাজ করতে সক্ষম হন। ইউরোপের বেশ কয়েকজন বিখ্যাত পরিচালকের সাথে ৩০টির অধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হল জোসেফ লোজির অ্যাক্সিডেন্ট (১৯৬৭), ফ্রঁসোয়া ত্রুফোর বিজিয়ে ভলি (১৯৬৮), লুই বুনুয়েলের মিল্কি ওয়ে (১৯৬৯) ও ডিসক্রিট চার্ম অব দ্য বুর্জোয়া (১৯৭২) এবং ফ্রেড জিনেমানের দ্য ডে অব দ্য জ্যাকেল (১৯৭৩)।[১]

দেলফিন সেরিগ
Delphine Seyrig
জন্ম
দেলফিন ক্ল্যের বেলতিয়ান সেরিগ

(১৯৩২-০৪-১০)১০ এপ্রিল ১৯৩২
মৃত্যু১৫ অক্টোবর ১৯৯০(1990-10-15) (বয়স ৫৮)
মৃত্যুর কারণফুসফুসের ক্যান্সার
সমাধিমন্তপার্নাস সমাধি
পেশাঅভিনেত্রী
দাম্পত্য সঙ্গীজ্যাক ইয়ংগারম্যান
সন্তানডানকান (পুত্র)
আত্মীয়ফ্রঁসি সেরিগ (ভাই)
পুরস্কারভল্পি কাপ

প্রারম্ভিক জীবন সম্পাদনা

সেরিগ ১৯৩২ সালের ১০ই এপ্রিল একটি বুদ্ধিজীবী প্রস্টেস্ট্যান্ট পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।[২] তার পিতা অঁরি ছিলেন অ্যালসেটিয়ান। তিনি বৈরুত প্রত্নতাত্ত্বিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক এবং পরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নিউ ইয়র্কে ফ্রান্সের সাংস্কৃতিক রাজদূতের সহযোগী ছিলেন।[৩][৪] তার মাতা হারমিন দ্য সোস্যুর ছিলেন সুইস এবং ভাষাবিদ ফার্দিনান্দ দ্য সোস্যুরের ভাগনি। দেলফিনের ভাই সুরকার ফ্রঁসি সেরিগ।

সেরিগের যখন ১০ বছর বয়স, তখন তার পরিবার লেবানন থেকে নিউ ইয়র্কে চলে যায়। তারা ১৯৪০-এর দশকের শেষের দিকে লেবাননে ফিরে আসেন। তিনি কলেজ প্রটেস্ট্যান্ট দ্য জুনে ফিলে ভর্তি হন। তিনি ১৯৪৭ থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনা করেন। যুবতী সেরিগ কমেডি দ্য সঁ-এতিয়েনে জঁ দাস্ত এবং সেন্ত্রে দ্রামাতিক দ্য লেস্তে অভিনয় বিষয়ে পড়াশুনা করেন।

কর্মজীবন সম্পাদনা

সেরিগ ১৯৫৪ সালে টিভি ধারাবাহিক শার্লক হোমস-এ ছোট চরিত্রে অভিনয় করেন। ১৯৫৬ সালে তিনি নিউ ইয়র্ক ফিরে যান এবং অ্যাক্টরস স্টুডিওতে পড়াশুনা করেন। ১৯৫৮ সালে তিনি তার প্রথম চলচ্চিত্র পুল মাই ডেইজি-তে কাজ করেন। নিউ ইয়র্কে তিনি পরিচালক অ্যালাইন রেসনাইয়ের সাথে পরিচিত হন, যিনি তাকে তার লাস্ট ইয়ার অ্যাট মারিয়েনবাড ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন। ছবিতে তার অভিনয় তাকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিতি পাইয়ে দেয়। তিনি প্যারিসে ফিরে আসেন।

১৯৬০ থেকে ১৯৭০-এর দশকে সেরিগ ত্রুফো, লুই বুনুয়েল, মার্গেরিত দ্যুরাফ্রেড জিনেমান এবং রেসনাইদের মত পরিচালকদের চলচ্চিত্রে কাজ করেন। তিনি রেসনাই পরিচালিত ১৯৬৩ সালের ম্যুইয়েল চলচ্চিত্রের জন্য ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসব থেকে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার লাভ করেন।[২] ১৯৬৭ সালে তিনি নিকোলাস মোজলির উপন্যাস অবলম্বনে হ্যারল্ড পিন্টার নির্মিত নাট্যধর্মী অ্যাক্সিডেন্ট এবং ত্রুফো পরিচালিত বিজিয়ে ভলি (১৯৬৮) ছবিতে বৃদ্ধা নারী চরিত্রে অভিনয় করেন।

সেরিগ জিনেমান পরিচালিত দ্য ডে অব দ্য জ্যাকেল (১৯৭৩) চলচ্চিত্রে কোলেত দ্য মন্তপেলিয়ে ভূমিকায় অভিনয়ের জন্য অধিক পরিচিতি লাভ করেন। এছাড়া তিনি ১৯৭০-এর দশকে জোসেফ লোজির আ ডল্‌স হাউজ (১৯৭৩) এবং ডন সিগেলের দ্য ব্ল্যাক উইন্ডমিল (১৯৭৪) ছবিতে কাজ করেন।[১]

১৯৭০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে তিনি সক্রিয় নারীবাদী হয়ে ওঠেন। সে সময়ে তিনি বলেন, "মঞ্চ ও চলচ্চিত্র নারীদের নিজেদের সচেতনতা থেকে অনেক দূরে।"[১] এই অবস্থাকে ঠিক করতে তিনি নারী পরিচালকদের সাথে কাজ শুরু করেন। ১৯৭৫ সালে তিনি মার্গেরিত দ্যুরার ইন্ডিয়া সং এবং শান্তাল আকারমানের জান দিয়েলমাঁ, ভাঁ ত্রোয়া কে দ্যু কমের্স মিল কাত্রভাঁ ব্রুইসেল ছবিতে শ্রেষ্ঠাংশে অভিনয় করেন।[১] উল্লেখিত শেষ চলচ্চিত্রটি তার অভিনীত সবচেয়ে চাহিদাসম্পন্ন কাজ ছিল। এই ছবির নাম ভূমিকার মনোভাব বুঝানোর জন্য তাকে অত্যন্ত সংযত ও কঠোর পরিশ্রম-সম্পন্ন অভিনয় করতে হয়েছে।

ব্যক্তিগত জীবন সম্পাদনা

সেরিগ মার্কিন চিত্রশিল্পী জ্যাক ইয়ংগারম্যানকে (জ. ১৯২৬)[৫] বিয়ে করেন এবং পরবর্তীতে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়। ইয়ংগারম্যান প্যারিসে একোল দে বু-আর্তসে পড়াকালীন তাদের পরিচয় হয়। তাদের একমাত্র পুত্র ডানকানের জন্ম হয় ১৯৫৬ সালে প্যারিসে। ডানকান একজন সঙ্গীতজ্ঞ ও সুরকার। তিনি ফ্রান্স ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করে থাকেন।

মৃত্যু সম্পাদনা

সেরিগে ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ১৯৯০ সালের ১৫ অক্টোবর ৫৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। তাকে মন্তপার্নাস সমাধিতে সমাহিত করা হয়।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Delphine Seyrig, 58; Actress Performed In European Films"দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস (ইংরেজি ভাষায়)। ১৮ অক্টোবর ১৯৯০। সংগ্রহের তারিখ ১০ এপ্রিল ২০১৮ 
  2. "Delphine Seyrig - Actors and Actresses"ফিল্ম রেফারেন্স (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১০ এপ্রিল ২০১৮ 
  3. Gérard Siebert। "Portraits et silhouettes d'Alsace" (.pdf)Revue de l'Alsace (ফরাসি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১০ এপ্রিল ২০১৮ 
  4. "Henri Seyrig", in Je m'appelle Byblos, Jean-Pierre Thiollet, H&D (2005), p. 257; আইএসবিএন ২৯১৪২৬৬০৪৯
  5. Taubin, Amy (২০০২-১০-২৭)। "FILM; Sensual, Smart, and Then There Was That Voice"The New York Times (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসএসএন 0362-4331। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৪-০৮ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা