বৈরুত

লেবাননের রাজধানী

বৈরুত (আরবি: بيروت, প্রতিবর্ণীকৃত: Bayrūt; ফরাসি: Beyrouth; /bˈrt/ bay-ROOT) লেবাননের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর যার জনসংখ্যা ২০০৭ সাল অনুযায়ী ২১ লক্ষ। লেবাননের সৈকত রেখার মাঝ বরাবর ভূমধ্যসাগরের একটি উপদ্বপে এর অবস্থান। এ শহরটি দেশের সর্ববৃহৎ এবং প্রধান সমুদ্রবন্দর যা বৈরুত জেলা তৈরি করেছে যাতে রয়েছে শহর এবং বেশ কিছু উপশহর।

বৈরুত
بيروت
Beyrouth
শহর
উপরে থেকে ঘড়ির কাঁটার দিকে: বৈরুত জাইতুনয় বে; সাহাত আল শৌহাদা; বৈরুতের নেজমেহ স্কয়ার; ম্যারোনাইট ক্যাথেড্রাল অফ সেন্ট জর্জ (বামে) এবং মুহাম্মদ আল-আমিন মসজিদ (ডানে); সারসক জাদুঘর; এবং কবুতর রকস অফ রাউচে
বৈরুতের পতাকা
পতাকা
বৈরুতের প্রতীক
প্রতীক
বৈরুত লেবানন-এ অবস্থিত
বৈরুত
বৈরুত
বৈরুত এশিয়া-এ অবস্থিত
বৈরুত
বৈরুত
লেবাননের মধ্যে বৈরুতের অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ৩৩°৫৩′১৩″ উত্তর ৩৫°৩০′৪৭″ পূর্ব / ৩৩.৮৮৬৯৪° উত্তর ৩৫.৫১৩০৬° পূর্ব / 33.88694; 35.51306
দেশ লেবানন
গভর্নরেটবৈরুত গভর্নরেট
সরকার
 • মেয়রআব্দেল মুনিম আরেস
আয়তন
 • মোট৮৫ বর্গকিমি (৩৩ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (২০০৯)
 • মোট২০,০৬,৪৫২
 • জনঘনত্ব২৩,৬০৫.৩১/বর্গকিমি (৬১,১৩৭.৫/বর্গমাইল)
সময় অঞ্চলইইটি (ইউটিসি+২)
 • গ্রীষ্মকালীন (দিসস)ইইএসটি (ইউটিসি+৩)
ওয়েবসাইটবৈরুতের সরকারি ওয়েবসাইট

ইতিহাস সম্পাদনা

অটোমান সুলতান প্রথম সেলিম (১৫১২ - ১৫১৫) এর অধীনে অটোমানরা বর্তমান লেবানন সহ সিরিয়া জয় করেছিল। বৈরুত অটোমান সময়কালে স্থানীয় ড্রুজ ইমির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়েছিল।[১] তাদের মধ্যে একজন, দ্বিতীয় ফখর-আল-দীন সতেরো শতকের গোড়ার দিকে এটি অটোমানদের থেকে সুরক্ষিত করেছিলেন, কিন্তু অটোমানরা ১৭৬৩ সালে এটি পুনরায় দখল করেছিল। দামেস্কের সহায়তায় বৈরুত সফলভাবে সিরিয়ার সামুদ্রিক বাণিজ্যের উপর একরের একচেটিয়া ব্যবসা সফলভাবে ভেঙে দিয়েছিল এবং কয়েক বছর ধরে এটিকে এই অঞ্চলের প্রধান ব্যবসায়ের কেন্দ্র হিসাবে সাপ্লাই করেছিল। জিজার পাশা এবং আবদুল্লাহ পাশার অধীনে একরে অটোমান আধিপত্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের উত্তর যুগে বৈরুত প্রায় ১০,০০০ জনসংখ্যার একটি ছোট্ট শহর ছিল যা অটোমান, স্থানীয় ড্রুজ এবং মামলুকদের মধ্যে বিরোধের স্থানে পরিনত হলে জনসংখ্যা হ্রাস পেয়েছিল। ১৮৩২ সালে মিশরের ইব্রাহিম পাশা একর দখল করার পরে বৈরুতের পুনরুজ্জীবন হয়েছিল।[২]

ভূগোল সম্পাদনা

 
উপগ্রহ থেকে বৈরুত অঞ্চল দেখে যাচ্ছে।
 
Pigeons' Rock (Raouché)

বৈরুতের অবস্থান হলো ভূমধ্যসাগরের পারে অবস্থিত পশ্চিমমুখী একটি উপদ্বীপে। [৩]। এটি লেবানন-ইসরায়েল সীমান্ত হতে প্রায় ৯৪ কিমি (৫৮ মা) উত্তরে অবস্থিত। [৪] শহরটির চারদিকে রয়েছে লেবাননের বিভিন্ন পর্বত। দুটি পাহাড়ের উপরে ও পাশে এই শহরটির বিস্তার ঘটায় বৈরুতের আকৃতি অনেকটা ত্রিকোণাকার। পাহাড়গুলো হলো আল-আশরাফি, এবন আল-মুসাইতিবাহ। বৈরুত গভর্নরেটের এলাকা হলো ১৮ বর্গ কিলোমিটার (৬.৯ বর্গ মাইল)। শহরটির মেট্রোপলিটান এলাকা হলো ৬৭ বর্গ কিলোমিটার (২৬ বর্গ মাইল)।[৩] বৈরুতের উপকূলীয় এলাকা বৈচিত্র্যময়—এখানে রয়েছে পাথুরে বেলাভূমি, বালিভরা সৈকত, এবং পাহাড়।

আবহাওয়া সম্পাদনা

বৈরুতে ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু বিদ্যমান। এখানে গরমকাল শুকনা এবং উত্তপ্ত হয়ে থাকে। বসন্ত ও শরৎকাল বেশ আরামদায়ক হয়। শীতকালে ঠান্ডা পড়ে এবং বৃষ্টি হয়। আগস্ট মাসে সবচেয়ে বেশি গরম পড়ে। সেসময়কার গড় তাপমাত্রা ২৯°সেঃ (৮৪ °ফাঃ)। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে সবচেয়ে বেশি ঠান্ডা পড়ে। সেসময়কার গড় নিম্নতম তাপমাত্রা থাকে ১০ °সেঃ (৫০ °ফাঃ)। বিকেল ও সন্ধ্যার সময়ে পশ্চিম দিক থেকে সমুদ্র হতে তীরের দিকে বাতাস বয়ে যায়। রাতের বেলায় উলটা দিকে অর্থাৎ ভূমি থেকে সমুদ্রের দিকে বাতাস বয়ে যায়।

বৈরুতের গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৮৬০ মিলিমিটার (৩৪.১ ইঞ্চি)। এর প্রায় সবটাই শীতকালে পড়ে। অবশ্য বৃষ্টির প্রায় সবটাই অল্প কয়েকটি দিনে প্রবল বর্ষণের মাধ্যমে পড়ে থাকে। বৈরুতে কদাচিৎ তুষারপাত হয়। সাধারণত মাটিতে জমে থাকার মতো তুষার পড়ে না। এর ব্যতিক্রম কেবল গত ১০০বছরে ৩ বার হয়েছিলো, ১৯২০, ১৯৪২, এবং ১৯৫০ সালে।

বৈরুত-এর আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য
মাস জানু ফেব্রু মার্চ এপ্রিল মে জুন জুলাই আগস্ট সেপ্টে অক্টো নভে ডিসে বছর
সর্বোচ্চ রেকর্ড °ফা ৭৭ ৭৯ ৮৪ ৮২ ৮৮ ৯২ ৯৭ ৯৮ ৯৫ ৮৯ ৮৫ ৮০ ৯৮
সর্বোচ্চ গড় °ফা ৫৭ ৬০ ৬৪ ৭০ ৭৬ ৮০ ৮৬ ৮৯ ৮২ ৭৭ ৬৯ ৬১ ৭৩
সর্বনিম্ন গড় °ফা ৪৯ ৫০ ৫২ ৫৮ ৬৩ ৬৯ ৭৪ ৭৫ ৭২ ৬৮ ৫৯ ৫১ ৬২
অধঃক্ষেপণের গড় ইঞ্চি ৭.৪ ৩.৮ ০.৭ ০.১ ০.২ ১.৯ ৪.৭ ৬.৯ ৩৩.৭
সর্বোচ্চ রেকর্ড °সে ২৫ ২৬ ২৯ ২৮ ৩১ ৩৩ ৩৬ ৩৭ ৩৫ ৩২ ২৯ ২৭ ৩৭
সর্বোচ্চ গড় °সে ১৪ ১৬ ১৮ ২১ ২৪ ২৭ ৩০ ৩২ ২৮ ২৫ ২১ ১৬ ২৩
সর্বনিম্ন গড় °সে ১০ ১১ ১৪ ১৭ ২১ ২৩ ২৪ ২২ ২০ ১৫ ১১ ১৬
অধঃক্ষেপণের গড় সেমি ১৮ ১৫ ৫.১ ১.৭ ০.২৫ ০.৫ ১২ ১৭ ৮২.৫৫
উৎস: Weatherbase[৫]

জনসংখ্যা সম্পাদনা

১৯৩২ সাল থেকে লেবাননে কোনও জনসংখ্যার আদমশুমারি নেওয়া হয়নি, তবে অনুমান করা হয় যে বৈরুতের জনসংখ্যা ন্যূনতম ৯৩৮,৯৪০ থেকে ১,৩০৩,১২৯ জন হতে পারে। এবং বৃহত্তর বৈরুতের অংশ হিসাবে এর জনসংখ্যা ২,২০০,০০০ পর্যন্ত হতে পারে।[৬][৭]

বৈরুত হল লেবানন এবং মধ্য প্রাচ্যের সবচেয়ে বিশ্বজনীন ও ধর্মীয়ভাবে বৈচিত্র্যময় শহর।[৮] শহরটি উল্লেখযোগ্য মুসলিম এবং খ্রিস্টান সম্প্রদায়কে নিয়ে গর্ব করে। এছাড়া বৈরুতে ১৮টি স্বীকৃত ধর্মীয় গোষ্ঠী রয়েছে। গৃহযুদ্ধের শেষে কপ্টস আরও একটি স্বীকৃতি সম্প্রদায় হয়ে ওঠে, যা মোট সংখ্যা আঠারোতে নিয়ে আসে। মূল সতেরটিতে চারটি মুসলিম সম্প্রদায় অন্তর্ভুক্ত ছিল: শিয়া, সুন্নি, আলাওয়ালি এবং দ্রুজ; বারো খ্রিস্টান সম্প্রদায়: মেরোনাইট ক্যাথলিকস, গ্রীক অর্থোডক্স, মেলকিট ক্যাথলিকস, প্রোটেস্ট্যান্ট ইভানজেলিকালস এবং অন্যান্য অ-জাতীয় খ্রিস্টান সম্প্রদায় লেবাননের আর্মেনিয়ান অর্থোডক্স, আর্মেনিয়ান ক্যাথলিক, আসিরিয়ানস (সিরিয়াক অর্থোডক্স, সিরিয়াক ক্যাথলিক, চার্চ অফ দ্য ইস্ট, চ্যালডিয়ান ক্যাথলিক), কপটস; এবং ইহুদি (আজ খুব কম লেবাননে রয়ে গেছে, তবে লেবাননের ইহুদি পিতামাতার সন্তানরা লেবাননের দূতাবাসে নাগরিক হিসাবে নিবন্ধন করতে পারে)।[৯])

বিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ এবং উত্তরাধিকারের মতো পারিবারিক বিষয়গুলি এখনও কোনও ব্যক্তির বিশ্বাসের প্রতিনিধিত্বকারী (উসমানীয় "জুলেট" সিস্টেম) ধর্মীয় কর্তৃপক্ষ দ্বারা পরিচালিত হয়। নাগরিক বিবাহের আহ্বানগুলি ধর্মীয় কর্তৃপক্ষ সর্বসম্মতিক্রমে প্রত্যাখ্যান করেছে, তবে অন্য দেশে অনুষ্ঠিত নাগরিক বিবাহ লেবাননের নাগরিক কর্তৃপক্ষ দ্বারা স্বীকৃত।

শিক্ষা সম্পাদনা

 
বৈরুতে অবস্থিত সেন্ট জোসেফ বিশ্ববিদ্যালয়, যা ১৮৭৫ সালে জেসুইটস দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল

লেবাননে উচ্চতর শিক্ষা বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ এবং কারিগরি ও বৃত্তিমুলক প্রতিষ্ঠান দ্বারা সরবরাহ করা হয়। আমেরিকান বৈরুত বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইউনিভার্সিটি সেন্ট-জোসেফ (ইউএসজে), দেশটির যথাক্রমে প্রাচীনতম ইংরেজি মাধ্যম এবং ফরাসী মাধ্যম বিশ্ববিদ্যালয়। লেবানন বিশ্ববিদ্যালয় বৈরুতের উচ্চ শিক্ষার একমাত্র সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।[১০]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Druze History"DHF Druze Heritage Foundation। ৩ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  2. Corpus Inscriptionum Arabicarum Palaestinae, by Moshe Sharon
  3. Beirut - The Pearl of the Middle East[অকার্যকর সংযোগ]
  4. "Howstuffworks "Geography of Beirut""। Geography.howstuffworks.com। ২০০৯-০৪-২৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৫-০৫ 
  5. "Weatherbase: Historical Weather for Beirut"। Weatherbase। ২০০৭। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৯-০৭ 
  6. "Questions & Answers: Water Supply Augmentation Project, Lebanon". The World Bank. 30 September 2014. Retrieved 20 March 2016.
  7. "Encyclopedia of the Nations"। Nationsencyclopedia.com। ১৩ জানুয়ারি ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জানুয়ারি ২০১০ 
  8. At Beirut Protest, a Reminder of Religious Diversity, The New York Times. Retrieved 17 November 2007.
  9. Norton, Augustus R. Hezbollah. Princeton: Princeton UP, 1990. Print. Pg. 11–12, Footnote 1
  10. টেমপ্লেট:RTFlink, Unesco.org

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা